রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বিয়েতে রাজি না হওয়ায় আত্মহত্যা, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মামলা সারিয়াকান্দির সেই মেধাবী ছাত্র সাকিবুল হাসানের দায়িত্ব নিলেন সাহাদারা মান্নান এমপি সারিয়াকান্দিতে জিপিএ-৫ পেয়েও অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত সাকিবুল হাসানের সারিয়াকান্দিতে ইউএনও’র সাথে নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যানের শুভেচ্ছা বিনিময় সারিয়াকান্দিতে সরকারি খাদ্য গুদামে ইরি-বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের শুভ উদ্বোধন সারিয়াকান্দিতে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার-২ নালিতাবাড়ী খাদ্য গুদামে ধান-চাল সংগ্রহের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত সারিয়াকান্দিতে অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে রেইজ প্রকল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক ওরিয়েন্টেশন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে লালমনিরহাট জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের শ্রদ্ধা সারিয়াকান্দিতে পূর্ব শত্রুতার জেরে এক যুবককে ছুরিকাঘাত
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

কালের বিবর্তনে হারাতে বসেছে রাজশাহীর ‘শখের হাঁড়ি’

মাটির তৈরি বিভিন্ন আকারের হাঁড়িতে শৈল্পিক কারুকার্য।কারুকার্য দেখলে মন ছুঁয়ে যাবে যে কারো।প্রতি বছর বৈশাখে ঢাকার বিভিন্ন মেলায় স্থান পায় এই হাঁড়ি।

বলছিলাম রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বসন্তপুর গ্রামের হাঁড়ির কারিগর সুশান্ত কুমার পালের ‘শখের হাঁড়ি’র কথা।দেশব্যাপী সুনাম রয়েছে এই হাঁড়ির।তবে কালের বিবর্তনে হারাতে বসেছে রাজশাহীর এই শখের হাঁড়ি।

এই হাঁড়ির বৈচিত্র‌্য মিশে রয়েছে বাঙালিয়ানায়।মেলা কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যাওয়ায় শখের হাঁড়ির জুড়ি মেলা ভার।অথচ সেই হাঁড়ি নিয়ে কথা ওঠে শুধুই বৈশাখে।সারা বছর কেউ এই শখের হাঁড়ির খবর নেয় না বলে আক্ষেপও করেন এর কারিগর সুশান্ত কুমার পাল।

সুশান্ত কুমার পালের বসন্তপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে শখের হাঁড়ি তৈরিতে সবাই ব্যস্ত।কেউ মাটি তৈরি করছেন,কেউবা শখের হাঁড়ি তৈরি করছেন।আবার কেউ কেউ সেগুলোতে রং চড়াচ্ছেন।রঙ আর শখের হাঁড়িগুলো শুকানোর কাজে সুশান্তকে সহযোগিতা করেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও।

সুশান্ত কুমারের পুত্রবধূ শ্রী করুনা রানি পাল বলেন, ‘হাতে সময় নেই।ঢাকার দুই জায়গায় বৈশাখী মেলা হবে সাতসকালে বৈছি (বসেছি) কাজে।দুপুর গড়িয়ে গেছে।তাও কাজ শেষ হয়নি।কমপক্ষে তিন দিন আগে শখের হাঁড়ি ঢাকার মেলা প্রাঙ্গনে নিতে হবে।সেখানে সাজসজ্জা ছাড়াও অনেক কাজ রয়েছে।তাই বাড়ির সবাই শখের হাঁড়ি তৈরির কাজে লেগে গেছে।সকাল থেকে ১০০ সেট রং-তুলি শেষ করেছি।একেকটা সেটে চারটি করে শখের হাঁড়ি আছে।’সুশান্ত কুমার পালের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল বলেন, বৈশাখী মেলার আয়োজন নিয়ে আমরা কাজে ব্যস্ত রয়েছি।বৈশাখী মেলাটা ঢাকায় হবে।এবার রোজার জন্য অন্য জায়গাগুলোতে বৈশাখী মেলা হচ্ছে না।তবে ঢাকার সোনারগাঁও জাদুঘরে বৈশাখী মেলা বসছে।দুই মেলায় আমাদের স্টল রয়েছে।সেখানে বাবা ও দাদা যাবে।আমাদের ৯০ শতাংশ প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।এখন গাড়িতে তুলে শখের হাঁড়িগুলো ঢাকায় নেব।আমাদের শখের হাঁড়ি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলাগুলো মাতিয়ে রাখে।

তিনি আরও বলেন,এর মধ্যে রয়েছে ৪ পিসের শখের হাঁড়ি, ছোট পাতিল, সাজি, পঞ্চ সাজি, মাটির পুতুল, খেলনা।এ বছর ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা দামের শখের হাঁড়ি রয়েছে।এখানে দামটা বিষয় নয়, শখের হাঁড়ি রাজশাহীর ঐহিত্য।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি রাজশাহীর মানুষ তেমন চেনে না।শখের হাঁড়িতে বিভিন্ন প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়।হাঁড়ির শরীরে লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি বা খয়েরি রঙে আঁকা থাকে পদ্ম, মাছ, ধানের ছড়া, লক্ষ্মীপ্যাঁচা, সিঁদুরের কৌটা ইত্যাদি।

শখের হাঁড়ির কারিগর সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ৩৭ বছর ধরে ঢাকার বিসিকে মেলা করছি।এবার আমাকে মেলার জন্য বলেনি।প্রতিযোগিতার জন্য ২৭ মার্চ শখের হাঁড়ি জমা দিয়েছিলাম।তবে মেলায় অংশগ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছু বলেনি।বিসিক কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেনি।সোনারগাঁও মেলায় যাওয়া-আসা আছে।সেখানে আমার দোকান আছে।বৈশাখে আমি ছয়টি মেলা করি।কিন্তু এবার মাত্র একটি মেলা করতে হবে।

শুধুমাত্র শখের হাঁড়িকে কেন্দ্র করে সুশান্ত কুমার পাল জায়গা কেড়ে নিয়েছেন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে।সেখানে তার ছবিসহ গল্প রয়েছে।আর রাষ্ট্রীয় পদক ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন পুরস্কার।ঘুরে বেরিয়েছেন জাপান, শ্রীলংকা ও নেপালে।

এ বিষয়ে সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ‘শুধু শখের হাঁড়ির কারণে আমার এত পরিচিতি।আমি দক্ষতা পুরস্কার পেয়েছি ১৮টি, শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছি ৪টি।এছাড়া গত বছর লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন থেকে আজীবন সম্মাননা পেয়েছি।

পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, সুশান্ত কুমার পালের বাপ-দাদারা এই কাজ করতেন।সেই সময় থেকে তারা একই কাজ করছে।তারা ঢাকার বিভিন্ন মেলায় অংশ নেয়।শখের হাঁড়ির অনেক সুনাম রয়েছে।

এ ব্যাপারে পবা উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা অভিজিৎ সরকার বলেন, শখের হাঁড়ির অনেক সুনাম রয়েছে।রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, কিন্তু রাজশাহীর মানুষ চেনে না।তাদের বিষয়ে অনেকেই বলছেন।তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 3 =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x