শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

ওভারটাইম দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ জবির পরিবহন পুলে

ঢাকা থেকে কুমিল্লা রুটে চলাচল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস গোমতী।শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করার উদ্দেশ্য ২০২০ সালে বাসটি চালু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।এটি ছিল কুমিল্লার শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তির।তবে এ প্রাপ্তিকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে বাসের চালক – হেল্পার হাতিয়ে নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক লাখ লাখ টাকা।

শুধুই কুমিল্লা রুটের বাসের চিত্র এটি নয় বরং পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের সবগুলো রুটের বাসে চলছে এসব আর্থিক অনিয়ম।এ আর্থিক অনিয়মের টাকা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন বাসের চালক হেল্পার, বাসের দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে পরিবহন পুলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমনটা অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।

তবে এসব দুর্নীতির বিষয়ে বরাবরের মতোই এড়িয়ে যান পরিবহন পুলের সংশ্লিষ্ট কর্তা – ব্যক্তিরা।একের পর এক ব্যস্ততা দেখিয়ে দামাচাপা দেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায় প্রতিদিন।

শিক্ষার্থীরা জানায়, কুমিল্লাগামী ‘গোমতী’ বাস সপ্তাহে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার নিয়মিত পাঁচদিন শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাতায়াত করে।প্রতিদিন সকাল ছয়টায় কুমিল্লা পুলিশ লাইন থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং বিকেল সাড়ে তিনটায় পুনরায় কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা করেন বাসটি। তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা।

অনুসন্ধান দেখা যায়, গোমতী বাসটি প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের নিয়ে সকাল ছয়টায় কুমিল্লা থেকে রওনা করলেও বাসের লগ বইয়ে উল্লেখ আছে ভোর ৪ থেকে ৫ টা এবং ক্যাম্পাস থেকে বাসটি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় কুমিল্লা পৌঁছালেও লগ বইয়ে উল্লেখ করা আছে রাত ৯, ১০ থেকে ১১ টা পর্যন্ত।

এদিকে শুধু গোমতী বাস নয়, মিরপুর রোডের অনির্বাণ- ১, ঐতিহ্য, উত্তরণ- ২, বিজয়, জবি টু মিরপুর, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জে রোডের বাসগুলোসহ অধিকাংশ বাসে লগবইয়ে অতিরিক্ত সময় উল্লেখ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।তবে এসব রোডের বাসে অনুসন্ধান করতে গিয়ে একাধিকবার চালক- হেল্পার টের পেলে লগবইয়ের ছবি কিংবা ভিডিও সংগ্রহ করা যায়নি।

অন্যদিকে অনুসন্ধানে গোমতী বাসের এসব অনিয়মের ভিডিও চিত্র প্রতিবেদকের হাতে আসলে দেখা যায়,সাজ্জাদ নামের একজন শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর পুরো লগ বইয়ের বেশিরভাগ পাতা জুড়ে।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের ব্যক্তিরা বলছেন, বাসে নিয়মিত যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীরা সময় দেখে স্বাক্ষর করবেন লগ বইয়ের পাতায়।তবে ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ বাস চালকেরা নিজেদের সুবিধা মতো শিক্ষার্থীদের দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেন বলে জানিয়েছেন বাসে নিয়মিত যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীরা।

এদিকে গোমতী বাসে নিয়মিত যাতায়াতকারী একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, বাসের চালক এবং হেল্পার মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে এসব স্বাক্ষর করা হয়।

গোমতী বাসটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সময়কালে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি।গল্প হলেও সত্যি ঠিক ওই তারিখ থেকেই বাসটিতে হয়ে আসছে এসব অনিয়ম।কিন্তু বাসে যাতায়াতকারী একাধিক শিক্ষার্থী বিষয়টি সম্পর্কে একাধিকবার পরিবহন পুলে চালক ও হেল্পারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গেলে সাজ্জাদ বাস বন্ধের ভয় দেখিয়ে বিষয়টি দামাচাপা দেন।

