দুর্গাপূজা করতে হলে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে—এমন চিঠি পেয়েছেন খুলনার দাকোপ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের কয়েকটি মন্দিরের নেতারা।চিঠিতে হুমকি দেওয়া হয়েছে, চাঁদার কথা প্রশাসন বা সাংবাদিকদের জানালে ‘কচুকাটা’ করা হবে।চিঠি পাওয়ার পর থেকে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ কাজ করছে।
দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম এসব চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ও বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার সুতোরখালি ইউনিয়নের একটি, কামারখোলা ইউনিয়নের দুটি ও কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের একটি মন্দিরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠিগুলো আসে।হলুদ খামের চিঠিতে প্রেরকের কোনো ঠিকানা ছিল না।দুর্গাপূজা করতে হলে প্রতিটি মন্দিরের পক্ষ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে উল্লেখ রয়েছে চিঠিগুলোতে।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, চাঁদার কথা প্রশাসন বা সাংবাদিকদের জানালে ‘কচুকাটা’ করা হবে বলে চিঠিতে হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিমান সাহা চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে।নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসন কাজ করছে।
কম্পিউটার কম্পোজ করা চিঠিগুলোতে লেখা হয়েছে, ‘শোন, এবারে ২০২৪ সালে দূর্গা পূজা করতে হলে তোদের প্রত্যেক মন্দিরের পক্ষ থেকে চাঁদা দিতে হবে পাঁচ লক্ষ টাকা।তা না হলে তোরা কোনভাবেই পূজা করতে পারবি না।হানিফ এর প্রজেক্টে যেমন করেছি তোদের পরিণতিও তেমন হবে।সমুদয় টাকা এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রস্তুত রাখবি।তোদের কালিনগর বাজারে যেখানে দিতে বলবো সেখানে দিয়ে যাবি।পরে জানাবো সেটা। এসব কথা যদি প্রশাসন মহল, সাংবাদিক বা ভিন্ন কাউকে জানাস তবে তোদের কচুকাটা করবো কথাটা মনে রাখিস।তোদের পরিবারও রেহাই পাবেনা।তোদের আশেপাশের সকল মন্দিরকেও গোপনে বলবি সব মন্দিরের নাম আমরা জানি না।প্রশাসন সেনাবাহিনী সব আমাদের কেনা চালাকি করে কোন লাভ হবেনা টাকা কিন্তু দিতেই হবে।আল্লাহর কসম টাকা না পেলে তোদের কেটে টুকরো টুকরো করবো।তোরা আমাদের নজরে আছিস।’
হানিফের প্রজেক্ট কী—জানতে চাইলে স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের চিংড়ির ঘেরে কয়েকদিন লুটপাট চলে।সেই লুটপাট এখনও চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক মন্দিরের নেতারা জানান, এবার বড় করে দুর্গাপূজা করার ইচ্ছা ছিল না তাঁদের।সেভাবেই আলোচনা চলছিল।তবে এই চিঠি পাওয়ার পর থেকে কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাঁরা।
এসব ঘটনায় শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) উপজেলার চারটি মন্দিরের পক্ষ থেকে দাকোপ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
মন্দিরগুলোতে গ্রাম পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি মন্দির কমিটির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও জানান সিরাজুল ইসলাম।
তথ্যসূত্রঃ ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি