মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
দুই আন্তর্জাতিক নৃত্যশিল্পী একই পূজামন্ডপে নৃত্য করে আলোড়ন সৃষ্টি করলেন আনুষ্ঠানিকভাবে ঝালকাঠি জেলায় প্রথম ছাত্রশিবিরের প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন ভোলায় মৎস্য অবমুক্তকরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করলেন জেলা প্রশাসক রংপুরে বিএসটিআই’র উদ্যোগে পালিত হয়েছে বিশ্ব মান দিবস ভেজাল মদপানে শিক্ষার্থীর মৃত্যু,হাসপাতালে ভর্তি ২ একসঙ্গে ৩ যমজ বাচ্চা প্রসব, দুশ্চিন্তায় দরিদ্র বাবা ঝালকাঠিতে টাস্কফোর্স টিমের অভিযান,দুই ব্যবসায়ীকে জরিমানা মহিপুরে গন অধিকার পরিষদের আলোচনা সভা ও দলীয় অফিস উদ্বোধন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের শারীরিক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল রাজশাহীতে বিশ্ব মান দিবস পালিত
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

চীন বিপ্লবের ৭৫তম বার্ষিকী : বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী দীর্ঘজীবী হোক

এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া

১ অক্টোবর ২০২৪, চীন বিপ্লবের ৭৫তম বার্ষিকী। চীনের জাতীয় দিবস।১৯৪৯ সালের এই দিনে চীনের মহান নেতা মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে সফল বিপ্লবের পর ‘পিপলস রিপাবলিক অব চায়না’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল।এ উপলক্ষে চীনের জনগণকে অভিনন্দন।

স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে যে দলই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকুক, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির সঙ্গে আন্তরিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক সবাই রক্ষা করতে চায়।অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে সচেষ্ট সবাই।এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমৃদ্ধ দেশটি সঙ্গত কারণেই এখন বাংলাদেশের বাণিজ্য ও উন্নয়নের প্রধান অংশীদারে পরিণত হয়েছে।

চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক হলো দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক প্রাচীন ও প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো বলে ইতিহাসবিদরা বলে থাকেন। বাঙালি সভ্যতা ও চীনা সভ্যতার মাঝে খ্রিস্টের জন্মেরও হাজার বছর আগে থেকে যোগাযোগ আছে। প্রাচীনকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদীর মাধ্যমে চীন এবং বাংলায় মানুষের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে চীন-বাংলাদেশের আধুনিক ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের এক অন্যতম অংশীদার হলো চীন। এবং বাংলাদেশ চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক পক্ষ।

ঐতিহাসিকরা বলে থাকেন, বাংলাদেশকে চীনের সঙ্গে যুক্ত করেছিল যে পথ, তার নাম সিল্ক রোড নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। ছিল পশ্চিমা সিল্ক রোড, যার সূচনা হয়েছিল রাজধানী সিয়ান (তৎকালীন ছাংআন) থেকে। সেই পথ সিনজিযাং হয়ে আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে ভারত হয়ে পৌঁছেছিল বাংলাদেশে (মংচিয়ালা)। কয়েক শতাব্দী ধরে এই মংচিয়ালাই ছিল চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যকার সম্পর্কের সেতুবন্ধন। একটি পূর্ব সিল্ক রোডও ছিল, যার উৎপত্তি হয়েছিল দক্ষিণ চীনের কুনমিং থেকে। মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে তা সংযোগ স্থাপন করেছিল বাংলাদেশের সঙ্গে। এই দুটি পথ ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল, বৃদ্ধি পেয়েছিল সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান।

প্রাচীনকাল থেকেই চীন ও বাংলাদেশ উভয়ই সমুদ্র উপক‚লীয় দেশ বিধায় সমুদ্রপথে তাদের মধ্যকার আদান-প্রদান ছিল চমৎকার। প্রায় ৬০০ বছর আগে চীনের মিং রাজবংশের পরাক্রমশালী স¤্রাট ছিলেন ইয়ংলে। সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ নাবিক অ্যাডমিরাল ঝেং হে ছিলেন স¤্রাটের শান্তির দূত; তিনি ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর পরিভ্রমণ করেন। তিনিই সমদ্র্রপথে চীনা সিল্ক রোড সৃষ্টি করেন। ১৪০৫-৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অ্যাডমিরাল ঝেং হে শতাধিক জাহাজের বিশাল বহর নিয়ে সাতটি আন্তঃসমুদ্র অভিযান পরিচালনা করেন এবং এশিয়া ও আফ্রিকার ৩০টি দেশ ও অঞ্চল পরিভ্রমণ করেন। অ্যাডমিরাল ঝেং হের নৌবহর দুবার চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। বাংলার শাসক সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহ তার রাজধানী সোনারগাঁয়ে সাদর অভ্যর্থনা জানান চীন থেকে আসা অ্যাডমিরালকে।

