শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। মেরুদন্ড মজবুত না হলে কোন মানুষ বা যে কোন প্রাণী যেমন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।তেমনি গুণগত মানসম্মত শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না।
মানসম্মত শিক্ষার জন্য মেধাবী ও যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকের প্রয়োজন। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাই শিক্ষার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত সকলকে সচেতন করে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে গুণগত শিক্ষা অর্জন করা যাবে।
গুণগত শিক্ষা অর্জন করে ব্যক্তি জীবনের বুদ্ধিবৃত্তীয়, আবেগীয় ও মনোপেশিজ গুণাবলির সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে জাতিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করতে সক্ষম হবে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গুণগত শিক্ষার গুরুত্ব অপরিহার্য। শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে গুণগত মানসম্মন্ন শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব।
শিক্ষার ইংরেজি EDUCATION শব্দটি LATIN শব্দ EDCARE থেকে এসেছে।যার অর্থ লালন-পালন করা বা বিকাশ ঘটানো।সে অর্থে শিক্ষা বলতে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি, আচার-আচারণ ও অভ্যাস কে পরিশীলিত করাকে বুঝায়। তাই শিক্ষা মানব জীবনের একটি অপরিহার্য বিষয়।
মানুষকে মানবীয় গুণের অধিকারী করার জন্য শিক্ষা যে একটি প্রাথমিক ও প্রয়োজনীয কৌশল তা প্রত্যেক সমাজ ব্যবস্থাতেই স্বীকৃতি লাভ করেছে। শিক্ষা দ্বারাই উন্মোচিত হয় একটি জাতির ভবিষ্যতের সিংহদ্বার। শিক্ষাই আনবে ব্যক্তি জীবনের পরিপূর্ণতা। তাই যে কোন জাতির জন্য শিক্ষা ব্যক্তির কল্যাণ ও সমাজ কল্যাণের পথে গড়ে তুলবে নতুন ও আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা।
শিক্ষা হচ্ছে মানুষের বিদ্যা-বুদ্ধির এরূপ উন্নয়ন যার ফলে, সে সত্য,সুন্দর ও শিষ্টতার অনুরাগী হয়ে উঠতে পারে।শিক্ষা হলো ব্যক্তির আচারণের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন যা জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
সক্রেটিস বলেন,“মিথ্যাকে পরিহার করে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে শিক্ষা।”সব মিলে বলা যায়,শিক্ষা হলো মানুষের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য বিশেষ সুসংবদ্ধ ও সচেতন প্রক্রিয়া।
অতএব শিক্ষার ইংরেজি EDUCATION শব্দ বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই,E-তে ENERGY= কর্মশক্তি, D-তে DEDICATION=উৎসর্গ,U-তে UNITY=একতা,C-তে CONTROL= নিয়ন্ত্রণ,A-তে ACTION=কর্মাদ্যোগ,T-তে TOTALITY =সার্বিক দিক,I-তে INTALLIGENCE=বুদ্ধিমত্তা, O-তে OBSERVATION =পর্যাবেক্ষণ ও N-তে NATIONALTY=জাতিয়তা।
কোন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা অর্থাৎ EDUCATION অর্জন করতে হলে উপর্যুক্ত গুণগুলো আয়ত্ব করে নিজের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে হবে।
বর্তমান সময়ে সরকার,শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে বিভিন্ন পরীক্ষায় পাশের হার বৃদ্ধি ও অধিক জিপিএ প্রাপ্তি নিয়ে বেশ গর্ব ও স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে সরকার যদি শতভাগ পাশ বা শিক্ষার পরিবর্তে মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষার উপর গুরুত্বরোপ করতো, তবে তা দেশ, জাতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করত। অথচ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ এসব শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল অংশ যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করছে, তখন স্বভাবতই শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমরা কি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষা দিতে পারছি, নাকি একটি বিশাল অংশ গোড়ায় গলদ রেখে সামনে অগ্রসর হচ্ছি !
শুধু তাই নয়,গুণগত শিক্ষা ও গবেণার কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও বৈশিক মানদণ্ডে পিছিয়ে পড়েছে, যা সত্যিকার ভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও ভাবিয়ে তুলেছে। যে দেশে শিক্ষার হার ও গুণগত মান যত বেশি, সেই দেশ অর্থনৈতিক ভাবে তত বেশি উন্নত ও অগ্রসর।
আমাদের দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে এবং শিক্ষার হারও বেড়েছে।এতে বোঝা যায় শিক্ষার অগ্রসর হয়েছে বটে ! তবে শিক্ষার গুণগত মান তেমন উন্নয়ন হয় নি।
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদরাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাশের হার বাড়লেও শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে ভীষণ ভাবে পিছিয়ে পরেছে। দেশে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও শিক্ষার গুণগত মান আশাব্যঞ্জক নয়। সর্বক্ষেত্রে গুণগত শিক্ষাই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে উৎপাদনশীল,সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা সম্পন্ন দক্ষ মানবগোষ্ঠি তৈরি করে ন্যায়বিচার,বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গঠন, সহযোগিতা ও সহনশীল মনোভাব তৈরির পরিবেশ নিশ্চিত শিক্ষার সাথে জড়িত সকল মহলের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালনের মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন হবে।
পিতা-মাতার দায়িত্বঃ
মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য প্রথমেই পিতা-মাতার ভূমিকা অপরিসীম। জন্মলগ্ন থেকেই সন্তানের শিক্ষা লাভ শুরু হয়। এমনকি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায়ও পিতা-মাতার গুণাবলী সন্তানের মধ্যে বিকশিত হয়। মানব সন্তান যখন জন্ম গ্রহণ করে তখন সে থাকে অসহায়। বাবা-মা তাকে পরম যত্নে লালন-পালন করে বড় করে তোলেন;বাবা-মায়ের সান্নিধ্য সে সবচেয়ে বেশি লাভ করে। আর তাই তাদের ওঠা-বসা,কথা-বার্তা,সভ্যতা-ভদ্রতা,বিনয়-নম্রতা এসব কিছুর প্রভাব সন্তানের ওপর পরে এবং তারা এসব থেকে শিক্ষা লাভ করে। একজন আদর্শ পিতা-মাতাই পারেন সমাজকে আদর্শ জাতি উপহার দিতে।
