রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরন করা হলো না এনজিও কর্মী সঞ্জয়ের সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নিবার্চন থেকে সরে দাঁড়ালেন চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুস সালাম ও আশিক রাজশাহীতে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মাঝে গ্লুকোজ বিতরণ রাজশাহীতে দৈনিক মানবিক বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন দুর্গাপুরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে আবাদি জমিতে পুকুর খনন মোহনপুরে মদ্যপান অবস্থায় বাইক আরোহী নিহত,আহত ২ মান্দায় মহান মে দিবস পালিত মে দিবসে খাবার স্যালাইন,ক্যাপ ও পানি বিতরণ করল রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড জাতীয় শ্রমিক লীগ রাজশাহী মহানগরের উদ্যোগে মহান মে দিবস পালন সারিয়াকান্দিতে দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের মহান মে দিবসে র‌্যালি ও শ্রমিক সমাবেশ
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

৪৭ বছর আগের রাজশাহীর ভয়ংকর এক খুনের গল্প

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে মিনা মঞ্জিল নামের বাড়িটির উঠানে সেদিন শত শত মানুষের ভিড় জমেছিল।পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা ওই বাড়ির আঙিনায় সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করা জায়গাটি খুঁড়ে সেদিন এক নারীর গলিত লাশ উদ্ধার করেছিলেন।খয়েরি শাড়ি, কারুকাজ করা স্যান্ডেল দেখে শনাক্ত হয় সেটি ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নীহার বানুর লাশ।সহপাঠী আহমেদ হোসেন বাবুর বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁকে নির্মমভাবে খুন করে পুঁতে ফেলা হয়েছিল।

ভয়ংকর ঘটনাটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পরেই ঘটে।বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এটিকে প্রথম আলোচিত অরাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।মিনা মঞ্জিলে ১৯৭৬ সালের ২৭ জানুয়ারি খুন হন নীহার বানু।আর সেই বছর ১২ জুন তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

নীহারের লাশ উদ্ধারের সময় তাঁর পায়ে থাকা স্যান্ডেলে লাল-সবুজের কারুকাজ তখনো বোঝা যাচ্ছিল।গলায় ঝুলছিল চারকোনা রুপার তাবিজ।সাড়ে চার মাসে নীহারের লাশ তখন কঙ্কালে পরিণত হয়েছে।

এ ঘটনায় ১৯৭৭ সালে নীহারের সহপাঠী আহমেদ হোসেন বাবুসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।আহমেদ হোসেন বাবুর বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বানিয়াটিরি গ্রামে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রধান আসামি বাবু ও আহসানুল পলাতক থেকে যান।

কে এই নীহার বানু

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ১৯৫৩ সালের ৯ জানুয়ারি নীহার বানুর জন্ম।তাঁর বাবা নজীবুর রহমান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহীদ হন।নজীবুর রহমান রাজশাহী কো-অপারেটিভ অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার ছিলেন।পাঁচ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে নীহার ছিলেন দ্বিতীয়।বাবার মৃত্যুর পর নীহারের বড় বোন মঞ্জিলা বেগম পরিবারের দেখাশোনা করতেন।তিনি ছিলেন পেশায় চিকিৎসক।বাড়ি দিনাজপুরে হলেও তাঁরা রাজশাহীতে থাকতেন।১৯৭৬ সালে নীহার স্নাতকোত্তর পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।নওগাঁর এক প্রকৌশলীর সঙ্গে তাঁর বিয়েও ঠিক হয়েছিল।

অভিযোগপত্রে যাঁদের নাম

১৯৭৭ সালের জুলাইয়ে উত্তরাঞ্চলের একমাত্র বিশেষ সামরিক আদালতে নীহার হত্যার বিচারকাজ শুরু হয়।১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৩৬৪, ৩০২, ২০১ ও ৩৪ ধারা অনুযায়ী তদন্তকারী সিআইডি পরিদর্শক অভিযোগপত্র জমা দেন।

এতে অভিযুক্ত হিসেবে সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়।তাঁরা হলেন ১. আহমেদ হোসেন বাবু (প্রধান আসামি), ২. মো. আহসানুল হক, ৩. মো. শহীদুল ইসলাম (নীলু), ৪. মো. এনামুল হক, ৫. মো. রুহুল আমীন (ফেতু), ৬. আজিজুর রহমান (আজু) ও ৭. ওয়াহেদুল ইসলাম।

এর মধ্যে বাবু ও আহসানুল ঘটনার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।মো. শহীদুল ইসলাম একই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষ, এনামুল হক মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষ এবং রুহুল আমীন (মিনা মঞ্জিলের কেয়ারটেকার) ভূগোল প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।আজিজুর ছিলেন রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।আর ওয়াহেদুল ছিলেন স্নাতক পাস।

