রাজবাড়ীতে চলতি মাসে ৫ টি হত্যাকান্ডের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে জেলা পুলিশ।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনে ৫ টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর পাংশা থানার পাট্টা ইউনিয়নের বিলমন্ডব এলাকায় বসবাসরত এজাহারনামীয় আসামী রতন খাঁ তার স্ত্রী চামেলীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং এ ঘটনায় এজাহারনামীয় আসামী চামেলীর স্বামী রতন খাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। সে আদালতে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
অপরদিকে, গত ২১ সেপ্টেম্বর ভোর ৪ টায় কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া গ্রামে ট্রান্সফরমার মাথায় করে পালানোর সময় এলাকাবাসীর হাতে গণপিটুনির শিকার হন নাজমুল।নাজমুল গুরুতর আহত হলে স্থানীয় কয়েকজন ভ্যানে করে তাকে কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের সামনে ফেলে যান। নাজমুল মোল্লা সেখান থেকে নিজে হেটে গিয়ে জরুরী বিভাগে যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন দুপুরে তিনি মৃত্যুবরণ করে।ওই ঘটনায় ভিডিও ধারনকারী মূল ব্যক্তি ও হত্যাকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট সালাম দরিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। নিহত নাজমুল একজন পেশাদার চোর ছিলেন। তার নামে ডাকাতি ও চুরি সহ ১১ টি মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে গত রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের কাটাখালি বাজারে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা চরমপন্থী নেতা সুশিলকে গুলি করে ও কুপিয়ে মেরে ফেলে রেখে যায়। সুশিল একজন চরমপন্থী দলের এই অঞ্চলের নেতা ছিলেন। তার নামে গোয়ালন্দঘাট থানায় হত্যাসহ অস্ত্র আইনের সাতটি মামলা রয়েছে।তিনি ইতোপূর্বে ৫ বছর জেলও খেটেছেন।
হত্যাকান্ডের এ ঘটনার গোয়ালন্দঘাট থানা পুলিশ জনি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। তার নামে দুটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র আইনে মামলা এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সবুজ মার্ডার মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী জনি।
অপরদিকে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজবাড়ীর রামকান্তপুর ইউনিয়নের মাটিপাড়া গ্রামে মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে শ্বাসরোধ করে বন্যা খাতুন (৩০) নামে এক গৃহবধূকে হত্যা করে তারই স্বামী মোঃ রশিদ শেখ (৩২)। ঘটনার পর নিহতের স্বামী রশিদ শেখকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে।
এছাড়াও গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৮ টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের পূর্ব ভবদিয়া গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে নিখোঁজের দুই দিন পর মিনহাজুল শেখ (১২) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা গেছে, মিনহাজ শেখ পার্শ্ববর্তী এলাকার মুক্তার সর্দারের বাগানে মাল্টা খাওয়ার লোভে বাগানে প্রবেশ করতে যায়। কিন্তু মুক্তার সর্দার তার বাগান কাঁটাতারের বেড়া ও বিদ্যুতায়িত করে রাখে। শিশুটি সেই বাগানের বেড়ার বিদ্যুতের তারের সাথে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়। পরবর্তীতে মৃত দেহ মুক্তার সর্দার ও তার সহযোগীরা ধানক্ষেতের মাঝখানে ফেলে রেখে দেয়। এ ঘটনায় বাগানের মালিক ও দারোয়ানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে। আসামীরা পলাতক আছে। গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন বলেন, সাম্প্রতিক কিছু দিনের মধ্যে রাজবাড়ীতে ৫ টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এক একটি ঘটনা ভিন্ন ধরনের। একটির সাথে অন্যটির মিল নেই। হত্যাকান্ড গুলো জেলায় অনেক আলোচনা সৃষ্টি করে। জেলা পুলিশ এই হত্যাকান্ড গুলোর রহস্য উদঘাটন করতে মাঠে কাজ করছে। ইতিমধ্যেই এই পাঁচ হত্যাকান্ডে সংশ্লিষ্ট ৪ জনকে গ্রেপ্তার করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এই হত্যাকান্ডগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।জেলা পুলিশ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বদা কাজ করছে। আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করছি এবং সবাইকে সচেতন থাকার আহবান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মুকিত সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শরীফ আল রাজিব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ ইফতেখারুজ্জামান সহ জেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।