চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস :
যুগ যুগ ধরে সভ্যতার পরিবর্তন হয়ে আসছে ইতিহাস পড়লে জানা যায়।আমি আজ যে বিষয় নিয়ে লেখা শুরু করেছি জানিনা লেখার মধ্যে পাঠকদের কতোটা বুঝাতে পারবো।আমার বয়স বেশি না কিন্তু আমার কর্ম আমাকে ভাবায়।অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এ ধরনের পরিকল্পনা নিয়েই পথ চলা।সৃষ্টি করাই আমার উদ্দেশ্য।আমার বড় ধরনের কোন ডিগ্রীও নেই।তাই হয়তো বা আমার সমস্ত আশা পুরণ হওয়ার নয়।
তবে সমাজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমাকে সব সময় ভাবায়।আমার শিক্ষা জীবন থেকে এই পর্যন্ত যথেষ্ট পরিবর্তন হতে দেখেছি।যদি আমরা ইতিহাস ঘাটি তাহলে মানব সভ্যতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবো।
আদিম যুগে মানুষেরা পশু শিকার করতো আর সেই পশুর মাংস পেটের ক্ষুধা নিবারনের জন্য কাঁচা মাংস খেয়ে জীবন যাপন করতো।এরপরে আস্তে আস্তে তারা আগুনের আবিষ্কার করার কৌশল অবলম্বন করে।তারপর থেকে তারা পশু শিকার করে তা পুড়িয়ে খাওয়া শুরু করলো।এমন করে পরিবর্তন হয়ে আসছে মানুষের ইতিহাস।
আমার বয়স বেশি একটা নয় তবু ৫-৬ টাকা চালের কেজি ক্রয় করেছি।৩ টাকা রিক্সায় চলেছি খুলনা শহরে।আজ সেই পথ এখন ৪০টাকা।আজ ভাবতে গেলেই এগুলো গল্প বা ইতিহাস মনে হয়।
তখন ডিজিটাল কথাটার প্রচলন ছিল না।ডিজিটাল বলতে ছিল ফ্যাক্স, ল্যান্ড ফোন, রেডিও, বিবিসি খবর এগুলোই ছিল ডিজিটালের একএকটা পার্ট।তারপরে হঠাৎ করে বাংলাদেশ সরকার ঘোষনা করলেন বাংলাদেশকে ডিজিটাল দেশ হিসাবে পরিনত করবেন।ঘোষনাটি পেপার, পত্রিকায় নিয়মিত প্রচারিত হতে থাকে।মানুষের মাঝেও আকাংক্ষা জাগতে শুরু করে,না জানি কি পরিবর্তন হবে।সোনার দেশে সোনার মানুষদের জন্য তার বিহীন যন্ত্র এনে দিল।সবার ক্রয় করার ক্ষমতা ছিল না।ব্যয় বহুলও ছিল বেশ।একটি সিমের মূল্য ছিল ৫০০০ টাকা।
আস্তে আস্তে প্রিয়জনদের কাছে মনের কথা কাগজে লেখার দিন হারাতে থাকে।প্রতি মিনিট মাত্র ১০টাকার বিনিময়ে একটি দোকানে গিয়ে সাথে সাথে প্রিয়জনদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়।সেই থেকে মানুষ চিঠি লেখা আস্তে আস্তে ভুলতে থাকে।আস্তে আস্তে মোবাইলের বাজার মুল্য সর্ব সাধারনের ক্রয় করার মতো ক্ষমতার মধ্যে চলে আসে।ঘরে ঘরে মোবাইলের প্রভাব চলে আসে।বর্তমানে যার প্রতি মিনিট টাকার পরিবর্তে পয়সায় চলে এসেছে।এখন প্রতিটি ঘরে নয়,প্রতিটি মানুষের কাছে কমপক্ষে ২টি করে মোবাইল থাকে।পকেটে টাকা না থাকলেও মোবাইলে টাকা থাকে।এইতো পরিবর্তন।
মোবাইল কোম্পানির মানুষরাও কিভাবে মানুষকে আসক্ত করতে হয় সেজন্য তারা উচ্চতর ট্রেনিং নিয়ে আসে যেমন একটি মোবাইলের সিম ফ্রিতে না দিয়ে মাত্র দশ টাকা বিক্রয় করে ৮০ টাকা ব্যালেন্স 5 জিবি ইন্টারনেট এমন প্রলভোনে আমাদের যুব সমাজ পা দিয়ে নানান অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে খুব অল্প বয়সে অন্যের হাত ধরে নিজের মতো চলার চেষ্টা করে।মা বাবা পড়ে যায় কঠিন যন্ত্রণার মাঝে।তাদের স্বপ্নগুলো দুমড়ে মুছরে যায় এজন্য দায়ী কে? মোবাইল কোম্পানি না আমাদের দেশ পরিচালনা কর্মকর্তারা নাকি শিক্ষাব্যবস্থা, না পিতামাতা? এ নিয়ে হয়তো কারো মাথাব্যথা নেই।যদিও মাথা ব্যাথা করে তার জন্য রয়েছে প্রতিটা ফার্মেসিতে টাপনীল ক্রয় করে মাথা যন্ত্রণা দূর করে নেয়।
দিন যতটা যাচ্ছে সমাজের যুব সমাজ ততটা ধ্বংস হচ্ছে।এ সম্পর্কে দেশ পরিচালনা কর্মকর্তাদের নতুন কোন পদক্ষেপ নিয়ে যুবসমাজকে বাঁচাবার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
যে কোন পণ্য মার্কেটে বিক্রয়জাত করার পূর্বে সেটি শিশুদের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে সে ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করার জন্য দেশ পরিচালনা কমিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি।
আমি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস খুলনাতে ২০০৩ সাল থেকে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছি যার নাম খুলনা আর্ট একাডেমি।এই প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে তাদের থেকে যে অভিজ্ঞতা আজ অর্জন হয়েছে তারই কিছুটা প্রকাশ করার চেষ্টা করলাম।
লেখার মাধ্যমে কবি সাহিত্যিক এবং শিল্পীরা সমাজ ধ্বংসের কারণ গুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করে তাই আমিও ছবি ও লেখার মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য চেষ্টা করছি।আমার কাছে ছবি শুধু সুন্দর বললে হবে না।
আমার কাছে ছবি হলো একটি ভাষা যে মানুষরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়নি লেখা পড়ে বুঝতে পারে না তাদেরকেও একটি ছবি দেখালে তারা অর্থ বুঝতে পারে।তাই আমার আঁকা ছবিগুলো পৃথিবীর অন্য সব শিল্পীদের চেয়ে একটু ব্যতিক্রম আছে।কারণ আমি জনসাধারণ এর কাছে একটি মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করি।
আমি মহামারি করোনা থেকে দুটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করি Khulna Art Academy এবং Artist Milon Biswas এই দুটিতে আমার লেখা গান, কবিতা, ছোট ছোট নাটিকা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি।যা দেখলে আমাদের দেশের নবীনরা উপকৃত হয়।
এই ক্ষণস্থায়ী জীবন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে যদি আমার দ্বারা কোনো পরিবর্তন ঘটানো না হয় তবে মানবজীবন নিয়ে কি লাভ হলো।এমনটা চিন্তা করেই শিল্প সাধনা করি।
তিনশোর অধিক গান লিখেছি হাজারখানিক কবিতা, আর সমাজের পরিবর্তনের যে সকল কর্মকান্ড নিয়ে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে লেখার চেষ্টা করি।যেমন যুগের পরিবর্তন এই লেখাটির মতো অসংখ্য লেখা লিখেছি।
আমি একজন বাবা।আমার দুটি সন্তান আছে আমি যেটা দেখতে পাই আমার সন্তান যখন কোথাও বেড়াতে গিয়ে থাকে সেখান থেকে আসলে তাদের ভিতরে অনেক কিছু পরিবর্তন ঘটে আসে।যেটা আমার সংশোধন করতে বেশ সময় লেগে যায়।তাই প্রত্যেক মা-বাবাকে অনুরোধ রাখবো আপনার সন্তানের প্রতি আপনি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রাখুন।আপনার সন্তান যেন আপনার কথার অবাধ্য না হয় কমপক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত।তারপরে তার স্বাধীনতা দিয়ে তাকে মুক্ত করে দেন তখন আপনার আদর্শ নিয়ে সে পথ চলবে এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।যদি আমি ভুল কিছু বলে থাকি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।বিষয়টি নিয়ে আমি দীর্ঘ ৪-৫ বছর পর্যন্ত গবেষণা করে তারপরে লেখা এবং ছবি প্রকাশ করার চেষ্টা করি।
যেমন এই লেখাটি ২০১৮ সাল থেকে লেখা শুরু করেছি।আজ আমার এই লেখার মাঝে তুলে ধরবো শিশুরা কেন বদ অভ্যাসে পরিণত হয়।শিশুরা দেখে দেখে শেখে।পিতা মাতাকে অনুকরন করে।
একটি শিশু জন্ম গ্রহন করার পরে পৃথিবীর আলো দেখে, খুজে পায় কিছু প্রিয় মানুষকে যেমন মা বাবা।তাদের হাতে সব সময় এই মোবাইল দেখতে পায়।তাই শিশুও মোবাইলের উপরে আসক্ত হয়ে পড়ে।শিশুর ঘুম থেকে উঠার পর আবার পুনরায় ঘুমানো পর্যন্ত ঠান্ডা রাখতে সব কাজেই তাকে মোবাইল দিতে হয়।এতে শিশুর চোখের এবং নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।
দিন দিন যে হারে প্রতিটি পরিবারে মোবাইল এবং ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার হচ্ছে।এ ব্যাপারে কতৃপক্ষ এর কোনো পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে পিতা মাতার সন্তানকে মানুষ করতে না জানি কতো বিপদে পড়তে হবে এবং ইলেকট্রনিক্স বিষয় যেমন মোবাইল ফোন নিয়ে বেশি কথা নাই বললাম।যুব সমাজের কথা নাই বললাম সেটা আপনারই বিবেচনা করবেন।
আমার এই ছবি আঁকা এবং এই লেখা যদি বর্তমান বাস্তবতার সাথে মিল থাকে তবে অবশ্যই মন্তব্য করবেন।তাহলে আমার পরবর্তী ছবি আঁকার বা লেখার অবকাশ ঘটবে।আমার এই লেখা পড়ার জন্য সকল পাঠকদের ধন্যবাদ জানাই।
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক
খুলনা আর্ট একাডেমি
তারিখঃ০৬-১১-২০১৮