তবে বিচারের শুরুতে সামরিক আদালতের চেয়ারম্যান বলেন, রাজশাহীর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মামলার অন্যতম আসামি এনামুলকে ক্ষমা ঘোষণা করেছেন।মামলার স্বার্থে এনামুলের আবেদনক্রমে সরকারপক্ষ এই আবেদন মঞ্জুর করে।পরে তাঁকে রাজসাক্ষী করা হয়।তাঁর জবানবন্দিতে উঠে আসে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা।

নীহার ভাবতেন ভাই, বাবু ভাবতেন প্রেমিকা

নীহার বানুর পরিবার এবং বাবু-নীহারের সহপাঠীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে বিচিত্রার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভাগে বাবু ফুটবল, সাঁতার ও ওয়াটার পোলো খেলোয়াড় হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।বিভাগে তাঁর প্রতিপত্তি ছিল।ভালো খেলে বিভাগের সুনাম বাড়ানোর জন্য মাঠে অনুশীলনের অনুরোধ জানাতে শিক্ষকেরা তাঁর হল কক্ষ পর্যন্ত গিয়েছিলেন।শিক্ষকের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় কথিত সাজেশন পাওয়ার জন্য বিভাগের অন্য শিক্ষার্থীরা আবার বাবুকে সমীহ করে চলতেন।

নীহারের স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষার আগে তাঁর হাম হয়েছিল।প্রস্তুতি ভালো ছিল না।তাই তিনি পরীক্ষা না দেওয়ার কথা ভাবছিলেন।এমন অবস্থায় নোট আর সাজেশন পেতে বাবুর শরণাপন্ন হয়েছিলেন নীহার।বাবুও তাঁকে নোট আর সাজেশন দিয়ে সহযোগিতা করেন।ওই পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে উত্তীর্ণ হন।এরপর নীহারের পরিবারের সঙ্গেও বাবুর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।নীহারের মাকে তিনি মা বলে ডাকতেন, বড় বোনকে ধর্ম বোন বলতেন।

আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, বাবুর সঙ্গে নীহারের ভাই-বোন ছাড়া ভিন্ন কোনো সম্পর্ক ছিল না।কিন্তু একসময় শুধু বাবুই একতরফা নীহারকে প্রেমিকা ভাবতে শুরু করেন এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন।নীহার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।তখন বাবু বলেছিলেন, তিনিও আসলে বোনই মনে করেন, কিন্তু নীহারকে পরীক্ষা করার জন্য এমনটা বলেছেন।এমনটা আরও কয়েকবার হয়েছে।বাবু বিয়ের প্রস্তাব দিতেন, নীহার প্রত্যাখ্যান করতেন।

প্রত্যাখ্যাত হয়ে বাবু বলতেন, তিনি এমনি এমনি কথাটা বলেছেন।তিনিও আসলে নীহারকে বোনই মনে করেন।তবে এরপরও ক্যাম্পাসে বাবুর সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রেখেছিলেন নীহার।বাবু প্রভাবশালী হওয়ায় নীহারের পরিবার তাঁকে রাগাতে চায়নি।

রাজসাক্ষীর বিবরণ অনুযায়ী, হত্যার আগমুহূর্তেও বাবুর বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন নীহার।বলেছিলেন, ‘আপনি এসব কী বাজে কথা ও আবোলতাবোল বলছেন? আপনার সঙ্গে আমার ভাই-বোনের সম্পর্ক।’

নীহারকে মিনা মঞ্জিলে ডাকার আগে বাবুর কক্ষে বৈঠক

১৯৭৭ সালের ২৮ জুলাই নীহার হত্যা মামলার নবম দিনের শুনানিতে রাজসাক্ষী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের ছাত্র এনামুল হক মিনা মঞ্জিলে নীহারকে হত্যার সেই লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণনা করেন।

এনামুল বলেন, ১৯৭৬ সালের ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে আহমেদ হোসেন বাবুর কক্ষে একটি বৈঠক হয়েছিল।এনামুল ও বাবু ছাড়াও ওই বৈঠকে বাবুর সহপাঠী আহসানুল এবং বিভাগের ছোট ভাই শহীদুলও উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২৫ জানুয়ারি নীহারকে দাওয়াত খেতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মিনা মঞ্জিলে নিয়ে যেতে হবে।সেখানে বাবুর সঙ্গে তাঁর বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হবে।স্বেচ্ছায় রাজি না হলে জোর করে বিয়ে পড়ানো হবে।

এনামুলের ভাষ্য অনুযায়ী, বাবু প্রায়ই নীহার বানু সম্পর্কে তাঁদের সঙ্গে গল্প করতেন।কিন্তু নীহারকে যে তিনি বিয়ে করতে চান, তা তিনি বলতে পারতেন না।নওগাঁর এক প্রকৌশলীর সঙ্গে নীহারের বিয়ে ঠিক হওয়ার পর বাবু এনামুলকে তাঁর ইচ্ছার কথা জানান।তাঁদের সহযোগিতা চান।

বাবু বলেছিলেন, নীহারের অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে গেলে তা তিনি সহ্য করতে পারবেন না।তাঁর জীবন বৃথা হয়ে যাবে।২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নিউমার্কেটে বাবু নীহারকে বানিয়ে বানিয়ে বলেছিলেন, ২৫ জানুয়ারি তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত আছে।নীহারকে সেখানে যেতে হবে।নীহার বলেছিলেন, ‘দেখা যাবে।’ তবে ২৫ জানুয়ারি নীহার সারদায় বিভাগের পিকনিকে চলে যান।তা শুনে রেগে যান বাবু।

২৬ জানুয়ারি লতিফ হলে বাবুর কক্ষে আবারও বৈঠক হয়।সিদ্ধান্ত হয়, যেকোনোভাবে হোক নীহারকে মিনা মঞ্জিলে নিয়ে যেতে হবে।সেখানে তাঁকে জোর করেও যদি বিয়েতে রাজি না করানো যায়, তাহলে তাঁকে মেরে ফেলা হবে।

কেন মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা আদালতের পক্ষ থেকে এনামুলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল।এনামুলের ভাষ্য, বাবু বলতেন, নীহারকে বিয়ে করতে না পারলে তিনি বাঁচবেন না।নীহার অন্য কাউকে বিয়ে করবে, তা তিনি সহ্য করতে পারবেন না।

মিনা মঞ্জিলে শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করা হয় নীহারের

১৯৭৬ সালের ২৭ জানুয়ারি দুপুরে বাবু ও নীহার দুটি আলাদা রিকশায় করে মিনা মঞ্জিলে পৌঁছান।সেখানে আগে থেকে অপেক্ষা করছিলেন এনামুল, আহসান ও শহীদুল ইসলাম নীলু।নীহার আর বাবু ঢোকার পরপরই মিনা মঞ্জিলের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।ঘরের দরজা-জানালাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।এরপর বাবু নীহারকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।নীহার তখন রেগে গিয়ে বলেন, ‘আপনি এসব কী বাজে কথা ও আবোলতাবোল বলছেন? আপনার সঙ্গে আমার ভাই-বোনের সম্পর্ক।আপনি আবার যদি ও কথা বলেন, আমি চিৎকার করব।’

নীহার এ কথা বলার পর তাঁর পরনের শাড়ির আঁচল দিয়ে বাবু তাঁর গলা পেঁচিয়ে ধরেন এবং বলতে থাকেন, ‘এখনো রাজি হও।না হলে এখান থেকে আর ফিরে যেতে দেব না।’অসম্মতি জানালে বাবু আরও জোরে জোরে নীহারের গলায় শাড়ি প্যাঁচাতে থাকেন।একপর্যায়ে বাবুর হাত কামড়ে দেন নীহার।

এরপর এনামুল, আহসান ও শহীদুল মিলে নীহারের হাত চেপে ধরে রাখেন, যেন তিনি নড়াচড়া না করতে পারেন।বাবু তখন আরও জোরে জোরে শাড়ি প্যাঁচাতে থাকেন।শ্বাসরোধ হয়ে নীহার মেঝেতে ঢলে পড়েন।

এনামুলের বর্ণনা অনুযায়ী, ওই সময় নীহারের পরনে ছিল খয়েরি রঙের চেক শাড়ি, বাটার হাই হিল স্যান্ডেল, নীল কোট, হলুদ ব্লাউজ এবং কালো পেটিকোট।বাঁ হাতে ছিল ঘড়ি।চুল ছিল লম্বা বেণি করা।গলায় ছিল চারকোনা রুপার তাবিজ।দুই কানে ছিল ছোট দুল।

নীহারকে খুঁজছিল পরিবার

বাবুর রুমমেট এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. রশীদুজ্জামান তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, ১৯৭৬ সালের ২৭ জানুয়ারি বাবু রুমে আসার পর তাঁকে ভীত এবং বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।পরে বন্ধু আহসান ও এনামুল রুমে আসার পর তাঁদের সঙ্গে বের হয়ে যান।সেদিন তিনি আর রুমে ফেরেননি। ২৮ তারিখ দিনের বেলায়ও তিনি রুমে ফেরেননি।রাত ১০টার দিকে এসে কাপড়চোপড় গোছাতে থাকেন।

রশীদুজ্জামান তখন বাবুকে জানান, নীহারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।নীহারের দুই স্বজন তাঁকে খুঁজতে এসেছিলেন।এ কথা বলার পর বাবু বলেন, ‘আমি ঢাকায় চাকরি পেয়েছি। ঢাকায় চলে যাচ্ছি।’রাতেই তিনি বেরিয়ে পড়েন।

যেভাবে লাশ উদ্ধার হয়

সরকারি কৌঁসুলি বলেন, নীহার হত্যা মামলায় প্রথমে শহীদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।এরপর তাঁর জবানবন্দির ভিত্তিতে এনামুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সরকারি সাক্ষী রাজশাহীর প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, ১৯৭৬ সালের ১২ জুন শহীদুল ও এনামুল মিনা মঞ্জিলে লাশ পুঁতে রাখার স্থানটি দেখিয়ে দেন।তখন তিনি পুলিশকে মিনা মঞ্জিলের উঠানে সিমেন্টের চত্বরটি খুঁড়তে বলেন।২০ থেকে ৪০ জন লোকের উপস্থিতিতে মাটি খোঁড়া হলে কঙ্কালটি বেরিয়ে আসে।

আরেক সরকারি সাক্ষী এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহীর সিআইডি পরিদর্শক আহমদ কাইয়ুম বখশ তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, আসামি শহীদুল ও এনামুল তাঁকে দেখিয়েছিলেন, মিনা মঞ্জিলে কোথায় নীহারকে হত্যা করা হয়েছে।কাইয়ুম বখশ আরও বলেন, মিনা মঞ্জিলের যে ঘরে নীহারকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই ঘরের দেয়ালে রক্তের দাগ ছিল।

লাশ গুম করতে কেনা হয়েছিল ট্রাংক

রাজসাক্ষী বলেন, প্রথমে নীহারের লাশটি বড় ট্রাংকে ভরে বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা।১০০ টাকা খরচ করে সাহেববাজার থেকে ৩০ ইঞ্চি আকারের কালো রঙের একটি ট্রাংক কিনেছিলেন তাঁরা।তবে লাশ শক্ত হয়ে যাওয়ায় ট্রাংকে নীহারের লাশ ঢোকানো গেল না।

এরপর মিনা মঞ্জিলের দক্ষিণ দেয়ালের সঙ্গে শৌচাগারের সামনে খালি উঠানে লাশ পুঁতে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়।তাঁর হাত থেকে ঘড়ি এবং কান থেকে দুল খুলে নেওয়া হয়।কলম আর পার্সও রেখে দেওয়া হয়।এরপর নীহারের পরনের পোশাকসহ তাঁকে গর্তে শুইয়ে দিয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়।ওপরে আবর্জনা দিয়ে জায়গাটি ঢেকে দেওয়া হয়।পরে তা সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান এ এন শামসুল হক তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, ১৯৭৬ সালের ২৭ জানুয়ারি বাবু এবং নীহার দুজনই ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন।পরদিন শুধু বাবু ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন।পরে বাবু পালিয়ে যান।

১৯৭৭ সালের ২৯ আগস্ট রায় ঘোষণা

১৯৭৭ সালের ২৯ আগস্ট আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়।তিন সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ সামরিক আইন আদালতের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ সালাম ৪০ পৃষ্ঠার রায়ে নীহার বানু হত্যার ঘটনাকে ভয়াবহ, জঘন্যতম, মর্মান্তিক ও চাঞ্চল্যকর বলে উল্লেখ করেন।রায়ে বলা হয়, এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে, নীহারের হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও ঠান্ডা মাথার কাজ।

রায়ে বাবু, আহসানুল ও শহীদুলকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।এর মধ্যে শুধু শহীদুল আদালতে উপস্থিত ছিলেন।অপর দুজন পলাতক ছিলেন।আদালত মামলায় অভিযুক্ত রুহুল আমীন ফেতুকে লাশ গুমের কাজে হত্যাকারীদের সহায়তা করার অপরাধে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।

অভিযুক্ত অপর দুই আসামি রাজশাহী কলেজের ছাত্র আজিজুর রহমান আজু এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওয়াহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাঁদের বেকসুর খালাস দেন।

নীহারের হত্যাকারী আহমেদ হোসেন বাবু আর কখনো দেশে ফেরেননি।সাজাও ভোগ করতে হয়নি তাঁকে।বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাবু জার্মানিতে থাকেন।

তথ্যসুত্র : প্রথম আলো


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + 8 =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x