গুণগত শিক্ষার জন্য সন্তানের পিতা-মাতাই প্রথম শিক্ষক ও অভিভাবক। যদিও আল্লাহ তায়ালা সন্তানের প্রথম ও আসল অভিভাবক।আল্লাহই সন্তানের সকল অভাব পূরণ করেন। তারপরেও আল্লাহ তায়ালা পৃথিীতে পিতা-মাতাকেই অস্থায়ী ভাবে সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দিয়েছেন। সন্তান-সন্তুতি পিতা-মাতার দর্পণস্বরূপ। পিতা-মাতা তাদের সাথে যে ব্যবহার করবেন,তাদের মধ্যেও সেই চারিত্রিক গুণাবলী বিকশিত হবে।বাল্যকাল থেকেই শিশুর গ্রহণ ও অনুকরণ করার অভ্যাস গড়ে উঠে। সে যা দেখে তারই অনুকরণ করতে শেখে। তাই তাদের সাথে সর্বদা ভাল আচরণ করা উচিত।সন্তান-সন্তুতির জন্য বাবা-মায়ের দোয়া জাদুর মত কাজ করে। তাই সন্তানদের শিষ্টচারপূর্ণ আচার-আচারণ শেখানোর পাশা-পাশি আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। সন্তানকে নম্রতা,ভদ্রতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া পিতা-মাতার প্রধান দায়িত্ব।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,“পিতা স্বীয় সন্তানকে শিষ্টাচার অপেক্ষা উত্তম কিছু শিক্ষা দিতে পারে না।” (তিরমিজি,মিশকাত পৃষ্ঠা-৪২৩)। বড়দের শ্রদ্ধা এবং ছোদের স্নেহ করার প্রশিক্ষণ দিতে হবে পিতা-মাতাকেই। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,“যে ব্যক্তি ছোদের স্নেহ করে না এবং বড়দের সম্মান করে না ,সে আমার প্রকৃত উম্মত নয়।”
সকাল বেলায় খবর দেখলে বা পত্রিকার পাতায় মনোনিবেশ করলেই নানা অপারাধের সংবাদ কানে আসে বা চোখে পড়ে। পত্রিকার পাতায় নিয়মিত যে খবরটি থাকে তা হলো চুরি,ডাকাতি,ধর্ষণ ও হত্যা ইত্যাদি।এদেশে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ টুকরো, টুকরো করার মতো খবরও প্রকাশিত হয়। এসব অপরাধের সাথে যারা জড়িত তারা তো কোন না কোন পিতা-মাতারই সন্তান। নেশার অর্থ না পেয়ে নিজ মাতাকে হত্যা করতেও আজ আমাদের আদরের সন্তানেরা দ্বিধা করছে না। আমাদের সন্তানদের অবস্থা আজ এতটা খারাপ কেন ? সন্তানদের এই অবস্থার জন্য কি আমরা যারা পিতা-মাতা রয়েছি তারা দায়ি নই ? আমরা কি আমাদের সন্তানদের বিষয়ে সচেতন থাকার ও দায়িত্ব পালনের কথা ততটা করছি কি ? হয়তো অনেকেই করছি কিন্তু একটি বৃহৎ সংখ্যা এ থেকে অনেক দূরে।
আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহে পিতা-মাতার মাধ্যমে একটি শিশু পৃথিবীতে আসে। আর আমরা দেখতে পাই ,সন্তানদেরকে স্কুল,কলেজ ও মাদরাসায় পাঠিয়ে দিয়েই পিতা-মাতা নিশ্চিন্তে বসে থাকে আর কোন খোঁজ নেই যে, আমার সন্তান কি ঠিক ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস করছে না অন্য কোথাও গিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বাজে আড্ডা দিচ্ছে।এমনি বেখেয়াল অবস্থায় এক সময় দেখা যায় যে আদরের সন্তান এমন এক পর্যায়ে পৌছে যায়, যেখান থেকে ফিরিয়ে আনা আর সম্ভব নয়। তাই সময় থাকতেই সন্তানের প্রতি গভীর দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।কথায় আছে, কাঁচাতে না নোয়ালে বাঁশ,পাকলে করে ঠাশ্,ঠাশ্। কথাটির গুরুত্ব মানব জীবনে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কাদা মাটি উত্তম রূপে ছেনে সুন্দর ছাঁচে ফেলে যেমন ইচ্ছে মতো সুদৃশ্য জিনিস তৈরি করা যায়,তেমনি মানবের শৈশব কালে উত্তম শিক্ষার মাধ্যমে উত্তম মানুষ তৈরি করা সম্ভব। সন্তানকে সুশিক্ষা দানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন পিতা-মাতা।
যেহেতু সন্তান-সন্তুতি আল্লাহ তায়ালার দান। কোনো সন্তানই জন্ম থেকে খারাপ থাকে না। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা পিতা-মাতার অবহেলার কারণেই সন্তান মন্দ পথে পা বাড়ায়। একটি সন্তান যখন ধীরে ধীরে বড় হয়, তখনই তার মাঝে পারিপার্শ্বিকতার খারাপ দিকগুলো চলে আসে। এজন্য প্রত্যেক পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো সন্তানকে একেবারে শৈশব থেকেই নৈতিক শিক্ষা বা ধর্মীয় আদব-কায়দা শিখানো। কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ, এ বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা দরকার।
পিতা-মাতার প্রতি সুপারিশঃ
পিতা-মাতার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব সন্তানকে তার ভাল-মন্দ সব বিষয়ে যেন পিতা-মাতার কাছে বলতে পারে সে পরিবেশ ও উপযুক্ত সময় করে দিতে হবে।পিতা-মাতার সব সময় খেয়াল রাখতে হবে বাড়িতে সন্তান-সন্তুতিরা ঠিকমত পড়া-শোনা করছে কিনা,নিয়মিত সালাত আদায় করছে কিনা,কোরআন তেলওয়াত করছে কি না,নিজের কাজগুলো নিজে নিজে করছে কিনা, সংসারের প্রয়োজনীয় কাজের সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
বর্তমান যুগ যেহেতু বিজ্ঞানের যুগ,তাই অপসংস্কৃতির আগ্রাসনে ইন্টারনেট,টিভি,ক্যাবল সংযোগ,মোবাইল ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ যেমন নতুন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করছে,তেমনি অহরহ সামাজিক অপকর্মে লিপ্ত হয়ে নিত্য নতুন নৈতিক পদস্খলনের শিকারও হচ্ছে। তাই এসবের খারাপ দিকগুলো বাদ দিয়ে ভালকে গ্রহণ করতে হবে এবং সন্তানেরা যেন খারাপ কোন কিছুর দিকে আসক্ত না হয় সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
শিক্ষকের দায়িত্বঃ
আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া-শোনা করি। যাঁরা আমাদের পড়ায় তাঁরা আমাদের শিক্ষক। শিক্ষার জন্য আমাদের শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসার প্রয়োজন হয়। ইসলামে শিক্ষার ও শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম।
আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, যারা জানে আর জানে না তারা কি সমান হতে পারে ? সুরা- আলযুমার-৯)। শিক্ষার শেষ নেই। যে যত বেশি জ্ঞান অর্জন করেন, সে তত বেশি জ্ঞনী। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা দোলনা তেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন কর।”
গুণগত শিক্ষার সাথে শিক্ষক সরাসরি জড়িত। তাই শিক্ষকের কথাই বলি। শিক্ষকের ইংরেজি TEACHER শব্দটি বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই T- তে TALENTED=কোন কিছু উত্তম রূপে করার নৈসর্গিক ক্ষমতা,E তে-ELEGANT= রুচিশীল,A তে-AWESOME=দারুণ,C তে-CHARMING =আকৃষ্ট করা ,Hতে-HELPFUL=উপকারি, E তে-EFFICIENT=সুদক্ষ,R তে-RECEPTIVE=আশুগ্রাহী ইত্যাদি। শিক্ষক নিজের গুণ অর্জন করে নিজ দায়িত্ব পালন করলেই গুণগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দ্বার খুলে যাবে।
শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষার্থীর জন্য একজন সংশোধনকারী ও পথ প্রদর্শক। কারো পক্ষে কোন শিক্ষকের মাধ্যম ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি শিক্ষক ছাড়া শুধু বই –পুস্তুক পড়ে বিদ্যা অর্জন করে,সে কোন দিন শিক্ষার পূর্ণতায় পৌছতে পারে না। কথায় আছে, যার কোন শিক্ষক নেই,তার শিক্ষক শয়তান।
ইসলাম শিক্ষককে মহান ব্যক্তিত্ব ও শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে স্বীকৃতি দান করেছে,যার বিবরণ কোরআন ও হাদিসে পাওয়া যায়।যেমন : আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “………….. করুণাময় শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা নিজেই সর্ব প্রথম শিক্ষক। সুতরাং যে কাজ আল্লাহ তায়ালা করেছেন উক্ত কাজে যে ব্যক্তি আত্ম নিয়োগ করবে তাঁর চেয়ে আর কেউ সম্মানের অধিকারী হতে পারে না।”
হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে,হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।শুধু তাই নয় পৃথিবীতে নবী-রসূলগণ শিক্ষক হিসেবেই প্রেরিত হয়ে ছিলেন।
আরো বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে ব্যক্তি কোরআন মাজীদ শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়। শিক্ষার উন্নয়ন ছাড়া কোন দেশ ও জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে গেলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত। অভাব শুধু গুণগত বা মানসম্মত শিক্ষার। শিক্ষার মান বাড়বে শিক্ষকগণের গুণে। শিক্ষার মান উন্নত করতে শিক্ষকের ভূমিকাই সর্বাধিক অগ্রগণ্য। অভিভাবকদের সচেতন করার দায়িত্বও শিক্ষকদের। শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষককেই আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষকের দরদি মন নিয়ে শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষককেই সমাজের পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
শিক্ষকতাই শ্রেষ্ঠকর্মঃ
আদর্শ শিক্ষক হলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। তাই ফেরেশতারা বলেছিলেন,“হে আল্লাহ আপনি পবিত্র। আপনি যা শিখিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের কোনই জ্ঞান নেই,নিশ্চয় আপনি মহাজ্ঞানী ও কেশৈলী।”(সুরা বাকারা-৩২)আল্লাহ তায়ালা নবী-রসূলগণকে শিক্ষক হিসেবে পাঠিয়েছেন।
প্রিয় রসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর পূর্ব প্রেরিত নবীগণ সবাই ছিলেন মহান শিক্ষক।শেষ নবী-রসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে জগতের উজ্জ্বল আলেকবর্তিকা স্বরূপ প্রেরণ করা হয়ছে।
শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন,“ আমাকে শিক্ষক হিসেবেই পাঠানো হয়েছে।” হযরত আদম (আঃ) সরাসরি আল্লাহ তায়ালার তত্বাবধনে প্রত্যক্ষ ভাবে প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন এবং ফেরেশতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেপ্রথম হয়ে মানবের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন।
হযরত আদম (আঃ) ছিলেন বিশ্বের প্র্রথম শিক্ষক।ধরায় অবতীর্ণ হয়ে তিনি আল্লাহর কাছ থেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লব্ধজ্ঞান দ্বারাতাঁর পরিবার-পরিজনকে শিক্ষা দান করেছিলেনে এবং তাঁর শ্রোষ্টা ও শিক্ষকের গুনাবলী ও নির্দশনা প্রচার করেছেন। সব পেশা হতে শ্রেষ্ঠ সম্মানের পেশা হচ্ছে শিক্ষকতা।পৃথিবীতে মানুষ যত কর্মে নিয়োজিত আছে, তার মধ্যে শিক্ষকতার সঙ্গে কেউ প্রতিদ্বন্ধিতা করতে পারে না।
শিক্ষকেগণের প্রতি পরামর্শঃ
শিক্ষকতা একটি মহান পেশা।শিক্ষার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষকের। একজন ছাত্রকে কেবল শিক্ষিতই নয়,বরং ভাল মানুষ করে গড়ে তোলার গুরু দায়িত্বটাও থাকে শিক্ষকের উপর। তাই একজন শিক্ষককে হতে হয় অনেক বেশি সচেতন,অনেক বেশি ধৈর্যশীল । শুধুশিক্ষা দিলেই মর্যাদার অধিকারী হওয়া যায় না। বরং প্রশংসার আসনে অধিষ্ঠিত হতে হলে শিক্ষকের জন্যেও কিছু গুণের অধিকারী হতে হবে।সে গুলো অবলম্বনে শিক্ষকগণ দায়িত্ব পালন করলে ইহকাল পদ মর্যাদার অধিকারী ও পরকালে বিরাট পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়া সম্ভব।
একজন শিক্ষককে অবশ্যই ধন-গরীব,ভাল-মন্দ,গ্রাম-শহুরে, জেলে-তাঁতি,কামার-কুমার,সুন্দর-অসুন্দর,ছোট-বড়,মোটা-চিকন,স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক ইত্যাদি অর্থাৎ সকল শিক্ষার্থীকে সমান গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা দান করাতে হবে।শিক্ষার্থীদের নিজ সন্তানের মত স্নেহ করা অত্যাবশইক।শিক্ষার্থীকে অনুগ্রহ মনে না করা,বরং তাদের প্রতি অনুগ্রহ ভাজন হওয়া।তাদের দ্বারাই আমি গৌরবের অধিকারী হয়েছি মনে করা। সংশোধনের জন্য গঠনমূলক শাস্তি দেওয়া।রাগের বশেত বেত্রাঘাত না করা। মৌখিক শাসনের ক্ষেত্রে গালী বা কোন প্রাণীর নাম ধরে না শাসানো। এমনকি আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করা উচিত এই বলে,‘হে আল্লাহ আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন। এবংআমার কাজ সহজ করে দিন। শিক্ষক-শিক্ষিকার পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে, জ্ঞান, দক্ষতা ও যোগ্যতাভিত্তি বিশ্বমানের ও সঠিক পন্থায় জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জিত হবে।
গুণগত শিক্ষায় শিক্ষার্থীর ভূমিকাঃ
