স্বল্প আয়ের পরিবারে জন্ম, দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে তিনি এমবিএ পাশ করেছেন।স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হবেন, দেশ ও জাতির সেবা করবেন, কিন্তু তার সে স্বপ্ন পুরণ হয়নি।পরিবারের অভাব অনটনের মধ্যেই বাবা মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী বেকার অবস্থায় বিয়ে করেন তিনি, এরপর সন্তানের বাবা হয়ে অভাবটা যেন আরো চেপে বসে তার ওপর।
চারিদিকে অন্ধকার দেখছিলেন তিনি, তখন কি করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না।এর মধ্যে অনলাইনে ইউটিউব ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করা যায় এরকম একটা ভিডিও চোখে পড়ে তার।শেখার ইচ্ছা জাগে তবে ল্যাপটপ কিনবেন কিভাবে ?
রাজশাহী শহরে ১টা টিউশনির টাকা আর স্ত্রীর জমানো ৮ হাজার টাকাই ছিল তার সম্বল।এরপর অনেক ভেবে চিন্তে মায়ের পাওনা নানা বাড়ীর শেষ সম্বল এক টুকরো জমি বিক্রি করে তিনি ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা ল্যাপটপ কেনেন !
এটি একটি জীবনের গল্প, একটি জীবন যুদ্ধের গল্প, একটি সফলতার গল্প।এ গল্পের নায়ক রাজশাহী মহানগরীর বিলসিমলা এলাকায় অবস্থিত ফাইভার আউটসোর্সিং ইনস্টিটিউট, রাজশাহীর মেনটর খাইরুল ইসলাম জনি।
তার এখনো মনে আছে তিনি প্রতিদিন ১৪-১৫ ঘন্টা করে ইউটিউব এ ভিডিও দেখতেন।ইউটিউব ছিল তার একমাত্র ভরসা।২৩ দিনের মাথায় ফাইবারে একটা ৫ ডলারের ডাটা এন্ট্রির কাজ পান।৫ ডলার কাজটা জমা দেওয়ার ৪ দিনের মাথায় ফাইভার থেকে ২ টা মেসেজ পান, তার মধ্যে ১ টা ছিল ইমেইল সংগ্রহের ৫০ ডলারের কাজ।কাজটা করে দেওয়ার পরে বায়ার (৫*) পাঁচতারকা ফিডব্যাক দেয়, এর পর ধীরে ধীরে কাজ পেতে থাকেন তিনি।
ছাত্র অবস্থায় ইংরেজী চর্চা থাকায় বায়ারদের সাথে কথা বলা নিয়ে তেমন সমস্যা হতো না তার।তার জ্ঞানের পরিধি যেহেতু ইউটিউব কেন্দ্রিক তাই ইংলিশ টিউটোরিয়াল দেখে দেখে ফেসবুক মার্কেটিং, গুগল এডস, ইমেইল মার্কেটিং এর মত কাজগুলো শিখে নিজের দক্ষতা বাড়াতে থাকেন।আস্তে আস্তে ৪-৫ মাসে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রায় ১০ টি টপিক শিখে ফেলেন।এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি খাইরুল ইসলাম জনিকে।
এরই ধারাবাহিকতায় তারা স্বামী স্ত্রী দুজনেই ফাইভার মার্কেটপ্লেসে ডিজিটাল মার্কেটিং এডস এক্সপার্ট ও লেভেল-২ সেলার হিসেবে কাজ চালিয়ে যান।সেই সাথে মার্কেটপ্লেসের বাইরে কাজ করে এখন তিনি মাসে হাজার ডলারের বেশি ইনকাম করছেন।তার এই সফলতার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন তার স্ত্রী ও বাবা-মা।
রাজশাহী ফাইভার আউটসোর্সিং ইনস্টিটিউটের ট্রেইনার খাইরুল ইসলাম জনির স্ত্রী জাফরিয়া ইসলাম জানান, অন লাইনে কাজে মেয়েদের সুযোগ সুবিধার কথা।তিনি বললেন, ২০২১ সালে রাজশাহী মহানগরীর বন্ধগেট বিলসিমলা এলাকায় তারা ফাইভার আউটসোর্সিং ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।যার মাধ্যমে অনেক স্টুডেন্টকে ফ্রিল্যান্সিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং শিখিয়েছেন।প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন ও কাজ করছেন।এই ইনস্টিটিউটে এক হাজারের বেশি ফ্রিল্যান্সার তৈরী করেছেন খাইরুল ইসলাম জনি ও তার স্ত্রী জাফরিয়া ইসলাম।তাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশ বিদেশের অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সার এখন কাজ করে আয় করছে লাখ লাখ টাকা।
দেশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে প্রযুক্তি খাতে ফ্রিল্যান্সিংয়ে তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে।বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির তথ্যমতে, এখন প্রায় সাড়ে ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার বাংলাদেশ থেকে কাজ করছেন।