শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সারিয়াকান্দিতে জিপিএ-৫ পেয়েও অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত সাকিবুল হাসানের সারিয়াকান্দিতে ইউএনও’র সাথে নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যানের শুভেচ্ছা বিনিময় সারিয়াকান্দিতে সরকারি খাদ্য গুদামে ইরি-বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের শুভ উদ্বোধন সারিয়াকান্দিতে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার-২ নালিতাবাড়ী খাদ্য গুদামে ধান-চাল সংগ্রহের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত সারিয়াকান্দিতে অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে রেইজ প্রকল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক ওরিয়েন্টেশন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে লালমনিরহাট জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের শ্রদ্ধা সারিয়াকান্দিতে পূর্ব শত্রুতার জেরে এক যুবককে ছুরিকাঘাত শাহজাদপুরে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মুস্তাক আহমেদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত সারিয়াকান্দিতে বিশ্ব মা দিবস পালিত
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

ঘুরে এলাম উত্তরবঙ্গের দর্শনীয় স্থানগুলো

কুমিল্লার চান্দিনার মহিচাইল উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৯১ সালে এসএসসি পাশ করা ছাত্র/ ছাত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত “বি-৯১ কো-অপারেটিব সোসাইটি” নামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন।যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে চিরস্থায়ী বন্ধুত্ব সম্পর্ক মজবুত করে ধরে রাখা।এই সংগঠনের উদ্যোগেই দেশের উত্তরবঙ্গের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার জন্য আনন্দ ভ্রমন।

তারিখ ২৮-২৯/২০২৩ইং।এ আনন্দ ভ্রমনের প্রধান উদ্যোক্তা ও সমন্বয়কারী হলেন, আবু তাহের, কামরুল হাসান ও এমরান হোসেন।

অন্যান্য ভ্রমনসহযোগী হলেন, সাংবাদিক ওসমান গনি, আঃ মালেক, জয়নাল আবেদীন, মোস্তফা, শাহ আলম, আলী আশ্রাফ, আঃ ছাত্তার।

২৮ সেপ্টেম্বর /২৩ ইং সকাল ৮ ঘটিকার সময় ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট হতে যাত্রা শুরু।একটি মাইক্রো ও একটি প্রাইভেটকার যোগে প্রথমে শেরপুর জেলার নাকুগাও স্থলবন্দর, গজনী অবকাশ ও মধুটিলা ইকোপার্ক ভ্রমন।গাড়ী চলা শুরু করলো।যাত্রা শুরুর আগে সবাই হালকা/পাতলা নাস্তা করে গাড়ীতে চড়ে বসল।গাড়ী চলতে চলতে সকাল ১১ টার দিকে গাজীপুর জেলার প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত একটি স্থানে হোটেল নিরিবিলি’র সামনে থামল নাস্তার উদ্দেশ্যে।সবাই গাড়ী থেকে নেমে হাতমুখ পরিষ্কার করে নাস্তা খাওয়া শেষ করে আবার যাত্রা শুরু করল, এরই মধ্যে সামনে থেকে ব্যাচমেন বন্ধু ইসমাইল ফোন করে জানাল, সে সামনে রাস্তায় বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছে।গাড়ী কিছুক্ষণ চলার পর ইসমাইলের সাথে দেখা হয়ে গেল।তার সাথে কুশলবিনিময় করার জন্য সবাই গাড়ী নেমে ইসমাইলের সাথে ছবি উঠাইলো, ইসমাইল সকল বন্ধুদের দেখে আনন্দে আত্মহারা।সবাই কে ঠান্ডা পানীয়র বোতল একটি করে গাড়ীতে দিয়ে দিল।এরপর গাড়ী আবার গন্তব্যের উদ্দেশ্য চলা শুরু করল।রাস্তার দুপাশে সবুজ শ্যামল শাল, সেগুন গাছ আর ফসলি জমির অপূর্ব দৃশ্য সবার মন কেড়ে নিল।কি যে এক আনন্দ সেই অনুভূতি বুঝানো বড় কষ্টকর।চলতে চলতে একসময় গাড়ী পৌছ গেল ময়মনসিংহ।সেখানে আরেক বন্ধু জয়নাল আবেদীন সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য ময়মনসিংহ দাঁড়িয়ে আছে।গাড়ী চলতে চলতে একসময় ময়মনসিংহ পৌঁছে গেল।

সেখানে গিয়ে দেখা গেল জয়নাল কেক, বিস্কুট ও ঠান্ডা পানীয় নিয়ে অপেক্ষা করছে।গাড়ী সেখানে যাত্রাবিরতী করার সাথে সাথে দরজা খুলে গাড়ীতে চেপে বসল জয়নাল আবেদীন।সবার সাথে কুশলবিনিময় হলো গাড়ীতে।তারপর চা, বিস্কুট ও ঠান্ডা পানীয় সবাই গাড়ীতে বসে তৃপ্তীসহকারে খাইল। শুরু হলো আবার যাত্রা।রাস্তার দু ধারের সবুজ গাছ গাছালী ও সবুজের মাঠ পেছনে পেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ চলার পর সামনে পড়লো একটি ভাত খাওয়ার হোটেল।সেখানে গাড়ী থামিয়ে দুপুরবেলার ভাত খাওয়ার জন্য গাড়ী থেকে নেমে পড়ল।সবাই হোটেলের ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে খানার টেবিলে বসল।

সফরকারী দলের প্রধান সমন্বয়কারী আবু তাহের হোটেল বয়ের সাথে সহকারী হিসাবে কাজ করে বন্ধুদের নিজহাতে খাওয়ালো।যাতে খাওয়া দাওয়ায় কারও কোন সমস্যা না হয়।সবার শেষে খেলেন আবু তাহের।খাওয়া দাওয়ার পালা শেষ।এবার একটানে গাড়ী চলে গেল শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা নাকুগাও স্থলবন্দরে।সবাই গাড়ী থেকে নেমে ছবিও সেলফি তোলার কাছে ব্স্ত হয়ে পড়ল।কেউ কেউ ভিজিবি চেকপোস্টে গেল সামনে যাওয়ার জন্য অনুমতি আনতে।কিন্তু সীমান্ত এলাকায় ভারতের বিএসএফ ট্রহলরত থাকার কারনে অনুমতি দেয়া হয়নি।সবাই আবার গাড়ীতে চড়ে বসল।এবার গন্তব্য হলো মধুমতি টিলা ইকোপার্ক।

গাড়ী চলতে শুরু করল, সড়কের দুপাশে বিভিন্ন গাছগাছালি ও ছোট বড় পাহাড় দেখা গেল সাথে সাথে দেখা গেল বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী পাহাড়গুলো।দূর থেকে দেখলে মনে হয় কুয়াশাচ্ছন্ন ধো ধো পাহাড়ের অপূর্বদৃশ্য।চলতে চলতে পৌঁছে গেল মধুটিলা ইকোপার্কের গেইটে।গেট ফি ৫০০ টাকা (প্যাকেজ) দিয়ে গাড়িসহ ঢুকে গেলাম পার্কের ভিতরে।সেখানে রয়েছে এক অপূর্বদৃশ্য।

ইকোপার্কের প্রধান ফটক পেরুতেই চোখে পড়লো বন্যপ্রাণী হাতির ভাস্কর্য।এ যেন বাস্তবরূপে দাঁড়িয়ে আছে।কয়েক পা বাড়ালেই চোখে পড়বে লেকের কোণে কুমারী মৎস্যকন্যা আর লেকে বেড়ানোর পানিতে ৩টি প্যাডেল বোট ও ৫টি দেশীয় নৌকা।পাহাড়ি ঝরনাধারার পানি এসে মিশেছে লেকের পানিতে।কালভার্টের ডানে রয়েছে হালকা নাস্তা চা-কফিসহ স্টেশনারি সামগ্রীর দোকান।একটু এগোলেই মনোরম স্টার ব্রিজ, যা লেকের পানির উপর নির্মিত।একসঙ্গে শতাধিক লোক দাঁড়িয়ে-বসে উপভোগ করা যায় বনভোজনের আড্ডা।পাশেই রয়েছে কৃত্রিম কুমির।দেখতে বাস্তব মনে হবে।এরপর বিস্তর এলাকায় ক্ষণে ক্ষণে চোখে পড়বে বিভিন্ন পশুপাখির ভাস্কর্য। স্থানে স্থানে রয়েছে বসার স্থান।উঁচু পাহাড় কেটে ঢালু রাস্তা তৈরি করা হয়েছে রেস্টহাউজে যেতে।প্রাইভেট-মাইক্রো চলার উপযোগী খাঁজকাটা পাকা রাস্তার মাঝের সারিতে রয়েছে নানা রঙের পাথর বসানো এক শিল্পকর্ম যাতে পা পিছলে না যায়।আর উপর-নীচ থেকে দাঁড়ালে মনে হবে বাহারি ফুলের সারি। দু’পাশে রয়েছে জীববৈচিত্র্যের প্রতিকৃতি।ভাস্কর্যগুলো দেখলে মনে হবে যেন শিল্পীর হাতের নিখুঁত চিত্র।

রেস্টহাউজের বাঁকা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় প্রকৃতির মনোমুগ্ধ পরিবেশ।উঁচু-নীচু পাহাড়গুলোর দিকে তাকালে মনে হবে পানির ঝরনাধারা আর এরই নিচে রয়েছে লেক।আসলে সেগুলো পাহাড়ে ওঠার রাস্তা।কিছুদূর ঘুরে এসে দেখা গেল বিশ্রামের জন্য রেস্টহাউজ।প্রয়োজনে উপভোগ করা যায় রেস্টহাউজের আধুনিক সুযোগ সুবিধা।

