শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম :
আমার বাবা যিনি নিজেকে সতত সতর্ক রেখে, তার সন্তানের ভালোমন্দের সুবিশাল দায়িত্ব নিয়েছিলেন।আর তাতে তিনি সফলতার সাথে সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করে সে দায়িত্বে স্বতস্ফূর্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন।তিনি বলতেন, তোরা সবসময়ই সত পথে চলবি, যদিও সত পথে চলা খুবই কষ্টকর, তবুও সততার সম্মান চিরস্থায়ী।
আমার বাবার কথা, তার সবচে’ বড় পরিচয় তিনি একজন কৃষক, মাটির সাথে, মাটির মানুষের সাথে তার সুসম্পর্ক সতত।তিনি একজন শিক্ষিত মানুষ হয়েও সারা জীবন সাদাসিধেভাবে চাষবাস করে আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছেন।তবুও তাঁর চোখে শত কৌতুহলী স্বপ্ন সন্তানদের নিয়ে।বলেন, তোরা কাজ করবি, দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য।আর তাতে যদি কষ্টও হয়।এমন কিছু করে যাবি, যা তুই একদিন না থাকলেও, মানুষ তোর নাম পদে পদে স্মরণ করবে।
কোনো কাজে যদি ব্যর্থ হতাম; তখন বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতেন, আর বলতেন, আরে বোকা তুই একটি জয় থেকে দু-চারটি পঙক্তির বেশি শিখতে পারবি না।কিন্তু একটি পরাজয় থেকে একটি জ্ঞানমূলক বইয়ের সমান জ্ঞান অর্জন করতে পারবি।আর সে অর্জন থেকে তোর ব্যর্থতার ভুলগুলো শুধরে নিবি ও অবরুদ্ধ পথকে গতিপথে সঞ্চারিত করবি।
আমার কাঁচা হাতের লেখা কবিতা, গল্প ও উপন্যাস সর্বপ্রথম বাবাই পড়েছিলেন এবং মন্তব্যে করে বলেছিলেন।তুই এখনো সাহিত্যে অনেক কাঁচা।যেকোনো সাহিত্যে রাতারাতি উন্নতি করা সম্ভব নয়।তাঁর প্রতি অগাধ শ্রম দিতে হয় এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।একজন লেখকের সাহিত্যের সকল শাখার নিয়মনীতি জানা অত্যাবশ্যক।
পরে অবশ্য জেনেছিলাম তিনি কেন তুমি একথা বলেছিলেন।তার কারণ হিসেবে ছিল, তিনি তার এই মন্তব্যের মাধ্যমে আমার ভিতরের প্রতিভাটাকে দ্রুত জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন।
আজ তিনি আমার সাহিত্য কর্মে ঢের প্রশংসা করেন, আর বলেন দেখবি বাংলা সাহিত্যে খুব দ্রুতই তোর জন্য একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠিত আসন বা উচ্চমাকাম অপেক্ষা করছে।
বাংলা সাহিত্যে স্থায়ীভাবে আসন পাবো কি না জানি না।তবে আমার বাবার মত এমন উৎসাহ কয়জন কবি, লেখক ও গবেষকরা পায় সে কথা জানা নেই।তাই বলি, বাবা তোমার তুলনা শুধু তুমি, তুমি যে অনন্য।
লেখক-বাউশাম, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা
কবি, ছড়াকার, কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট