বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন (আইএইচআরসি) এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) সংস্থার এক বিবৃতিতে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়।
ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাঁর পরিবারের চাহিদা মোতাবেক চিকিৎসা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
চিকিৎসা মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার।বেগম খালেদা জিয়া বয়স্ক সম্মানিত নারী, একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী।বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সময় দুই পুত্রসহ তিনি বন্দী ছিলেন।মানবিক দিক বিবেচনা করে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার সুযোগ প্রদানের জোর দাবি জানায় আইএইচআরসি।
খালেদা জিয়ার পরিবার ও তাঁর দল বিএনপির অভিযোগ, ৭৭ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত।গত ৯ অক্টোবর তার চিকিৎসা বোর্ড বলেছে, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে।উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে হবে।অন্যথায় যেকোনো সময় তিনি মারা যেতে পারেন।’
একইদিন খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ডা. এফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসার সকল অপশন প্রায় শেষ, হাতে আর কোনো অপশন নেই।দুই বছর আগে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর পেটে পানি জমতো না এবং রক্তক্ষরণও হতো না।এখন এগুলো হচ্ছে।চিকিৎসক হিসেবে চোখের সামনে একটি অসুস্থতা যা প্রতিকারযোগ্য।কিন্তু প্রতিকার করা যাচ্ছে না বলে একজন রোগী ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাচ্ছেন।এখনও সময় শেষ হয়ে যায়নি।আমি মেডিকেল বোর্ডের সর্বসম্মতিক্রমে সংশ্লিষ্ট সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, যদি বিদেশে উন্নত কোনো সেন্টারে নিয়ে গিয়ে টিপস পড়ানো যায়, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করানো যায়, তাহলে উনার অবস্থার হয়তো উন্নতি ঘটাতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন বাংলাদেশে হয় না।’ বোর্ডের আরেকজন সদস্য ডা. এ কিউ এম মহসিন বলেন, ‘লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেটআপ আমাদের দেশে এখনও তৈরি হয়নি।আর খালেদা জিয়ার মতো ক্রিটিক্যাল রোগী!’
গত শনিবার (১৩ অক্টোবর) বিএনপি দলটির চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে সারাদেশে অনশন কর্মসূচি পালন করে।রাজধানী ঢাকায় কর্মসূচিতে দলের নেতারা বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করছে না।’খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর দাবি জানান তারা।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ প্রদানের অনুমতি চেয়ে পরিবারের পক্ষে তাঁর ভাই শামিম ইস্কান্দার সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
০২ অক্টোবর ২০২৩ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাবে যেহেতু আইনি জটিলতা রয়েছে, তাই সেটি আমি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম তাদের মতামতের জন্য।যে মতামতটা আসছে সেটা খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষে আসেনি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটিই আইনের কথা। ‘
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি সরকার পুনর্বিবেচনা করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশ সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে? বা কোনো দেশ সেটা দেবে?’
ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইট্স কমিশন বলেছে, অতীতে বাংলাদেশে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে চিকিৎসা প্রদানের একাধিক নজির রয়েছে।ইতোপূর্বে সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী আ স ম আব্দুর রব, মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিমকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা প্রদানের সুযোগ প্রদান করা হয়। এছাড়া সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্যে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদ্যস্য হাজী সেলিমের দেশের বাইরে চিকিৎসা নেওয়ার নজির রয়েছে।তাঁরা চিকিৎসা নিতে পারলে বাংলাদেশের সাবেক একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী, দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক খালেদা জিয়ারও চিকিৎসা নেওয়ার দাবিটি বাস্তবসম্মত।