শিক্ষার্থীর ভূমিকাই গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষার মূল চাবিকাঠি। শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে শিক্ষার সফলতা ও ব্যর্থতা।তাই শিক্ষার্থীকেই গুণগত শিকক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আজকের শিশুদের কেউ বা হবে আগামী দিনের প্রকৃত মানুষ,আর প্রকৃত মানুষ হতে পারলেই তারা হতে পারবে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী।আবার কেউ হবে শিল্পী, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক,রাজনীতিবিদ,লেখক,কবি ও সাংবাদিক । এরা হতে পারবে শিক্ষাঙ্গনেই।তাই শিক্ষাঙ্গনের শ্রেণিকক্ষই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতির ক্ষেত্র।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বর্তমান সমাজের প্রয়োজন মতো চাহিদা ও ভবিষ্যৎ সমাজের সম্ভব্য চিত্রকে সামনে রেখে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা তথা শিক্ষাঙ্গনে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টিতে সচেষ্ট হয়েছেন। উত্তম শিক্ষাব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। আর এই পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব মহলের। শিক্ষার্থী,শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্পৃক্তাই গড়ে দিতে পারে গুণগত শিক্ষার মজবুত ভিত্তি। শিক্ষাকে গুণগত মানের দিক তেকে উন্নত করতে পারলেই জাতীয় জীবনে এগিয়ে চলা সহজ হবে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য সবার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন একটি পরিচ্ছন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাবে, তেমনি তারা কর্মঠ,উদ্যমী ও স্বাবলম্বী হবে এবং পরিচ্ছন্ন থাকার জ্ঞান লাভ করবে। আমাদের শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে সবাইকে একয়োগে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।
শিক্ষার্থীর প্রতি পরামর্শঃ
(১) শিক্ষক হচ্ছে পিতা-মাতার সমতুল্য। তাই পিতা-মাতার পরেই শিক্ষকের সাথে সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে।(২) শিক্ষকের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা থাকতে হবে।শিক্ষকের সাথে ভক্তি সহকারে কথা বলতে হবে।(৩) বিনয়ের সাথে কথা-বার্তা ও আচার-আচারণ করতে হবে। (৪) শিক্ষার্থীর কোন অসংগত প্রশ্ন বা অসংগত আচারণের কারণে শিক্ষক রাগ করলে বা কোন শাস্তি দিলে শিক্ষার্থীর কর্তব্য সেটা সহ্য করা। (৫) কোন কারণে শিক্ষক অসুন্তুষ্ট হলে বা শিক্ষকের মেজাজের পরিপন্থি কোন কথা বলে ফেললে সাথে সাথে নিজের দোষের জন্য ভুল স্বীকার করে শিক্ষকের মন সুন্তুষ্ট করা জরুরি। অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করার অপচেষ্টয় লিপ্ত না হওয়া উচিত। (৬) শিক্ষার্থীর কর্তব্য মনোযোগের সাথ শিক্ষকের বক্তব্য ও ভাষণ শ্রবণ করা। কোন ভাবেই অন্যমনোস্ক না হওয়া। শিক্ষকের কোন বক্তব্য বোধগম্য না হলে সে জন্য শিক্ষকের প্রতি কুধারণা না করা, বরং বুঝতে পারাকে নিজের বোধশক্তির ত্রুটি মনে করা।
লেখাপড়াসহ জীবনের যে কোন সমস্যা দেখা গেলে তা অবশ্যই শিক্ষকদের জানাতে হবে। যার ফলে শিক্ষকগণ আন্তরিকতার সাথে সেই সকল সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজে বের করবেন। কোন দুর্বল শিক্ষার্থীর প্রতি কখনো খারাপ আচরণ করা যাবে না।বরং তারা যাতে ভাল হয় সেদিকে সাহায্য করতে হবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক যাতে সুবিধামতো পড়াতে পারেন, সে বিষয়ে শিক্ষককে সহযোগিতা করতে হবে। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন ক্লাসেই শেষ করতে হবে।শিক্ষকগণের নির্দশনা জীবনের প্রতি মুহূর্তে পালন করতে হবে।
গুণগত শিক্ষায় অভিভাবকের দায়িত্বঃ
শিক্ষার মান উন্নয়নে অভিভাবকের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।প্রকৃত অভিভাক আল্লাহ তায়ালা। তারপরেও পৃথিবীতে পিতা-মাতাকে সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দিয়েছেন। আর পিতা-মাতার অবর্তমানে বা তাদের অনুপস্থিতিতে যারাই সন্তান দেখা-শোনা করেন তারাই হচ্ছে অভিভাবক।সেই হিসেবে জাতির প্রত্যেক নাগরিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কোন না কোন শিক্ষর্থীর অভিভাবক।প্রত্যেক অভিভাবক সপ্তাহে অন্তত এক দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে বা যে কোন ভাবে শিক্ষকগণের কাছ থেকে শিক্ষার্থী সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখবেন। শুধু নিজের সন্তাকে সন্তান মনে করলে হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নিজের সন্তানের মত মনে করতে হবে। নিজের সন্তানকে ভাল- মন্দ তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি অন্য সন্তানদেরও খোঁজ-খবর রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার সন্তানের পরোক্ষ ভাবে উপকার হবে। অনকেই নিজের সন্তানকে সন্তান মনে করার কারণে একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে গিয়েছে। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় আমার সন্তানের রোল এক হলো না কেন? অমুকের সন্তানের রোল এক হলো কেমন করে। এতে শিক্ষকগণ কিছুটা হলেও বিড়ম্বনার স্বীকার হন।
অভিভাবকের প্রতি সুপারিশঃ
(১) প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত যে কোন সন্তান, যে কোন জায়গায়, যে কোন সময় অন্যায় করলে তা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা। কিন্তু আমাদের সমাজে যে কোন সন্তান অন্যায় করলে বিরত রাখার চেষ্টা ওঠে যাচ্ছে।এতে সমাজের অবক্ষয় হচ্ছে।কোন সন্তান অন্যায় করলে বিরত রাখার চেষ্টা করার পর, যদি বিরত না হয়, তাহলে অভিভাবকে অবগত করানো উচিত। প্রত্যেককেই সচেতন হলে তখন আর কোন সন্তান সহজে অন্যায় কজে জড়িত হতে পারবে না। (২) ছোটদের স্নেহ বা আদর করা অভিভাবক বা প্রতিবেশির স্বাভাবিক দায়িত্ব।(৩) ছোটদের কথায় কথায় ধমক-ধামিকী ও তিরস্কার না করা উচিত। ছোটদের ছোট ছোট ভুল কিছুটা ক্ষমা সুন্দর দুষ্টিতে দেখা উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে দুই/একবার নম্র ভাবে বুঝিয়ে দেয়ার পর তাতে কাজ না হলে তখন কঠোরতা হলে তাতে ক্ষতি নেই। (৪) যার সম্পর্কে লক্ষণ দেখে বুঝা যায় যে,সে নির্দেশ মান্য করবে না, তাকে নির্দেশ দিয়ে সরাসরি বে-আদব প্রমাণিত না করাই ভাল।(৫) কখনও ছোটদের অতিরিক্ত রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ বা শাসন না করাই ভাল। কোন কারণ বশত অতিরিক্ত রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ শাসন করলে,পরবর্তীতে তারে মন খুশি করে দেয়া উচিত। (৬) ছোটদের তুচ্ছ মনে না করা। কেননা ছোট হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে এমন কোন বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, যা তার মধ্যে নেই। (৭) যে কোন জায়গায়,যে কোন সময় ছোটরা অন্যায় বা অনিয়ম করলে সঠিক পথে চলার আহ্বান জানাবে বা নির্দেশ দিবে। অনিয়ম বা নীতিহীন কোন কিছু ছোটদের সাথেও করা যাবে না। (৮) ছোটদেরও বড়দেরকে সঠিক বা সত্য কথা বলার অধিকার আছে। কাজেই ছোটদের মধ্যে কেউ সঠিক বা সত্য কথা বললে তাকে খারাপ বলার অবকাশ নেই। তবে আদব রক্ষা করে বলতে হবে।
শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের সেকাল-একালঃ
পৃথিবী পরিবর্তনশীল। শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তা ভাবভার বিষয়। কয়েক দশক আগের কথা বলি, শিক্ষক মানেই শ্রদ্ধার পাত্র, গুরুজন, অভিভাবক ও মানুষ গড়ার কারিগর। বড় কথা তিনি একজন আদর্শ মানুষ। পিত-মাতা সন্তান জন্ম দিতে পারন। কিন্তু ছেলে-মেয়েকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলেন একজন শিক্ষক। পিতা-মাতার চেয়ে শিক্ষকের গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম ,তখন একজন শিক্ষকের প্রতি আমাদের এতই শ্রদ্ধাবোধ ছিল যে,কোন শিক্ষককে যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসতে দেখতাম, তাহলে আমরা অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে আসতাম।তখন শিক্ষক আমাদের কি জাদু করেছিলেন জানি না,আর কি শিক্ষা দিয়েছেন তা বলে বুঝাতে পারবো না,তবে এতটুকু বলতে পারি যে, শিক্ষকের সামনে মুখ তলে কথা বলার মতো সাহস আমরা পেতাম না। আর শিক্ষক কেমন ছিলেন, তাদের গুণের কথা ব্যাখ্যা করার মতে ক্ষমতাও আমার নেই। একজন শিক্ষক ছাত্রকে যে আদর-স্নেহ, ভালোবাসা দিতেন তা বাবা-মায়ের চেয়ে কম নয়। শিক্ষকের শাসনের মধ্যে ছিল আদর ভরা আর স্নেহ মাখা। শিক্ষক একবার শাসন করলে বার বার আদর করতেন, যে আদর পেয়ে শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যেত, পড়া-শোনায় আমরা বেশি মনোযোগী হতাম।
কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। কয়েক মাস আগের কথাই বলি,রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ১৪ জন ছাত্রের মাথার চুল সে নিজ হাতে কাঁচি দিয়ে কেঁটে দিয়েছেন।এ বিষয় একজন ছাত্র লজ্জায় –ক্ষোভে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করলে ,সেই আন্দোলন থামানোর জন্য কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে থামিয়ে দেয়া হলো ছাত্র আন্দোলন। সাধারণ ছাত্ররা কোন বিচার পেলো না। ছাত্রদের চুল কেঁটে অপমান করা হলো আবার এর দায় ছাত্রদের ওপর চাপানো হলো। এই হচ্ছে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা।
শুধু কি তাই এখন (১) শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে সম্পর্কটা কেবল ক্লাসের সীমায় আবদ্ধ। ক্লাস শেষে দুই জন দুই জগতের লোক। বরং কোন কোন ছাত্রের দেহে পড়া আটকা পড়লেও তার মন সারা দুনিয়ায় বিচরণ করে। অর্থাৎ শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক এখন নিভু নিভু প্রদীপের মত।অনেক ছাত্র পড়াশোনা শেষ করার পরে জীবনেও শিক্ষকের সাক্ষাতে আসে না। এমন কি কোন খোঁজ-খবর রাখে না। (২) ইদানিং ছাত্রদের বইয়ের জগতের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে লেখা-পড়ায় মন বসে না। অথচ সফল ছাত্র হওয়ার পূর্বশর্ত হল সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে একাগ্রতার সাথে বইয়ের জগতের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে মনোযোগ সহকারে লেখা-পড়া করা।(৩) মোবাইল ফোনের মরণ ব্যাধি ছাত্রদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েঠছ। এখন যে ছাত্র মোবাইল ফোনে আসক্ত সে একাগ্রতার সাথে পড়ার সাধ পায় না। (৪) পিছনের পড়ার প্রতি অমনোযোগী ভাব পড়ার লক্ষ্যে পৌছতে বাঁধা প্রাপ্ত হচ্ছে।
গুণগত শিক্ষার জন্য সরকারের দায়িত্বঃ
শিক্ষার মান উন্নত করতে হলে প্রথমেই চাই উন্নত শিক্ষা নীতি।আশার কথা হলো আমাদের বর্তমান শিক্ষানীতি গুণেমানে যথেষ্ট সমৃদ্ধ। যদিও প্রয়োজনের নিরিখে যে কোন সময় তার পরিমার্জন অবশ্যই সম্ভব,কিন্তু গলদ আছে তার প্রয়োগে। সেটির শুরু জাতীয় বাজেটে শিক্ষায় নগণ্য বরাদ্ধ দিয়ে। ২০১৮ সালের জাতীয় বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্ধ মাত্র ২% অথচ সেই সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্থানে তা ৪% এর মত। গরীব দেশ নেপালেও তাই। আর উন্নত দেশের সাথে মেলাতে গেলে সেটিকে আরো নগণ্য মনে হবে। তারপর ভাবতে হবে শিক্ষায় নিয়োজিত মানুষের কথা। শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা সবার কথা। জাপানে প্রাথমিক শিক্ষকগণের বেতন আমাদের তুলনায় ১০গুণ বেশি। যোগ্য মানুষকে শিক্ষায় আনতে হলে ডাল-ভাত নয়,তার চেয়ে ভাল কিছুর ব্যবস্থা করা দরকার। উপজেলা পর্যায়ে মাছের কারবার থেকে শুরু করে গরু-ছাগল লালন-পালন,সবায় পরিবার পরিকল্পনা পর্যন্ত সবারই ক্যাডার আছে। নেই শুধু শিক্ষার বেলায়।শিক্ষার তুলনায় গুরুত্বের বিচারে বেশ নগণ্য কিছু বিভাগের জন্যে যদি ক্যাডারের ( অপেক্ষাকৃত মেধাবী কর্মকর্তার )দরকার হয়,শিক্ষার বেলায় সেটি নয় কেন ? এ থেকে বুঝা যায় আমরা জাতীয় ভাবে শিক্ষার গুরুত্ব কতটা দেই । আর যে শিক্ষা ক্যাডার আছে সেটি কেবল শিক্ষক তৈরির জন্যে এবং তা উচ্চ শিক্ষার উচ্চতায়ই আবদ্ধ।
গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার অন্যতম উপায় হলো মানসম্মত মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্যে ভাল শিক্ষাগত যোগ্যতার অধিকারী মানসম্পন্ন শিক্ষক স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিযোগ করতে হবে। সব শিক্ষকের জন্য বিষয ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু তাই নয়,কর্মরত শিক্ষকগণেরও কর্মকালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সাথে শিক্ষকের মর্যাদাও বাড়াতে হবে। ইদানিং আমাদের শিক্ষার নিচু স্তর থেকে বিশ্ববিধ্যালয় পর্যন্ত সব স্তরে শিক্ষক নিয়োগে,আর্থিক লেন-দেন,স্বজনপ্রাতি,অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয় বলে অভিযোগ আছে,যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত। যার ফলে গুণগত শিক্ষার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
