রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই,মানুষের জন্য কিছু করতে চাই:ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী লিখন মিয়া বাগমারায় কৃষি মেলার উদ্বোধন করলেন এমপি আবুল কালাম আজাদ সারিয়াকান্দিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আনসার সদস্য বাছাই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত লিফট উদ্বোধন বাগমারাবাসীর সেবা করে যেতে চাই-এমপি আবুল কালাম আজাদ প্রচন্ড দাবদাহে পথচারী ও শ্রমজীবীদের মধ্যে হাতীবান্ধায় শরবত বিতরণ কমলাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ছালাম মৃধার উঠান বৈঠকে জনতার ঢল নিজেই এখন গরম ও লোডশেডিং চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দুঃখ প্রকাশ,দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

দান-সাদকায় মানুষের দুনিয়া ও পরকালের জীবন হয় সম্মান ও গৌরব মণ্ডিত

ইসলামী পরিভাষায় দান করাকেই সাদকা বলা হয়।সাদকা শব্দটি এসেছে আরবী ‘সিদকুন’ থেকে।অর্থ : সত্যতা, যথার্থতা।পরিভাষায় সাদকা বলা হয়, একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে স্বীয় সম্পদ ব্যয় করা।কারণ, মানুষের সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু এবং জীবনযাপনের প্রধান উপকরণ কষ্টার্জিত সম্পদ ব্যয় করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার প্রতি ভালোবাসা এবং তার নির্দেশাবলির প্রতি আনুগত্যের বাস্তব প্রমাণ দিয়ে থাকেন বলে এই ব্যয়কে সাদকা নামে অভিহিত করা হয়েছে।পবিত্র কোরআন-হাদিসে অত্যাবশ্যক এবং ঐচ্ছিক এ উভয় প্রকার দানকেই সাদকা বলা হয়েছে।

দান-সাদকা মানুষের জীবনে অনেক উপকার বয়ে আনে।এতে দাতার দুনিয়া ও পরকালের জীবন হয় সম্মান ও গৌরব মণ্ডিত।দান-সাদকায় দাতা-গ্রহীতা উভয়ের মাঝে থাকতে হবে যথাযথ শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান।পবিত্র মনে সম্মান ও তাজিমের সঙ্গে দান-সাদকা করতে হবে।ইসলামে দান-সাদকার উপকারিতা অনেক।দান-সাদকার উপকারিতা, ফজিলত ও সম্মান-মর্যাদার ব্যাপারে কোরআন সুন্নাহর অনেক দিকনির্দেশনা রয়েছে।

মানুষের কল্যাণে দান-সদকাহর ব্যাপারে আল কোরআন বিভিন্নভাবে নির্দেশ দিয়েছে এবং উৎসাহের কথা বলেছে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘ওহে তোমরা যারা ইমান এনেছ! তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে।যারা এ কারণে গাফেল হয় তারাই তো মহাক্ষতির মুখোমুখি হয়।আমি তোমাদের যেসব রিজিক ও সম্পদ দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর।যদি তা না কর তাহলে মৃত্যুর সময় তোমাকে বলতে হবে, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছু মুহূর্ত সময় দাওনি কেন? তাহলে আমি আমার সব সম্পদ তোমার পথে মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ (সুরা মুনাফিকুন আয়াত: ৯-১০) ।

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবন ধ্বংসের মুখোমুখি কোর না।আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর।আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা আয়াত: ১৯৫)।

দানের প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর তবে তা কতই না উত্তম।আর যদি দান গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও তবে তা তোমাদের জন্য আরও ভালো।আল্লাহ তোমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন।আল্লাহ তোমাদের সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানেন।’ (সুরা বাকারা আয়াত: ২৭১) ।

‘যারা নিজের ধনসম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং মানুষকে কষ্টও দেয় না তাদেরই জন্য তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার।’ (সুরা বাকারা আয়াত: ২৬২) ।

আল্লাহ আরও বলেন, ‘শয়তান তোমাদের অভাব-অনটনের ভয় দেখায় এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়, আর আল্লাহ দান করার বিনিময়ে ক্ষমা ও সম্পদ বৃদ্ধির ওয়াদা করেন।বস্তুত আল্লাহ সমৃদ্ধিশালী, সর্বজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা আয়াত: ২৬৮)।

অসংখ্য হাদিসেও দান সাদকার ফজিলত তুলে ধরা হয়েছে:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে সাত শ্রেণির মানুষ আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে।তাদের মধ্যে একশ্রেণি হচ্ছে, ‘এক ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কি দান করে বাম হাত জানতেই পারে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

দান-সাদকা গুনাহ মাফ করে ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়।নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে কাব বিন উজরা! নামাজ (আল্লাহর) নৈকট্যদানকারী, রোজা ঢালস্বরূপ এবং দান- সাদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।’ (আবু ইয়ালা, সনদ সহিহ)।

দান-সদকার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নবী (সা.) বলেছেন, ‘একটি খেজুর দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা কর।’ (বুখারি, মুসলিম)।

হজরত উকবা বিন আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই দান-সদকা কবরের আজাব বন্ধ করে দিতে পারে।আর কিয়ামতের দিন বান্দাহকে আরশের ছায়ার নিচে জায়গা করে দেয়।’ (তাবারানি, বায়হাকি)।

হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জীবিত থাকা অবস্থায় ১ টাকা দান করা মৃত্যুর পর ১ হাজার টাকা দান করার চেয়ে বেশি কার্যকর।’ (আবু দাউদ, মিশকাত)।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘দান সম্পদ কমায় না, দান দ্বারা আল্লাহ বান্দার সম্মান বৃদ্ধি করেন।কেউ আল্লাহর ওয়াস্তে বিনয় প্রকাশ করলে আল্লাহ তাকে বড় করেন।’ (মুসলিম)।

হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘এমন কোনো দিন যায় না যে দিন দুজন ফেরেশতা পৃথিবীতে ঘোরাফেরা করে না।তাদের একজন দানশীল ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে থাকে এবং বলে, হে আল্লাহ! তুমি দানশীল ব্যক্তিকে উত্তম বিনিময় দাও।দ্বিতীয় ফেরেশতা কৃপণের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বদ দোয়া করে বলে, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস ও বরবাদ কর।’ (বুখারি, মুসলিম)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে, তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি ব্যতীত, সাদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান অথবা সৎকর্মশীল সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-১৬৩১)

দান-সাদকার উপকারিতা ও ফজিলত:

দান-সাদকার ফজিলত মর্যাদা ও সম্মান সম্পর্কে কোরআন-সুন্নাহয় এ রকম অনেক দিকনির্দেশনা এসেছে।যেখানে দান-সাদকার করার প্রতি নির্দেশ, দিকনির্দেশনা ও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।এ ছাড়াও দুনিয়া ও পরকালীন জীবনের জন্য দান-সাদকার উপকারিতাও বর্ণিত হয়েছে।দান-সাদকার সেসব উপকারিতার কিছু তুলে ধরা হলো-

১. দান-সাদকা জান্নাতের দরজাসমূহের একটি।

২. দান-সাদকা আমলের মধ্যে উত্তম আমল।

৩. দান-সাদকা কেয়ামতের দিন ছাঁয়া হবে এবং দান-সাদকা আদায়কারীকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করা হবে।

৪. দান-সাদকা আল্লাহ তাআলার ক্রোধকে ঠাণ্ডা করে এবং কবরের উত্তপ্ততায় শীতলতার উপকরণ হবে।

৫. মৃতব্যক্তির জন্য উত্তম বদলা এবং সবচেয়ে উপকারী বস্তু হল দান-সাদকা।আর দান-সাদকার সওয়াবকে আল্লাহ তাআলা ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে থাকেন।

৬. দান-সাদকা পবিত্রতার আসবাব, আত্মশুদ্ধির মাধ্যম ও সৎ কাজের বৃদ্ধিকারক।

৭. দান-সাদকা কেয়ামতের দিন দান-সাদকাকারীর চেহারার আনন্দ ও প্রফুল্লতার কারণ হবে।

৮. দান-সাদকা কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় নিরাপত্তা হবে।অতীতের জন্য আফসোস করা থেকে বিরত রাখে।

৯. দান-সাদকা গুনাহের ক্ষমা এবং খারাপ কাজের কাফফারা।

১০. দান-সাদকা উত্তম মৃত্যুর সুসংবাদ এবং ফেরেশতাদের দোয়ার কারণ।

১১. দান-সাদকা দানকারী সর্বোত্তম বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত এবং দান-সাদকার সওয়াব প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি পায় যে কোনো না কোনোভাবে অংশীদার হয়।

১২. দান-সাদকা দানকারীর সঙ্গে সীমাহীন কল্যাণ ও বিরাট প্রতিদানের ওয়াদা রয়েছে।

১৩. খরচ করা মানুষকে মুত্তাকিদের কাতারে শামিল করে।দান-সাদকাকারীকে সৃষ্টিকুল মুহাব্বত করে।

১৪. দান-সাদকা দয়া-মায়া ও দানশীলতার আলামত।

১৫. দান-সাদকায় দোয়া কবুল এবং জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যম।

১৬. দান-সাদকায় বালা মসিবত দূর করে দুনিয়াতে সত্তরটি খারাপ কাজের দরজা বন্ধ করে দেয়।

১৭. দান-সাদকা হায়াত ও মাল বৃদ্ধির মাধ্যম। সফলতা এবং রিজিকের প্রশস্ততার মাধ্যম।

১৮. দান-সাদকা রোগীর জন্য চিকিৎসা, ঔষধ ও সুস্থতা।

১৯. দান-সাদকা আগুনে পোড়া, পানিতে ডোবা ও অপহরণ সহ (সব) অপমৃত্যুর প্রতিবন্ধক।

২০. দান-সাদকার প্রতিদান পাওয়া যায় চাই তা পশু-পাখিকেই দেওয়া হোক না কেন।

দুনিয়ার আমলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটা হচ্ছে দান-সাদকা করা।যারা দান-সাদকার কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখবে সব কল্যাণের দরজা তাদের জন্য উম্মুক্ত।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে দান-সাদকা করার তাওফিক দান করুন।সবাইকে বেশি বেশি নফল দান-সাদকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখকঃ মোঃ মমতাজ আলী শান্ত

ব্যাচেলর অফ বিজনেস স্টাডিজ (বিবিএস-অনার্স)-ফার্স্ট ক্লাস, মাস্টারর্স ইন বিজনেস স্টাডিজ (এমবিএস)-ফার্স্ট ক্লাস, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × four =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x