শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৯ অপরাহ্ন
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

শিক্ষকতা পেশাকে আর কলঙ্কিত করবেন না

“শিক্ষক” শব্দটা চার অক্ষরের হলেও এর মর্যাদা ও গুরুত্ব অসীম।আমাদের সমাজে যত পেশাজীবী রয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্মান এবং শ্রদ্ধার জায়গায় থাকেন এই শিক্ষক–শিক্ষিকাগণ।

শিক্ষাদানের মহান ব্রত যার কাজ তাকেই শিক্ষক বলা হয়।স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিতদেরই শিক্ষক বলা হয়।একজন শিক্ষিত মানুষের গোটা জীবনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশেই ভূমিকা থাকে অসংখ্য শিক্ষকের। শিক্ষকগণকে মানুষ গড়ার কারিগরও বলা হয়।

বিদ্যালয়ের চাকরী থেকে অবসরে গেলেও একজন শিক্ষকের মর্যাদা কমে না।অর্থাৎ আজীবন সম্মানের একটা পেশা শিক্ষতা।আর ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় আব্বা মা বলতেন পিতা–মাতার পরেই শিক্ষকের স্থান।

স্কুল জীবনের কথাই যদি ধরি তাহলে একজন স্কুল ছাত্র তার পরিবার ছেড়ে দৈনিক প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘন্টা স্কুলে থাকে।আর এই সময়ের পুরোটাই উক্ত স্কুলের শিক্ষকদের দায়িত্বে থাকে।

আমি ছোটবেলা থেকেই পিতা–মাতার পরে শিক্ষককে মর্যাদার আসনে বসিয়েছি।তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকতার কাজে যারা আছেন তাদেরকে শিক্ষক বলা হয় আর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অধ্যাপক বলা হয়ে থাকে।

শিক্ষকদের জাতি গঠনের কারিগর বলা হয়।কেননা একজন আদর্শ শিক্ষকই পারেন তার অনুসারীদের জ্ঞান ও ন্যায় দীক্ষা দিতে।শিক্ষার্থীর মানবতাবোধ কে জাগ্রত করে একজন শিক্ষক কেবল পাঠদান কে সার্থকই করে তোলেন না,পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে ত্বরাণ্বিত করেন। স্বীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে তাদেরকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন।

ব্যক্তি ছেড়ে বৃহত্তর অর্থে একটি দেশ ও জাতির কথা যদি বলি তাহলে বলবো একটি জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনতে এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে শিক্ষক সমাজের অনেক পরিশ্রম, কৃতিত্ব থাকে।কেননা শিক্ষা ছাড়া মানুষ অন্ধ।শিক্ষিত না হলে টাকা পয়সাও অনেক সময় কাজে লাগে না।এই শিক্ষকরাই আমাদের শেখান সমাজে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে, নিজের জন্মকে স্বার্থক করতে হবে।

একজন ছাত্রের জীবনে চলার পথে ন্যায়–নীতি, আদর্শ ইত্যাদির সূচনা শিক্ষকদের হাত ধরেই হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের শিক্ষকদের বৃহত্তর অংশ শিক্ষকতা পেশায় আসেন কেবল জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে।পেশাটির প্রতি ভালবাসা ও গভীরভাবে পেশাটাকে মহিমান্বিত করার উৎসাহ আগ্রহ তাদের অনেকের মধ্যে খুব কমই পরিলক্ষিত হয়।নামের সাথে শিক্ষকতা ট্যাগ টা লাগিয়েই শুরু করেন শিক্ষা বাণিজ্য।

করোনার দীর্ঘ ক্রাইসিস শেষে সম্প্রতি ১৫ সেপ্টেম্বর এসএসসি–২০২২ পরীক্ষা শুরু হয়। দিনাজপুর বোর্ডের আওতাধীন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি ১ম এবং ২য় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলে অভিযান শুরু হয়।এরপর ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসএসসির চারটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র উদ্ধার করেন।পরে আরও তিন বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।ওইদিন রাতে গ্রেপ্তার করা হয় প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব, একই বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত এক শিক্ষককে। এখানে সবচেয়ে লজ্জার ও দুঃখজনক ব্যাপার হলো একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই নিকৃষ্ট কাজের সাথে জড়িত। তাদের মধ্যে খোদ প্রধান শিক্ষকও রয়েছে।রক্ষকই যখন ভক্ষক হয় তখন সেখান থেকে সুফল আশা করা মরীচিকার পেছনে দৌড়ানোর মতো। ছাত্র ভুল করে শাসন করে সেটা শুধরে দেওয়া যায় কিন্তু শিক্ষকই যদি এমন নিকৃষ্ট কাজের সাথে জড়ায় তাহলে তাকে শোধরাবে কে।

