শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
রাজশাহীতে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মাঝে গ্লুকোজ বিতরণ রাজশাহীতে দৈনিক মানবিক বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন দুর্গাপুরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে আবাদি জমিতে পুকুর খনন মোহনপুরে মদ্যপান অবস্থায় বাইক আরোহী নিহত,আহত ২ মান্দায় মহান মে দিবস পালিত মে দিবসে খাবার স্যালাইন,ক্যাপ ও পানি বিতরণ করল রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড জাতীয় শ্রমিক লীগ রাজশাহী মহানগরের উদ্যোগে মহান মে দিবস পালন সারিয়াকান্দিতে দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের মহান মে দিবসে র‌্যালি ও শ্রমিক সমাবেশ সারিয়াকান্দিতে মে দিবস উপলক্ষে শ্রমিক দলের র‍্যালী ও শ্রমিক সমাবেশ সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

বাগমারায় এনামুলের ভরাডুবির ১০ কারণ !

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৪ বাগমারা আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তিন তিন বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হেভিওয়েট প্রার্থী ইঞ্জি এনামুল হকের ভরাডুবি হয়েছে।

এই আসনে নৌকা প্রতীক পাওয়া তাহেরপুরের মেয়র অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের কাছে ৫৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাজিত হয়েছেন।

অথচ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর তিনি এবারও নিশ্চিত ছিলেন তিনি নৌকা প্রতীক পাবেন।তার ধারনা তিনি নৌকা প্রতীক পেলে তার প্রতিপক্ষ হতে পারেন তাহেরপুরের মেয়র আবুল কালাম।

এই ধারনায় নির্বাচনের কিছু আগে তিনি উপজেলা আ’লীগের এক সভায় বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স এর দলীয় নেতাকর্মীদের নৌকার পক্ষে ভোট দেওয়া ও কাজ করার জন্য শপথ বাক্য পাঠ করান।যা পরবর্তীতে এনামুল হকের জন্য হিতে-বিপোরিত হয়ে দাঁড়ায়।অনেকে বলছেন এই শপথ পড়ানো তার জন্য অতি চালাকের গলায় দড়ি অথবা নিজের জালে নিজেই আটকা পড়ার মত হয়েছে।তাই তো তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পেয়ে ব্যাপক কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

এই কান্নার মাধ্যমে তিনি বাগমারাবাসীর সহানুভুতি ছিনতাই করতে চেয়েছিলেন যা বাস্তবে ঘটেনি।বাস্তবে তিনি ছিলেন ডামি প্রার্থী।কিন্তু তিনি শেখ হাসিনার দোহাই দিয়ে নির্বাচনে নামের কাঁচি প্রতীক নিয়ে।

বিভিন্ন প্রচার প্রচারনায় তিনি বলে বেড়ান, আমি বাগামারাবাসীর মনোনীত প্রার্থী।বাগমারাবাসী আমাকে ভালবাসে। তাদের ভালবাসার টানেই আমি প্রার্থী হয়েছি।নির্বাচিন যদি শান্তিপূর্ন ও নিরপেক্ষ হয় আমি জয়লাভ করব।এনামুলের এই বদ্ধমূল ধরনা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে।এখানে নির্বাচন শান্তিপূর্ন ও নিরপেক্ষ হলেও তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের যেভাবে উত্থান হয়েছে সেভাবেই তার পতন হল।টিট ফর ট্যাট, ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়।কাঁদালে কাঁদিতে হয়।ভোগালে ভুগিতে হয়।২০০৮ সালে সরদার আমজাদ হোসেনের নৌকা তিনি যেভাবে ছিনিয়ে নিয়েছেন।২০২৪ সালে এসে তার একই পরিনতি ভোগ করতে হল।

