যশোরের শার্শার মাঠগুলোতে ফসলি ক্ষেতজুড়ে ছিল আমন ধান ও সবজির আবাদ। কয়েকদিন পরেই ধুম পড়তো আমন ধান কাটার আর সবজি উঠিয়ে গ্রাম ও শহরের হাট-বাজারে বিক্রির।আর এতে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল গ্রাম্য এলাকার প্রান্তিক কৃষকেরা।
কিন্তু তাদের এ স্বপ্ন টানা তিন দিনের প্রবল বৃষ্টির পানির নীচের তলিয়ে গেছে।টানা তিন দিনের প্রবল বৃষ্টিতে আমন ক্ষেত ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।এতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন কৃষকেরা।
এছাড়া টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা।ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের।
সরেজমিনে ঘুরে যশোরের শার্শা উপজেলার পুটখালী, গোগা, কায়বা, ও বাগআঁচড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এমন ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা গেছে।
শার্শার রুদ্রপুর গ্রামের সবজি চাষি আবদুর রশিদের চোখে মুখে এখন দুঃস্বপ্ন।কারণ তার প্রায় এক একরের সবজি ক্ষেত পানির নিচে।পানি সরে গেলেও কোনোভাবে রক্ষা করতে পারবেন না এ ফসল।এরই মধ্যে ক্ষেতের সবজি গাছ মরা শুরু করেছে।আশঙ্কা করছে পানি নেমে গেলে ও গাছগুলো মরে যাবে।আর পানির নিচে তলিয়ে থাকা পটলের লতি গুলো পচে যাবে।চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা।পুরোটাই এখন জলের ভাসছে।
আব্দুর রশিদ বলেন, একমাস পর সবজি বাজারে তোলার স্বপ্ন দেখছিলাম।কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন পানির তলায় ডুবে গেছে।লাভের বদলে উল্টো লোকেশনে পড়ে।গেলাম।
কায়বা এলাকার কৃষক আল-আমীন ৩৬ শতাংশ জমিতে কুলের চারা লাগিয়েছেন, এবার কুল বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন ও দেখেছিলেন।চারা গুলোতে ফুল ও ধরেছিলো।টানা বর্ষায় জমিতে পানি জমে যাওয়ায় গাছ গুলো আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।কিছু গাছ পানির নিচে ভেঙে পড়েছে।কুল গাছ ছাড়াও তার ঢেড়স ও কলাই ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
গোগা এলাকার কৃষক মাষ্টার রওশন আলী তিন বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন।পুরো ক্ষেতের কাঁচা ধান এখন পানিতে ভাসছে।এক তৃতীয়াংশ ধানও পাবেন না তিনি।
কৃষক সেলিম রেজা বলেন, সবেমাত্র ধানের শিষ বের হয়েছে।একটু রৌদ্র হলেই ধান পাক ধরার কথা।এরই মধ্যে বৃষ্টির পানিতে ধানগাছ ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে।এ ধান যদি ও কিছু নেওয়া যায় তার পর ও কাটতেও শ্রমিক খরচ বেশি হবে।এমনিতেই ধান ক্ষেতে এবার ওষুধ খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে।
বাগআঁচড়া গ্রামের নাজমুল মোল্লা বলেন, টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়ে বাড়ির ভিতর পানি ঢুকে হাটু সমান হয়েছে।তলিয়ে গেছে বাগআঁচড়া দারুল আমান ট্রাস্ট এলাকা।
শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার দীপক কুমার মন্ডল জানান, কয়েকটি স্থানে ক্ষেতে থাকা আমন ধানের গাছ ভেঙে পড়েছে এবং উপজেলার পুটখালী,গোগা ও কায়বা ইউনিয়নের বিল এলাকার ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।আমন ক্ষেত ও সবজি ক্ষেতে পানি জমে আছে।পানি দ্রুত নেমে গেলে ধানসহ ফসলের ক্ষতি কম হবে।
তিনি আরও জানান, উপজেলায় প্রায় ৩শ হেক্টর জমিতে ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।তবে এ বৃষ্টির পানির সাথে ভারতের পানি যাতে না ঢুকতে পারে সে ব্যাপারে আমরা উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের রুদ্রপুরে ইছামতী নদীর সামনে একটি বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকানোর চেষ্টায় আছি।নতুন করে পানি না ঢুকলে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ কমে যাবে বলে তিনি জানান।