রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই,মানুষের জন্য কিছু করতে চাই:ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী লিখন মিয়া বাগমারায় কৃষি মেলার উদ্বোধন করলেন এমপি আবুল কালাম আজাদ সারিয়াকান্দিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আনসার সদস্য বাছাই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত লিফট উদ্বোধন বাগমারাবাসীর সেবা করে যেতে চাই-এমপি আবুল কালাম আজাদ প্রচন্ড দাবদাহে পথচারী ও শ্রমজীবীদের মধ্যে হাতীবান্ধায় শরবত বিতরণ কমলাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ছালাম মৃধার উঠান বৈঠকে জনতার ঢল নিজেই এখন গরম ও লোডশেডিং চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দুঃখ প্রকাশ,দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব!

রমজান মাসে রোজার ফজিলত অফুরন্ত।রোজার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন: রোজার প্রতিদান আমি নিজে দেব।’ ইমান ও নামাজের পরই রোজার অবস্থান।রমজান মাসে রোজা পালন করা প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর ফরজ।রোজার আরবি প্রতিশব্দ সাওম যার অর্থ-বিরত থাকা।সাওমের বহুবচন হচ্ছে সিয়াম।রোজা আভিধানিক অর্থে সিয়ামের সমার্থবোধক না হলেও পারিভাষিক অর্থে ফারসী, উর্দু, হিন্দী ও বাংলা ভাষায় সিয়ামের জায়গায় রোজা শব্দটি ব্যবহার হয়।

শরীয়তের পরিভাষায় সিয়াম বা রোজা এর অর্থ হল, ফজর উদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী-সঙ্গম ইত্যাদি যাবতীয় রোজা নষ্টকারী কর্ম হতে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা।

কোরান ও হাদিসে রমজান মাসে রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়ঃ

১। রোজা ফরয করা হয়েছে:

আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক উম্মতের ওপর রোজা ফরয করেছেন।

ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴۡﻜُﻢُ ﭐﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒۡﻠِﻜُﻢۡ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢۡ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেমনি ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)

২। রমজান মাস ক্ষমা লাভের মাস।

‘‘ঐ ব্যক্তির নাক ধূলায় ধুসরিত হোক যার কাছে

রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না।’’ [তিরমিযী]

৩। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ﻣَﻦْ ﺻَﺎﻡَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﺇِﻳﻤَﺎﻧًﺎ ﻭَﺍﺣْﺘِﺴَﺎﺑًﺎ، ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ »

“যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রোজা পালন করবে, তার পূর্ববর্তী পাপরাশী ক্ষমা করে দেয়া হবে” [বুখারী ও মুসলিম]

৪। ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোন একটি নফল ইবাদত করল, সে যেন অন্য মাসের একটি ফরয আদায় করল। আর রমজানে যে ব্যক্তি একটি ফরয আদায় করল, সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরয আদায় করল।(সহিহ ইবনে খুযাইমা )

৫। আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং নিজে রোজার প্রতিদান দেবেন। রোজা পালনকারীকে বিনা হিসেবে প্রতিদান দেয়া হয়। অন্যান্য ইবাদতের প্রতিদান আল্লাহ তা’আলা তার দয়ার বদৌলতে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন।কিন্তু রোজার প্রতিদান ও তার সাওয়াব এর চেয়েও বেহিসেবী সংখ্যা দিয়ে গুণ দিয়ে বাড়িয়ে দেয়া হবে।রমজানের রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন,‘‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে।আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন।কেননা রোজা শুধুমাত্র আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব। [মুসলিম]

অর্থাৎ কি পরিমাণ সংখ্যা দিয়ে গুণ করে এর প্রতিদান বাড়িয়ে দেয়া হবে এর কোন হিসাব নেই, শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন রোজা পুণ্যের ভান্ডার কত সুবিশাল হবে।

৬। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﻓُﺘِّﺤَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ، ﻭَﻏُﻠِّﻘَﺖْ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ، ﻭَﺻُﻔِّﺪَﺕِ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦُ »

‘যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়’। (বুখারি ও মুসলিম)

৭। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রোজা ঢাল স্বরূপ। রাসুল সাঃ বলেছেন:

‘‘রোজা ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার এক মজবুত দূর্গ”। [আহমাদ]

৮। ‘‘যে ব্যক্তি একদিন আল্লাহর পথে রোজা পালন করবে আল্লাহ তার কাছ থেকে জাহান্নামকে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেবেন। [মুসলিম]

