রাজশাহীর বাঘায় মাদক অভিযান পরিচালনাকালে সিপিএসসি, র্যাব-৫ রাজশাহীর একটি অভিযানিক দলের সদস্যদের বৈধ সরকারি কতর্ব্য পালনে বাধা প্রদানসহ হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি,ধাক্কা-ধাক্কি করে বসতবাড়ির ভেতরে ঢুকায়ে গেট আটকায়ে আবদ্ধ করে রাখা, ৪ জোড়া চায়না হ্যান্ডকাপ,২টি র্যাব জ্যাকেট, ২টি সরকারি রেইনকোট ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০০/১৫০ জনের বিরুদ্ধে বাঘা থানায় মামলা দায়ের করেছে রাজশাহী র্যাব-৫ এর ডিএডি ইমরান আলী।
মঙ্গলবার ১০ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার বারশতদিয়াড় গ্রামের এজাহার নামীও রাজা ইসলামকে ১ নম্বর আসামী করে তার বোন রুপালি,স্ত্রী বৈশাখী,পিতা আরমান আলী সহ বারশতদিয়াড়, আলাইপুর, ভানুকর, বিনোদপুর,রুপপুর,রাওথা গ্রামের লোকজনের নামে মামলা করা হয়েছে। মামলায় ২৮ নম্বরে রাহেলা মেম্বরের নামও রয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়,জিডি মূলে সোমবার (০৯-০৯-২০২৪) রাতে মাদক দ্রব্য উদ্ধার,নিয়মিত মামলার আসামী গ্রেপ্তার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে অফিসার ও ফোর্স চারঘাট ট্রাফিক মোড়ে অবস্থাকালে জানতে পারেন মাদক ব্যবসায়ী রাজা ইসলামের বসতবাড়িতে সেসহ কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী ফেন্সিডিল মজুদ রেখে বিক্রয়ের জন্য অবস্থান করছে। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রাত সাড়ে ১০টায় সঙীয় অফিসার ও ফোর্সসহ মোটরাসাইকেল ,পিকআপ ভ্যানে ঘটনাস্থল এলাকায় পৌছে আনুমানিক ১কিলোমিটার দুরে পিকআপ পার্টিকে রেখে সঙীয় মোটরসাইকেল পার্টিকে নিয়ে রাজা ইসলামের বাড়ির কাছাকাছি পৌছেন। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ২জন ব্যক্তিকে আটকানোর চেষ্টা করেন এবং ১ জনকে নাম জিজ্ঞাসা করলে তার নাম রাজা ইসলাম বলে জানায়। র্যাবের পরিচয় প্রদান করে তার বাড়িতে ফেন্সিডিল মজুদ আছে কি-না, জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বৈধ সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও আক্রমন করার উদ্দেশ্য লোকবল জমায়েতের জন্য সোরগোল করে বলে কয়েকদিন আগে আমার বড় ভাইকে ৮৫০ বোতল ফেন্সিডিলসহ ধরেছে,আজকে আবার এসেছে। তোমরা কে কোথায় আছো এগিয়ে এসো। এরা পাইছে কি? এদেরকে ধরো। এসময় বেআইনি সংঘবদ্ধ জনতা দেশীয় লাঠি,লোহার রড,ধারালো হাসুয়াসহ মামলার বাদি,তার সঙীয় এলএস সোহাগ হোসেন,এএসআই নজরুল ইসলাম ল্যাঃ কর্পোঃ জাহিদুর রহমান,দুলাল হোসেন,নায়েক আফছার আলী, কনস্টেবল মিজানুর রহমানের উপর অতর্কিত হামলা করে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি,ধাক্কা ধাক্কি করে বসতবাড়ির ভেতরে ঢুকায়ে গেট আটকায়ে আবদ্ধ করে রাখে।
