শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সারিয়াকান্দির সেই মেধাবী ছাত্র সাকিবুল হাসানের দায়িত্ব নিলেন সাহাদারা মান্নান এমপি সারিয়াকান্দিতে জিপিএ-৫ পেয়েও অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত সাকিবুল হাসানের সারিয়াকান্দিতে ইউএনও’র সাথে নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যানের শুভেচ্ছা বিনিময় সারিয়াকান্দিতে সরকারি খাদ্য গুদামে ইরি-বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের শুভ উদ্বোধন সারিয়াকান্দিতে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার-২ নালিতাবাড়ী খাদ্য গুদামে ধান-চাল সংগ্রহের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত সারিয়াকান্দিতে অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে রেইজ প্রকল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক ওরিয়েন্টেশন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে লালমনিরহাট জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের শ্রদ্ধা সারিয়াকান্দিতে পূর্ব শত্রুতার জেরে এক যুবককে ছুরিকাঘাত শাহজাদপুরে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মুস্তাক আহমেদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

বাবার আদর্শের প্রতিবিম্ব হতে চাই

শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম :

বাবা তোমার পরিচয়ে পরিচিত হতে আজো বড্ড গর্ববোধ করি।মানুষ যে তোমাকে কত ভালোবাসে তা যদি তোমার পরিচয় দেই; তাহলে বুঝতে পারি।

নিশ্চয়ই; মানুষকে সারাজীবন নিস্বার্থভাবে ভালোবাসার ফলাফল এটি।নিজের কথা চিন্তা না করে, মানুষের কথা চিন্তা করেছ সর্বদা।সমাজ, গ্রাম, দেশ ও দশের মঙ্গল হবে, এমন কাজ করেছ সারাটি জীবন।শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করেছ এবং বড় বড় দায়িত্বও কাঁধে তুলে নিয়েছ।গ্রামের মসজিদ, মাদ্রাসা গুলোতে কল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত ছিলে সবসময়।কোনো জন-প্রতিনিধি না হয়েও, আপদে-বিপদে মানুষের পাশে থেকেছ; তোমার সে অবদান অনিস্বীকার্য।

সমাজে কত অযোগ্য মানুষ ক্ষমতার আসনে বসেছে; তা নিয়েও তোমার কোনো আক্ষেপ ছিল না কোনো দিন।কত মানুষ রাতারাতি দুর্নীতি ও বাটপারি করে সম্পদের পাহাড় বানিয়ে ফেলেছে! সুদ, ঘুষ, খেয়ে সমাজের অতি নগন্য মানুষও টাকার মালিক বনে গেছে! আর এইসব কর্মকাণ্ডে নিয়ে কোনো দিন তোমার কোনো মাথা ব্যাথা ছিল না যে, তোমাকে কোটিপতি হতে হবে, শিল্প হতে হবে।ন্যায়নিষ্ঠার সাথে জীবনকে পরিচালনা করাই তোমার লক্ষ্য ছিল, চার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করা ও সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলা।যে সন্তানদের বিকেক বুদ্ধি দেশ ও জাতির কল্যাণে ব্যবহৃত হবে।আর সেই দায়িত্বে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল হয়েছ।হাজার ঝড়ঝাপটা ও প্রতিকূলতার মাঝেও তুমি বিন্দুমাত্র পিছ পা হও’নি।

বাবা তুমি শিক্ষিত বলেই; শিক্ষার বিকল্প যে আর কিছু নেই তা তুমি উপলব্দি করতে পেরেছিলে।কিন্তু তুমি শিক্ষিত মানুষ হয়েও, সাদামাটা দিন অতিক্রম করে এসেছ চিরদিন।মাটির সাথে, মাটির মানুষের সাথে তোমার সু-সম্পর্ক সর্বদা-ই।