প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে আসে, এ পর্যন্ত গোমতী বাসটিতে দৈনিক ৪ ঘন্টা করে অতিরিক্ত সময় দেখিয়ে চালক ইছহাক ও হেল্পার শাহজাহান পরিবহন পুলের সহায়তা নিয়ে ঘন্টা প্রতি ৬৪ টাকা হারে তিন বছরে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন এবং বাড়তি খাতির যত্ন করছেন পরিবহন পুলের কর্তা-ব্যক্তিদের

গোমতী বাসের চালক ইছহাকের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় নি।

এরপর বাসের হেল্পার শাহাজাহানের কাছে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে সাংবাদিক পরিচয় শুনে কেটে দেন এবং অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন মিরপুর রোডের বাসগুলোর খবর নিতে।শুধু আমাদের বাসে অভিযোগ আসে।রাত ১১ টার কথা শুনে তিনি স্বীকার করেন আমরা রাত আটটা সাড়ে আটটার বেশি লিখিনা।

পরবর্তী সময়ে গোমতী বাসের চালক ইছহাক বলেন, আমাকে পরিবহন পুলের ইব্রাহিম ভাই বলেছে রাত আটটা পর্যন্ত লিখতে কিন্তু এখন লিখি না।আমাদের বছরে অতিরিক্ত ২৪০ ঘন্টা সময় দিবে বলেছেন পরিবহন পুল কিন্তু এখন ১০৪,১০৫ অথবা ১০৭ ঘন্টা দেয়।তবে তিনি অতিরিক্ত সময়ের কথা অস্বীকার করেন।

গোমতী বাসে নিয়মিত যাতায়াতকারী নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বিষয়গুলো সবার চোখের সামনে ঘটে কিন্তু কেউ কিছু বলে না।মাঝেমধ্যে প্রতিবাদ করলে চালক বিষয়টি বিভিন্ন অজুহাতে এড়িয়ে যান। এছাড়াও ইছহাক মামার সামনে কোনো শিক্ষার্থী লগবই ধরতে গেলে খারাপ আচরণ করেন।

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, সপ্তাহে কয়েকবার বাসের চালক কুমিল্লা থেকে রসমালাই ও মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবার – দাবার পরিবহন পুলের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শাহাদাত হোসেন তুষারের নিকট পাঠান।ইতিমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে চালাক কৌশল পাল্টিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম বলে এসব রসমালাই পরিবহন পুলে পৌঁছে দেন।

এছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতকারী প্রতিটি বাসে আনা-নেওয়ার পথে বাহিরের যাত্রী পরিবহনের মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করেন বাস চালক ও হেল্পাররা এমন ভিডিও চিত্র হাতে এসেছে প্রতিবেদকের নিকট।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসের চালক – হেল্পার বলেন, দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কাজ করে যেই টাকা পায় তা দিয়ে সংসার চলে না।বাধ্য হয়ে মাঝেমধ্যে বাইরের যাত্রী উঠায়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গোমতী বাসের দায়িত্বরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়স্থ কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ সংসদের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও কোনো সংযোগ স্থাপন করা যায় নি।

পরিবহন পুলের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন তুষারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ব্যস্ত এখন কথা বলতে পারব না।আমিও ক্যাম্পাসের সাবেক শিক্ষার্থী।

তোমার কথা বুঝতে পারছি না বলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন কিন্তু অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,আমাদের কাছে কোন অভিযোগ নেই, এগুলো সব মিথ্যা।কেউ অভিযোগ দিলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা ব্যবস্থা নিব।

এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন পুলের প্রশাসক সিদ্বার্থ ভৌমিক বলেন, প্রতিবেদকের সাথে অসদাচরণ করেন।নিজের বাবার ব্যক্তিগত পরিচয় দেখিয়ে প্রতিবেদককে ভয় দেখান এবং কোনো কথা বলবে না বলে মুঠোফোনে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন,আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।পরিবহন পুলের পরিচালকের সাথে আমি কথা বলব।

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন,আমি পরিবহন পুলের সকল অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 − four =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x