সুলতান পরবর্তী সময়ে একটি দীর্ঘ গ্রিবার জিরাফসহ মূল্যবান নানা উপহার পাঠান মিং রাজার দরবারে। চীনা ঐতিহ্য অনুসারে জিরাফকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে চীন নৌ ও স্থলশক্তিতে অত্যন্ত বলবান দেশ হওয়া সত্তে¡ও সমগ্র ইতিহাসে চীন অন্য কোনো দেশে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করেনি, অন্য কোনো দেশ দখল করে নেয়নি। বরং সব দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এসেছে।

১৯৪৯ সালে চীনা বিপ্লবের অব্যবহিত পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এক নতুন রূপ নেয়। এ সম্পর্ক রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিক ক‚টনৈতিক নিয়মে আবদ্ধ ছিল না; এটা ছিল আদর্শিক ও আত্মিক সম্পর্ক। এ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশের বামপন্থি আন্দোলনের সূত্র ধরেই। বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই একাধিকবার বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সফর করেছেন। স্বাধীনতার আগে থেকেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বাংলার জাতীয়তাবাদী নেতাদের সঙ্গে, বিশেষ করে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ’র প্রতিষ্ঠাতা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। মওলানা ভাসানী পরবর্তী ন্যাপ চেয়ারম্যান জাতীয় নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে চীন সফর করেন এবং চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হন। সে সময় মওলানা ভাসানী অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনিই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব প্রদান করেন। মাও সে-তুঙের নেতৃত্বে চীনের নতুন যাত্রার সময়কালেই চীন সফর করেছিলেন। সফরকালে তিনি নতুন চীন সম্পর্কে এমন অনেক কিছু জানার চেষ্টা করেছিলেন, যেগুলো সাধারণত লোকজন এড়িয়ে যেতে চায়।

মওলানার চীন সফরের সময়টা খুবই মূল্যবান ছিল। তিনি চীন সফরকালে চীনের অতীত ইতিহাসসহ বর্তমান রাজনীতি, সংস্কৃতি, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা যে গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছলেন, যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। সফর শেষে দেশে এসে মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ‘আজিকার সংঘাতক্ষুব্ধ বিশ্বে চীন এক মহাবিস্ময়। চীন আজ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার লুণ্ঠিতজনসমষ্ঠির মুক্তি-সংগ্রামের নেতা। চীন এই তিনি মহাদেশের সদ্যেত্থিত জনগণের মুক্তিতীর্থ, আমি সেই তীর্থ দর্শনে গিয়াছিলাম। আমার সেই তীর্থদর্শন ব্যর্থ হয় নাই। নূতন জীবনবোধের প্রত্যয়-দীপ্ত আলোকে আমার আশী বছরের বিশৃঙ্খল জীবনকে নূতন করিয়া দেখিতে শিখিয়াছি, আর তাই আমার মনে কোন গøানী নাই; এখনও যাঁহারা কুৎসা রটনা করিতেছে একদিন তাহাদের ভুল ভাঙ্গিবে।’

‘চীন দুনিয়ার বঞ্চিত মানুষের মুক্তিসংগ্রামের সব চাইতে দৃঢ় সব চাইতে আপনার বন্ধু। চীন তাই সা¤্রাজ্যবাদের সব চাইতে বড় শত্রু। চীনকে, চীনের মানুষের সংগ্রামকে নির্মূল করিবার চক্রান্ত চতুর্দিকে। আমাদের দেশও সেই চক্রান্তের অংশীদার ছিলো। চীন-বিরোধী চক্রান্তকে যেখানে যে-ভাবে যতটুকু সম্ভব প্রতিহত করা এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার ১৯০ কোটি মানুষের পবিত্র কর্তব্য।’
‘আমার সফর অভিজ্ঞতা স্বদেশবাসীকে সেই আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হেইতে যদি সামান্যতম সাহায্য করিতে সক্ষম হয়, তবে আমি নিজেকে ধন্য মনে করিব।’

