শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সারিয়াকান্দির সেই মেধাবী ছাত্র সাকিবুল হাসানের দায়িত্ব নিলেন সাহাদারা মান্নান এমপি সারিয়াকান্দিতে জিপিএ-৫ পেয়েও অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত সাকিবুল হাসানের সারিয়াকান্দিতে ইউএনও’র সাথে নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যানের শুভেচ্ছা বিনিময় সারিয়াকান্দিতে সরকারি খাদ্য গুদামে ইরি-বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের শুভ উদ্বোধন সারিয়াকান্দিতে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার-২ নালিতাবাড়ী খাদ্য গুদামে ধান-চাল সংগ্রহের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত সারিয়াকান্দিতে অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে রেইজ প্রকল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক ওরিয়েন্টেশন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে লালমনিরহাট জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের শ্রদ্ধা সারিয়াকান্দিতে পূর্ব শত্রুতার জেরে এক যুবককে ছুরিকাঘাত শাহজাদপুরে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মুস্তাক আহমেদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

মধ্যবিত্তের জীবন

শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম :

আমাদের এই সমাজে তিন শ্রেনির মানুষ আছে।উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত।আর এই তিন শ্রেনির মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগা ও অবজ্ঞার যে শ্রেনিটি তা হলো মধ্যবিত্ত, তারা কাউকে কিছু দিতে পারে না, আবার কারো কাছে চাইতেও পারে না, লোকলজ্জার ভয় আর সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে।

জব্বার মিঞা, রাস্তা দিয়ে একা একা হাঁটছে, আর চিন্তা করছে, আজ তার ছোট মেয়েটার স্কুলে ভর্তি ফি’র টাকা জমা দিতে হবে।কারো কাছে ধার চেয়ে তো পেলাম না।আমার পকেটে একটি টাকা পর্যন্ত নেই, মেয়ের ভর্তির টাকা কেমনে যোগাড় করবো, আর কিভাবেই বা আজ বাজার সদাই করবো? ওই দিকে স্ত্রী অপেক্ষা করছে, বাজার নিয়ে গেলে, রান্না করবে, সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেবে।এক ছেলে, এক মেয়ে ও আমরা স্বামী- স্ত্রীসহ চারজনের সংসারে আমি একাই যোগানদাতা।সরকারি চাকুরটা যতদিন ছিলো, তখন তো মোটামুটিভাবে চলতে পেরেছি, এখন কি করবো? আমার পেনশনের টাকাটা পেতেও আরো অনেক দিন বাকি।এমন কত কথা চিন্তা করতে করতে, হেঁটেই চলছে ধীর গতিতে।

পথের মাঝে, তার পুরনো এক বন্ধুর সাথে হঠাৎ দেখা! তার বন্ধু তাকে ডাকলো: আরে, জব্বার নাহ্! তুই এখানে? কেমন আছিস, আর কোথায় যাচ্ছিস? জব্বার মিয়াও তাকে দেখে বেশ অবাক হলো! কিছুটা কৌতুহলী স্বরে উত্তর দিলো: আরে, সাজ্জাদ তুই? আমি তো বিশ্বাসেই করতে পারছি না! তা, হঠাৎ এইদিকে কোত্থে থেকে এলি? মামার বাড়িতে যাচ্ছি।আগে বল, তুই কেমন আছিস?সাজ্জাদের উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি।তোর কি খবর?এতদিন কোথায় ছিলি? আর তোর মুখখানা এমন মলিন কেন? সেই যে কবে তোকে দেখেছিলাম, ঠিক মনে নেই।

একদিন তুই কথায় কথায় কি উচ্চস্বরে হেঁটে উঠতি! আজ কোথায় চলে গেলো সেই হাসিটা! চেহারাটায় এমন মলিন দেখা যাচ্ছে কেন? জব্বার তুই কেন জানি আর আগের মতো নাই।খুব বদলে গেছিস, তোকে তো প্রথমে আমি চিন্তেই পারছিলাম না।হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস এখন আর নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময় আছে? সংসার জিঞ্জিরায় আবদ্ধ হয়ে জীবনের মর্মস্পর্শী ও বেদনাময় দিনগুলো অতিবাহিত করছি।জানিনা এ থেকে কবে মুক্তি পাবো।আর ভালো লাগেনা।

সাজ্জাদ বললো: তোর ঘোরলাগা কথা কোথা না বসলে বুঝতে পারবো না।আচ্ছা, সত্যি করে বল তো কি হয়েছে তোর? তারপর জব্বার বললো, সে অনেক কথা বন্ধু, চল কোথাও গিয়ে বসি, সাজ্জাদ বললো: হ্যাঁ, হ্যাঁ চল্! তারা দুই বন্ধু একটি চা’ স্টলে গিয়ে বসলো: জব্বার বললো: আচ্ছা তুই সেই যে সৌদি আরব গিয়েছিলি তা কত বছর পর আসলি? সাজ্জাদের উত্তর: ১৫ বছর পর আসলাম।কবে আসলি? এই তো, দু’মাস হলো।সাজ্জাদ বললো তোর কি, অবস্থা তোর ছেলমেয়েদের খবর কি? আমার একটা ছেলে ও একটা মেয়ে, তা চাকুরিটা এখনো করছিস? না নারে বন্ধু এখন অবসরে চলে আসছি।তা সব মিলিয়ে কি অবস্থা? এই তো চলছে কোনোভাবে।এভাবে অনেকক্ষণ কথা হলো তাদের মধ্যে।