৯। এ পুরো মাস জুড়ে দু’আ কবূল হয় অর্থাৎ ‘‘এ রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলমান আল্লাহর সমীপে যে দু’আ করে থাকে-তা মঞ্জুর হয়ে যায়।’’ [আহমাদ]

১০। মাহে রমাজানে প্রতিরাত ও দিনের বেলায় বহু মানুষকে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দিয়ে থাকেন এবং প্রতিটি রাত ও দিনের বেলায় প্রত্যেক মুসলিমের দু’আ- মুনাজাত কবূল করা হয়ে থাকে। [মুসনাদ আহমদ]

১১। রোজার ফজিলত বর্ননা করে রাসুল সাঃ বলেছেনঃ রোজা পালনকারীর জন্য রয়েছে দুটি বিশেষ আনন্দ মুহূর্ত। একটি হল ইফতারের সময়, আর দ্বিতীয়টি হল তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়। [বুখারি ও মুসলিম]

১২। ইফতারের সময় বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। [আহমাদ]

১৩। রোজা পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ তা’আলার কাছে মিশকের ঘ্রাণের চেয়েও প্রিয় হয়ে যায়। [বুখারি ও মুসলিম]

১৪। এ রমজান মাসের লাইলাতুল কদরের এক রাতের ইবাদত অপরাপর এক হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি।অর্থাৎ ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি সাওয়াব হয় এ মাসের ঐ এক রজনীর ইবাদতে।

‘‘কদরের এক রাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে ফেরেশতা আর রূহ (জিবরাইল আঃ) তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে দুনিয়ায় অবতীর্ণ হয়।এ রাতে বিরাজ করে শান্তি আর শান্তি- তা ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত থাকে।’’

[সুরা ক্বদর আয়াত-৪,৫]

১৫। রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল সে মূলতঃ সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল।’’ [নাসায়ী]।

১৬। রমজান মাসের রোজা পালন জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম।”যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, সালাত কায়েম করল, যাকাত আদায় করল, রমজান মাসে রোজা পালন করল তার জন্য আল্লাহর উপর সে বান্দার অধিকার হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া”। [বুখারী]

১৭। রোজা কিয়ামাতের দিন সুপারিশ করবে।

রোজা ও কুরআন কিয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে -রোজা বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় রোজা পালনকারীকে পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি।তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর।অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব, আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি।তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর।তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে।[আহমাদ]

১৮। রোজা পালনকারীরা রাইয়ান নামক মহিমান্বিত এক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে।যার নাম রাইয়্যান।

কিয়ামতের দিন শুধু রোজা পালনকারীরা ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে।তাদের ছাড়া অন্য কেউ সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করার জন্য।তারা প্রবেশ করার পর ঐ দরজাটি বন্ধ করে দেয়া হবে।ফলে তারা ব্যতীত অন্য কেউ আর সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে ঢুকতে পারবেনা।(বুখারী ও মুসলিম)

১৯। রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে তাগিদ দেয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি শরীয়তী উযর ছাড়া রমজান মাসে একটি রোযাও ছেড়ে দেবে, সে যদি এর বদলে সারা জীবনও রোজা পালন করে তবু তার পাপের খেসারত হবে না। [বুখারী

২০। যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে ১টি রোজা রাখবে আল্লাহ সেই ব্যক্তি ও দোযখের মাঝে একটি এমন প্রতিরক্ষার খাদ তৈরি করে দেবেন যা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী জায়গা সমপরিমান চওড়া”। (তিরমিজি)

২১। তিন প্রকার দোয়া আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে থাকে-রোজাদারের দোয়া, অত্যাচারিতের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া।(বায়হাকি)

২২। আবু উমামা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদিন আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, একটি সম্প্রদায় উল্টোভাবে ঝুলছে।তাদের গালটি ফাড়া।তা থেকে রক্ত ঝরছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? বলা হল, এরা ঐসব ব্যক্তি যারা বিনা উযরে রমজান মাসের রোজা ভঙ্গ করেছিল।(সহীহ ইবনে খুযাইমাহ)

২৩। যে ব্যক্তি রমজানের এ মুবারক মাসেও আল্লাহকে রাজী করাতে পারল না, সে বড়ই দুর্ভাগা। (ইবনে হিববান)

২৪। রোজার ফজিলতের একটি গুরুত্বপূর্ন দিক-রোজা হল গুনাহের কাফফারা।আল্লাহ তাআলা বলেন: নিশ্চয়ই নেক আমল পাপরাশি দূর করে দেয়।(সূরা হুদ : ১১৪)।পরিবার পরিজন, ধন-সম্পদ ও প্রতিবেশিদের নিয়ে জীবন চলার পথে যেসব গুনাহ মানুষের হয়ে যায় ; নামাজ, রোজা ও দান খয়রাত সেসব গুনাহ মুছে ফেলে দেয়।(বুখারী ও মুসলিম)

২৫। রোজা যৌনপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখে।হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ রাখে সে যেন বিবাহ করে।কেননা বিবাহ দৃষ্টি ও লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী।আর যে ব্যক্তি বিবাহের সামর্থ রাখেনা সে যেন রোজা পালন করে।কারণ এটা তার জন্য নিবৃতকারী।অর্থাৎ রোজা পালন যৌন প্রবৃত্তি নিবৃত করে রাখে।[বুখারি ও মুসলিম]

২৬। ﺷَﻬۡﺮُ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﭐﻟَّﺬِﻱٓ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﻓِﻴﻪِ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥُ ﻫُﺪٗﻯ ﻟِّﻠﻨَّﺎﺱِ ﻭَﺑَﻴِّﻨَٰﺖٖ ﻣِّﻦَ ﭐﻟۡﻬُﺪَﻯٰ ﻭَﭐﻟۡﻔُﺮۡﻗَﺎﻥِۚ

‘রমজান মাস, যাতে নাযিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, যা বিশ্ব মানবের জন্য হেদায়েত, সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী।’ (সূরা বাকারা:১৮৫)

২৭। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« ﺍﻟﺼَّﻠَﻮَﺍﺕُ ﺍﻟْﺨَﻤْﺲُ، ﻭَﺍﻟْﺠُﻤْﻌَﺔُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺠُﻤْﻌَﺔِ، ﻭَﺭَﻣَﻀَﺎﻥُ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻣُﻜَﻔِّﺮَﺍﺕٌ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻦَّ ﺇِﺫَﺍ ﺍﺟْﺘَﻨَﺐَ ﺍﻟْﻜَﺒَﺎﺋِﺮَ »

“পাঁচ ওয়াক্তের সালাত, এক জুমআ হতে অন্য জুমআর সালাত এবং এক রমজান হতে অন্য রমজানের রোজার মধ্যবর্তী সময়ের সকল অপরাধের কাফফারাস্বরূপ, যদি কবীরা গুনাহ হতে বিরত থাকে”

২৮। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ : ﻛُﻞُّ ﻋَﻤَﻞِ ﺍﺑْﻦِ ﺁﺩَﻡَ ﻟَﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﺼِّﻮْﻡَ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺟْﺰِﻱ ﺑِﻪِ، ﻭَﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻮْﻡُ ﺻَﻮْﻡِ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ، ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺮْﻓُﺚْ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺼْﺨَﺐْ، ﻓَﺈِﻥْ ﺳَﺎﺑَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ﺃَﻭْ ﻗَﺎﺗَﻠَﻪُ، ﻓَﻠْﻴَﻘُﻞْ : ﺇِﻧِّﻲ ﺍﻣْﺮُﺅٌ ﺻَﺎﺋِﻢٌ، ﻭَﺍﻟَّﺬِﻱ ﻧَﻔْﺲُ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﺑِﻴَﺪِﻩِ، ﻟَﺨُﻠُﻮﻑُ ﻓَﻢِ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻢِ ﺃَﻃْﻴَﺐُ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ، ﻣِﻦْ ﺭِﻳﺢِ ﺍﻟْﻤِﺴْﻚِ، ﻟِﻠﺼَّﺎﺋِﻢِ ﻓَﺮْﺣَﺘَﺎﻥِ ﻳَﻔْﺮَﺣُﻬُﻤَﺎ : ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻓْﻄَﺮَ ﻓَﺮِﺡَ ﺑِﻔِﻄْﺮِﻩِ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻟَﻘِﻲَ ﺭَﺑَّﻪُ ﻓَﺮِﺡَ ﺑِﺼَﻮْﻣِﻪِ »

“আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেক আমল তার নিজের জন্য, কারণ তা কেবল আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব।রোজা ঢাল স্বরূপ।যদি তোমাদের কেউ রোজা পালন করে, তাহলে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে, যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়, তবে সে যেন বলে, আমি রোজা পালনকারী।ওই সত্তার শপথ! যার হাতে আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন, নিশ্চয়ই রোজা পালনকারীর মুখের না-খাওয়াজনিত গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশক আম্বরের চেয়েও অধিক প্রিয়।রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে-একটি যখন সে ইফতার করে, অন্যটি যখন সে তাঁর রব আল্লাহর দিদার লাভ করবে তখন আনন্দ প্রকাশ করবে।”(বুখারি ও মুসলিম)

মুসলিম শরীফের অন্য বর্ণনায় রয়েছে:

« ﻛُﻞُّ ﻋَﻤَﻞِ ﺍﺑْﻦِ ﺁﺩَﻡَ ﻳُﻀَﺎﻋَﻒُ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔُ ﻋَﺸْﺮُ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﺒْﻌﻤِﺎﺋَﺔ ﺿِﻌْﻒٍ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﺼَّﻮْﻡَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺟْﺰِﻱ ﺑِﻪِ ﻳَﺪَﻉُ ﺷَﻬْﻮَﺗَﻪُ ﻭَﻃَﻌَﺎﻣَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﺟﻠِﻲ»

“প্রত্যেক আদম সন্তানকে তার নেক আমল দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হবে।আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তা অবশ্য রোজার প্রতিদান ছাড়া; কারণ রোজা আমার জন্য আর আমিই তার প্রতিদান দেব।কেননা আমার কারনে রোজা পালনকারী তার যৌনকার্য ও আহার বর্জন করে থাকে।”

এ তাৎপর্যপূর্ণ হাদীসটি বিভিন্ন দিক থেকে রোজার ফজিলতের প্রমান বহন করছে:

প্রথম দিক:

আল্লাহ তা’আলা সকল ইবাদতের মধ্য থেকে রোজাকে নিজের জন্য খাস করেছেন।কারণ রোজা আল্লাহর কাছে একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত।সিয়াম বা রোজাকে আল্লাহ ভালবাসেন।রোজার মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রতি ইখলাস প্রকাশ পায়।কারণ এটা বান্দা ও তার রবের মাঝে এমন এক গোপন ভেদ যা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানতে পারে না।কেননা রোজা পালনকারী ইচ্ছা করলে মানবশূন্য জায়গা বা এলাকায় আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বস্তু আহার করতে পারেন কিন্তু তিনি তা করেন না।কারণ তিনি জানেন তার একজন রব রয়েছেন, যিনি নির্জনেও তার অবস্থা জানেন।আর তিনিই তার উপর এটা হারাম করেছেন।তাই তিনি রোজার ফজিলতের সাওয়াব লাভের আশায় এবং আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচার ভয়ে আহার বিহার পরিত্যাগ করেন।

এজন্যই আল্লাহ রোজা পালনকারী বান্দার এই ইখলাসের যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করে সাওম বা রোজাকে সকল ইবাদত থেকে নিজের জন্য বিশিষ্ট করে নিয়েছেন।তাই তো তিনি বলেছেন,

« ﻳَﺪَﻉُ ﺷَﻬْﻮَﺗَﻪُ ﻭَﻃَﻌَﺎﻣَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﻠِﻲ ».

“আমার বান্দা আমার কারণে যৌনকাজ ও আহার পরিত্যাগ করে থাকে।”

আর এ বিশিষ্টকরণের উপকারিতা দৃশ্যমান হবে কিয়ামত দিবসে।

যেমনটি সুফিয়ান ইবন ‘উয়াইনাহ রহ. বলেন:

ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻳﺤﺎﺳﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺒﺪﻩ ﻭﻳﺆﺩﻱ ﻣﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻈﺎﻟﻢ ﻣﻦ ﺳﺎﺋﺮ ﻋﻤﻠﻪ ﺣﺘﻰ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﺒﻖ ﺇﻻ ﺍﻟﺼﻮﻡُ ﻳﺘﺤﻤﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻣﺎ ﺑﻘﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻈﺎﻟﻢ ﻭﻳﺪﺧﻠﻪ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺎﻟﺼﻮﻡ .

‘যখন কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার বান্দার হিসাব নেবেন এবং বান্দার সব আমল থেকে তার পক্ষ থেকে অন্যের উপর করা জুলুমের বিনিময় মিটিয়ে দিবেন।অবশেষে যখন সিয়াম বা রোজা ছাড়া তার অন্য কোনো আমল থাকবে না তখন আল্লাহ তাঁর পক্ষ হতে সব জুলুমের বিষয়টি নিজের দায়িত্বে নিয়ে বান্দাকে শুধু রোজা বা সিয়ামের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’

দ্বিতীয় দিক:

রোজার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: « ﻭﺃﻧﺎ ﺃﺟﺰﻱ ﺑﻪ » ‘রোজার প্রতিদান আমি নিজে দেব।’রোজার প্রতিদানকে আল্লাহ তাঁর স্বীয় সত্তার প্রতি সম্পর্কযুক্ত করলেন।কারণ অন্যান্য নেক আমলের প্রতিদান দ্বিগুণ করে দেয়া হবে।প্রতিটি নেক ‘আমল তার দশগুণ থেকে সাতশ গুণ ও তার চেয়েও অধিকহারে দেয়া হবে।আর রোজার ছাওয়াবের কোনো সংখ্যা গণনা না করে আল্লাহ তা‘আলা আপন সত্তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করেছেন।আর আল্লাহই হলেন সবচেয়ে বড় ও মহান ইজ্জতের অধিকারী ও সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল।দান দানশীল অনুপাতেই হয়ে থাকে।তাই রোজার ফজিলতের সাওয়াব এমন বিরাট যার কোনো হিসেব নেই।

আর সাওম হলো: আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য অবলম্বন, আল্লাহ কর্তৃক হারাম বস্তুসমূহ হতে বাঁচার ক্ষেত্রে ধৈর্য অবলম্বন এবং দেহ ও মনের দুর্বলতা এবং ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মতো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান পালনে ধৈর্য ধারণ করার নামান্তর।

* সুতরাং সাওমের মধ্যে ধৈর্য্যের প্রকারদ্বয়ের সবই একত্র হয়েছে।আর আল্লাহ তা‘আলা সবর সম্পর্কে বলেছেন:

ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﻮَﻓَّﻰ ﭐﻟﺼَّٰﺒِﺮُﻭﻥَ ﺃَﺟۡﺮَﻫُﻢ ﺑِﻐَﻴۡﺮِ ﺣِﺴَﺎﺏٖ ‏[ ﺍﻟﺰﻣﺮ : ١٠]

‘নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীলদেরকে তাদের প্রতিদান হিসেব ছাড়া পূর্ণ করে দেয়া হয়।

(সূরা আয-যুমার: ১০)

তৃতীয় দিক:

সাওম ঢাল স্বরূপ।অর্থাৎ তা রোজা পালনকারীকে অনর্থক কথাবার্তা ও অশ্লীল সংলাপ হতে রক্ষা করে।এ জন্যই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻮْﻡُ ﺻَﻮْﻡِ ﺃَﺣَﺪِﻛُﻢْ ﻓَﻼَ ﻳَﺮْﻓُﺚْ ﻭَﻻَ ﻳَﺼْﺨَﺐْ »

‘তোমাদের কেউ রোজা দিবসে থাকলে সে যেন অশ্লীল ভাষায় কথা না বলে এবং চিৎকার করে বাক্য বিনিময় না করে।’

আর রোজা তাকে জাহান্নামের অগ্নি থেকেও রক্ষা করবে।যেমন ইমাম আহমদ রহ. জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাসান সনদে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

« ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﺟُﻨَّﺔٌ، ﻳَﺴْﺘَﺠِﻦُّ ﺑِﻬَﺎ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ »

‘রোজা ঢাল স্বরূপ যার দ্বারা রোজা পালনকারী নিজেকে জাহান্নাম হতে বাঁচাতে পারে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

চতুর্থ দিক:

রোজা পালনকারীর মুখের না খাওয়া জনিত গন্ধ আল্লাহর কাছে মেসকের সুগন্ধি হতেও প্রিয়।কারণ এ গন্ধ রোযার কারণে হয় তাই তা আল্লাহর কাছে সুগন্ধি ও প্রিয় বলে বিবেচিত হয়।এটা আল্লাহর কাছে সিয়ামের মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের প্রমাণ।আল্লাহর আনুগত্যের মধ্য দিয়ে সিয়াম পালিত হয় বলেই রোজাদারের মুখের গন্ধ মানুষের কাছে অপছন্দনীয় হলেও আল্লাহর কাছে তা সুপ্রিয় ও পছন্দনীয় হয়।

পঞ্চম দিক:

রোজা পালনকারীর জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে।একটি আনন্দ ইফতারের সময়, অন্যটি আল্লাহর দীদার লাভের সময়।

ইফতারের সময় আনন্দ: ‘রোজা পালনকারী সর্বোত্তম নেক আমলের অন্যতম ইবাদত রোজা সম্পন্ন করার কারণে আল্লাহ তার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন এ জন্য আনন্দ প্রকাশ করে।

কারণ বহু মানুষ এমন রয়েছে যারা এ অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে; কেননা তারা রোজা পালন করে নি।বরং পানাহার ও স্ত্রী সহবাস যা আল্লাহ তার জন্য অন্য অবস্থায় হালাল করেছেন কিন্তু সাওম অবস্থায় হারাম করেছেন, তা দিয়ে (অবৈধ) আনন্দ-উদযাপনে লিপ্ত।

আল্লাহর দিদার লাভের সময় আনন্দ: ‘যখন একজন রোজা পালনকারী তার অতি দরকারী মুহূর্তে আল্লাহর কাছ থেকে পরিপূর্ণ প্রতিদান পাবে তখন রোজার কারণে আনন্দ প্রকাশ করবে।

যখন বলা হবে:

« ﺃَﻳْﻦَ ﺍﻟﺼَّﺎﺋِﻤُﻮﻥَ ﻟَﻴَﺪْﺧُﻠُﻮﺍ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻣِﻦْ ﺑَﺎﺏ ﺍﻟﺮﻳﺎﻥ ﺍﻟﺬﻱ ﻻَ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﺃَﺣَﺪٌ ﻏَﻴْﺮُﻫُﻢْ ».

‘রোজা পালনকারীরা কোথায়? তারা রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে যেন জান্নাতে প্রবেশ করে, ওই দরজা দিয়ে রোজা পালনকারীরা ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।

উপরোক্ত হাদীসে রোজা পালনকারীর জন্য একটি দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে কিংবা তার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে চায় সে তার অনুরূপ ভূমিকা নেবে না।যাতে না গাল-মন্দ ও সংঘর্ষ বেড়ে যায়, আবার নীরবতা অবলম্বন করে নিজেকে দুর্বল হিসেবেও প্রকাশ করবে না।বরং বলবে ‘আমি তো রোজাদার।’ যাতে ইঙ্গিত করা হয় যে, প্রতিশোধ গ্রহণে অক্ষমতার জন্য নয়, বরং সাওমের সম্মানার্থে ঐ ব্যক্তির অনুরূপ আচরণে সে লিপ্ত হবে না।আর এভাবে ঝগড়া-বিবাদ ও সংঘাত বন্ধ হয়ে যাবে।

‘সমান নয় ভালো ও মন্দ।তুমি উত্তম পন্থায় প্রত্যুত্তর করো।ফলে তোমার সাথে এবং যার সাথে তোমার শত্রুতা রয়েছে সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যায়।ধৈর্যশীল ব্যতিরেকে কেউ তা করতে সক্ষম হয় না এবং ভাগ্যবান ব্যক্তি ছাড়া কেউ তা লাভ করতে পারবে না।’ (সূরা ফুসসিলাত: ৩৪-৩৫)

২৯. রোজা পালনকারীর জন্য কিয়ামতের দিন সিয়াম সুপারিশ করবে:

আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻭَﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻳَﺸْﻔَﻌَﺎﻥِ ﻟِﻠْﻌَﺒْﺪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ، ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ : ﺃَﻱْ ﺭَﺏِّ، ﻣَﻨَﻌْﺘُﻪُ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡَ ﻭَﺍﻟﺸَّﻬَﻮَﺍﺕِ ﺑِﺎﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ، ﻓَﺸَﻔِّﻌْﻨِﻲ ﻓِﻴﻪِ، ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ : ﻣَﻨَﻌْﺘُﻪُ ﺍﻟﻨَّﻮْﻡَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻴْﻞِ، ﻓَﺸَﻔِّﻌْﻨِﻲ ﻓِﻴﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻓَﻴُﺸَﻔَّﻌَﺎﻥِ »

‘রোজা ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।রোজা বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে পানাহার ও যৌনাচার হতে বিরত রেখেছি।সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।কুরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি রাতের ঘুম থেকে তাকে বিরত রেখেছি, সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (আহমাদ)

রোজার উল্লেখিত ফজিলত ওই সকল ব্যক্তির জন্য, যারা গুরুত্বসহ এবং আদবের সঙ্গে রোজা পালন করে।নিজেদের রোজাকে নিখুঁত রাখতে এবং তার বিধিবিধান পালনে চেষ্টা করুন আর আপনারা নিজেদের রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করুন।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রোজা সংরক্ষণ করুন, সিয়ামকে সুপারিশকারী হিসাবে গ্রহণ করুন এবং আমাদের, আমাদের পিতা-মাতা ও মুসলিম উম্মাহকে ক্ষমা করুন।

রমজান শরীফে আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।

লেখকঃ- বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − 12 =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x