বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার পৌর এলাকার আন্দরবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা খোকা ফকির (৬৫)।পেশায় একজন ক্ষুদ্র চা বিক্রেতা।জায়গা-জমি নেই বললেই চলে।১৯৮২ সাল থেকে প্রায় ৪১ বছর ধরে মাদ্রাসা মোড়ে টিনের ছাপড়া তুলে সেখানে চা-বিক্রি করেন।চা খেয়ে অনেকেই টাকা দেন আবার অনেকেই টাকা না দিয়েই চলে যান।তারপরও সহজ সরল চা-বিক্রেতা খোকা মিয়ার নেই কোনো অভিযোগ।
চা বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চালান।সেই আয়ের একমাত্র অবলম্বন চা দোকান নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুম নেই খোকা ফকিরের।দোকানের ছাউনির টিনগুলো মরিচা পড়ে ছিদ্র হয়ে পড়েছে।সামান্য বৃষ্টি হলেই ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে।বৃষ্টির দিনে চা বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে।এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েন তিনি।
পরে এই বিষয়টি জানতে পারেন সারিয়াকান্দি মানবকল্যান ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।মুর্হুতের মধ্যেই ওই চা-বিক্রেতার পাশে দাঁড়ালেন তারা।নতুন টিন ও নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয় তার হাতে।
শনিবার (৬ই মে) সাড়ে ১০টায় মাদ্রাসা মোড়ে সংলগ্ন দোকানে উপস্থিত হয়ে মানবকল্যান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও পৌর মেয়রের সহযোগীতায় তাকে নতুন টিন ও নগদ অর্থ তুলে দেন উক্ত ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।
বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র মতিউর রহমান মতি, সংগঠনের সভাপতি লিটন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর কবির, সহ-সভাপতি ইউসুফ আলী, কোষাধ্যক্ষ মোঃ পলাশ মিয়া (বাপ্পা), দপ্তর সম্পাদক মিল্লাত হোসেন বাবু, প্রচার সম্পাদক পাভেল মিয়া, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আমিনুর ইসলাম নবা, সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, সাজু কাজী, স্থানীয় দোকানিসহ প্রমুখরা উপস্থিত ছিলেন।
টিন ও নগদ অর্থ পেয়ে খোকা ফকিরের আনন্দে কেঁদে ফেলেন।তিনি বলেন, আমার অভাবের সংসার।চা বিক্রির টাকায় পেটে ভাত জুটে।দোকানের ছাউনির টিনগুলো মরিচা পড়ে ছিদ্র হয়ে পড়েছে।সামান্য বৃষ্টি হলেই ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে যাওয়ায় চা বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়।মানবকল্যান ফাউন্ডেশন নতুন টিন কিনে দেবেন তা ভাবতেও পারি নাই।এখন আর আমার কোন কষ্ট করতে হবে না।তারা যে সহযোগিতা করলেন এটি কোনো দিন ভুলবো না।তাদের জন্য দোয়া করা ছাড়া আমার কিছুই করার নেই।আমি ও আমার পরিবারের লোকজন যতদিন বাঁচবো ততদিন মানবকল্যান ফাউন্ডেশনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে যাব।
সংগঠনের সভাপতি লিটন মিয়া বলেন, সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষের পাশে থাকাই হলো মানবকল্যান ফাউন্ডেশনের কাজ।আমরা সেই কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি মাত্র।চা বিক্রেতা খোকা খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করেন।চা বিক্রির টাকায় কোনো রকমে সংসার চালাতেন।এরই মধ্যে আবার দোকানের ছাউনির টিনগুলো মরিচা পড়ে ছিদ্র হয়ে পানি পড়ছে।বিষয়টি আমাদের নজরে আসে।বৃষ্টির দিনে দোকান করতে যেন কষ্ট না করতে হয় সেজন্য টিন কিনে দেওয়া হয়।সেইসঙ্গে তাকে নগদ অর্থও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা।
পৌর মেয়র মতিউর রহমান মতি বলেন, যারা বিপদে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় তারাই প্রকৃত মানব দরদী।তিনি মানবকল্যান ফাউন্ডেশনের পথ অনুসরণ করে বিত্তবানদেরকেও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহব্বান জানান।