লেখক: আহমেদ আবু জাফর :
দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কার্যক্রমের কারণে আমার মাঠ পর্যায়ে সাংবাদিকতার কাজে যাওয়া হয়ে ওঠেনা।শনিবার যেহেতু প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মহাসমাবেশ ছিলো তাই আগ্রহ ভরেই সবক’টি প্রোগ্রামেই হাটলাম।তবে দেখা মিললো মহাসমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর রাজনৈতিক কর্মীদের উগ্রবাদী হামলা, পুলিশের অসহযোগীতা, টিয়ার গ্যাসসহ সংঘর্ষ-সহিংসতার চিত্র।
শনিবারের ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২৫-৩০ জনের বেশি সাংবাদিক আহত হয়েছেন।গুরুতর কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।এর মধ্যে কালবেলা, সময় টিভি, যুমনা টিভিসহ বেশ কয়েকটি গনমাধ্যমের সংবাদকর্মী রয়েছেন।
তবে ওইসব সমাবেশগুলোতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে সাংবাদিকরা তুচ্ছতাচ্ছিল্যের চোখেই ছিলেন।কোথাও ছবি কিংবা ভিডিও ধারণের মত স্থান দেওয়া হয়নি।কোথাও ছাদে কিংবা ছাদের কোনে বা গাছে ঝুলে ভিডিও / ছবি তুলতে হচ্ছে।ঐ সব সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।তারা কখনোবা গুলির সামনে, টিয়ার গ্যাসের মাঝে কখনো বা সংঘর্ষের ফাঁকে সেরা ছবিটি তোলার জন্য জীবন বাজি রাখেন।
আমার বিশ্বাস সংবাদকর্মীদের এহেন কষ্টের চিত্র মিডিয়া মোড়ল মালিকরা কিন্তু দেখেও দেখেন না।তেমনি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দও আজকাল সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ ভাবা শুরু করেছেন।যেটি ঘটনা সেটিই সংবাদ; সেটি কিন্তু বেমালুম ভুলে যান রাজনৈতিক দলের লোকজন, প্রশাসন কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে জড়িত সরকারি আমলারাও।
এবার ধরুণ; ২৮ অক্টোবর শনিবারের রাজনৈতিক দলগুলোর একদিনের কর্মসূচীতে যদি ২৫-৩০ জন সাংবাদিকের শরীরের রক্ত ঝড়াতে হয় তবে আগামী ৩ মাসে কত রক্ত ঝড়বে?ঘটনায় পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপে ঢাকায় সিনিয়র সাংবাদিক রফিক ভুইঞা রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন।
কেনো গণমাধ্যম কর্মী সাংবাদিকরা বারবার রক্তাক্ত হবেন? একইদিন পুলিশের ওপর হামলা-নির্যাতন হত্যা ঘটনায় সরকারি কাজে বাঁধাদানের অভিযোগে কিন্তু মামলা হবে কিংবা হয়ে গেছে।
কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর নির্মম এ হামলার ঘটনায় কে বিচার চাইবে? পুলিশ যেমন রাষ্ট্রীয় বাহিনী তেমনি সাংবাদিকরাও কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্তম্ভের একটি অংশ।পুলিশ হত্যা এবং তাদের ওপর হামলার ঘটনায় অপর যেকোন পুলিশ বাদী হয়েই কিন্তু মামলা করে থাকেন।অধিকন্তু সাংবাদিক আহত হলে কেনো নিজেকে বাদী হয়ে মামলা করতে হবে? সেখানে কর্মরত কোন সহকর্মী কিংবা কর্মরত মিডিয়া মালিকদের পক্ষ থেকে অথবা যেকোন সংগঠনের পক্ষ থেকে মামলার কেনো সুযোগ নেই? এর মানে সাংবাদিকদের ওপর বারবার হামলা হবে কিন্তুু কোন বিচার হবেনা, তাইতো?
কথা হলো, রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা, সুরক্ষা দেবেন।সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেবেন, নিরাপত্তা দেবেন।কিন্তু সাংবাদিকরা আদৌ কি সেই সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন! যদি না পেয়ে থাকেন তবে প্রশ্ন জাগতে পারে কেনো পাচ্ছেন না?
স্বাধীনতার ৫২ বছরে দাড়িয়েও দেশের মানুষকে স্বাধীনতার জন্য, ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য চিল্লাচিল্লি বা গলাবাজি করতে হবে।বিশ্বের উন্নত কিংবা বাংলাদেশী ক্যাটাগরির রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকালে কিন্তু আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক যে নাজুক পরিস্থিতি সেটা সহসাই চোখে পড়বে।আপনারা যারা দেশের শতশত কোটি টাকা অপচয় করে উন্নত রাষ্ট্রের ফর্মূলা খুুঁজতে ভিনদেশে যান তারা কেনো এদেশটাকে উন্নত করে শান্তিকামী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলেন না!
এদেশে পদ্মায় সেতু বসেছে, চট্টগ্রামে পানির নীচে গাড়ি চলে, ঢাকায় আকাশে গাড়ি চলে, চলছে মেট্টোরেলও।দেশটাকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে এখন প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।অসাম্প্রদায়িক ছোট্ট একটি বাংলাদেশ।লাল সবুজের পতাকাধারী স্বাধীনতা বাঙালীর অহংকার।মানবতার মাপকাঠিতে লাখেলাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ে বিশ্বের কাছে এদেশ সেরা।এদেশের মাটিতে বারোমাসি সোনা ফলে।তবে শুধু একটি যায়গায়ই শুধু অনৈক্য।সেটি হচ্ছে রাজনৈতিক মতপার্থক্য।
এ দেশটাকে সাজাতে দরকার উন্নত মেধা আর মননশক্তি।সেটি রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী লোকদের মাঝেও থাকতে পারে।দেশ, মাটি ও মানবতার পক্ষে আসুন, সকল ধরণের নৈরাজ্য, সহিংসতা, হানাহানি বন্ধ করে দেশের পক্ষে কথা বলি, উন্নয়নের পক্ষে কাজ করি।
পৃথীবি শুরু থেকে ২০২৩ বছরের এদেশটার মাঝে বাংলাদেশ নামের মাতৃভূমিকে আমরা সকলে মিলে এগিয়ে নিয়ে যাই।পাঁচ বছর পরপর জ্বালাও পোড়াও কোন রাজনৈতিক সমাধান হতে পারেনা, তেমনি একচোখা দৃষ্টিভঙ্গিও কোন সমাধান নয়।দরকার গণতন্ত্র প্রশ্নে স্থায়ী সমাধান।
আমাদের দেশে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা প্রকট।এই ধরুন, এক সরকার আমলে একটি ব্রিজের কাজ হাতে নিয়েছে।আরেক সরকার এসে ওই ব্রিজের কাজ সমাধান করবে না করে নতুন আরেকটি আরেকটি ব্রিজ তৈরি করবে, রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় করবে।এখন প্রশ্ন হলো একটি ব্রিজের জায়গায় দুটি বরাদ্দ এবং ডাবল খরচ।এই মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।
সবশেষ, আমরা সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চাই।সাংবাদিকদের নিরাপত্তা চাই।স্বাধীনতা পরবর্তী ৩৯ জন সাংবাদিক হত্যার বিচার চাই।২৮ অক্টোবর রাজধানীতে সবক’জন সাংবাদিক হামলার বিচার চাই।
লেখক: চেয়ারম্যান, বোর্ড অব ট্রাস্টি ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম-বিএমএসএফ।