গুণগত শিক্ষার জন্য কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষাকেও প্রাধান্য দিতে হবে।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ বলা হয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য শিক্ষাকে সৃজনশীল ও প্রয়োগমুখী করে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীদের শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আগ্রহী করে তুলতে হবে। তবে আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো যথাযথ না করে এমনকি শিক্ষকগণের যথার্থ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করেই সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা করা হয়েছিল। জরিপ করে দেখা যায় অনেক শিক্ষকও সৃজনশীল বিষয় যথাযত ভাবে বোঝে না। যার ফলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি না করে পরিমাপ গত বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকে মনে করেন। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যে সকল বিষয় উচ্চতর ডিগ্রী দিচ্ছে, পরবর্তীকালে বাস্তব জীবনে তা কতটুকু কাজে লাগাতে পারছে, তা ভাবভার সময় এসেছে।
শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠাঃ
একটি দেশের শিক্ষকের মর্যাদা বাড়লে সে দেশে শিক্ষার গুণগত মান যেমন বাড়ে,আবার ঠিক শিক্ষার গুণগত মান বাড়লেও শিক্ষকের মর্যাদা বাড়ে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র আগে শিক্ষকের মর্যাদা বাড়াবে না শিক্ষক আগে গুণগত শিক্ষাদান করবেন। এ বিষয় তর্ক করলে অমীমাংসা থেকে যায়। তাই আমরা তর্ক না করে শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে কথা বলতে পারি।
আমরা বলে থাকি বা সমাজে প্রচলিত আছে যে,একজন শিক্ষক হচ্ছেন একজন শিক্ষক। আর দশটা মানুষের মতো তিনি টাকা-পয়সা,সুযোগ-সুবিধা,ক্ষমতা-প্রতিপত্তি নিয়ে মাথা ঘামায় না। তিনি শুধু সম্মান পাওযার আশায় কাজ করে যান। আর কিন্তু শিক্ষকগণ ঐ সম্মান টুকুও পাচ্ছেন না। কারণ নূন্যতম অর্থ ক্ষমতা ছাড়া এ ধরণের সম্মান পাওয়াটা অন্যের দয়ার ওপর নির্ভর করছে এবং অন্যের দয়ার ওপর যে সম্মান নির্ভর করে,সেটা ঠুনকো হতে বাধ্য। আমার সঙ্গে যারা দ্বিমত পোষণ করবেন,তারা নিশ্চয় অতীতের উদাহরণ টানবেন। তবে একথা সত্য যে,আর্থিক ভাবে নড়বড় একজন শিক্ষককে যে লোক দেখানো সম্মান করা হয়,তা যে কোনো মুহূর্তে ফাঁকা বেলুনের মত চুপসে যেতে পারে।
আমাদের মতো সীমিত সম্পদের দেশে নীতি নির্ধারকগণ অন্য বিষয বাদ দিয়ে শিক্ষায় আরো বেশী বিনিয়োগ করবেন কি-না বা এখানে বিনিয়োগ করলে শিক্ষকগণ তার সদ্ব্যবহার করতে পারবে কি-না,,এ নিয়ে বহু বার চিন্তা করতে হয়। আগের চেয়ে শিক্ষকগণের অবস্থা ভাল কিন্তু অন্যদের সাথে তুলনা করলে তাদের হতাশা বাড়ে বৈ কমে না। শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর জন্য যে প্রবল তাগিদ অনুভব করা দরকার,সংগত কারণে কি সেটা দূর্বল হতে থাকে। বর্তমানে দুটি ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। এ বছর বাজেটে শিক্ষায় কিছুটা হলেও বরাদ্দ বেড়েছে। এবং অন্যদিকে গত তিন বছর ধরে শিক্ষকগণ যখনই যে সুযোগ পেয়েছেন বা প্রয়োজন হয়েছে,অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভাবে তাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে শিক্ষগণ দুটো বড় কাজ করেছেন। একটি হচ্চছ মিড ডে মিল চালু করা এন্যটি শিক্ষার্থীদের দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রায় এক লাখ ডকুমেন্টারি তৈরি এবং প্রায় এক লাখ প্রতিবেদন লেখানো। এর সাফল্য এতটাই দৃশ্যমান ছিল যে কারিকুলাম বিশেজ্ঞগণ ঐ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এখন নতুন কারিকুলাম তৈরি করছেন। কারিকুলাম তৈরিতে আমাদের শিক্ষকগণ এর পূর্বে কখনোই এত বড় ভূমিকা পালন করেন নি।
বিভিন্ন দেশে শিক্ষকের মর্যাদাঃ
গুণগত শিক্ষার জন্য একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে শিক্ষায় অধিক বিনিয়োগ। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ সত্বেও শিক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দ অপর্যাপ্ত। দেশে শিক্ষা খাতে প্রকৃত বিনিয়োগ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বার্ষিক বিনিয়োগের পরিমাণ বাংলাদেশে ৫ ডলার, শ্রীলংকায় ১০ডলার, ভারতে ১৪ ডলার, মালায়েশিয়াতে ১৫০ ডলার ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৬০ ডলার।
সার্কভূক্ত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে সামগ্রীক শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মাত্র শূণ্য দশমিক ৯২ শতাংশ এবং উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ মাত্র শূণ্য দশমিক ১২ শতাংশ,যা সার্ক ভূক্ত দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম।
উল্লেখ্য শ্রীলংকায়,পাকিস্তান,ভারত ওনেপাল শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মোট জিডিপির তুলনায় যথাক্রমে ৪.৫ ও ৩.৫ শতাংশ এ কারণে বিশেষজ্ঞরা উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে কম পক্ষে জাতীয় বাজেটের বরাদ্দ .৯২থেকে ক্রমান্বয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে২ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ শতাংশ করার আবশ্যইক মনে করেন।
ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৭ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। ইতিহাস প্রমাণ করে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) শিক্ষকগণের মর্যাদা সর্বোচ্চ আসনে আসীন করেছিল।
নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবেঃ
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক জাতির মস্তিস্ক। আর শিক্ষার্থী জাতির সমৃদ্ধি অর্জনের সিঁড়ি। এই তিনটি নিয়ামকের মধ্যে সমন্বয় সাধনই কেবল দিতে পারে একটি অপ্রতিরোধ্যি উন্নত জাতি।সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়,শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে যে সম্পর্ক থাকা দরকার তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। দুই পক্ষই একে অন্যের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। শিক্ষাকে দ্বিধাহীন ছন্দে এগিয়ে নিয়ে অবস্থার পরিবর্তন অপরিহার্য।
বর্তমান সময়ে প্রাথমিক,মাধ্যমিক,মাদরাসা ও উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষকগণ যা পড়ান তা কখনো প্রশ্ন হিসেবে পরীক্ষায় আসে না। তারা ক্লাস পড়ান এক ভাবে আর গাইড দেখে সৃজনশীল প্রশ্ন করেন ভিন্ন ভাবে।ফলে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থদের উত্তর পত্র লিখতে নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। এ কারণে শিক্ষকগণের প্রতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরণের অসন্তোস দেখা যায়। এই অসন্তোষ্টির কারণে তারা অনেক সময় শিক্ষকগণের প্রতি বিনয়ী বা অনুগত থাকছে না। আবার বিনয়ী বা অনুগত না থাকার কারণে এবং শাসন প্রথা ওঠে যাওয়ায় শিক্ষকগণও এক ধরণর হতাশায় ভূগছেন।