নয়া চীনের অগ্রগতিতে মুগ্ধ লাল মওলানা খ্যাত মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী বলেন, ‘চীন দেখে এসেছি। এখন আমার যে বয়স তাতে নতুন ক’রে দীক্ষা নেবার সময় নেই। সম্ভব নয়। কিন্তু তবু চীন, আও সে-তুঙ আর তাঁর সাথীদের হাতে গড়া বাহাত্তর কোটি মানুষের দেশ চীন দেখে আমি অন্তত নতুন ভাবে নিজেকে, আমার দেশকে চিনতে পারার সুযোগ পেয়েছি। এই আত্মোপলব্ধি আমার নিজের কতখানি রূপান্তর আনতে পারবে, তা বলা কঠিন; আর আমার দেশটাকেই সাহায্য করতে পারব সে-প্রশ্ন আমার আছেই দুরুহতর। মহাচীনে যেয়ে আমি যেমন পেয়েছি এক নবতর জীবনপ্রয়াসের সন্ধান, তেমনি আমার চীন সফরের মধ্যে অনেক মিত্র-বন্ধু পেয়েছেন অনেক সন্দেহের সন্ধান। চীন ঘুরেও আমি যা পেলাম, তার পরিমাপ যেমন সহজে করা যাবে না-তেমনি আমার অনেক মিত্রে মনে যে উষার সৃষ্টি হয়েছে, তাও সহজে কাটবে না। অবশ্য একটা কথা ঠিক চীন না গেলেও বন্ধুদের আমার উপর ক্রুদ্ধ হবার কারণ খুঁজে পাওয়া হয়তো অসম্ভব হতো না। চীনে আমি যে-অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, আমার সাতাত্তর বছরের অভিজ্ঞার পটে আঁকা বিচিত্র এবং বহু রঙের চিত্রে কোনটির সাথে তার মিল খুঁজে পাচ্ছি না। কিন্তু বন্ধুদের মনে যে প্রতিক্রিয়া দেখেছি তা আমার অতি-পরিচিত।’
চীন-বাংলাদেশের সম্পর্কের ছন্দপতন ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে কেন্দ্র করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দক্ষিণ এশিয়ায় জটিল ভ‚-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দিতায় চীন পাকিস্তানের পক্ষে ও বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে নানা কারণে চীনের বৈরী সম্পর্ক এবং ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধে ভারতের সঙ্গে চীনের তিক্ততা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছিল। এ অবস্থায় সোভিয়েত রাশিয়া ও ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিলে চীন দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করে।

১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৭৫ সালের শেষে ও ১৯৭৬ সালের শুরুতে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের যে ভিত্তি রচিত হয়েছিল তার প্রধান অবলম্বন ছিল নিরাপত্তা ইস্যু। সেদিক থেকে এ সম্পর্ক সামরিক-রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে বৃত্তাবদ্ধ ছিল। ফলে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের প্রাথমিক সূত্র তৈরি হয় অস্ত্র সরবরাহের মধ্য দিয়ে।

আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চীন ‘কৌশলগত’ কারণে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল বিধায় চেতনাগত কারণে আমাদের প্রজন্মের অনেকের মনে খানিকটা সংশয় থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে চীনের সে সময়কার অবস্থান যে আঞ্চলিক রসায়নের বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ফসল ছিল, সেটাও আমরা বুঝতে পারি।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পূর্বমুখী কূটনীতি অনুসরণ করেন। এ সময়ে চীনও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে যতœবান ছিল। দুই দেশের রাজনৈতিক দর্শন ভিন্ন। ভাষা-সংস্কৃতিতেও বিস্তর পার্থক্য। তারপরও আমাদের সম্পর্ক বিশ্বের রোল মডেল হয়ে আছে। কখনও তা ঝিমিয়ে পড়েনি। জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা চীন সফর করেছেন। দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।

ক্ষমতাসীন অর্ন্তবর্তীকালিন সরকার, বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাপসহ বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক কামনা করে। এ জন্য য্তœবান হয়। আমাদের জনগণও চায় এ মৈত্রীর বন্ধন চিরকাল অট‚ট থাকুক। আমরা এ দেশ থেকে নানাভাবে সহযোগিতা পাচ্ছি। বাণিজ্য সম্পর্ক, অবকাঠামো নির্মাণ, খেলাধুলা কত ক্ষেত্রেই না সহযোগিতা করছে চীন। প্রতিরক্ষা খাতে রয়েছে বিশেষ সহযোগিতা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তি রক্ষায় অবদান রাখছে। তারা দক্ষ ও চৌকস বাহিনী হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। একটি আধুনিক ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে যে মর্যাদা আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনীর, তার পেছনে চীনের ভ‚মিকা অবশ্যই স্মরণ রাখবে।

