আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামগুলো দিন দিন শহরে পরিণত হচ্ছে।গ্রামগুলোতে অবকাঠামো দিক থেকে শুরু করে গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে।
এই পরিবর্তনের ভিড়ে চিরচেনা বাবুই পাখি হারাতে বসেছে বাসস্থান।বাবুই পাখি দেখতে অনেকটা চড়ুই পাখির মতো কালো,সাদা ও বাদামি রঙ মিশ্রণে সৃষ্টি এদের পালক গুলো। ‘শিল্পী পাখি’ বলে বাবুইয়ের বেশ পরিচিতি রয়েছে। ধানের বিচুলি, তালগাছের কচি পাতা ও খড়কুটো দিয়ে নিখুঁত বাসা বানাতে বাবুই পাখিই সেরা। বাবুইয়ের বাসা দেখতে অনেকটা সাপুড়ের বাঁশির মতো। তাল গাছ, খেজুর গাছ ও বাবলা গাছের ডালে এরা শক্ত ভাবে বাসা বাঁধে। সে বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়- বাতাসে টিকে থাকে তাদের বাসা।
বাবুইয়ের বাসা খুব পুরু ও মাঝখানটা মোটা আকৃতিতে তৈরীর ফলে বৃষ্টির পানি ভিতরে না ঢুকে গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। মূলত গ্রামে গঞ্জে তালগাছে অনেকগুলো ঝুলন্ত বাসা বাঁধে বাবুই পাখি। ঘাস, খড়কুটো ছিঁড়ে ছিঁড়ে ঠোঁটের সাহাযে তারা নিপুণভাবে বোনে তাদের এই বাসা।
পরিশ্রমী বাবুই পাখি তার বাসাকে একতলা, দোতলা, এমনকি তিনতলায় রূপান্তর করতে পারে। ভিতরে প্রবেশের জন্য বাসার নীচের অংশে সরু গোলাকার পথ দিয়ে এরা আসা-যাওয়া করে।এরা দল বেঁধে বসবাস করতে বেশি পছন্দ করে।
কবি রজনীকান্ত সেনের ছড়া কবিতাটির নায়ক নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি।বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।এমন ছড়া কবিতার সাথে পরিচিত নয় তাদের সংখ্যা অনেক কম।
সব গাছ ছাড়িয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছে এখন বাবুই পাখির নিখুঁত বনটের দৃষ্টিনন্দন বাসা তেমন চোখে পড়ে না।তাছাড়া এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলো কেটে কেটে ইটের ভাটাতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।ফলে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে অর্ধশত ও শতবর্ষি তালগাছ গুলো।যেখানে পাখ- পাখালির কূজনে মুখরিত হতো সন্ধ্যা-সাঁঝের বেলা।সেখানে এখন গড়ে উঠছে আধুনিক সভ্যতার অট্টালিকা। এইসব ইট, কংক্রিট ও কংক্রিট ব্লকের তৈরি পরিবেশ বান্ধব পরিবেশে চড়ুইয়ের স্থান হলেও বাবুই পাখিসহ অন্য পাখিরা হারাচ্ছে বাসস্থান।
বাবুই পাখি সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ধান, বীজ, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারন করে। গ্রীষ্মকালে এদের প্রজনন ঋতু। তারা সাধারণত কাটা জাতীয় তাল, খেজুর ও বাবলা গাছে বাসা তৈরি করে। বাসা তৈরি ও খাবার সংগ্রহে সুবিধা হয় এমন দেখে স্থান নির্বাচন করে বাবুই।
কৃষি কাজে ব্যাপক কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বাবুই পাখিসহ অন্যান্য পাখিরা মাঠে পড়ে থাকা খাদ্যশস্য খেয়ে মারা যায়। তাছাড়া পর্যাপ্ত খাদ্যশস্যের অভাব তো রয়েছে। তাছাড়া বড় বড় তালগাছ গুলো ঢুকে পড়ছে ইটভাটার পেটে। ফলে বিলীন হচ্ছে বাবুই পাখি।
এ বিষয়ে কাতিক গোলদার শিক্ষক ও শিক্ষা অনুরাগী বলেন,বাবুই পাখির বাসাটা খুবই শিল্প কারুকাজে সমৃদ্ধ বাসা। বাবুই পাখিকে শিল্পী পাখিও বলা হয়।বাসস্থান ও নিরাপত্তার অভাবে শিল্পী পাখিটা দিন দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে।তালগাছগুলো কেটে যেভাবে উজাড় করা হচ্ছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বাবুই পাখি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।এই প্রজাতির পাখিকে সংরক্ষণের খুবই দরকার।