এছাড়া তার দাবী অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে তার নেতা কর্মীর ওপর কালাম বাহিনীর যে হামলা-দমনপীড়ন ঘটেছে তদ্রুপ ২০১৮ সালে এর দ্বিগুণ স্টাইলে ইঞ্জি এনামুল হকের সন্ত্রাসী বাহিনীরা তৎকালীন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবু হেনাকে নির্যাতন ও লাঞ্চিত করেন।সে সময় এনামুল বাহিনী তার গাড়ি ভাংচুর করে ও পানজাবি ছিড়ে ফেলে।পরে আবু হেনা নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।আজ সেই কর্মফলই ইঞ্জি এনামুল হকের উপর চেপেছে।মাদারীগঞ্জে নির্বাচনী গণসংযোগে গিয়ে তাকে একই পরিনতি ভোগ করতে হয়েছে।

এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।এটাই যেন নিয়তির বিধান।কাউকে মেরে কেউ পার যেতে পারে না।কেন বাগমারাবাসী তাকে প্রত্যাখ্যান করলেন? এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন। তিনি তো জনগনের প্রার্থী দাবী করেছিলেন।ভেবেছিলেন এলাকার সকল মানুষের সেবা করেছি।ঈদ-পূজায় শাড়ি- লুঙ্গি দিয়েছি।সবাইকে ভুড়ি ভোজ করিয়েছি।বাগমারার সর্বস্তরের ভোটার সবাই আমাকে ভোট দিবে।কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি।বিএনপি-জামাতসহ ১৬ দলের ভোট বর্জনেই ছিল।সাধারন মানুষও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

বটবৃক্ষতুল্য হেভিওয়েট ইঞ্জি এনামুল হকের ব্যাপক ভরাডুবির অসংখ্য কারণ ও ঘটনা জড়িত থাকলেও প্রধান প্রধান কারণ ও ঘটনার মধ্যে রয়েছেঃ

(১) নিয়োগ বানিজ্য ও স্বজনপ্রীতিঃ ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে ইঞ্জি এনামুল হক এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতিতে মেতে ওঠেন। এসব প্রতিষ্ঠানে তার অযোগ্য আত্মীয় স্বজন ও এনা প্রপার্টিজের কর্মচারীদের সভাপতি বানিয়ে ব্যাপক লুটপাট, নিয়োগ বানিজ্য, নির্যাতন, হয়রানী ও চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠেন।

মনোনয়ন বানিজ্যঃ ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।এসব নির্বাচনে ইউপি মেম্বার থেকে শুরু করে একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থীর কাছে শুরু করেন মনোনয়ন বানিজ্য।বাগমারা থেকে পাচার হয় কোটি কোটি টাকা।নিঃস্ব হয় এলাকার সহজ সরল মানুষ।

(২) কামিটি বানিজ্যঃ আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগি বিভিন্ন সংগঠনের থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সকল কমিটি গঠনে শুরু হয় ব্যাপক বানিজ্য।পদ-পদবী কেনা বেচা হয়। সুবিধাভোগি বিএনপি-জামায়ত এই সুযোগে আ’লীগ ঢুকে পড়ে।ইঞ্জি এনামুল হক উপাধী পান হাইব্রীড আ’লীগের জনক হিসাবে।

(৩) মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলাঃ বিগত এই ১৫ বছরে বাগমারার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক ছলচাতুরী ও তামাশা খেলা।এখানে অর্থের বিনিময়ে রাতারাতি রাজাকার হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা।আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে ঘুরতে হয় পথে পথে।

(৪) বিষবৃক্ষ নেতা-কর্মীর দাপটঃ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজ আত্মীয় ও নিজস্ব দলীয় লোক সভাপতি বানিয়ে তাদেরকে কোটি পতি বানিয়েছেন।পক্ষান্তরে প্রতিষ্ঠানে কোন অর্থ জমা হয়নি।

(৫) পেশি শক্তির নেতা-কর্মীর বিষবৃক্ষ দাপটে এনামুলের ভরাডুরি জন্য বিশাল অবদান রেখেছে।

