এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর যেন এক সূর্যের মিলনমেলা।হাওরের বুক চিরে হলদে ফুলের রাজ্য যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রতিনিয়ত।গাছে গাছে হলুদ সূর্যমুখী ফুলের বাগানে সাময়িক সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে যেন মন চায়।বিস্তীর্ণ সূর্যমুখী ফুলের হলুদাভাব দৃশ্যটি যে কারো মনকে আকৃষ্ট করে তোলে অনায়াসে,তাইতো প্রতিনিয়ত পর্যটকরা ভিড় করছে হলদে রানীর রাজ্যে।
সারি সারি সূর্যমুখী গাছের ডগায় বড় বড় আকারের ফুল, যেন দিগন্তজুড়ে হলুদের সমারোহ।সকাল গড়িয়ে বিকেলে যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে ঠিক তখনই হাকালুকির সৌন্দর্য যেন ফুটে উঠে সূর্যমুখীর হাসিতে।মৃদু রোদে দূর থেকে মনে হয় যেন সূর্যের মেলা বসেছে।
পুরো হাকালুকি হাওরে যেন বইছে সূর্যমুখীর সুবাতাস। সূর্যমুখীর অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন পর্যটকরা ভীড় করছে হাকালুকির বুকে ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ দৃশ্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।চারদিকে হলুদ ফুলের মন মাতানো ঘ্রান আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের মায়ার ফসলি জমি।তবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ যে শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য তা ভাবলে ভুল হবে।মূলত খাদ্য চাহিদা মেটাতে তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের প্রণোদনাসহ উৎসাহ দিচ্ছে।
চাষিরা বলেন, সূর্যমুখী চাষ করার পদ্ধতি মোটামুটি সহজ।প্রতি বিঘা জমিতে তিন কেজি বীজ, সামান্য সার ও কীটনাশক হলেই পর্যাপ্ত।সবকিছু মিলিয়ে খরচ হয় ২/৩ হাজার টাকা।ফলন ভালো হলে কৃষকের লাভ খুবই ভালো হয়।তাই দিন দিন এ চাষের প্রতি কৃষকরা ঝুঁকছেন বেশি।
হাকালুকি হাওরে সূর্যমুখীর বাগান দেখতে আসা পর্যটক ও সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন,পড়ন্ত বিকেলে সূর্যমুখীর হাসি সত্যিই অসাধারণ।সূর্যমুখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমরা হাকালুকি হাওরে এসেছি।হাকালুকি হাওর এলাকায় তেলবীজ হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ যেন দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।সরকারি সহায়তায় অল্প ব্যয়ে প্রচুর লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহের যেন শেষ নেই।সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এশিয়ার এ বৃহত্তম হাওরে সূর্যমুখী চাষ হতে পারে অন্যতম সম্ভাবনাময়
সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা পর্যটক সাইফুর রহমান রাজন বলেন,হাওরের বুকে সূর্যমুখীর ফুল গুলো দেখতে খুবই ভালো লাগছে।তবে হাওড়ে আসার রাস্তাঘাট ভালো না থাকার এখানে আসতে খুবই কষ্ট হয়।সরকারের এদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
প্রথমবারের মতো হাকালুকি হাওরে সূর্যমুখী চাষ করা তাজুল ইসলাম বলেন,আমি প্রায় দুই বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি।ফলনও খুবই ভাল হয়েছে।সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সূর্যমুখী চাষ আরোও সম্প্রসারণ করব।সরকারের কাছ থেকে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে পরামর্শের পাশাপাশি বিনামূল্যে বীজ পেয়েছি।
তবে সূর্যমুখী চাষীরা অভিযোগ করে বলেন,সূর্যমুখী বাগান দেখতে আসা অনেক পর্যটক সূর্যমুখী ফুল ছিঁড়ে আমাদের ক্ষতির সম্মুখীন করেন।পর্যটকদের তারা সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য অবলোকন করার পাশাপাশি ফুল না ছিঁড়ার আহ্বান জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রনোদনার আওতায় জুড়ীতে ২১০ জন কৃষক সুর্যমুখী চাষ করেছে। এবার উপজেলায় থেকে ২১০ বিগা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে।চাষকৃত সূর্যমুখীর মধ্যে হাইসান-৩৩, আরডিএস ২৭৫ জাতের আবাদ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, জুড়ী উপজেলায় মোট ২৮ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে।সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা যাতে লাভবান হয় সেই লক্ষ্যে সরকার কৃষকদের প্রণোদনা দিচ্ছে।সূর্যমুখী ভোজ্য তেল হিসেবে গুণগত মানের দিক থেকে বেশ ভালো।
বাজারে সূর্যমুখীর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় এবং উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের উপযোগী হওয়ায় এ বছর ভালো ফলনের মাধ্যমে চাষীদের মুখে হাসি ফুটবে বলে আমরা আশা করছি।সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে আমরা নিয়মিত উঠান বৈঠক ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, জেলায় ধীরে ধীরে সূর্যমুখী চাষের চাহিদা বাড়ছে।জেলার প্রতিটি সূর্যমুখী চাষীকে সব ধরনের সরকারি সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।এ চাষে রোগবালাই ও খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।আগামীতে এ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নিহাল খান
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম মেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।