বাংলাদেশের ১৫৩ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’।ভারতের কিংবদন্তি নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত বহুল প্রতীক্ষিত এই সিনেমায় জাতির জনকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ।
জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ বলেন, হল মালিকরাই সিনেমাটি চালাতে আগ্রহী।বিশেষ করে ট্রেলার দেখার পর তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
এছাড়াও বলেন, বাংলাদেশের সিনেমাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো কান্না আর আবেগ।যে সিনেমা দেখে দর্শক কাঁদে, সেটি হিট।‘মুজিব’র ট্রেলার দেখে হল মালিকদের মনে হয়েছে যে, এটা দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন অবলম্বনে সিনেমা নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।এরপর ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ সিনেমাটির ঘোষণা দেওয়া হয়।ওই সময় জানানো হয়, এটি নির্মাণ করবেন বলিউডের নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল।এর চিত্রনাট্যকার হিসেবে যুক্ত হন বলিউডের অতুল তিওয়ারি।
ঘোষণার সময়ই নিশ্চিত করা হয়েছিল যে, এই সিনেমার বেশিরভাগ শিল্পী বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হবে।এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস ধরে অডিশনের মাধ্যমে বাছাই করা হয় শিল্পী।বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের জন্য ১৫ জন শিল্পীর অডিশন নেওয়া হয়েছিল।তার মধ্যে পাঁচ বার অডিশন শেষে আরিফিন শুভকে চূড়ান্ত করা হয়।এর মধ্যে দুবার অডিশন দিয়েছিলেন ভারতে, তিনবার বাংলাদেশে।
শুভ বলেন, ‘অডিশন দেওয়ার অনেক দিন পর জানতে পারি আমি বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে নির্বাচিত হয়েছি।খবরটা শোনার পরের অনুভূতি একেবারেই ভিন্ন।মনে হচ্ছিল আমি কানে ভুল নাকি ঠিক শুনছি!’
২০২১ সালে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’-এর শুটিং শুরু হয়।এতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুজন।কৈশোরের খোকা (বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলার ডাক নাম) হয়েছেন দিব্য জ্যোতি।আর তরুণ মুজিব থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যে চরিত্র, সেটি করেছেন আরিফিন শুভ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যধারণের আগে শুটিং ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন আরিফিন শুভ।
তিনি আরও বলেন, শিল্পীরা অনেক শিশুসুলভ হয়।মনে হয়েছিল, আমি যদি শুটিং না করি তাহলে ১৫ আগস্টের দৃশ্যধারণ হবে না।আর আমি পালিয়ে গেলে বঙ্গবন্ধু মারা যাবেন না।এটা আসলে একটা অনুভূতি, জানি না বোঝাতে পারলাম কি না! দৃশ্যটা আসলে করতে চাইনি।গান আছে না, ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই।’এখনো মনে হয়, যদি দৃশ্যটার শুটিং না করতাম! বঙ্গবন্ধু না মারা যেতেন…অন্তত পর্দায়।
এ সিনেমায় বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনজন।১৩ বছরের আগ পর্যন্ত পর্দায় তার চরিত্রে দেখা যাবে একজন শিশুশিল্পীকে।কিশোরী বয়সী (১৩-১৭ বছর) চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি।এরপর থেকে নুসরাত ইমরোজ তিশা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৯-৩৫ বছরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া, শেখ রেহানা চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাবিলা নূর।এতে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ভূমিকায় শহীদুল আলম সাচ্চু, খন্দকার মোশতাক চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু, আব্দুল হামিদ খান ভাসানির চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ, তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে রিয়াজ, বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমানের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, মাতা সায়েরা খাতুনের চরিত্রে দিলারা জামান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চরিত্রে তৌকীর আহমেদ, টিক্কা খান চরিত্রে জায়েদ খানসহ শতাধিক অভিনয়শিল্পী সিনেমাটিতে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ সিনেমাটিতে দেশ-বিদেশের দুই শতাধিক অভিনয়শিল্পী অভিনয় করেছেন।
২০২২ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সিনেমাটির প্রথম পোস্টার প্রকাশ করা হয়।এরপর প্রথম ভিডিও ঝলক প্রকাশ্যে আসে একই বছরের মে মাসে, বিখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসবে।সেখানকার বাণিজ্যিক শাখায় সিনেমাটির ট্রেলার উন্মোচন করা হয়।এরপর গত ১ অক্টোবর সিনেমার আরও একটি ট্রেলার উন্মুক্ত করা হয়।