নাটোরের লালপুরে ঘুষ দুর্নীতি করে টাকা পাহাড় গড়েছেন সাবেক ট্রাফিক পুলিশের টিআই আবেদ আলী।তিনি সরকারের কর ফাঁকি দিয়ে কিনেছেন অর্ধশত বিঘা জমি, ঢাকা, বনপাড়া ও নিজ গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ৫টি বিলাসবহুল বাড়ি, একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাটের পাশাপাশি টাকার পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
বিষয়গুলো তদন্ত করে আইন ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা, পুলিশ প্রধান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
সেই পুলিশ কর্মকর্তা আবেদ আলী নাটোরের লালপুর উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের গোধড়া গ্রামের মৃত শাহাদত আলী মোল্লার ছেলে।তিনি ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে ২০২২ সালে চাকরি জীবন শেষ করেন।
এলাকাবাসীর পাঠানো বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগে বলা হয়েছে, স্থানীয় রাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরী জীবন শুরু করেন।কিছু দিন পরে পুলিশের সার্জেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ঘুষের রাজত্ব শুরু করেন।
তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের সুপারিশে তিনি ঢাকা মহানগরে বদলি হন।সেখান থেকেই তার অবৈধ ভাবে টাকা উপার্জন করা শুরু। আস্তে আস্তে টাকার কুমিরে রূপান্তরিত হতে থাকেন তিনি টাকার জন্য এমন কোন কাজ নেই যে করতে পারেনা।নাটোর ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যদের সঙ্গেই তিনি নিজের সুবিধার্থে দহরম মহরম সম্পর্ক গড়ে তোলেন।এই সম্পর্ককে পুঁজি করে চালিয়ে যান অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
এলাকার গোধড়া মৌজায় নিজের এবং স্ত্রী সন্তানদের নামে ৫ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন আঠারো বিঘা জমি।স্থানীয় কদিমচিলান, ধলা, দাইড়পাড়া, গুনাইহাটি, মানিকপুর, ধানইদহ ও চাঁদপুর মৌজায় কিনেছেন প্রায় ৫০ বিঘা জমি যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকারও বেশি হতে পারে।
বনপাড়া শহরের মিশন স্কুলের পাশে ৫ কাঠার প্লট, বনপাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পূর্ব পাশে তিন বিঘা জমি, হিরামন সিনেমা হলের পাশে ১০ কাঠার প্লটে মেহেগুনির বাগান, মহিষভাঙ্গা মৌজায় জনৈক অশিত পালের দেড় বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।সরকারকে কর ফাঁকি দিতে এসব জমি খুবই কমদাম দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করেছেন তিনি।
পৈত্রিক বাড়ি ছাড়াও বনপাড়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির পিছনে দুটি ও হিরামন সিনেমা হলের পাশে একটিসহ তার মোট ৫টি বাড়ি সহ ঢাকার মোহাম্মদপুরে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ্য আছে।সবমিলে বর্তমান বাজার মূল্য হিসাব করলে আনুমাকিন ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার উপরে।
আবেদ আলী এলাকায় নিজের অবস্থান মজবুত করতে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় দানের পাশাপাশি তিনি নির্বাচনের সময় এলাকার প্রভাবশালী প্রার্থীদের পোস্টার ছাপিয়ে দেওয়াসহ নানাভাবে অর্থ সহযোগিতা করে আস্থাভাজন হয়ে উঠেন।
প্রধান উপদেষ্টা, পুলিশ প্রধান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগকারীরা আবেদ আলী ও তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্য এবং স্বজনদের সব ব্যাংক হিসাব অনুসন্ধানের করে সকল আয়ের বৈধতা যাচাই করে তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললে যানা যায়, এই পুলিশ কর্মকর্তার বিপুল সম্পদ ও গাড়ি-বাড়ি সহ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন।এসব সম্পদের তথ্য নিতে গেলে তার পুত্র তানভির আহাম্মেদ অন্তর সাংবাদিকদেরকে গুম-হত্যার হুমকি প্রদান করেন।
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আবেদ আলী বলেন, আমার এত বাড়ি, জমি ও সহায় সম্পদ থাকার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।সারাজীবন বেতনের টাকায় তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে ৫-৭ বিঘা জমি কিনেছেন।শান্তিরক্ষা মিশন থেকে অর্জন করা টাকায় বাড়ি করেছেন।পৈত্রিক সূত্রে কয়েক বিঘা জমি পেয়েছেন।নিজের জমি বিক্রি করে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাসের জন্য একটি ঠিকানা গড়ে তুলেছেন মাত্র।