আগের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠ্য বইয়ের অনুশীলনী ও উদাহরণ সমূহের সমাধান জানালেই পরীক্ষায় পাস করা বা ভাল করা কঠিন ছিল না । কিন্তু এখন ভালভাবে অনুশীলনী ও উদাহরণসহ ভালভাবে জানালেও সৃজনশীল প্রশ্নের মারপ্যাঁচে শিক্ষার্থী পাস করবে না ফেল করবে তা বলা কঠিন । ফলে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় দেখা যায় ক্লাসে মেধাতালিকায় প্রথম দিকের শিক্ষার্থীরা বিষয়ভিওিক পরীক্ষায় খারাপ করছে । কেন এমটি ঘটছে । এটা কী শিক্ষকের ঘাটতি, নাকি শিক্ষার্থীর অপরাগতা, নাকি শিক্ষাব্যবস্থার এুটি।
আমি আগেই বলেছি, শিক্ষক ক্লাসে যা পরান তা পরীক্ষায় প্রশ্ন হিসেবে আসে না।তাহলে ঐ পাঠ পরে লাভ কী ? এমন ভাবনা শিক্ষার্থীদের মনে আসতেই পারে । এমন ভাবনা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে অমনোযোগী করে তুলেছে। তাদের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পরছে শ্রেণি কক্ষের পাঠদান ও শিক্ষকের উপস্থিত।
বাস্তবে দেখা যায়,পড়াশোনায় আগ্রহী কোন শিক্ষার্থী যদি শ্রেণিতে শিক্ষককে বলেন,স্যার সৃজনশীল প্রশ্নে যে অঙ্ক আসে তা পাঠ্য বইয়ে থাকে না। তাই এগুলো সমাধান করে দিলে ভাল হয়। শিক্ষকের সোজা উত্তর ঐ গুলোর সমাধান করা আমার কাজ নয়। এটা নিজে নিজে করে নিবে। এতে শিক্ষকের প্রতি হৃদ্যতাপূর্ণ শ্রদ্ধা বাড়ে না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী হতাশা ও আগ্রহহীন হয়ে পড়ে।যে শিক্ষার্থী অস্বচ্ছল ও মেধাবী তারা নিজে নিজে পড়ে এ বিপর্যায় পারি দিতে চায়।যারা স্বচ্ছল তারা প্রাইভেট বা কোচিং এ পড়ে এদুর্বলতা কাঁটিয়ে উঠতে চায়। এই হলো বাস্তব। এখানে শিক্ষকগণের শারীরিক ও মানসিক শক্তির সীমাবদ্ধতার কথা সহানুভুতির সঙ্গে ভাবতে হবে।একজন শিক্ষক শিক্ষা বোর্ডের চারশত পৃষ্ঠার একটি বই থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন। এর পর হাজার পৃষ্ঠা গাইড বই পড়ানোর মতো সময়-সুযোগ কোনটাই বাস্তবিক অর্থে থাকে না। এ সুযোগটি কাজে লাগায় অফলাইন ও অনলাইন কোচিং সেণ্টার। যার ফলে শিক্ষা চলে গেছে কোচিং সেণ্টার বা প্রাইভেট টিউশনির কবজায়।কারণ সেখানে গাইড ঘেঁটে বছর ভিত্তিক প্রশ্নের সম্ভব্যতা যাচাই করে নিরন্তর অনুশীলনের ব্যবস্থা করা হয়।এভাবেই শিক্ষা পদ্ধতির কারণে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে । আমাদের সময়ে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষকগনের ক্লাস মনোযোগ দিয়ে শুনলে বা লিখে নিলে ফেল করা তো দূরের কথা বরং পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের সম্ভাবনাই বেশি থাকত । কিন্তু এখন মনোযোগী হয়ে শিক্ষকের পাঠদান হুবহু তুলে নিলেও খুব একটা লাভ হয় না । কারণ প্রশ্ন তো সৃজনশীল। যার দুই একটি উদাহরণ বইয়ে সন্নিবেশিত। কিন্তু সব প্রশ্ন পেতে হলে গাইড বই অপরিহার্য। এ অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর দর্শন ভক্তি-শ্রদ্বা ও স্নেহ-ভালোবাসার মেলন বন্ধন না হয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যেখানে শিক্ষার্থী ভাবছে ক্লাস না করে এই সময়টি কোচিং করলে পরীক্ষায় ভাল করবে। আর শিক্ষক ভাবছেন শিক্ষার্থীদেরও যেকোন ভাবে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত করতেই হবে। এমন বিপরীতমুখী ভাবনা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হ্রদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কে সংকট তৈরি করছে। শিক্ষানীয় কোন বিষয় অনুধাবন ও আত্মস্থ করার যোগ্য অংশীজনের মধ্যে হ্রদ্যতার সম্পর্ক গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখেন। কিন্তু শিক্ষার পদ্বতিগত জটিলতার কারণে শিক্ষা পরিবারের অংশিজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে । ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন সময় হতাশায় ভুগছেন এবং কখনো কখনো আত্মহননেরও পথ বেছ নিচ্ছে।
তবে আশার কথা এই যে, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বর্তমান সরকার নিরন্তন কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সমন্বয়হীনতা উপলব্ধি করে নতুন শিক্ষাক্রম চালু বিষয়কি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এর ফলে শিক্ষার্থীও যাবে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শ্রেণিকক্ষে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে হ্রদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক নতুন করে গড়ে উঠবে।
ছাত্রীদের উপবৃত্তি চালু শুরু করে পর্যায়ক্রমে তা উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত চালুর ফলে নারী শিক্ষায় অভাবনীয় অগ্রগতি হয়েছে। ২০১০ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় বিনা মূল্যেবই বিতরণের ফলে শিশুদের বিদ্যালয়গাঅধিক জনসংখা যেকোন দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ। কিন্তু জন সংখ্যাকে যদি দক্ষ করে মানব সম্পদে পরিণত করা যায় তাহলে জন সংখ্যা হুমকি না হয়ে আশির্বাদ স্বরূপ হয়। দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করতে গুনগত শিক্ষার বিকল্প নেই। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও গুনগত শিক্ষা দেখা পাওয়া য়ায়নি। তারপর মহামারি করোনা ছোবল দিয়ে শিক্ষাব্যাবস্থাকে বিপর্যয় করে ফেলেছিল। কিন্তু হাজারও বাঁধার পরেও শিক্ষায় স্বাভাবিক মাত্রা ফিরে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।তার মধ্যে রেডিও,টেলিভিশন ও অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা ও এ্যাসাইমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর পড়া চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে সত্য কিন্তু এখন পাশাপাশি গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।