(৬) নিজ দলের নেতা-কর্মীদের অপমান-লাঞ্চনাঃ সরদার আমজাদ, আবু হেনার মৃত্যুর পর নিজেকে বাগমারার দেবতা মনে করেন ইঞ্জি এনামুল হক।এই অহংকারে তিনি নিজ দলের নেতা কর্মীদের ব্যাপক অপমান, অবমূল্যায়ন শুরু করেন।ফলে জন্ম নেয় তৃণমূল আ’লীগ।শেষ পর্যন্ত তৃনমূল আ’লীগ বিজয়ী হয় আবুল কালাম এমপি নির্বাচিত হয়ে।

(৭) একাধিক পরকীয়া প্রেম ও নারী সঙ্গঃ নবাব সিরাজউদ্দৌলার যে কারণে পতন।একই রোগে আক্রান্ত হয় ইঞ্জি এনামুল হক।তিনি একাধিক নারী ও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।এছাড়াও তার পিএস ও প্রেস সচিবরা গাদ্দারী করে ওই সব বেফাঁস ছবি, ভিডিও বাইরে পাচার করে দেয়।তিনি ভার্জিন (কুমারী আসক্ত) উপাধী লাভ করেন।যে বাগমারাবাসী তাকে ফেরেশতার মত মনে করত।কিন্তু তার এসব হীন কান্ডে মানুষের মন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।

(৮) টিআর, কাবিখা আত্মসাতঃ শুধু টিআর কাবিখাই নয়।সরকারি বিভিন্ন দান অনুদান আত্মসাতে মেতে ওঠেন ইঞ্জি এনামুল হক।১৫ বছরে এই আত্মসাতে রেকর্ড গড়েন তিনি।

(৯) সর্বহারা ও চরমপন্থী লালন-পালনঃ একই ধারাবাহিকতায় ইঞ্জি এনামুল হক নিজের অন্যায় অপকর্মের প্রতিবাদকারীদের হাত ভেঙ্গে দিতে শুরু করেন চরমপন্থী লালন পালন কার্যক্রম।চিহ্নিত চরমপর্ন্থীদের আশ্রয় দেন ও পদপদবী দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত করেন।যা বাগমারাবাসীর মনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

১০) প্রশাসনকে অবজ্ঞা ও ঝুাড়–মিছিলঃ ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে এমপি’র অযোগ্য সাধারন সম্পাদক গোলাম সারোয়ার আবুল চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে নানানভাবে আচরন বিধি লঙ্গন করলে তার কিছু নির্বাচনী অফিস ভেঙ্গে ফেলে উপজেলা প্রশাসন।ওই ঘটনায় সে সময় ইউএনও’র বিরুদ্ধে ঝাড়ু–মিছিল করে এমপি’র অনুগত বাহিনী।যা প্রশাসন তাদের প্রতি চরম অবজ্ঞা ও অপমান বলে গন্য করে।এবারের নির্বাচেন ওই ঘটনার প্রভাব ছিল লক্ষনীয়।

হায়রে রাজনীতি।এই রাজনীতির সেল বা ধাক্কা বড়ই কঠিন। ওই ধাক্কায় পরপারে চলে যান সরদার আমজাদ ও আবু হেনার মত নেতা।ইঞ্জি এনামুল হক এই ধাক্কায় পড়েছেন।তার এনা প্রপার্টিজ ও বিশাল অর্থ সম্পদ দিয়ে এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠবেন নাকি রাজনীতি থেকে শেষ বিদায় নিবেন।এর উত্তর জানতে বাগমারাবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৫ বছর।নতুন এমপি, মেয়র থেকে এমপি, তাহেরপুরের এমপি, নদীর ওইপার থেকে নির্বাচিত এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ আগামী ৫ বছরে কী কী করেন তার ওপর হবে চুলচেরা বিশ্লেণ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen + one =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x