শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সারিয়াকান্দিতে জিপিএ-৫ পেয়েও অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত সাকিবুল হাসানের সারিয়াকান্দিতে ইউএনও’র সাথে নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যানের শুভেচ্ছা বিনিময় সারিয়াকান্দিতে সরকারি খাদ্য গুদামে ইরি-বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের শুভ উদ্বোধন সারিয়াকান্দিতে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটসহ গ্রেফতার-২ নালিতাবাড়ী খাদ্য গুদামে ধান-চাল সংগ্রহের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত সারিয়াকান্দিতে অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে রেইজ প্রকল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক ওরিয়েন্টেশন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে লালমনিরহাট জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের শ্রদ্ধা সারিয়াকান্দিতে পূর্ব শত্রুতার জেরে এক যুবককে ছুরিকাঘাত শাহজাদপুরে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মুস্তাক আহমেদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত সারিয়াকান্দিতে বিশ্ব মা দিবস পালিত
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

জীবনের পড়ন্ত বেলায় স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে ‘মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই’

পটুয়াখালীর গলাচিপার পৌর শহরে বসবাস করেন বৃদ্ধা আভা রানী সাহা (৭৫)।আভা রানী সাহা হচ্ছেন পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বড় সাহাবাড়ির ননী গোপাল সাহার একমাত্র মেয়ে।স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিবাহ হলেও এখনও স্বামীর পৈত্রিক বাড়িতে যাওয়া হয়নি তার।আর এই আক্ষেপ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে।

তার দুই সন্তান তরুন চন্দ্র সাহা ও বাসুদেব সাহাকে নিয়ে এখন বৃদ্ধা আভা রানী সাহার সংসার।সন্তানদেরকে তার স্বামী ও শ্বশুরের অঢেল সম্পদের গল্প শোনালেও সন্তানদেরকে দেখাতে পারেননি স্বামীর ভিটা বাড়ি।আজ তার স্বামী নেই।মারা গেছেন অনেক আগেই।কিন্তু জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে সন্তানদেরকে সহ স্বামীর পৈত্রিক বাড়ী যেতে চান তিনি।

এ বিষয়ে আভা রানী সাহা বলেন, আমার স্বামীর বাড়ি শরীতপুর সদর উপজেলার কাশাভোগ গ্রামের মহাদেব বাড়িতে।যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে আমার শ্বশুর যোগেন্দ্র চন্দ্র সাহা, শাশুড়ী ঠাকুরদাসী সাহা ও আমার স্বামী তারকেশ্বর সাহা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গয়না নৌকায় করে গলাচিপা শহরে আসেন।আর এখানে এসে তারকেশ্বর সাহা আমাকে বিবাহ করেন এবং এখানে তারা সবাই স্থায়ীভাবে থেকে যান।আমার শ্বশুর, শাশুড়ী এখানে দেহত্যাগ করেন।পরে আমার স্বামী লোকমুখে জানতে পারেন তাদের ১১টি বাড়ি পাক হানাদার বাহিনী ১১টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।আমার স্বামী কাকাত ভাইদের সকল পরিবারকে হত্যা করেছে। তার মধ্যে অশ্বিনী কুমার সাহা, শ্যামদাসী সাহা, রাধিকামোহন সাহা, মনমোহন সাহাসহ সকলকে মেরে ফেলা হয়।এই ভয়ে আমার স্বামী আর বাড়ি ফিরে যেতে সাহস পান নি।আমি অনেকবার সন্তানদের নিয়ে স্বামীর সাথে আমার শ্বশুরবাড়ীতে যেতে চাইলেও আমার স্বামী মারা যাওয়ায় আর যাওয়া হয়নি।জানিনা আর যেতে পারব কিনা।

এ বিষয়ে আভা রানী সাহা ও তারকেশ্বর সাহার বড় ছেলে তরুন চন্দ্র সাহা বলেন, বাবা ও মায়ের মুখে অনেকবার শুনেছি আমাদের বাড়ির কথা।কিন্তু কখনও যাওয়া হয় নি।আমি একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করে কোন মতে সংসার চালাই।মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকি।সংসারের খরচ যোগাতে কষ্ট হয়।মায়ের মুখে শুনেছি আমার বাবার নাকি অনেক জায়গা আছে।সেগুলো যদি আমরা ফিরে পাই তাহলে আমরা আর ভাড়া বাসায় না থেকে চলে যাব বাব-দাদার বাড়িতে।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গরিব বান্ধব সরকার।তাইতো সরকার যার জমি তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আইন পাশ করেছেন।এই আইনের বলে আমরাও আমাদের জমিতে ফিরে যেতে চাই।

এ বিষয়ে বাসুদেব সাহা বলেন, আমি আমার বাবা-দাদা ও ঠাকুরমার বাড়িতে দুবার গিয়েছিলাম।আমার সাথে আমার মাসী পূরভী রানী সাহার ছেলে আমার মৌশাতো ভাই সুব্রত সাহা গিয়েছিল।খোঁজ খবর নিয়ে এসেছি।আমাদের পৈত্রিক ওয়ারিশি সম্পত্তির মৌজাঃ কাশাভোগ, জে.এল নং-৮৬, এস.এ খতিয়ান নং-৩১, দাগ নং-৫৮২।উক্ত জায়গা এখনো খালি পড়ে রয়েছে।সেখানে আমাদের একটি পুকুর ও বাড়িতে একটি মহাদেবের মন্দির রয়েছে।সেখানে পূর্ব পুরুষ থেকে এই মন্দিরে পূজা অর্চনা হত।সেখানে আমাদের অনেক জায়গা রয়েছে।

এ বিষয়ে আভা রানী সাহার ছোট ভাই গৌরঙ্গ সাহা বলেন, আমার বোনের বিবাহের পরে আমার বোন, ভগ্নিপতি, তালাই ও মাওই আমাদের এখানেই থাকতেন।তারা আমাদের এখানেই দেহ ত্যাগ করেছেন।তাদের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার কাশাভোগ গ্রামের মহাদেব বাড়িতে।

তিনি আরও বলেন, তারা অসহায় হওয়ায় যুদ্ধ চলাকালীন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের গয়নায় করে তাদেরকে গলাচিপায় নিয়ে আসে।পরবর্তীতে তারা এখানে বসবাস করে।পরে আমার বোন আভা রানী সাহার সাথে তারকেশ্বর সাহার বিবাহ হয়।

এ বিষয়ে যতিন্দ্র সাহার ছেলে জগন্নাথ সাহা বলেন, যুদ্ধ চলাকালীন সময় পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে মানুষদের হত্যা করত।বিশেষ করে আমরা সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে হত্যাজজ্ঞ চালিয়েছিল।মুক্তিবাহিনীরা যোগেন্দ্র চন্দ্র সাহা, ঠাকুরদাসী সাহা ও তারকেশ্বর সাহাকে আমাদের বড় সাহা বাড়িতে আশ্রিত রেখে যান।এখানেই তারা বসবাস শুরু করেন।পরে তারকেশ্বর সাহা এখানে বিবাহ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।তাদের দাম্পত্য জীবনে তরুন চন্দ্র সাহা ও বাসুদেব সাহা নামে দুজন সন্তান রয়েছে।

এ বিষয়ে গলাচিপা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আশীষ কুমার সাহা বলেন, তারকেশ্বর সাহা সহ তার বাবা মা এই সাহা বাড়িতে দেহ ত্যাগ করেন।তাদের বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলায়।

প্যানেল মেয়র সুশীল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, তারকেশ্বর সাহার মৃত্যুতে তার ওয়ারিশ তার দুই ছেলে।

গলাচিপার পৌর মেয়র আহসানুল হক তুহিন বলেন, যুদ্ধ চলাকালীন সময় থেকে তারকেশ্বর সাহা তার বাবা মাকে নিয়ে এখানেই বিবাহ করে বসবাস করেন।তার বাবার সাথে আমার বাবার সুসম্পর্ক ছিল।তার বাবা আমার বাবাকে গল্পের ফাকে তাদের শরীয়তপুরে জায়গা সম্পর্কে অনেক কথা বলতেন।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা ইউনিট কমান্ড ও ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজামউদ্দিন তালুকদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের গয়না নৌকায় করে যোগেন্দ্র চন্দ্র সাহা, ঠাকুরদাসী সাহা ও তারকেশ্বর সাহাকে গলাচিপায় নিয়ে আসেন।পরে তাদেরকে সাহাবাড়িতে স্থান দেওয়া হয়।পরে শুনেছি তারকেশ্বর সাহা গলাচিপা সাহা বাড়িতে বিবাহ করেছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু-বৈদ্য-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গলাচিপা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সমীর কৃষ্ণ পাল বলেন, তারকেশ্বর সাহা দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেছেন।জন্মসূত্রে তিনি শরীয়তপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − eleven =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x