তারপর জব্বার একটু ইমোশনাল হয়ে পড়ে, আহারে।তোর সাথে আমি যোগাযোগ করার জন্য কত আপ্রাণ চেষ্টা করেছি রে, তা বলে বুঝানো সম্ভব নয়।খুব মিস করেছি তোকে, বিগত দিনগুলোতে কেউ ছিলো না আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো।সবাই সবার স্বার্থে ব্যস্ত ছিলো প্রতিনিয়ত।

যাইহোক, জব্বার কথা বলতে বলতে চায়ের অর্ডার করলো, দোকানির কাছে।তারপর চা দিলো, তারা দুই বন্ধু চা খেতে, মিষ্টি খুনসুটিতে যেন অতীতের হারানো পুরনো দিনগুলোতে ফিরে গেলো: সাজ্জাদ, আবেগাপ্লুত হয়ে বললো: আচ্ছা জব্বার, তোর কি মনে আছে? আমাদের সেই শৈশব ও কৈশোরের সুন্দর সোনালীচাঁপা দিনগুলোর কথা? কোথায় যেন হারিয়ে গেলো, সেইসব দিনগুলো, মনে হয়, এইতো সেদিন! চল্লিশ বছরও হয়নি।চায়ের দোকানে বসে নানাবিধ কথা বার্তা হলো দুই বন্ধুর মধ্যে, এবার উঠার পালা: কে বিল দেবে, এই নিয়ে চলছে বিতর্ক: জব্বার বললো সে দেবে, সাজ্জাদ বলছে না জব্বার আমি দেবো, জব্বার বললো না, না তুই আমাদের এলাকায় এসেছিস, আমি দেবো, তোদের ওখানে গেলে তুই দিস! তারপর জব্বারের এমন আগ্রহ দেখে, সাজ্জাদ সম্মতি পোষণ করলো, বললো আচ্ছা দে’।

জব্বারের এবার মনে হলো যে তার পকেটে কোনো টাকা নাই।তার সারাশরীর ঘেমে যাচ্ছে, মনে মনে বলতে লাগলো হায়, হায় লজ্জায় এবার আমার মাথাটা নিচু হয়ে যাবে, এতদিন পর বন্ধুর সাথে দেখা হলো আর সেই বিলটা যদি আমি দিতে না পারি।কি লজ্জা! কি লজ্জা! মনে মনে বলতে লাগলো হে, আল্লাহ আমি এখন কি করি? আমাকে তুমি এই লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করো।আমার বন্ধুর কাছে আমার সম্মানটা বাঁচাও।এরপর সাজ্জাদ জব্বারে মুখের দিকে থাকালো, আর বললো কি রে বিল দিয়ে চল্ আমি আবার মামা বাড়িতে যাবো একটু তাড়াও আছে।আবার জব্বারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।জব্বারের চোখ দুটি টলমল করছে, সাজ্জাদ বিষয়টি লক্ষ্য করলো কৌতুহলী দৃষ্টিতে, তারপর বললো কি হয়েছে? মাথাটা একটু নিচু করে দিয়ে নিরব হয়ে রইলো।তারপর মৃদু স্বরে বললো: আসলে কিভাবে বলি, আমার তো লজ্জা লাগছে!তোকে বিল দিতে মানা করে দিয়ে এখন তো দেখি আমার পকেটে টাকা নাই।সাজ্জাদ একটু হাসি দিয়ে বললো: আরে তাতে কি হয়েছে? আরে বোকা আমার কাছে আছে তো আমি দিয়ে দিচ্ছি।তখন সাজ্জাদ বিল পরিশোধ করে বললো: চল জব্বার, এবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।

এরপর জব্বার বললো: সাজ্জাদ আমাদের বাসায় চল, আমার ছেলে মেয়েদের দেখে আসবি! সাজ্জাদ বললো নারে বন্ধু আজ না অন্য কোনোদিন যাবো, তোর সাথে সারা দিনমান কথা বলবো, ঘুরবো ফিরবো- খাবো দাবো- খুব মজা করবো।এই বলে সাজ্জাদ বিদায় নিল।সেখানে সাজ্জাদেরও কিছুটা চিন্তার খোরাক মিলেছে, হয়তো কিছুটা বুঝতে পেরেছে।

তারপর জব্বার আবার রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলো, আর মনে মনে বলতে লাগলো, মধ্যবিত্তের খবর কেউ রাখে না, কেউ না।প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধে কিভাবে তারা পরাজিত হয়, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, সন্তান-সন্তুতি, পাড়া প্রতিবেশিদের কাছে।তবুও তারা অনেক সুখে আছে, তা নিজের মুখের হাসি দিয়ে অন্যকে বুঝাতে চেষ্টা করে! কিন্তু আসলে, তা নয়।বিত্তবানরা বিলাসিতায় তাদের দিন অতিবাহিত করে, তাদের পিছু টানের দুর্বলতা নেই।তার মধ্যে নিম্নবিত্তবানরা সবচেয়ে বেশি সুখি, তাদের কিছু নেই, আর কোনো কিছু হারানোর ভয় নেই।যত সমস্যা হচ্ছে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের, সংসারের বাবার, বড় ছেলেদের ও বড় মেয়েদের।কখনো- সখনো মনে হয় মধ্যবিত্তের জীবন বুঝি একটি অভিশপ্ত জীবন।যাদের জীবনে কোনো আনন্দ আহ্লাদ নাই।জব্বার, এইসব কথা ভাবতে ভাবতে তাকিয়ে থাকে দূর শূন্যতায়, আর চোখ থেকে মনের অজান্তেই জল এসে যায়।

লেখক, কবি, কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট
ঠিকানা: বাউশাম, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা
সম্পাদক ও প্রকাশক: দৈনিক দিকের বার্তা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 16 =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x