ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে এক যুবককে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিহত যুবক ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ছিলেন বলে জানা গেছে।গতকাল বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকের নাম তোফাজ্জল।বরগুনার পাথরঘাটার কাঁঠালতলি ইউনিয়নে তার বাড়ি।
সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকের পর গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করা হয়।একপর্যায়ে ওই যুবককে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়।এরপর পুনরায় মারধর করা হয়।রাত ১০টার দিকে হলের হাউস টিউটররা ঘটনাস্থলে গেলে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান কয়েকজন শিক্ষার্থী।পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে ওই শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সরে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।কেউ চুরি করতে এলেও তাকে পিটিয়ে হত্যার অধিকার কারো নেই।ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দায়ীদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।এ ঘটনায় হলের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হবে।’
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক বলেন, তোফাজ্জলকে হাসপাতালে নিয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন।লাশটি মর্গে রাখা হয়েছে।
হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি
এ বিষয়ে তদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন।
বিষয়টি তদন্তের জন্য হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আলমগীর কবীরকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম খান, অধ্যাপক ড. শেখ জহির রায়হান, মো. মাহাবুব আলম, ড. আছিব আহমেদ আবাসিক শিক্ষক, সহকারী আবাসিক শিক্ষক ড. এম এম তৌহিদল ইসলাম, সহকারী প্রক্টর (বিজ্ঞান অনুষদ) এ. কে. এম. নূর আলম সিদ্দিকী।
থানায় মামলা, ব্যবস্থা নিবে পুলিশ
যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় অভিযোগ দাখিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মামলা দায়ের ও তদন্তপূর্বক ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপ্স) ইসরাইল হাওলাদার।
তিনি বলেন, শাহবাগ থানায় অভিযোগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।মামলা নথিভুক্ত হচ্ছে।তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হবে।ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক মামলা অনুযায়ী আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য
এসব বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, মব জাস্টিসের ক্ষেত্রে জনসচেতনতাটা বাড়াতে হবে।কালকে জাহাঙ্গীরনগরে দেখলাম…তারা তো সবচেয়ে শিক্ষিত।তাদের ক্ষেত্রে তো এই সচেতনতা আসতে হবে।একজন অন্যায় করলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করেন।আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই।
ডিএমপি সদরদপ্তরে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, কেউ অপরাধী হলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে।এটার ক্ষেত্রে আপনারাও (গণমাধ্যম) একটু আমাদের সাথে কাজ করতে পারেন।জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ইনোসেন্ট লোক যেন কোনো অবস্থাতেই হেনস্তা না হয়।