শিক্ষার্থীরা মাসের পর মাস মানসিক চাপ সহ্য করে অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে।শিক্ষকরাই যদি এমন করে তাহলে জাতি কাদের ওপর ভরসা করবে! কারা–ই বা জাতিকে আলোর পথ দেখাবে।

এই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেছেন।এরপর নতুন শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে পরিপূর্ণ পরিকল্পনা ও আরও কঠোর নিয়ম করেন। তারপরেও সামান্য কিছু টাকার জন্য শিক্ষকদের এমন লজ্জানজক কর্মকান্ডে জড়ানো সত্যি দুঃখজনক। সেই তো প্রশাসনের হাতে ধরা পড়তেই হলো।মাঝখানে বিতর্কিত হলো গোটা শিক্ষক সমাজ, আঙুল উঠলো প্রশাসনের দিকে।

একজন শিক্ষক হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে খেলতে তাদের বিবেকে কি বাঁধা দেয় না! জানতে ইচ্ছে হয়। এদের থেকে শিক্ষিত জাতি কিভাবে আশা করা যায়! বাবা-মা’র পরে শিক্ষকদেরই পিতৃতুল্য হিসেবে গণ্য করা হয়।

কিন্তু এমনও অভিযোগ শোনা যায় যে শিক্ষক ছাত্রীকে তার সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করছে, বোর্ড পরীক্ষার খাতা বাসায় নিয়ে গিয়ে তুলনামূলক নিচু ক্লাসে পড়া ছেলেমেয়েদের দিয়ে দেখানো, জাল সার্টিফিকেট বানিয়ে শিক্ষক হয়েছে, মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও টাকার বিনিময়ে চাকরীর মেয়াদ বাড়িয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহাল রয়েছে।

গুটি কয়েক বিবেক বিবর্জিত শিক্ষকের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজ কলঙ্কিত হচ্ছে। যারা সামান্য কয়টা টাকার জন্য শিক্ষক শব্দটার গায়ে কালি লাগাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানো, থিসিস চুরি করে নিজের নামে চালানোসহ নানারকম অভিযোগ পাওয়া যায়। যারা নিজেরাই প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে নি, নিজের নীতিগত আদর্শ যাদের ঠিক নাই, লোভ মোহ ত্যাগ করতে পারে না তারা কিভাবে একজন মানুষকে আলোর পথ দেখাবে! যার নিজের মধ্যেই অন্ধকার সে কিভাবে আরেকজনকে আলোকিত করবে!

আজকে প্রশ্ন রাখতে চাই। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের জীবনাদর্শকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পায়। সেই শিক্ষরাই যদি বিবেকহীন, আদর্শহীন হয় তাহলে একটা জাতির কাছে এর চেয়ে দুঃখের আর কি বা থাকে। প্রয়োজনীয় সব গুণসম্পন্ন একজন শিক্ষক দেশ ও সমাজের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। শিক্ষা প্রদান একটি শিল্প, আর শিক্ষকই এই শিল্পের কারিগর। নিজ পেশাকে চাকরি নয়, ব্রত হিসেবে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গড়তে হবে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিমিত সম্পর্ক।

শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখাবেন শিক্ষক। তার আচার-আচরণ, কর্মকান্ড, ব্যক্তিত্ব দেখে শিক্ষার্থীরা বড় হয়ে শিক্ষকের মতো হতে চাইবে। তাই একজন শিক্ষক হিসেবে নিজেকে আগে সৎ গুণে গুণান্বিত হতে হবে।এমনভাবে মানসিকতা, ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে হবে যেন শিক্ষার্থীদের কাছে এটি অনুসরণের একটি রোল মডেল হয়ে থাকে।আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো শিক্ষতাকে শুধু পেশা হিসেবে না নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কর্তব্য হিসেবে নিতে হবে।অনুরোধ রইল শিক্ষতা পেশাকে আর কলঙ্কিত করবেন না।

শাকিবুল হাসান
শিক্ষার্থী, বরেন্দ্র কলেজ রাজশাহী
সম্পাদকীয় পর্ষদ, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − three =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x