স্বাধীনতার পর প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন থেকে শুরু করে ২০১০সাল পর্যন্ত যতটা শিক্ষা কমিশন গঠন করে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে প্রত্যেক শিক্ষানীতিতেই গুণগত শিক্ষা জন্য করণীয় বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এপর্যন্ত শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করার জন্য জোরালো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। দুই/ একটি শিক্ষানীতির কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন ভাবে বাস্তবায়ন হলেও গুণগত শিক্ষার জন্য সভা-সেমিনার করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। শিক্ষার পরিমাণগত উন্নয়ন ব্যাপক হলেও গুণগত শিক্ষা অধরাই রয়ে গেছে।বিশেষকরে ১৯৯৬সালে মাধ্যমিক পর্যয়ের মী শিক্ষার্থীর হার বেড়েছে। পক্ষান্তরে ঝরে পরার হার কমেছে।শিক্ষাপ্রিতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত ও শিক্ষার্থীর পরিমানগত যে উন্নয়ন পেতে হলে গুণগত শিক্ষা আবশ্যইক। শহর থেকে শুরূ করে গ্রাম পর্যন্ত অনেক অনেক স্কুল,কলেজ ও মাদরাসা স্থাপিত হয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষের সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ফলে প্রতিষ্ঠানে বসেই যাবতীয় অফিসিয়াল কাজকর্ম সম্পন্ন করা যাচ্ছে।দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গুণগত শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষা সাথে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে গুণগত শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব। এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মনোযোগী হওয়া।
শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য সরকার বাহাদুর বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তা বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা করে আসছেন। কিন্তু আলহাজ অধ্যাপক মোঃ আতাউল হক খান চৌধুরী, মোঃ লুৎফার রহমান, মোঃ জোবাইর হোসেন, মোঃ আবু হানিফ মোঃ আমিনুর রহমান ইত্যাদি গংদের মত কিছু শিক্ষা ক্যাডার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষক নামের চরিত্রহীন অমানুষের অপকর্ম তৎপরতার ফলে শিক্ষার সাথে জড়িত সকল কর্মতৎপরতা ব্যর্থ হচ্ছে।
সরকারের নীতি নির্ধারকগণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নামে চরিত্রহীন অর্থলোভী অমানুষ প্রবেশ করছে তাদের খোঁজে দৃষ্ঠান্ত মূলক শাস্তি দিতে হবে। আর শিক্ষা পেশায় মেদাবী ও আগ্রহীদের স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার শিক্ষক নিয়গ দিতে হবে। যার ফলে গুনগত শিক্ষার নানা উদ্যোগ সফল হবে। দীর্ঘ দিন যাবৎ শিক্ষাব্যবস্থা মেদাভিওিক বা বুদ্দিবৃওীয় হওয়ার ফলে একজন শিক্ষার্থীর জীবনের কিছু দিক বিবেচনায় মূল্যায়ন করে ভাল-মন্দ নির্ধারণ করা হয়। কারন বর্থমান শিক্ষা ব্যবস্থায় জীবনের নানা দিক সূল্যায়নের সুযোগ নেই। তাই সরকারের নীতিনির্ধারকগন বর্তমান শিক্ষাব্যাবস্থা সময় উপযোগি জীবনের পরিপুর্ণ দিক বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন করা যায়, সে জন্য বছর ব্যাপী ধারাবাহিক মূল্যায়নের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার সিদ্বান্ত গ্রহণ করছেন।
ধারাবাহিক শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন হলে শিক্ষায় গুনগত মান ফিরে আসবে। শিক্ষার্থীরাও ক্লাসমুখী হয়ে নৈতিকতা বোধ অর্জন করে শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নের মাধ্যমে সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ লাভ করবে। এক শ্রেণির মানুষ যুগে যুগে যে কোন ভাল কাজের দোষ খোঁজে বেড়ায়। এমনকি সেই ভাল কাজের অপপ্রচার চালায়। সেই দিকে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের নজর রাখতে হবে। আগামি বছর বা ২০২৩ সাল থেকে ধারাবাহিক মূল্যায়ন চালু ও বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার চার লক্ষ শিক্ষকের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। এ উদ্যোগ অবশ্যই সময়ের দাবী, দুরদর্শী সাহসী পদক্ষেপ এবং প্রশংসার দাবী রাখে। শিক্ষকগণের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ধারাবাহিক মূল্যায়ন অর্থাৎ নতুন শিক্ষাব্যবস্থা চালু হলে মেধাভিত্তিক শিক্ষা ও মহামারী করোনার ছোবলে শিক্ষাব্যবস্থা যে বিপর্যায় নেমে এসেছে তা থেকে উত্তরণ হয়ে গুণগত মানসম্মান্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত হবে।জ্ঞান,দক্ষতা ও যোগ্যতাভিত্তিক যে বুদ্ধিবৃতীয়, আবেগীয় ও মনোপেশিজ শিক্ষাব্যবস্থা ধারাবাহিক মূল্যায়ন চালু ও বাস্তবায়ন হলে এর ফল সুদূর প্রসারী।
তাই সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব শিশুদের হাতে সময় মতো বই পৌছিয়ে দেওয়া ও শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। এমনকি নতুন শিক্ষাব্যবস্থা শুরুর করেই তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে গুণগত শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হবে।
গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা অর্জন ও স্থায়ীকরণের জন্য আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাক্রম, যোগ্যতা সম্পন্ন ও শিক্ষার প্রতি আগ্রহী শিক্ষক নিয়োগ,প্রয়োজনীয় সুযোগ দিয়ে মেধাবীদের শিক্ষকতায় এনে ধরে রাখা।
সন্ত্রসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন,দুর্নীতি নির্মূল পরিবেশ,অপচয়রোধ ও শিক্ষায় অধিক বিনিয়োগ একান্ত প্রয়োজন। এসব শর্ত পূরণের ওপর নির্ভর করে গুণগত শিক্ষার মান ও মাত্রা। গুণগত শিক্ষার বর্তমান প্রেক্ষাপট একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। এটি উন্নয়নশীল বিশ্বেও শিক্ষাবিদদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো টেকসই উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে গুণগত শিক্ষার ধারণা ও গুরুত্ব বিশেষ ভাবে তুলে ধরছেন। এজন্য পরিমাপগত নয়, সরকার, শিক্ষাক, অভিভাবক,পিতা-মাতা ও শিক্ষার্থীসহ সকলের সামগ্রিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে অর্জিত হবে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা। যার ফলে জাতি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
লেখকঃ মোঃ ইয়াকুব আলী
প্রভাষক (বাংলা)-পয়সা কারামাতিয়া আলিম মাদরাসা, লৌহজং,মুন্সীগঞ্জ
প্রধান পরীক্ষক,বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড।