রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বিয়েতে রাজি না হওয়ায় আত্মহত্যা, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মামলা সারিয়াকান্দির সেই মেধাবী ছাত্র সাকিবুল হাসানের দায়িত্ব নিলেন সাহাদারা মান্নান এমপি সারিয়াকান্দিতে জিপিএ-৫ পেয়েও অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত সাকিবুল হাসানের সারিয়াকান্দিতে ইউএনও’র সাথে নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যানের শুভেচ্ছা বিনিময় সারিয়াকান্দিতে সরকারি খাদ্য গুদামে ইরি-বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের শুভ উদ্বোধন সারিয়াকান্দিতে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার-২ নালিতাবাড়ী খাদ্য গুদামে ধান-চাল সংগ্রহের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত সারিয়াকান্দিতে অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে রেইজ প্রকল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক ওরিয়েন্টেশন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে লালমনিরহাট জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের শ্রদ্ধা সারিয়াকান্দিতে পূর্ব শত্রুতার জেরে এক যুবককে ছুরিকাঘাত
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান উন্নয়ন করতে হবে

লেখক: শ্যামল শীল

বিশ্বমানের দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য দিন দিন দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।এটি আমাদের জন্য আনন্দদায়ক খবর।তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি আদৌ বিশ্বমানের হচ্ছে? বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাজুক অবস্থা।

২০২৩ সালের কিউএস ওয়ার্ল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়ে ১-৮০০ মধ্যে বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই।৮০১-১০০০ এর মধ্যে বাংলাদেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।এর মধ্যে সরকারি দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাকি দুটি বেসরকারি।

কিউএস ওয়ার্ল্ড আটটি ভিন্ন মানদ-ের উপর ভিত্তি করে র‌্যাংকিং করে থাকে।এর মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম এবং বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী অন্যতম।সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নের দিকে নজর না দিয়ে শুধু নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে ব্যস্ত।

ইউজিসি ওয়েবসাইট তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫৪ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।গত ৫ অক্টোবর দেশে আরও ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করেছে ইউজিসি।দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রয়েছে নানা অসুবিধা।বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে নেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ।

২০২০ সালের তথ্য নিয়ে তৈরি বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলার মধ্যে ৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ব্যয় ৭২ কোটি ৯০ লাখ ৬২ হাজার টাকা।৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে কোন টাকা ব্যায় করেনি।এর মধ্যে একাধিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বছরে দুই-চারটি প্রকাশনা ছাড়া অন্য কোন গবেষণা করেনি।অনেক বিশ্বিবদ্যালয় গবেষণা খাতে নামমাত্র খরচ করে দায় সেরেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের দিকে।তাদের খাওয়ার মান অত্যন্ত নিম্ন মানের।বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনগুলাতে নেই শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা।জীবন বাঁচানোর তাগিদে তাদের খেতে হয় নিম্ন মানের খাবার।যাদের মেধা দিয়ে সরকার ভবিষ্যতে দেশের ভালো কিছু আশা করে, তারা পুষ্টিকর খাবার না পেলে মেধা বিকশিত হবে কেমন করে?

সরকার রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন, বিভিন্ন সেতু ও টানেল নির্মান করছে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে।এসব নির্মাণ কাজে বাইরের দেশ থেকে জনবল নিয়ে আসতে খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।এসব টাকা বাইরে ব্যায় না করে নিজ দেশের শিক্ষার্থীদের পিছনে ব্যায় করে তাদের যোগ্য করে তুলতে পারতো।এমন পদক্ষেপ নাই বললেই চলে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা।তাদের পড়াশোনা ও গবেষণা করার জন্য নেই মানসম্পন্ন পরিবেশ।মেধাবী শিক্ষার্থীদের গণরুমে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়।আবাসিক হলগুলাতে সিট পেতে ধর্ণা দিতে হয় ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদের।যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছাত্র সংগঠনের নৈরাজ্য চলে আবাসিক হলগুলোতে।বৈধ সিট পেলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাথে সখ্য না থাকলে নিজের বৈধ সিটে উঠতে পারে না।

পর্যাপ্ত আবাসন না থাকায় প্রতিদিন ক্লাস পরীক্ষার জন্য তারা বাসে বাঁদুড়ের মতো ঝুলতে ঝুলতে ক্যাম্পাসের বাসগুলোতে যাতায়াত করছে।আমাদের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতায়াত করেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে।নতুন বাস কেনা হলে নাম দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য।প্রকৃতপক্ষে তা ব্যবহার করেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত।সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো বিষয় নিয়ে কিছু বলেলে এবং সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে গেলে পেতে হয় শাস্তি।এমনকি ফেসবুক স্ট্যাটাসের জন্য শিক্ষার্থীদের বহিষ্কৃত হওয়ার শঙ্কা থাকে।নেই ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

অনেক শিক্ষার্থী তাদের মূল্যবান সময় নতুন কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা বাদ দিয়ে জড়িয়ে পড়ে অপরাজনীতিতে।নতুন কিছু উদ্ভাবনের বিষয় নিয়ে ধ্যান-জ্ঞান নিয়ে মেতে থাকার বিপরীতে তারা ব্যস্ত থাকে স্লোগান দেয়া, রাস্তায় মারামারি ও হানাহানিতে।

বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া সংগঠনের এমন অবস্থা কেন? যে সংগঠন স্বাধীনতা যুদ্ধসহ দেশের ক্রান্তিলগ্নে বিভিন্ন শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচ্চার ছিলো, তারা নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে ব্যস্ত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকে পড়াশোনা ও গবেষণা বাদ দিয়ে রাজনীতিসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত বেশি।পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জয়ের খবর দেওয়ার জন্য যখন অ্যান হুইলেয়ারকে নোবেল কমিটি ফোন দেয়, তখন তিনি ক্লাসে ব্যস্ত।একাধিকবার ফোন দিয়েও তাকে পায়নি নোবেল কমিটি।ক্লাস বিরতিতে আবার কল এলে তিনি রিসিভ করেন।নোবেল কর্তৃপক্ষ থেকে অ্যাডাম স্মিথ নামের এক ব্যক্তি অপর প্রান্ত থেকে কথা বলার জন্য সময় চান।অ্যানি জানান, আমি একটু ব্যস্ত, শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছি।

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক এর বিপরীত।তারা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের চেয়ে রাজনীতি নিয়ে বেশি ব্যস্ত।বিভিন্ন পদ-পদবি ও অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ার আশায় ক্লাস বাদ দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি তাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়।ফলে শিক্ষার্থীদের জীবনে নেমে আসছে সেশনজট।শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে পড়াশোনা শেষ করে বের হতে পারছেনা।

শিক্ষকরা লাল-নীল-সাদাসহ বিভিন্ন দলে বিভক্ত।তারা নিয়মিত পাঠদান বাদ দিয়ে এসব রাজনৈতিক মতাদর্শের বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে বেশি সময় দেন।বর্তমানে শিক্ষকরা একই রাজনৈতিক মতাদর্শের হয়েও কয়েক দলে বিভক্ত।বিভিন্ন দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠানে ফুল দেওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হতে দেখা যায়।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের ফোনালাপ ফাস হয়েছে এবং ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত কর্মচারীরা মাইকে সেটি প্রচার করেছেন।যারা জাতির পথপ্রদর্শক, জাতি ও শিক্ষার্থী যাদের কাছে থেকে শিক্ষালাভ করবে, তারাই যদি এমন নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজের সাথে জড়িত থাকেন, তাহলে তাদের ছাত্রদের কাছ থেকে কি আশা করা যায়?

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের নিয়ে নানা অভিযোগ।শিক্ষকরা সিডিউল অনুযায়ী ক্লাস নেন না।কোনো কোনো শিক্ষক চার-পাঁচ ঘন্টা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে বসিয়ে রেখে বিকেলে ক্লাস নেন।ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখলে সেই দিনই নিয়ে নেন টিউটরিয়াল পরীক্ষা।তবে সব শিক্ষক এক নন, এত অনিয়মের মাঝেও অনেক পিতৃতুল্য শিক্ষক আছেন, যারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবেন।তারা সঠিক সময়ে ক্লাস পরীক্ষা নেন এবং পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করেন।তারা নিয়মিত ক্লাসে আসেন এবং ক্লাসে পাঠদানের আগে সেই বিষয়ে পড়াশোনা করেন যেন নিজের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের সহজে বুঝাতে পারেন।তারা যেন সেশনজটে না আটকায় সেদিকে খেয়াল রাখেন।শিক্ষার্থী বিপদে পড়লে তাদের পাশে দাঁড়ান।অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সাহায্য করেন।তারাই প্রকৃত শিক্ষক।এই মহান মানুষগুলোর জন্যই জাতি চিরকাল ঋণী হয়ে থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পৈতৃক সম্পত্তি।শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক কাজে তাদের কাছে গেলে দেখা যায়, তারা অফিস সময়ে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে।কেউ আবার অফিসে চেয়ারকেই নিজের বেডরুম ভেবে ঘুমিয়ে পড়ে।অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সঠিক সময়ে অফিসে আসেন না।অফিসে এসে বসার একটু পর লাঞ্চের সময় না হতেই লাঞ্চের নাম করে বাইরে চলে যান।নির্ধারিত লাঞ্চের সময় শেষ হলেও তাদের অফিসে ফিরতে দেখা যায় না।তাদের কাজের গাফিলতির জন্য ছাত্ররা তাদের নাম্বারপত্র ও সনদপত্র উত্তোলনসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে হয়রানির শিকার হচ্ছে।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সন্তানদের ভর্তি পরীক্ষায় নির্ধারিত পাশ মার্ক না পেলেও পোষ্য কোটায় তাদের ভর্তি করানোর জন্য আন্দোলন করে।আন্দোলন করে অহেতুক সময় নষ্ট না করে সেই সময়টুকু যদি তাদের সন্তানদের ভর্তি যোগ্য করে তুলতেন, তাহলে তাদের এই অহেতুক আন্দোলন করতে হতো না।

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে অতি উৎসাহী না হয়ে বিদ্যমাগুলোর মান উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে।শিক্ষার্থীদের আবাসন এবং পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মেধারভিত্তিতে আসন বরাদ্দ করা প্রয়োজন।হলগুলোর ডাইনিং এবং ক্যান্টিনে ভর্তুকির পরিমান বাড়িয়ে ছাত্রদের সুষম পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলাতে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে।ক্যাম্পাসে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।রাজনৈতিক সংগঠনগুলাকে তাদের নিজেদের মধ্যে দলাদলি মারামারি হানাহানি বাদ দিয়ে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্রদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।শিক্ষকদের রাজনীতির মাঠের চেয়ে ক্লাসের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।গবেষণায় বাজেট বাড়াতে হবে।শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে এ খাতে প্রণোদনা দিতে হবে।জাতির তরুণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সম্যাসার সমাধান ও নতুন কিছু আবিষ্কার করতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা ইলেকট্রনিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড এর কর্মকর্তা (ডেসকো) ঢাকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 + 17 =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x