পাহাড় থেকে পাহাড়, অন্য পাহাড়ে।জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য আর প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী করে ক্যামেরায় ছবি তুলে চেনা অতীতকে স্মৃতি করে রাখার মতো পরিবেশ।আবার মধুটিলার অতি নিকটেই রয়েছে বৃহত্তর জেলার অন্যতম পর্যটক কেন্দ্র গজনী অবকাশ কেন্দ্র, যা ইতিমধ্যেই সারাদেশে অত্যাধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।সেখানেও রয়েছে নতুন নতুন বিস্ময়কর জিনিসপত্র।

অপরূপ এই স্থানটি শেরপুরের ঝিনাইগাতী সীমন্তবর্তী গারো পাহাড়ের গজনী এলাকা।পাহাড়ি সৌন্দর্যের সাথে যোগ হয়েছে কৃত্রিমভাবে নির্মাণ করা অবকাঠামো আর মনোমুগ্ধকর নানা ভাস্কর্যসহ বিনোদনের অনেক কিছু।গজনী অবকাশঘেঁষা উত্তরে মেঘালয় রাজ্যের পোড়াকাশিয়া।অবকাশের চারিদিকেই ছোট বড় অসংখ্য টিলা।প্রতিটি টিলা যেন সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি।অবকাশে যেন অবারিত সবুজের সমারোহ।

এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে।গাড়ী নিয়ে চলে গেলাম রাত্রিযাপনের জন্য শেরপুর শহরে।সেখানে গিয়ে গাড়ী থামিয়ে আবাসিক হোটেল ফ্রিডম খুঁজে বের করলাম।হোটেলে ঢুকে সবার ব্যাগ ও কাপড়চোপড় রেখে রাতের খাবারের জন্য গেলাম হোটেল আলীশানে।রাতের খাবার শেষ করে এবার এবার শুরু হলো “বি- ৯১ কো-অপারেটিভ সোসাইটির” আলোচনা সভা।

আলোচনা সভায় সংগঠনের আগামী পথ চলার পথকে আরও মশৃণ করার জন্য জয়নাল আবেদীন কে সভাপতি, কামরুল হাসানে সাধারণ সম্পাদক, আবু তাহের কে অর্থ সম্পাদক ও ওসমান গনি সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি আগামী ২ বছরের জন্য গঠন করা হয়।

দ্বিতীয় দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে যাত্রা শুরু হলো নেত্রকোনা জেলার বিরিশিরির উদ্দেশ্যে।মাঝপথে যাত্রাবিরতী করে সকালের নাস্তা শেষ করে গাড়ী সোজা চলল নেত্রকোণা জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার উদ্দেশ্যে।সেখানে ঘুরে ঘুরে দেখা হলো নেত্রকোনা জেলার বিরিশিরি দুর্গাপুর অন্যতম স্থানগুলো।পাহাড় নদী আর গাছ-গাছালি ঘেরা আদিবাসী অধ্যুষিত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য গেঁড়া নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুরের বিরিশিরি।এখানে রয়েছে স্বচ্ছ সোমেশ্বরী নদী, বিজয়পুরে আকর্ষনীয় চীনামাটির পাহাড়, নীল পানির হ্রদ ও দূরের গারোপাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য।বিরিশিরিতে বিজয়পুরের আকর্ষণীয় চিনামাটির পাহাড়, নীল পানির লেক, স্বচ্ছ সোমেশ্বরী নদী সৌন্দর্যের পাশাপাশি আরও অনেক কিছু।

সোমেশ্বরী নদীতে বন্ধুরা গোসল করে নিল অনেকে।এটাও একটা সীমান্ত এলাকা।এখানে দেখা গেল গারো উপজাতি মহিলাদের।তারা কাঁধের ঝুলানো ঝুড়িতে করে ভারত থেকে ভারতীয় পণ্যসামগ্রী নিয়ে দলবেঁধে বাংলাদেশে আসছে সারিবদ্ধভাবে।সেখানে থেকে ফিরে জুঃমার নামাজ আদায় করে যাওয়া হলো চীনামাটির পাহাড়ে।সেখানে হেসেখেলে ছবি তুলে পাশের ভাসমান হোটেলে দুপুরবেলার খাওয়াদাওয়া শেষ করে দুপুর ৩ টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।রাত ১২ টায় ঢাকায় এসে যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলে গেল।আসার সময় মাঝপথে ময়মনসিংহ জয়নাল আবেদীন কে তার সুবিধামতো স্থানে নামিয়ে দেয়া হলো।

এ ভ্রমনটি ছিল “বি -৯১ কো-অপারেটিভ সোসাইটি”র সৃষ্টির এক অনন্য ভ্রমন।যা সত্যিই বন্ধুদের মনে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে।৯১ ব্যাচের বন্ধুদের মধ্যে এ ভ্রমনে আত্মিক সম্পর্কে আরও দৃঢ় করে রাখবে।

লেখক- সাংবাদিক ও কলামিস্ট


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four + 10 =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x