দীর্ঘদিন ধরে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব অভ্যন্তরে থাকলেও এবার প্রকাশ্যে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল।

সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ-৫ বেলকুচি চৌহালী আসনের সাংসদ আব্দুল মমিন মন্ডলের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুরত্ব বেড়ে উঠছে।উপজেলা আওয়ামী লীগের অভিযোগ এমপি’র নিজ বলয় তৈরী করতে দলে জামায়াত বিএনপি’র নেতাকর্মীরা স্থান পাচ্ছে।তার একক সেচ্ছা চারিতায় কমিটি গঠন, দলীয় চেয়ারম্যান ও নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় হীনতায় দলকে দুর্বল করে চলছেন।উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হবার পর থেকে দলের সাধারন সম্পাদককে দুরে রেখে হঠাৎ করে ঢাকা থেকে এসে হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে দলকে গতিহীন করছে।

অভিযোগ রয়েছে ইউনিয়ন কমিটি পুর্নাঙ্গ করতে ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের সাথে সমন্বয় না করে একক সিদ্ধান্তে কমিটি দিচ্ছে।এ সকল বিষয়ে দলের নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যে জেলা আওয়ামীলীগ বরাবর অভিযোগও দায়ের করেছেন।

এমপি’র এমন অসাংগঠনিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আশানুর বিশ্বাস।

এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, বেলকুচির ৬টি ইউনিয়নের ৫ টি ইউনিয়নের কমিটি গঠন করা হয়েছে।সকল বাঁধা বিপত্তির মধ্যে দিয়ে কমিটি গঠন করা হলেও এমপি মহোদয় এখন একক ভাবে তার মনোনিত ইউনিয়নের সভাপতি অথবা সাধারন সম্পাদক এক জনকে নিয়ে পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করছেন।এরই মধ্যে বেলকুচি সদর ইউনিয়নের সাধারণত সম্পাদক মীর্জা মরিয়মকে বাদ রেখেই সভাপতিকে নিয়ে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করে পরিচিতি সভা করেছেন।এছাড়াও দৌলতপুর ও বড়ধুল একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, দলে এমপি’র বলয় বাড়াতে তিনি কমিটিতে স্থান দিচ্ছেন বিএনপি জামায়াতের কর্মীদের।এ আসনের এনায়েতপুরে তিনি সরকার উৎক্ষাত মামলার ৫নং আসামী আলামিনকে থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এনেছেন।

তিনি জানান, দলের কোন কর্মকান্ডে এমপি উপস্থিত থাকেন না।হঠাৎ করে কয়েকদিন পর পর এসে তার কিছু ভাড়াটিয়া লোক নিয়ে চলাফেরা করেন।

এদিকে এমপি’র এমন কর্মকান্ডের বিষয়ে মুখ খুলেছেন চেয়ারম্যানগন।

বেলকুচি সদর ইউনিয়নের চেয়রম্যান মীর্জা সোলেমান জানান, বর্তমান এমপি আমাদের কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা এমনকি সরকারী উন্নয়নের কোন বাজেট আামাকে দেয় না।তার মনোনিত লোক দিয়ে তিনি তার কাজ চালান।সরকারে উন্নয়নের বড় একটি অংশ আমরা বাস্তবায়ন করি।

বড়ধূলের চেয়ারম্যান আছির উদ্দিন মোল্লা বলেন, আমরা দলের মনোনিত চেয়ারম্যান অথচ এমপি আমাদের বাদ রেখে সকল কাজ করছেন।আমরা কিছু বলতে গেলেও তিনি তা শোনেন না।

এদিকে দলের একক সিদ্ধান্তের বিষয়ে বেলকুচি সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মীর্জা মরিয়ম বলেন, আমি দলের সাধারন সম্পাদক অথচ আমাকে বাদ দিয়ে আমার কমিটি পূর্নাঙ্গ করে পরিচিতি সভা করেছেন।এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকও বিষয়টি অবগত নন।

বড়ধুল ইউনিয়নের সাধারণত সম্পাদক হাফিজুর রহমান জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছি।হামলা মামলার আসামী হয়েছি।আজ এমপি আমাদের বাদ দিয়ে বিএনপি’র লোকদের দিয়ে আজ আওয়ামী লীগকে পরিচালনা করছে।

বেলকুচি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর্জা শরিফুল ইসলাম বলেন, এমপি ও দলের সাধারন সম্পাদকের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।আমরা এটার অবসান চাই।

উপজেলা শ্রমীক লীগের সভাপতি সাহেব আলী জানান, দলের অঙ্গসংগঠন ও সহোযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে এমপির কোন প্রকার সম্পর্ক নেই।এমপি নিজের মতো করে দল পরিচালনা করছে, তাই আমরা নিরুপায়।

এদিকে এ বিষয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগ এসেছে বলে জানান সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড.কেএম হোসেন আলী হাসান।

তিনি বলেন, দলের যে কোন সিদ্ধান্ত সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক সহ সকলকে সঙ্গে নিয়ে নিতে হবে।দলের এমন বিভাজনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে দলের কোন্দল মিটানোর জন্য কাজ করছি।আশা করছি বেলকুচির বিষয়টি অচিরেই বসে ঠিক করা হবে।আগামী মাসের মধ্যেই এর অবসান করা হবে।অন্যথায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহযোগীতা নেওয়া হবে দ্বন্দ্ব নিরসনে।এ বিষয়ে আমরা তাদের লিখিত চিঠিও দিয়েছি।

এব্যাপারে কথা বলার জন্য সংসদ সদস্য আলহাজ আব্দুল মমিন মন্ডলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

তবে এমপি’র ব্যাক্তিগত সহকারী সেলিম রেজা বলেন, এমপি মহোদয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের সাথে বার বার বৈঠক করে ৫টি ইউনিয়নের কমিটি অনুমোদন করেছেন।এখানে তাদের কোন কথা থাকলে এমপি মহোদয়ের সাথে আবার বৈঠক করতে পারে অথবা দলের উর্ধতন নেতাদের বলতে পারেন।তবে এমপির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়।