চীন স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমে কৃষিবিপ্ল করেছে। এ জন্য তাদের কেউ অনাহারে মারা যায়নি। শিল্পবিপ্ল হওয়ার পর চীন এখন তাদের চরিত্র পরিবর্তন করেছে। এ জন্য অকারণে তাদের প্রতি অতিভক্তি দেখিয়ে লাভ নেই। কিন্তু তাদের ভালোটি আমাদের গ্রহণ করতে হবে।

চীন জাতি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় বিভক্ত ছিল। কিন্তু মাও সেতুং তাদের জাতীয়তাবাদের বিষয়ে এক করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ কারণেই বর্তমান আধুনিক চীনের জন্ম হয়েছে। মাও সেতুংয়ের রাষ্ট্রনীতি চীনকে আমূল বদলে দিয়েছিল। তার যোগ্য নেতৃত্বের ফলেই সামন্তবাদী সমাজ থেকে চীন অতি অল্প সময়ে আধুনিক সমাজে পরিণত হয়। জীবদ্দশায় নিজের প্রণীত রাজনৈতিক দর্শন ও বিপ্লবীতত্তোর জন্য মাও সেতুং যেমন পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন তেমনি নানা মহলের তীব্র সমালোচনারও সম্মুখীন হয়েছিলেন।

মাও সেতুং শুধু বিপ্লবী নেতা নন, তিনি নেতাদের নেতা ছিলেন। তার কারণেই আজকে চীন নিজেদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে পেরেছে। তবে এ জন্য তাদের অনেক লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে। মাও সেতুং ছাড়া চীনের ইতিহাস কল্পনাও করা যায় না।

চীন আমাদের বন্ধু দেশ, প্রাণের দেশ। ১ অক্টোবর ২০২৪ চীন বিপ্লবের ৭৫তম বার্ষিকী। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জাতীয় দিবস। প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দিবস। হাজার বছরের আধা-উপনিবেশ আধা-সামন্তবাদের অপমান আর গøানির জোয়াল চীন তার স্কন্ধ থেকে আজকের এই দিনে ছুড়ে ফেলে দেয়, পায়ের শৃঙ্খল খান খান করে ভেঙে ফেলে, দুই হাত উচ্চে তুলে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে চিৎকার করে। আজ চীনের জনগণের মহামুক্তির, মহাবিজয়ের দিন।

চেয়ারম্যান মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে বিপ্লবী চীনা মুক্তিফৌজ সমগ্র চীনকে মুক্ত করে ১ অক্টোবর ১৯৪৯ সালে। তিন লাখ জনতার বিশাল সমাবেশে তিয়েনআনমেন স্কয়ারের মঞ্চ হতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন মাও সেতুং। তিনি উদাত্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘সমগ্র বিশ্ব চীনের বন্ধু’। চীন তার নিজের শক্ত পায়ের ওপর দাঁড়িয়েছে। সে হাজার বছরের পরাধীনতার গøানি, অপমান আর লজ্জাকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে চীন আর কখনও কোনোদিন কোনো অপমান, কোনো অবমাননা বরদাশত করবে না। মাও সেতুং তার কথা রেখেছেন। সিপিসি তার কথা রেখেছে। চীন তার কথা রেখেছে।

আজ অস্থির বিশ্ব শান্তিবাদী, সাম্যবাদী, প্রগতিবাদী গণচীনের দিকে তাকিয়ে আছে। চীনের কাছে উচ্চ প্রত্যাশা সবার। বিশ্বের শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা এবং মানবজাতির উন্নয়ন ও প্রগতিতে চীন অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। মাও সেতুং বলেছিলেন, ‘গোটা বিশ্ব চীনের বন্ধু’ আগামী দিনে চীন যেমন শান্তি, অগ্রগতি ও মর্যাদার গৌরবে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে তেমনি বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী সব দেশ, সমগ্র এশিয়া অঞ্চল তথা সমগ্র বিশ্বকে শান্তিময়, সম্প্রীতিরময়, কল্যাণময়, মঙ্গলময়, নান্দনিক করে তুলতে প্রভুত অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস।

মহান গণচীনের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভদিনে আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন।জয় হোক গণচীনের।জয় হোক গণচীনবাসীর।দীর্ঘজীবী হোক চীন-বাংলাদেশ মৈত্রীর।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com