বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়ার জন্য ময়দান ও আশপাশের এলাকায় মুসল্লিরা সমবেত হয়েছেন। শীত উপেক্ষা করে তুরাগতীরে লাখো মুসল্লি
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আজ রোববার তাবলিগের মাওলানা সাদপন্থী অংশের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।
এই পর্ব সমাপনীর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ তাবলিগ জামাতের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমাও শেষ হবে।
আখেরি মোনাজাতের পর তাবলিগের দাওয়াতের কাজে অংশ নিতে নতুন নতুন জামাত দেশ-বিদেশের উদ্দেশে বেরিয়ে যাবে। আগামী বছর ইজতেমা পর্যন্ত চলবে দাওয়াতের এই মেহনত।
আজ রোববার সকাল থেকেই ময়দানে কনকনে শীত উপেক্ষা করে মুসল্লিরা দিনের আমলের সম্পর্কে বয়ান শুনছেন। বাদ ফজর ভারতের মুরুব্বি (ইজতেমা) মুরসালিনের আরবি ও হিন্দিতে দেওয়া বয়ানের বাংলা অনুবাদ করছেন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফ আলী।
বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে নিজামুদ্দীন মারকাজের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা সাদের বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করার কথা রয়েছে।
আজ আখেরি মোনাজাতে ময়দান ও তার আশপাশের এলাকায় ১০ থেকে ১২ লাখ লোকের সমাগম ঘটতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রায় ৯ হাজার বিদেশি মুসল্লি ময়দানের উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটির সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম।
মোহাম্মদ সায়েম জানান, হেদায়েতি বয়ান শেষ করেই আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। আজ সকাল ১০টার কাছাকাছি সময়ে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন ইজতেমা ময়দান ও তার আশপাশের এলাকা দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে কানায় কানায় পূর্ণ। তাঁরা বয়ান শোনা ও ইবাদতে মশগুল রয়েছেন। প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত বয়ান চলছে।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৬০টির বেশি দেশ থেকে প্রায় ৭ হাজার মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ময়দানে চারটি তাঁবুতে ইংরেজি, উর্দু, আরবি ও বাংলা খিমায় তাঁরা অবস্থান করছেন।
আখেরি মোনাজাত সামনে রেখে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ইজতেমার আশপাশের কয়েকটি মহাসড়কে যান চলাচল ভোর থেকে বন্ধ থাকবে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার মোনাজাত শেষে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত, চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মিরেরবাজার থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত এবং কামারপাড়া থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকা কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রয়েছে।
ফ্রি চিকিৎসাসেবা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে বিভিন্ন টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিমে ১২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৫১ জন চিকিৎসক, ৪ জন ডেন্টাল সার্জনসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে ১৯৬ জন কাজ করছেন।
দ্বিতীয় পর্বে ৫ মুসল্লির মৃত্যু
গণমাধ্যম সমন্বয়কারী মো. সায়েম আরও জানান, দ্বিতীয় পর্বে পাঁচ মুসল্লি মারা গেছেন। তাঁরা হলেন ঢাকার কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইন এলাকার আব্দুল হান্নান (৪৫), রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজার এলাকার ব্যবসায়ী মো. বোরহান (৪৮), গাইবান্ধার আব্দুল হামিদ মণ্ডল (৫৫) এবং বরগুনার মফিজুল ইসলাম (৫৪), ঢাকার সাভারের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম (৭৫)।
ইজতেমায় ট্রেন ও বাস সার্ভিস
টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার রাকিবুর রহমান জানান, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ঢাকা-টঙ্গী, ময়মনসিংহ-টঙ্গী ও টাঙ্গাইল-টঙ্গী রুটে ১৩টি অতিরিক্ত ট্রেন চলাচল করবে। এ ছাড়া এই রুটে চলাচলরত সব ট্রেন টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে যাত্রাবিরতি করবে।
এ ছাড়া আখেরি মোনাজাতের পর মুসল্লিদের ফিরতি যাত্রায় বিআরটিসির পক্ষ থেকে ৩০০ বিশেষ বাস চালু থাকবে।