মুঠোফোনে বিষয়টি জানানোর পর,মোটরসাইকেল ও পিকআপ পার্টির সদস্যগন তাদের উদ্ধারের জন্য যুক্ত হয়। এ সময় রাজা ইসলামের পিতা আরমান আলী বলে এর আগে এক ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছেন, এই ছেলেকে নিয়ে যেতে দিবনা বলে অজ্ঞান হওয়ার ভান করে শুয়ে পড়ে। এ সময় রাজা ইসলামসহ তার বোন,মা অকঢ্য ভাষায় গালিগালাজ করে কিলঘুষি মারে। আরমান মারা গিয়েছে বলে গুজব ছড়ায় রাহেলা মেম্বর । অন্যান্য আসামীরা সঙীয়দের মারধর করে ৪ জোড়া চায়না হ্যান্ডকাপ,২টি র্যাব জ্যাকেট, ২টি সরকারি রেইনকোট ছিনিয়ে নেয়। পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন আহত র্যাব সদস্যরা।
স্থানীয়রা জানান, মাদক ব্যবসায় জড়িত সন্দেহে সাদা পোষাকে আসা র্যাব সদস্যরা রাজা ইসলামকে মারধর করে। সোরগোল শুনে গ্রামের লোকজন আগায়ে যায়। রাজা ইসলাম মাদক ব্যবসায় জড়িত নয় দাবি করে বলেন, তাকে ধরে অন্যায় ভাবে মারধর করা হয়েছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে বিক্ষব্ধ জনতা র্যাব সদস্যর উপর হামলা করে আবদ্ধ করে রাখে। বিক্ষুব্ধ জনতার লাঠির আঘাতে মোটরবাইকেলের কিছু অংশ ভেঙে ক্ষতি হয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতার ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজা ইসলাম জানান, বছর খানেক আগে তিনি সৌদি থেকে বাড়িতে এসে গ্রামের হাবিবুর এর মোড়ে মুদি ব্যবসা শুরু করেছেন। সোমবার রাত আনুমানিক ১০ টা-সাড়ে ১০টার সময় ২টি মোটরসাইকেলে সিভিল পোষাকধারি তিনজন ব্যক্তি দোকান থেকে বাইরে ডেকে নিয়ে তাদের মোটরসাইকেলেকে তুলে নিয়ে যায়। দোকান থেকে ১০০ থেকে ১৫০ ফিট দুরে চাইপাড়া এলাকায় নিয়ে বলে তুই মাদক ব্যবসা করিস,মাদক কোথায় আছে বল। আমি কোন মাদক ব্যবসা করিনা বলতেই তারা সেখানে মারধর করে। সাদা রঙের একটি হাইস গাড়িও পাশে ছিল। পরে বাড়িতে নিয়ে তল্লাশি করে কোন মাদক পাইনি। তাকে তুলে নিয়ে আসার সময় তার মা বেলুয়ারা,স্ত্রী বৈশাখী,পিতা আরমান আলী,বোন রুপালি বেগম তাকে রক্ষা করতে গিয়ে লাঞ্চিত হয়। খবর শুনে গ্রামের লোকজন এসে তাদের আবদ্ধ করে রাখে। তবে র্যাব সদস্যদের মারধরের কথা অস্বিকার করেছেন তিনি। রাজা ইসলামের বাবা আরমান আলীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছিল বলে জানান স্থানীয় রবিউল আওয়াল।
মনিগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হেলাল উদ্দীন রিয়াল জানান, খবর পেয়ে তিনি সেখানে আসেন। পরে বাঘা থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানোর পর, সেনাবাহিনী,বিজিবি,পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিয়ে যান। পরে দিন হ্যান্ডকাপ, র্যাব জ্যাকেট, সরকারি রেইনকোট,স্টিক লাঠি,১টি হেড ফোন থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো ব্যাগের ভেতরে পাওয়া গেছে বলে জানান। মামলা ও র্যাব সদস্যদের উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)আবু সিদ্দিক।