মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

চাকরি আছে বেতন নাই

লেখালেখির কারণেই বিভিন্ন নন-এমপিও শিক্ষকদের সাথে পরিচয় হয়েছে।কেমন আছেন তাঁরা?দেশের মানুষের ভাববার সময় নেই।

তাঁরা কেমন আছেন জানতে চাইলে একটি উত্তরই পাই।তা হলো,আমাদের আর ভালো থাকা!বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে।তবুও ভালো আছি কথাটুকু বলার মনোবল তাঁরা পাচ্ছেন না।শুধু তাই নয়।এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবহেলার পাত্রও হয়ে থাকতে হয়।বেতন ছাড়া চাকরি এটা কি কোন কর্মজীবন হতে পারে?!নন-এমপিও শিক্ষকদের জীবনের কিছু বাস্তব চিত্র তুলে ধরতেই আজকের লেখা।

শিক্ষা খাতটাই কেমন জানি অগোছাল,খাপছাড়া ভাবে চলে।শিক্ষকদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য!দৃশ্যমান কাউকে কথাও বলতে শুনি না।বাংলাদেশে কর্তা-ব্যক্তিরা অনেক সময় কথার কথা বলেন।সে কথাতে ভাব থাকে কিন্তু তা পালনের কোনো রেশ থাকে না।

শিক্ষা খাতে মন্দাভাব কোনোদিনই কাটেনি। কাটছে না।কাটানো যাচ্ছে না।স্বাধীনতার ৫১ বছরেও শিক্ষার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ খাতকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কল্যাণবান্ধব করা গেল না।

শিক্ষাব্যবস্থায় নানা রকম গরমিলের ব্যাপার আছে।আপাতত সে বিষয়ে আক্ষেপ না করে নন-এমপিও নিয়ে বলা যাক।

আহ!নন-এমপিওদের কষ্ট দেখলে মন ভেঙে যায়।বুকের ভিতর জ্বালা ধরে।যারা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোতে এক পৃথিবী স্বপ্ন নিয়ে ঢুকলেন।সে স্বপ্নগুলোকে চোখের সামনে হত্যা হতে দেখে অবাক হই। আফসোস!নন-এমপিও হয়ে অনেকের জীবন অসহ্য হয়ে যাচ্ছে।অভাব নামের দানবটা নন-এমপিওদের জীবনটাকে তিলে তিলে শেষ করার উপক্রম করছে।

সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। সে সময়ে সব সংসদ সদস্যের পছন্দ অনুযায়ী এমপিওভুক্তি করা যায়নি বলেই সে সময়ের শিক্ষামন্ত্রী সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছিলেন।বড়ই দুর্ভাগা দেশ!এমপিও হতে হলে সংসদ সদস্যদের পছন্দক্রম লাগে। শিক্ষার এহেন নাজুক অবস্থা দেশের জন্য সুখকর হতে পারে না।

এরপর প্রায় বারো বছর পার হলো।এর মধ্যে এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বহুবার আন্দোলনে নামেন।রাস্তায় নেমে আসা অনেক শিক্ষক ও কর্মচারী আজ নেই। জীবনের যোগফলে শূন্য আর শিক্ষক পেশা গ্রহণের বঞ্চনায় শেষ হয়ে পরপারে চলে গেছেন।

এটা কোনো কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের কাম্য হতে পারে না।কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে,দেশের মানুষের পাশে ছায়ার মতো দাঁড়ানো।যে রাষ্ট্র বা দেশ এই কাজটি যত সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারে,সেই রাষ্ট্র বা দেশ হবে তত কল্যাণমুখী।

২০১৮ সালে।ভাবা হলো সকল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুঝি এমপিও হবে।এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন চাওয়া হলো।নন-এমপিওদের চোখে আগামীর স্বপ্ন,মুখে আরও ক’টা দিন বাঁচার প্রেরণার কথায় চারদিক সরগরম হলো এই ভেবে,সূর্যোদয়ের আলো ঝিলমিল সকাল আসল হয়তো।

অনলাইনে আবেদন হলো।এমপিওভুক্তির জন্য ৯ হাজার ৪৯৫টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করল অনেকের।ধারণা ছিল এতদিন পর এমপিও মশাল প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে অতএব আবেদনকৃত সব প্রতিষ্ঠান হয়তো এমপিও পাবে।না,তা হলো না।স্বপ্ন,স্বপ্নই থাকল। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ২৭৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ছাড়পত্র পেল।না,এটাও সঠিক হলো না।

পরে প্রতিষ্ঠানের সকল দলিল-দস্তাবেজ যাচাই-বাছাই অন্তে সিদ্ধান্ত হলো এমপিওভুক্তি পাওয়ার মতো যোগ্যতা আছে মাত্র দুই হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠানের।এমপিও নীতিমালা পূরণ না করায় প্রতিষ্ঠিত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানও এই এমপিওভুক্তি থেকে বাদ পড়েছে।হলো না এমপিওভুক্তি যজ্ঞ।

২০১৯ সালের শেষের দিকে বিশেষ ক্ষমতা বলে সরকার আরও ৭টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছিলেন।এটাও বেশ ভালো খবর।যোগ্য অথচ বাদ পড়েছিল বলেই হয়তো এমন তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত।নীতিমালার কঠোর শর্তের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে যায়।২০১৯-২০ অর্থবছরে এমপিও খাতে বরাদ্দ ৪০০ কোটি টাকার বেশি ফেরত যায় রাষ্ট্রের কাছে।শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন সেই টাকার সদ্ব্যবহার করতে পারল না?

নীতিমালা শিথিল করে আরও কিছু প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিলে কি ভালো হতো না?নীতিমালা তো মানুষই তৈরি করে মানুষের প্রয়োজনেই তো! নন-এমপিওদের সুবিধার জন্য একটু সহনীয় করলে রাষ্ট্রের তেমন ক্ষতি হতো বলে মনে হয় না।

আসলেই কাউকে কিছু দিলে এত বিধিবিধানের তোয়াক্কা করলে চলে না।নীতিমালা সংশোধনেই যদি এতটা সময় লেগে যায়,তবে কী আর আশার বীজ উপ্ত হয়!তবুও মানুষ আশার তরেই বেঁচে থাকে।অনেক এমপিওপ্রত্যাশী শিক্ষকও নীতিমালা জটিলতার সময়ে হাহাকারের সঙ্গে আর না পেরে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।

এক সময় সমাজের সবচে’ সম্মানজনক পেশা ছিল শিক্ষকতা।যে সম্মান এখন উইপোকায় খেয়ে ফেলেছে।যা নন এমপিও শিক্ষকরা বুঝতে পারেননি।সারা দেশে আজ প্রায় দুই লাখের বেশি নন-এমপিও শিক্ষক বিদ্যমান।ভেবে দেখেছেন কখনও,তাদের জীবন কীভাবে চলছে?

বেতনবিহীন চাকরি রক্তবিহীন শরীরের মতো।আর কতদিন এই যন্ত্রণা?আর কতদিন তাদের কৃত্রিম হাসি হাসতে হবে?তাদের কাছ থেকেই তো লাখ লাখ শিক্ষার্থী শিক্ষা নিচ্ছে প্রতিবছর।

একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষকের দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে যে অবদান,নন-এমপিও শিক্ষকদের সে অবদানের কি বিন্দুমাত্র কমতি আছে?শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যারা শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন তারাইতো প্রকৃত দেশপ্রেমিক।

বইয়ে পড়েছি যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত।জাতিকে উন্নতির চূড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য সারা দেশের নন-এমপিও শিক্ষকরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

শিক্ষকরাও তো সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ।তাঁদের কি হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে না?তাঁদের পেটের ক্ষুধা থাকলেও নির্লজ্জ হতে পারছেন না।কারণ তাঁরাও তো শিক্ষক।মানুষ গড়ার কারিগর!বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করছেন বলে তাঁদেরকে নন-সেন্স ভাববেন না।বরং তাঁদের সেন্স অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি কারণ তাঁরা অনেক ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়ে জাতির উন্নয়নের জন্য স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করে আসছেন।

সরকারের কাছে বিনীত নিবেদন,একটা সিদ্ধান্তে আসুন।হয় অবিলম্বে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করুন,নইলে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে না– মর্মে একটি ঘোষণা দিন’।টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করলে বিষয়টি একটি গুরুতর মানবিক সংকটের জন্ম দিতে পারে। চাকরি আছে বেতন নাই এটা কোন কল্যান রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 1 =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x