সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সারিয়াকান্দিতে দিনব্যাপী গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজাহান আলী সারিয়াকান্দিতে দিনব্যাপী গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করেছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী লিখন মিয়া বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরন করা হলো না এনজিও কর্মী সঞ্জয়ের সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ নিবার্চন থেকে সরে দাঁড়ালেন চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুস সালাম ও আশিক রাজশাহীতে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মাঝে গ্লুকোজ বিতরণ রাজশাহীতে দৈনিক মানবিক বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন দুর্গাপুরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে আবাদি জমিতে পুকুর খনন মোহনপুরে মদ্যপান অবস্থায় বাইক আরোহী নিহত,আহত ২ মান্দায় মহান মে দিবস পালিত মে দিবসে খাবার স্যালাইন,ক্যাপ ও পানি বিতরণ করল রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

সচেতনতাই জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে

জরায়ুমুখের ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।এটিকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ ও বলা হয়ে থাকে। কারণ এ অসুখ দেখা দিলে অনেক নারীই এর কিছু কিছু লক্ষণ বুঝতে পারেন না। কিংবা ভিন্ন লক্ষণ দেখা দিলেও গুরুত্ব দেন না। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের পরেই জরায়ুমুখ ক্যান্সারের স্থান।

নারীদের প্রজননতন্ত্র জরায়ুর দুটি অংশ। একটি হলো বডি, আরেকটি হচ্ছে জরায়ুমুখ বা সার্ভিক্স।সার্ভিক্স হলো জরায়ুর নিচের দিকের অংশ, যা নারী দেহের যোনি এবং জরায়ুকে সংযুক্ত করে। এই জায়গার কোষগুলো যখন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) দিয়ে অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন হতে শুরু করে তখন ব্যাপারটি ক্যান্সারে রূপ নেয়। জরায়ুমুখ ক্যান্সার এর জন্য দায়ী ভাইরাসটি ছড়ায় এই ভাইরাস আছে এমন কারো সাথে যৌনমিলন হলে। যৌনমিলনের সময় পুরুষের কাছ থেকে নারীদেহে এই ভাইরাস ঢুকে যায়। ভাইরাসটি ঢোকার সাথে সাথেই ক্যান্সার হয় না, ক্যান্সার হতে বেশ কয়েক বছরও লাগতে পারে। যখন নারীর শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তখনই এই ভাইরাসটি ক্যান্সার রোগের সৃষ্টি করে। অনেক সময় ক্যান্সার সার্ভিক্স থেকে শুরু হয়ে পরবর্তীতে ফুসফুস, যকৃত, মূত্রথলি, যোনি, পায়ুপথেও ছড়িয়ে যেতে থাকে।

প্রাথমিকভাবে কোনো ব্যথা থাকে না দেখেই আমাদের দেশের নারীরা হাসপাতালে আসেন না। এমনকি যখন হয়, হওয়ার পরেও তারা অপেক্ষা করে। দেখা যায় দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাচ্ছে কিন্তু লজ্জায় সে কাউকে বলছে না। স্বামীর সাথে মেলামেশায় রক্ত যাচ্ছে সেটিও সে বলছে না। ফলে যখন হাসপাতালে আসে তখন অনেকে দেরি হয়ে যায়। অথচ যৌন সম্পর্কে আছেন, এমন নারীরা ভায়া টেস্ট করিয়ে নিলেই জানতে পারবেন, তার জরায়ুমুখ ক্যান্সার হওয়ার আগের অবস্থায় অছে কি না। এমনকি যদি কারো জরায়ুমুখ ক্যান্সার হয়–প্রাথমিক অবস্থায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা করলে তা ভালো হয়ে যায়।

যেসব মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়, অল্প বয়সে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে, ঘন ঘন প্রেগন্যান্সি বা ডেলিভারি হয়, জন্মবিরতিকরণ পিল খাওয়া, মাসিকের সময় অস্বাস্থ্যকর থাকা, অপুষ্টি, যারা বহুগামী কিংবা স্বামীরা অনেকের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে- এমন ক্ষেত্রে এইচপিভি ভাইরাসে নারীদর বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, হালকা খাবারের পর পেট ভর্তি লাগা, পেটে অস্বস্তি লাগা, বমি বমি ভাব কিংবা বারবার বমি হওয়া, ক্ষুধা কমে যাওয়া, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া কিংবা ওজন অনেক বেশি কমে যাওয়া, পেটের কোনো সমস্যা খুব বেশি হলে তা জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

জরায়ুমুখের ক্যানসারের লক্ষণগুলোর মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত মাসিক অন্যতম। এটি বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন, প্রতি মাসে মাসিক অতিরিক্ত হওয়া কিংবা দুটি মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে রক্তক্ষরণ হওয়া। আবার অনেকের সহবাসের পর রক্তক্ষরণ হয়। এ উপসর্গগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি দেখা দিলেই দ্রুত গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া সাদা কিংবা লালচে স্রাব নিঃসৃত হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুঁজ বের হতে পারে।

২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সারা বিশ্বে প্রায় ৫ লাখ ৭০ হাজার মানুষ জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত এবং প্রায় ৩ লাখ ১১ হাজার মানুষ এতে মৃত্যুবরণ করেছে। আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয় এবং এদের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার রোগী মৃত্যুবরণ করে। অর্থাৎ যতজন রোগী শনাক্ত হয়, তার প্রায় অর্ধেকই মৃত্যুবরণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে শিল্পোন্নত দেশের নারীরা জরায়ু ক্যান্সারে অধিক আক্রান্ত হয়ে থাকেন অন্যদিকে আফ্রিকান, আমেরিকান ও এশিয়া প্রদেশের নারীদের এই ক্ষেত্রে জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম। গবেষক ও চিকিৎসকরা বলছেন, জীবাণু প্রবেশের পর ১৫ থেকে ২০ বছরও সময় লাগে জরায়ুমুখের ক্যান্সার হতে। তার মানে হলো এটি নির্ণয়ে অনেকটা সময় পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে কিছু বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যেমন, ১৬ বছরের আগে কোনো মেয়ের বিয়ে না দেওয়া, জন্মনিয়ন্ত্রক পিল ৫ বছরের বেশি সময় ধরে সেবন না করা, বহুগামিতা রোধ ইত্যাদি। এ ছাড়া ধূমপান, সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ কিংবা অপরিচ্ছন্নতার কারণেও জরায়ুমুখের ক্যানসার হয়ে থাকে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। তা ছাড়া সময়মতো টিকা নিতে হবে। যেসব নারীর বয়স ৩০ থেকে ৬০-এর মধ্যে তাদের প্রতি ৫ বছর পরপর ভায়া টেস্ট করাতে হবে।

আশার কথা এই যে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে জরায়ুমুখের ক্যানসার সম্পূর্ণ রূপে ভালো হয়ে যায় এবং এটিই একমাত্র ক্যানসার, যার টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও ক্যানসারের উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। তাই উপসর্গ দেখামাত্রই দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।মাসিক শুরুর পরপরই এবং যৌন সম্পর্ক শুরু কিংবা বিয়ের আগে টিকা নিলে এই ক্যান্সার থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + nine =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x