দশম শ্রেনীর এক স্কুল ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাবের মাধ্যমে উত্ত্যক্তের বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা।
উত্ত্যক্তের বিচার চেয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা শিক্ষকদের উদ্ধার করতে গিয়ে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন।বিকেল ৩ টা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তাঁদের বিদ্যালয়ে আটকে রাখে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার রায়কালী উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এঘটনার পর লম্পট শিক্ষক অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম মানিককে পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।এ ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মকবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন,উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নওজেশ আরা ও রায়কালী উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, রায়কালী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম মানিকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠে।
এ বিষয়ে গত ২৬ জানুয়ারি ওই ছাত্রী ও তার মা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিন মণ্ডলের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মিলে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।বুধবার ওই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা।
খবর পেয়ে ইউএনও তাহমিনা আক্তার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফিরোজ হোসেন, থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক ও রায়কালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বিদ্যালয়ে যান। এরপর অভিযুক্ত শিক্ষককে উপস্থিত করে পুলিশের গাড়িতে তুলে উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে আনার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা বিকেল তিনটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তাঁদের বিদ্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। তাঁরা একাধিক বার চেষ্টা করেও বিদ্যালয় থেকে বের হতে পারেননি।পরে অভিযুক্ত শিক্ষককে গাড়ি থেকে নামিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে বৈঠক করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে টার দিকে বৈঠক শেষ হয়।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম মানিক একাধিক ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাবসহ বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতেন।আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের টিসি দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বিদায় করার ভয় দেখাত। যে শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করেছে তাঁর মাসহ প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে অভিযোগ করে গেছেন।প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মিলে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।আমরা অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার দাবি করছি।
রায়কালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিন মণ্ডল গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘৫-৬ দিন আগে ওই ছাত্রী ও তার মা সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম মানিকের বিরুদ্ধে আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন।সময়ের অভাবে অভিযোগ সম্পর্কে কাউকে জানাতে পারিনি।ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে বিদ্যালয়ে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।’
আক্কেলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই।সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম মানিককে বিদ্যালয়ে পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে বলে এই কর্মকর্তা বলেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নিহাল খান
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম মেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।