তোমার পৈতৃক নিবাস ভ্রমনে : মনে পড়ে ২০০৬ সালে আমার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম তোমার পৈতৃক বাড়িতে। মানে তোমরা যেখান থেকে (শ্যামগঞ্জ) ছেড়ে বাউশাম এসেছিলে। আমি বুঝমান হবার পর সেটিই ছিল প্রথম যাওয়া। তুমি ওখান থেকে ছেড়ে এসেছ প্রায়ই পয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর হবে। এখনো তোমার সুনাম সমুন্নত। আমাকে দেখে অনেকেই জিজ্ঞাসা করছিল! তুমি আব্দুল হামিদের ছেলে না? উত্তরে : জ্বী, জ্বী। তোমার বাবার চেহেরার সাথে, তোমার বেশ মিল আছে দেখছি! তোমাকে দেখে তোমার বাবার কথা মনে পড়ে গেলো। সে ছিল এই গ্রামের সচ্ছ নির্ভেজাল খাঁটি সোনার ন্যায় একজন মানুষ।সে যতদিন এই গ্রামে ছিল। ততদিন মানুষের আপদে-বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ত। পড়ালেখায় ছিল সবার ঊর্ধ্বে। সে যে ক্লাশে পড়ত; সেই ক্লাশের ছেলে মেয়েদেরকেই প্রাইভেট পড়াত। খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। এই (বাদেপুঁটিকা) গ্রামে এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, সে কারো উপকার করেনি। গ্রামের কোনো খারাপ মানুষও, তাকে মন্দ বলে না। নির্দ্বিধায় বলবে হামিদের মতো মানুষ হয় না। তার সাথে দীর্ঘদিন আমি চলাফেরা করেছি। আমি ভুল করেও বলতে পারবো না যে, সে আমার প্রতি কোনো দিন মনঃক্ষুন্ন হয়েছে। লোকটি বলল: আমি তার টানে বেশ কয়েকবার ছুটে গিয়েছিলাম তোমাদের গ্রামে, এখানকার অনেকেই গিয়েছিল। সেও আগে প্রায় প্রতিমাসেই আসত। এখন অনেক দিন ধরে আসে না। ব্যস্ততা বেড়েছে সন্তান-সন্তুতি হয়েছে; এখন বলতে গেলে এই গ্রামের চেয়েও সেখানে তার প্রভাব বেশি। যাইহোক, এবার বাড়িতে চল, তোমার বাবাকে নিয়ে অনেক কথা। যা বলে শেষ হবার নয়।উত্তরে বললাম : একটু বাজারে যাচ্ছি; আপনাদের বাড়ি অবশ্যই যাব। এই বলে বিদায় নিলাম। তারপর আমার বিরাট কৌতুহল হলো গ্রামটা ভালো করে ঘুরে দেখতে! যার সাথেই দেখা হয়, আরে তুমি হামিদের ছেলে না? কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে: তুমি ঠিক তোমার বাবার মতো হয়েছ (চেহেরায়) কেউ বাতিজা, কেউ দাদুভাই, সবাই সবার সম্পর্ক অনুযায়ী সম্বোধন করতে লাগল। তখন আমার বন্ধুও সাথে ছিল, সে বলল: তোর বাবার তো এই গ্রামের স্বনামধন্য ব্যক্তি। যিনি দুই জায়গাতেই সমানভাবে পরিচিত।সত্যিই, তখন বুকের ভেতরটায় একটা নাড়া দিয়ে উঠল; গর্বে বুকটা ভরে গেলো।

মমতাবোধ: চিরদিন দেখেছি, আমাদের চার ভাই ও দুই বোনকে সমানভাবে স্নেহ করেছ, ভালোবেসেছ। সব সন্তানেই তোমার কাছে সমান; কারোরেই নেই কোনো ব্যবধান। ছেলে হোক, মেয়ে হোক, তুমি একই পাল্লায় ওজন করেছ। সমস্ত আবদার অনায়াসে পূরণ করে দিয়েছে। তুমি নিজে কষ্ট করেছ। তবুও সন্তানকে তা বুঝতে দাওনি। শত দুঃখ- কষ্টেও হাসি মুখে ছিলে সবসময়। মনে পড়ে, আমি যখন আপাদের বাড়িতে থেকে মানে (দুলাভাইয়ের বাড়ি) লেখাপড়া করি ৬ কিলোমিটার পথ দু-এক দিন পরপরই হেঁটে চলে যেতেন। আমাকেও দেখা হত, সাথে আপাকেও। পৃথিবীর সকল বেদনা তুমি সহ্য করতে পারো। কিন্তু সন্তানের দুঃখ কষ্ট অসুখ- বিসুখ সহ্য করতে পারো না। আমার বড় ভাই যখন দুরারোগ্য ব্যাধিতে ছিল; আমি তখন বুঝেছি, তোমার পরাণ পাখিটা কিভাবে চটপট করেছে, যেন দেহ আছে প্রাণটা নেই। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর তো তুমি পাথর হয়ে গিয়েছিলে। ভাই হয়ে ভাইয়ের জন্য আর্তনাদে বুকের কাচাটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তোমার আকন্ঠ হাহাকার আর বোবা কান্নায় যেন এই প্রকৃতি বাতাস ভারি করে তুলেছিল। কেনই বা তুলবে না বলো: সন্তানের লাশ কোনো বাবা কী কাঁধে তুলে নিতে পারে? কিন্তু তোমাকে নিতে হয়েছিল বাবা। ডুকরে ডুকরে কেঁদে বলেছিলে, আমার চারটি সন্তান, দুই জোড়ার একটি জোড়া আজ ভেঙে গেলো। একদিন বলেছিলাম বাবা তুমি আমাদের নিয়ে এত চিন্তা করো কেন? উত্তরে বলেন : যেদিন বাবা হবি; সেদিন বুঝবি, তোদের জন্য কেন এত চিন্তা করি; এই বলে মৃদুহাসে!

সত্যিই, আজ বুঝতে পারি, বাবা তুমি আমাদের জন্য কেন এতো চিন্তা করো।

বাবারা এমনই হয়।পৃথিবীতে সকল বাবাই একই রকম, ব্যতিক্রমী নাই বিশেষে।বাবা তোমাকে কোনো বিশেষণেই বিশেষীত করা যাবে না।তোমার তুলনা শুধু তুমি, তুমি যে অনন্য।

লেখক, কবি, ছড়াকার, গবেষক ও কলামিস্ট
ঠিকানা: বাউশাম, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 + eighteen =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x