দূর্নীতির মাধ্যমে জমির রেকর্ড ও দলিল বিহীন জমি রেজিস্ট্রির পায়তারা করায় শ্যামনগরের এসিল্যান্ড ও সাবরেজিস্ট্রারসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন শ্যামনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব রেজিস্ট্রার মঈনুল হক ও হেডক্লার্ক ভীম চন্দ্র মন্ডল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো.আসাদুজ্জামান, ভূরুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো.আল মামুন, কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে কাজী আখেরুল ইসলাম ও শ্যামনগর উপজেলার ভূরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শোকর আলী সরদার।
মামলাটি দায়ের করেছেন কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের মৃত কাজী আছাদুল হকের ছেলে কাজী আবু সাইদ (সোহেল)।
রবিবার (২৯ জানুয়ারি) সাতক্ষীরার বিজ্ঞ স্পেশাল আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে দুদককে তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, শ্যমনগর উপজেলার ভূরুলিয়া ইউনিয়নের ইছাকুড় মৌজার (এসএ নং ১০৪) ও ৫৪ নং দাগে বাদীর পৈতৃক ৯১ শতক সম্পতি রয়েছে। যার মধ্যে ৫ নম্বর আসামি বাদীর আপন চাচা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভুরুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তার সহযোগিতায় অতিরিক্ত ২৩ শতক জমির মিটিশন ও খাজনা দাখিল করেছেন।ওই খানে তার চাচার নামে দলিলে জমি রয়েছে ১০ শতক। তবে তিনি মিটিশন ও খাজনা দিয়েছেন ৩৩ শতক জমির। দলিল ছাড়া নিজের নামে রেকর্ড ভুক্ত করে সাব রেজিস্ট্রার ও হেড ক্লিলাককে উপঢৌকন দিয়ে ওই জমি বিক্রি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আখেরুল ইসলাম। মামলার বাদী বিষয়টি জানতে পেরে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষা করতে ৬ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী কাজী আবু সাঈদ সোহেল জানান- তার চাচা আখেরুল ইসলাম শ্যামনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নায়েবকে ম্যানেজ করে দলিল ছাড়াই তার পিতার জমি নিজের নামে রেকর্ড ভুক্ত করেছেন। রেকর্ড সংশোধনের জন্য ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
আদালতে মামলা চলাকালীন সময়ে সাবরেজিস্ট্রারকে ম্যানেজ করে ওই জমি বিক্রি করার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন তার চাচা।দলিল ছাড়া রেকর্ড সুত্রে কিভাবে বিক্রি করা সম্ভব বিষয়টি তাকে অবাক করে তুলেছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে কাজী আখেরুল ইসলাম জানান- তার ভাই মৃত কাজী আছাদুল ইসলাম ও তিনি ৩৩ শতক করে জমি রেকর্ড পেয়েছেন। দলিল অনুযায়ী তিনি ৩৩ শতক জমির মালিক। তার ভাই জীবীত থাকা অবস্থায় তার ক্রয়ক্রত সম্পতি থেকে বঞ্চিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন।বর্তমান তার ভাইপো কাজী আবু সাঈদ তার জমি দখলের জন্য বিভিন্ন ভাবে পায়তারা চালাচ্ছে বলে জানান তিনি।এছাড়া এসিল্যান্ড ও নায়েবকে ম্যানেজ করে জমি মিটিশন ও খাজনা দাখিলার বিষয় অস্বীকার করেন তিনি।
ভুরুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আল মামুন জানান- ৯০ সালে আখেরুল ইসলামের নামে ৩৩ শতক জমি রেকর্ড হয়েছে।রেকর্ড বুনিয়াদে বর্তমান জমির মালিক তিনি।রেকর্ডের ভিত্তিতে মিটিশন ও খাজনা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
শ্যামনগর সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সাব রেজিস্ট্রার জানান- দলিল ছাড়া রেকর্ড, মিটিশন ও খাজনা দাখিলা থাকলে জমির মালিক তার জমি বিক্রি করতে পারবেন।আখেরুল ইসলামের জমির খাজনা, মিটিশন ও রেকর্ড আছে এজন্য দলিল ছাড়াও ওই জমি তিনি বিক্রি করতে পারবেন।এছাড়া ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলাকালীন অবস্থায় জমি বিক্রি করা যায় বলে তিনি জানান।
শ্যামনগর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান জানান- বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন।এছাড়া দলিলের বাইরে মিটিশন বা খাজনা দাখিল করার সুযোগ নেই।যদি কোন ভুলের মাধ্যমে এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে ভুক্তভোগীর আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্ত পূর্বক সংশোধন করার সুযোগ আছে।এছাড়া তার নামে মামলা হয়েছে এবিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।