সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সারিয়াকান্দিতে দিনব্যাপী গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজাহান আলী সারিয়াকান্দিতে দিনব্যাপী গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী লিখন মিয়া বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরন করা হলো না এনজিও কর্মী সঞ্জয়ের সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নিবার্চন থেকে সরে দাঁড়ালেন চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুস সালাম ও আশিক রাজশাহীতে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মাঝে গ্লুকোজ বিতরণ রাজশাহীতে দৈনিক মানবিক বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন দুর্গাপুরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে আবাদি জমিতে পুকুর খনন মোহনপুরে মদ্যপান অবস্থায় বাইক আরোহী নিহত,আহত ২ মান্দায় মহান মে দিবস পালিত মে দিবসে খাবার স্যালাইন,ক্যাপ ও পানি বিতরণ করল রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

হিটস্ট্রোক

লেখকঃ আজহারুল আল আজাদ

প্রকৃতি কঠিন রুষ্ট।প্রকৃতি আজ রুষ্ট হওয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে, যেমন দুবাইতে কৃত্রিম বৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে, আবার সৌদিতে কৃত্রিম বাতাসের সৃষ্টি করা হয়েছে।দুবাইতে এমন বর্ষন হলো প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে ভাসিয়ে দিলো।সৌদিতেও এখন ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে।মরুর বুকে এখন সবুজ সমারোহ।কলকারখানা বজ্র পদার্থ নির্গত হয়ে পৃথিবীর পরিবেশকে অসুস্থ করে তুলছে।দিন দিন পৃথিবী তার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না, ফলে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, কখনও কখনও জলোচ্ছ্বাস আবার কখনও প্রখর তাপ।

চলমান তাপ প্রবাহে পৃথিবীর মানুষ পশু পাখি অতিষ্ঠ জীবন যাপন করছেন। প্রকৃতি এখন বড়ই রুষ্ট। বাতাসে আগুনের হলকা, রাস্তা ঘাট যেন জ্বলন্ত আগুনের কুপ রোদের কিরণতো নয় আগুনের গোলা। শ্রমজীবী মানুষের শ্রম কাজে যাওয়ার জন্য মৃত্তিকায় পা ফেলার মত সাহসই হচ্ছে না। সবুজ শ্যামল ছায়া ঢাকা গ্রামগুলোতে এখন আর বড় বড় গাছ দেখা যায় না। বনের গাছপালা কেটে সাবার করে দেয়া হচ্ছে। দাবদাহে পশু পাখিও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গাছের পাতার আড়ালে আবডালে পাখিরা লুকোনের চেষ্টা করছে কিন্তু আগুনের হলকা যেন গাছের ছায়াকেও আগুনে পুড়ছে।ফলে পশু পাখিরাও ছায়ায় প্রবেশ করতে পারছে না তাপে টিকে থাকাই মুশকিল। 

সরকরীভাবে ঘোষনা এসেছে স্কুল কলেজ ভার্সিটি মাদ্রাসা একসপ্তাহের জন্য বন্ধ।কিন্তু মাঠের কৃষানের বা শ্রমিকের জন্য কোন ঘোষনা বা বন্দোবস্ত নেই, তারাতো এই তালিকাভুক্ত নয়।  তারা অভূক্ত, এই দাবদাহেও মাঠে কাজ না করলে তাদের খাবার জুটে না। যতই রোদ হোক আগুন পড়ুক জীবীকার তাগিদে মাঠে যেতেই হবে। রোদ ঝড় বৃষ্টি তাদের গায়ের উপর দিয়ে প্রবাহমান কিন্তু তাদের স্বস্তি নেওয়ার যায়গা হলো তাদের সেই আধচালাওয়ালা উদাল ঘর, দিনের বেলা সেখানে বসার ফুশরত তাদের নেই, রাতের বেলা তারা মাটিতে পাটি বিছিয়ে শুয়ে ক্লান্তির নি:শ্বাস ফেলে। কত কষ্ট জ্বালা যন্ত্রনা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয় তাঁদের।

ও পাড়ার রহিম সকালে এসে অনেক কষ্টের কথা বলে গেলেন জহির দেওয়ানীর কাছে কাজ আছে তবে প্রখর দাবদাহে দুই দিন কাজ করতে যায়নি সে। সব কথা জহির দেওয়ানি শ্রবন পূর্বক শেষমেষ তাকে একটা কাজ দিলেন যেটি হলো ভুট্টা খেতের কাজ। রহিম দুইদিন কাজে না যাওয়ার কারণে গত রাতে উপোষে থেকে আজ সকালে ভুট্টাখেতের কাজ করার জন্য জহির দেওয়ানীর বাড়িতে কাজ করতে গিয়েও কাজ করার মন ছিল না তার,কেন যেন মনের গভীরে বিষন্নতা প্রখর হয়ে উঠছে, কাজ না করলে বউ বাচ্ছা হয়ত আজও উপবাসে থাকব। অনেক চিন্তা ভাবনা করে ভূট্টা খেতে প্রবেশ করলেন।খেতের ভিতরটা যেন আগুনে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে সে আগুন যেন তাকে গ্রাস করছে।  ভ্যাপসা গরমে চোখ ঝাপসা হয়ে গেল তার, কাজ করাটা যেন তারপক্ষে কঠিন তাই সে কাজ করতে না পেরে বের হয়ে আসেন, গাছের ছায়ায় বসেন, এমন সময় জহির দেওয়ানী ছাতা মাথায় কাজ দেখার জন্য এসে রহিমকে গাছের তলায় দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন কিন্তু প্রখর রোদের কারণ মনটাকে প্রশমিত করলেন। রহিমকে বসা দেখে বল্লেন, যদি আজ কাজ না কর তাহলে চলে যেতে পার! কিন্তু রহিম যে উপবাসী তার যে ফ্যামিলি গতকাল থেকে না শুধু আল্লাহর দেয়া নিয়ামত পানি পান করে দিনাতি পাত করছে, তাকে যে ভাবেই হোক যত কষ্ট হোক কাজ করতেই হবে রহিম বল্লেন-মিয়াভাই আপনি চিন্তা করবেন না আমি যে ভাবেই হোক কাজ করে দিব না হয় একটু রাত হবে। করতে না পারলে চলে যাও আবহাওয়া ভাল না  কখন যে কার কী ঘটনা ঘটে।

রহিমের চেহারা কেমন যেন বিবর্ন দেখাচ্ছে, দেখে আন্দাজ হলো সে না খেয়ে কাজে এসেছে, আবারও বললেন – দেখ রহিম আজ যে রোদের তাপ তাতে কিভাবে কাজ করবি তার চেয়ে বাড়িতে যাও, যাওয়ার সময় তোর দাদীকে বলিস ৫ কেজি চাল দিবে। আর মনে হচ্ছে কিচ্ছুটি খাওনি।
-মিয়াভাই এমনি কী আর এই কাঠফাটা রোদে কাজে এসেছি দু’দিন কাজ করিনি, তাই বাড়ীশুদ্ধোর পেটে ভাত যায়নি,  ছোট ছেলেটা ভাতের জন্য পাগল হয়ে গেছে, তাই আপনার কাজে এলুম, খোড়াকিটা নিয়ে চাল এনে বাচ্ছার মুখে একমুট খাবার তুলে দেওয়ার জন্য কাজে আাসা। বিনাশ্রমে আপনার চাল আমি নিতে পারব না। যা নিব তা শ্রম দিয়েই নিব।

ঠিক আছে তাই কর!

কথাগুলো শুনে জহিরের মায়া হলো, তিনি বলে গেলেন আমি তোমার বাড়িতে চাল পাঠাই দিচ্ছি, তোমরা উপোষে আছ তা বলনিতো।

লজ্জা করে মিয়া ভাই। আজকে হয়ত মানুষের গোলামি করছি,, একদিনতো আমার বাবারও অনেক ছিল তাই বলে উপোষের কথা কেমনে বলি আমার যে শরম করে।

-শরমে গরম ভাত মিলেনা রহিম, আহারে ছোট শিশুটাও উপোষ কাজ কর আমি খাবার পাঠাব এখন, বলে জহির দেওয়ানী চলে গেলেন। তাঁর বাড়ির চাকর লালবাবু ঘন্টা খানেকপর ভাতের গামলা গামছায় বেঁধে  নিয়ে এলো, রহিমের না খেয়ে না খেয়ে ক্ষিতে নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু পানির জন্য বুকের ছাতি ফেটে যাচ্ছে। সে পানির জগ দেখে মহাখুশি। সাদা পানি তাঁর কাছে অমৃত।সে লালবাবুকে জিজ্ঞেস করল দেওয়ানী কী তার বাড়িতে চাল পাঠিয়েছেন? লালবাবু উত্তরে বললেন, আমি নিজেই তোমার বাড়িতে চাল দিয়ে এখানে এলাম। রহিম বেশ খুশি। যাক এটি দেওয়ানী ভালো কাজ করলেন। ছোট একটি বট গাছ তার নিছে বসে ভাতটুকু খাবার আগেই জগের অধের্ক পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলেন তারপর কয়েক গাস ভাত মুখে তুলে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, তাকে লালবাবু তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে গেল। লালবাবু ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাড়িতে গিয়ে দেওয়ানীকে বললেন, রহিম ভাত খেতে বসে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে তুলতে পারলেম না।কথা শুনে দেওয়ানীসহ তার সাথে যারা ছিল সবাই ছুটে এলো মাঠে, রহিম ভাতের প্লেটের কাছে পড়েই আছে, তরিঘরি করে ভ্যান নিয়ে এসে তাকে ভ্যানে করে স্থানীয় মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলো,কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে গেলো। ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানালেন রোগী হিট স্ট্রকে  মারা গেছেন। তার বউ শুনে মেডিলকেলে গেলেন আত্মীয় স্বজন সবাই এলেন, বউয়ের কোলে মাত্র দুই বছেরের ছেলে সন্তান তাঁর কাঁন্নার আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে আসছে সকলের চোখে বৃষ্টির ধারার মত পানি। তাদের কান্না দেখে কেউ আর স্থির থাকতে পারলেন না। মেডিকেল থেকে রহিমকে ভ্যানে করে আনা হল তার নিজ বাড়িতে। এর পর তাঁর নিজ ভিটায় দাপন কার্য শেষ করা হলো।

পরিশেষ  জহির দেওয়ানী সকলকে লক্ষ করে বললেন, প্রকৃতি এখন রুষ্ট কেউ রহিমের মত মাঠে যাবেন না।রোদের তাপমাত্রা কমলে তখন মাঠে যাবেন,আর এই গ্রামের সকল কৃষি ম শ্রমিককে আমার বাড়ি থেকে ৫ কেজি করে চাল ও ১০০ টাকা নিয়ে গিয়ে বাজার করে রান্না- বান্না করে খাবেন।গ্রানের কৃষকরা তাই করলেন।জহির দেওয়ানীর মত আমরা এই দাবদাহে কৃষি শ্রমিকদের পাশে থেকে ভালবাসা ও সহযগিতা করতে পারি।(এখানে কাল্পনিক নাম সংযোজন করা হয়েছে)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 + 12 =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x