কবিতার নাম: পতাকিনী
কবির নাম: তাসরিন ইসলাম রিতু
পুরো পৃথিবী ঘুমিয়ে আছে জেগে আছি নিজেই
অমাবস্যা আজ তাই চাঁদ ও জেগে নেই,
ক্ষুধা দিয়ে পেট ভর্তি আছে খাবার দিয়ে নাই
শীতে কেঁপে জেগে আছি সকালের অপেক্ষায়।
হঠাৎ শুনি আযানধ্বনি কোথা হতে যেন আসে
গাছের দোয়েলের ডাকে বুঝি ভোর হয়ে গেছে,
সামনে থাকা নদীতে নিলাম অজু করে
আধা ছেঁড়া পুরনো চটে নিলাম নামাজ পড়ে।
সূর্যমামাজেগে উঠেছে আলো দেখায় মিটি মিটি
একহাতেলাঠিএকহাতে বাটিঅচিনপথে হাঁটি,
বয়স হয়েছে ৭০ দেহখানি ক্ষীণকায়
ভিক্ষাই তাই জীবনবৃত্তি, কাজ আমায় কে দেয়?
দু’মুঠো মুড়িই আজ সকালের খাবার হয়ে উঠবে
আল্লাহই জানে দুপুরবেলা কপালে কি জুটবে,
হয়েছে মোটে ১০ টাকা কাজকের রোজগার
১প্যাকেট বিস্কুট ছাড়া কিনিনি কোন খাবার।
একটু খানি চাল পেয়েছি ভাত রাঁধতে হবে
শুধু ভাত খেয়ে পেট চালাই তরকারি কে দেবে?
সন্ধ্যা শেষে ঘনিয়ে এলো রাতের আঁধার
বাঁকা হাসি হাসে চাঁদ , তারার সমাহার,
দরজা ভাঙা জানালা ভাঙা ফাঁকা মাটির ঘর
টিন নাই, পাতার ছাউনি আমার মাথার উপর
সামনে দেখি নদীর ঢেউ আমার দিকে চায়
এমন সময় আগের কথা মনে পড়ে যায়,
একদিন আমার সব ছিল ছেলে , মেয়ে , স্বামী
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধেই সব হারিয়েছি আমি।
ছেলে পড়ত ঢা.বি.তে আর মেয়ে পড়ত ডাক্তারি
৭ই মার্চের ভাষণের পর ফিরল ওরা বাড়ি।
রাতের বেলা স্বামী রে দেখেছি
যখনই মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আসতে,
ঘরের যত খাবার আছে
সব দিয়ে দিয়েছি খেতে ।
স্বামীর সাথে ছেলেও যেত দেশমাতার বাঁচাতে
মেয়ে থাকতো ব্যস্ত মুমূর্ষু যোদ্ধার সেবা করতে।
এক রাতে জেগে বসে আছি ছেলে-স্বামীর সবুরে
হঠাৎ শুনি কারা যেন দরজার কড়া নাড়ে ,
দোর খুলে দেখি পাকবাহিনীর নিষ্ঠুরদের দল
রাইফেলধরে বলেআমারে-“জয়পাকিস্তান বল”।
“জয়বাংলা” বলতেই আমারে এক ধাক্কা মেরে
ঘরে ঢুকে মেয়ের কাছে যায় আটকাই কি করে?
হাসতেথাকেবেয়াদবগুলোসর্বনাশ করেমেয়েটার
আল্লাহতোদেরধ্বংসকরবেস্থানপাবিনাপালাবার।
দুঃখের সমাপ্তি নেই, মেয়ের গলা –
হলো ওদের ছুরির অধিনা,
চোখ বুজলো মেয়েটা
মা হয়ে কিছুই করতে পারলাম না
এতকিছুর পরও আমার কান্নার নাহি শেষ
ফিরল স্বামী সঙ্গে ছেলের রক্তমাখা বেশ ,
-তোমার ছেলেরে কবরে রেখে আসলাম আমি
-তোমার মেয়ে চোখ খোলেনা, এসেদেখো তুমি।
এই শুনেই পড়ল মাটিতে বুকের বাঁ পাশ ধরে
বুঝলাম,আমারজীবনসঙ্গীওগেল আমারেছেড়ে।
সেই থেকে নিঃসঙ্গতাই সঙ্গী আর নেই কেউ
সামনের নদীরে মনে হয় লোহিত সাগরের ঢেউ।
ভেবো না এই লোহিত সাগর
ভারত মহাসাগরের অংশ,
এক সাগর রক্তে ধৌত মাটি
করতে পারেনি কেউ ধ্বংস।
এমন পবিত্র ভূমিতেই
৫ বার সেজদায় লুটাই
ধ্বংসের ক্ষমতা আল্লাহরই
আর কারো নাই।
বাংলাদেশের লোহিত সাগর দিয়েছে
৩০ লাখ মুক্তিযোদ্ধা,
তাঁদের জন্যই পেয়েছি আমরা
লাল-সবুজ ঝান্ডা।