খান মেহেদী :-
সাংবাদিকতায় আমি হয়তো কয়েকটি বছর।তবে কম সময়ে মুখ আর মুখোশ চিনতে ভুল করিনি।নিত্যদিনের চলাফেরায় অসৌজন্যতার এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় যে মাঝে মধ্যে নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয়।
শুধু আমি নই, আমরা যারা সত্যটা সাহস করে বলে ফেলি তাদের অনেকেরই একইরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে নিশ্চয়।কিন্তু এই অতি সাধারণ সৌজন্যতাবোধ কেনো আমাদের ভেতর থেকে দুরীভূত হয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।অন্যথায় এখন যেমন অনেক আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছি,ভবিষ্যতে এর পরিধি আরো বেড়ে যাবে।দেখার কথা,এ বিষয়ে আমরা সঠিকভাবে কিছু ভাবছি কি?
কিছু মানুষ তো বরাবরই সরকারি দলে! যখন যে দল ক্ষমতায় তখন তারা সেই দলের।পাড়ার নেতা থেকে শুরু করে রাজনীতির বড় নেতা।আমার ধারনা ওই প্রকারের মানুষ কখনো কারো হতে পারে না।রাজনীতিতে ওই ব্যক্তিরা হাস্যরস বা বিনোদনের জোগান দেয় যেমন তেমন কখনো কখনো তাদের দ্বারা ভয়ংকরতম কিছু ঘটেও থাকে।এখন সব মৌসুমে সরকারি দলে এমন নেতার সংখ্যা বেড়েছে ধরা যেতে পারে জনবিস্ফোরণের মতো।
তাদের প্রবৃদ্ধি এতটাই হয়েছে যে, প্রকৃত রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তৃনমূলে বঞ্চিত।এখন প্রায় সকলেই সরকারি দলের।এমন কি তারা দৃশ্যমানও।প্রকৃতরা চলে গেছেন, দৃশ্যমান কর্মী-নেতাদের আড়ালে।এই দৃশ্যমানরা কাউয়া’দের মুখোশ খসে পড়ছে প্রায় প্রতিদিন।অতিতে তাদের কিছুই ছিল না রাতারাতি হয়ে উঠেছেন যেন কোটিপতি।পরনে মুজিব কোট, বুকে নৌকার ছবি, নিজেদের ব্যাক্তিগত অফিসে নেতাদের ছবি টানিয়ে ওই প্রজাতিটি শুধু নিজেদের অপরাধ ঢাকতে বা প্রভাব বিস্তার করতেই ব্যবহার করে আসছে।হয়তো বা অতীতে বিএনপি’র সময়েও এমন প্রজাতির হাঁকডাক ছিল অনেক তার শত প্রমান রয়েছে বাকেরগঞ্জের রাজপথে।
অনেকেই বলে থাকেন ২০০১ সালের পর থেকে এমন ‘কাউয়া’ প্রজাতির প্রজনন বাড়তে থাকে বাকেরগঞ্জে।এ নিয়ে সকল দলের অভ্যন্তরে কথা হচ্ছে তারা বিব্রতও বটে।কাউয়া’ কি কেবল রাজনীতিতেই আছে? সাংবাদিকতায়ও তারা আছেন প্রবলভাবে।অনেকে ব্রিফকেসের বিনিময়ে বড় পত্রিকার সাংবাদিক বনে গেছেন।তারপর বেসরকারি টেলিভিশন বিস্ফোরণ ঘটার পরেও নানা রূপের সাংবাদিকরা আত্মপ্রকাশ হয়েছে।
অধিকাংশই সরকারি দফতরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি,তাদের ভয় দেখানো ও প্রতারণার লক্ষ্য নিয়ে ছুটছেন অর্থ উপার্জনের ধান্দায়।অনেকে নিজেকে আরালে রেখে দালাল ধরেন বড় পত্রিকায় সংবাদ ছাপানোর বানিজ্যে।এমন অনেক তথ্য রয়েছে আরালে।কিন্তু তাদের পেশা ভিন্ন। সাংবাদিকতার নাম সঙ্গে রাখা, প্রতিপত্তির মাত্রা বাড়ানোর জন্য।
এই ধরনের সাংবাদিক নিজেদের সমৃদ্ধ ও অপরাধ জগত প্রশস্ত করতে রাস্তার হকার, ক্যানভাসার, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, ছিঁচকে চোর, পতিতা, গন্ড মূর্খ, পুলিশের সোর্স, চায়ের দোকানিকেও সাংবাদিক বানিয়ে দেয়ার অভিযোগও প্রমানিত।
এই সাংঘাতিক’দের দৌরাত্ম্য এখন ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।এদের জন্য মুশকিল হয়ে উঠেছে পেশাদার সাংবাদিকদেরও কাজ করা।বর্তমানে বাকেরগঞ্জ শহর বন্দর গ্রামগঞ্জে পেশাদারদের চেয়ে ‘সাংঘাতিক’দেরই রাজত্ব।এরা কখনো রাজনৈতিক নেতা, কখনো ব্যাবসায়িক তবে এদের প্রকৃত রুপ চেনা বড় কঠিন।পরিচিত বা মূলধারার পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল বা টেলিভিশনের সাংবাদিকরা তুলসি পাতা, এমন দাবি করার সামর্থ্য নেই। কারণ মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে বার্তা কক্ষে এমন কেউ কেউতো আছেনই।আবার অনেকে অবৈধ টাকা দিয়ে স্থানিয় পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকও হয়েছেন।এরাও তৈরি হন শিল্পগোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল করার প্রক্রিয়ায়।সকল পেশার মতো এই পেশাতেই নৈতিক স্খলন ঘটে এমন মানুষ নেই, সে কথাও বলা যাবে না।তারা আছেন, হয়তো থাকবেনও।
গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নজর রাখতে হবে, তাদের কর্মীরা যেন সাংবাদিকতার চৌকাঠ ডিঙিয়ে সাংঘাতিক না হয়ে উঠেন।একইভাবে অপরাধ জগতের মানুষের সঙ্গেও সখ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও সকল স্তরের পেশাজীবী সাংবাদিকদের সতর্ক থাকা দরকার আছে বলে আমি মনে করি।তাই অপরাধি যেই হউক প্রকৃত সাংবাদিকদের দায়িত্ব তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দেয়া।
একই সাথে অনুরোধ করছি প্রকৃত রাজনৈতিক নেতাদের তারা যেন এইসব মৌসুমি কাউয়া নেতাদের প্রশ্রয় না দেন।আর আমার এই অনুরোধটি একটু বিবেচনা করলে অন্তত মৌসুমি কাউয়া নেতা ও সাংঘাতিক অনুপ্রবেশে কিছুটা হলেও ভাটা আনা যাবে।