মোহাম্মদ সালমানের দুই কিডনির মাঝখানে মেরুদণ্ডে আটকে আছে একটি গুলি।চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে এ গুলি বের করার সুযোগ নেই।গুলিটি বের করতে গেলে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।তবে বিদেশে উন্নত চিকিৎসায় বের করা যেতে পারে।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন গুলিবিদ্ধ হন রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সালমান নগরীর বসরী এলাকার মোহাম্মদ রবির ছেলে তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের পক্ষে সেদিন রাজশাহীর আলুপট্টিতে লড়ছিলেন আওয়ামী লীগের বিপক্ষে।হঠাৎ একটি গুলি এসে তাঁর পেটের বাঁ দিকে ঢুকে খাদ্যনালি ফুটো করে দুই কিডনির মাঝ বরাবর মেরুদণ্ডের ভেতরে ঢুকে যায়।এর সামান্য নিচেই মূত্রনালি।রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে সালমানের অস্ত্রোপচার করা হয়।দীর্ঘ সময়ের অস্ত্রোচারে খাদ্যনালির ফুটো বন্ধ করা গেলেও গুলিতে হাত দিতে পারেননি চিকিৎসক।খুবই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গুলিটি আটকে থাকায় এর পর আরেক দফা অস্ত্রোপচার করেও তা বের করা যায়নি।
সালমান বলেন, ‘চিকিৎসকরা আমার বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।কারণ গুলিতে আমার খাদ্যনালি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।দীর্ঘ সময় অস্ত্রোচার করে তা ঠিক করা সম্ভব হয়েছে।তবে এখনও ঘা শুকায়নি।গুলিটি স্পাইনাল কর্ডে বিপজ্জনক এক জায়গায় আছে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে গুলিটি আছে, তার দুই পাশের খুবই কাছাকাছি দুটি কিডনি।নিচে মূত্রথলি।’
চিকিৎসকরা বলেছেন, অপারেশন করে গুলি বের করতে গেলে আমার মৃত্যু বা সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।এ কারণে আমাদের দেশে এটা সম্ভব নয়।তবে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা করা গেলে হয়তো বের করা যেতেও পারে।
তিনি বলেন, ‘এখন চিকিৎসার সব খরচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করছে।বর্তমান সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া– প্রয়োজনে দেশের বাইরে নিয়ে হলেও যেন শরীর থেকে গুলিটি বের করে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম, পেয়েছি।এখন দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে হবে।তবে কিছু কিছু জায়গায় মাজারে, মন্দিরে হামলা করে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।সরকারের উচিত এগুলো কঠোর হাতে দমন করা।’
সালমান ভর্তি আছেন রামেক হাসপাতালের একটি বিশেষ কেবিনে।পাশে থাকা তাঁর বাবা মোহাম্মদ রবি বলেন, ‘ছেলেটা সারাজীবন গুলি বহন করবে কীভাবে? তার তো সারাজীবনই পড়ে আছে, এখন বয়স মাত্র ২১।তা ছাড়া গুলি থাকলে কখন কী সমস্যা দেখা দেয়।তাই সরকারের কাছে দাবি করছি, প্রয়োজনে বিদেশে নিয়ে হলেও তার গুলিটা বের করে দেওয়া হোক।’
একই কেবিনে ভর্তি আছেন রাজশাহী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী মোমিনুল হাসান।তিনি দুর্গাপুরের বাদইল গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে।গত ৫ আগস্ট মাথায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।নিজের রক্তের বিনিময়ে চান দুর্নীতি ও ছাত্র রাজনীতিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘চিকিৎসাধীন সালমান এখন ভালো আছেন।তবে তাঁর গুলি বের করা যায়নি।আমরা আপাতত দেখছি, গুলিটি শরীরে থাকলে কোনো সমস্যা হয় কিনা।যদি সমস্যা না হয়, তাহলে থাকবে।তবে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করা হলে গুলিটি বের করা সম্ভব হতেও পারে।