লেখনীতেঃ তাসমিয়া সাহজাবীন
বাবা
এই ঘূর্ণিঝড়ের রাতেও তুমি মেয়ে দুইটারে একা রাইখা যাইবা? ওদের কাছে একটা রাত থাকা যায়না? মেহেদী হাসানের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে উঠেলেন লাবনী বেগম।মেহেদী হাসান কিছু বললেন নাহ! মাথা নিচু করে চুপচাপ হেঁটে গেলেন তার গন্তব্যে।রোদেলা এক দৃষ্টে তার বাবার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আজ নয় বছর হলো রোদেলার বাবা তাদের সাথে থাকেন নাহ, ২য় বিয়ে করে তার ২য় স্ত্রী সন্তানের সাথেই থাকেন।ওরা ৩ ভাই বোন।মেহেদী হাসান ২য় বিয়ে করার পর থেকেই ওরা আলাদা থাকে।ওদের বাবা আসেন মাঝে মাঝে খোঁজ-খবর নিতে।আজ সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড় মোখামের হুশিয়ারি বার্তা চলছে।সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে।ছোট বোন রুহি মাঝে মাঝেই বলে উঠে আমরা যদি আশ্রয়কেন্দ্রে যাইতাম।যদি আমাদের ঘর পানিতে ডুইবা যায়, বাবা কি খুঁইজা পাইবো আমদের?
রাত ১২ টার পর থেকেই ঘূর্ণিঝড় মোখামের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।বারবার কারেন্ট যাচ্ছে! মাইক নিয়ে রাস্তায় হুশিয়ারি ঘোষনা চলছে।বাহিরে পানিতে রাস্তা-ঘাট থৈ-থৈ করছে।আর একটু হলেই যেনো দরজা ঠেলে ঘরের ভেতর পানি ঢুকে যাবে।ওরা ৩ জন একটা রুমে দরজা জানালা বন্ধ করে আধো-আধো মোমবাতির আলোয় গুটিসুটি মেরে বসে আছি।একটু পর পর দমকা হাওয়া এসে জানালায় আছড়ে পড়ছে।বাতাসে গাছপালা উড়িয়ে নিয়ে আসছে টিনের চালে।খুবই বিকট শব্দে ঘর কেঁপে উঠছে।রুহি ভয়ে শক্ত করে মায়ের গলা জড়িয়ে বসে রইল।
রাত তখন ৩ টা… রুহি ঘুমিয়ে গেছে মায়ের কোলেই।বাতাসের তীব্র চাপের কারনে একটা মরা গাছ ভেঙে পড়লো টিনের উপর।টিন ফেটে ভিতরে ঢুকে গেছে গাছটা।ঝরঝর করে পানি নামা শুরু করলো, রুহি ভয়ে লাফিয়ে উঠলো।পানি দেখে কান্নাকাটি শুরু করলো! ধীরে ধীরে যখন পরিবেশ ঠান্ডা হলো তখন হঠাৎ করে রুহি বলে উঠলো ‘আজ বাবা থাকলে ভয় লাগতো না’!