ঢাকা ০৩:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ১০ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ::
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল 'যমুনা প্রতিদিন ডট কম' এ আপনাকে স্বাগতম...
সংবাদ শিরোনাম ::

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আড়াইশো বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা

সাখাওয়াত হোসেন,চলনবিল প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৫:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৩ ৮৪ বার পড়া হয়েছে
যমুনা প্রতিদিন অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

স্বরস্বতী পুজা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আড়াইশো বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা।এই মেলাকে ঘিরে তাড়াশ ও সিরাজগঞ্জ শহরে নতুন সাড়া পড়েছে।তবে মেলায় নেই আগের মতো সেই জৌলুস। ক্রেতা কমে যাওয়ার সঙ্গে কমেছে দোকান ও বিক্রেতা। এটি মূলত শ্রী পঞ্চমী মেলা হলেও এলাকাবাসীর মুখে মুখে দইমেলা নামেই পরিচিত।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী দইয়ের মেলাটি আড়াইশো বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে তাড়াশ বাজার ও সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়কে এ দইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, মেলা উপলক্ষে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল থেকে সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার নামিদামি ঘোষদের দই আসার মধ্য দিয়ে সিরাজগঞ্জ শহর ও তাড়াশে ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলা শুরু হয়েছে।

দিনব্যাপী মেলায় দইসহ রসনা বিলাসী খাবার ঝুরি মুড়ি, মুড়কি, চিড়া, মোয়া, বাতাসা, কদমা, খেজুরের গুড়সহ বাহারি সব খাবার বেচাকেনা হচ্ছে।

এ দই মেলা নিয়ে রয়েছে নানা গল্পকাহিনী।ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা এই মেলা আগামী দিনে আরও প্রসারিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা দই প্রেমীদের।

জানা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। এলাকায় জনশ্রুতি আছে জমিদার রাজা রায় বাহাদুর নিজেও দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। তাই জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করতেন। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী দই মেলার প্রচলন শুরু করেন।সে থেকে প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে সরস্বতী পূজার দিন শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলার শুরু হয়।সেই ধারাবাহিকতায় তাড়াশ বাজারের পাশ্বাপাশি সিরাজগঞ্জ শহরেও বসে দইয়ের মেলা।

মেলায় দই নিয়ে আসা সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুরের রনি মিষ্টান্ন ভান্ডারের রঞ্জিত ঘোষ বলেন, আজ ১৫ মণ দই নিয়ে এসেছি।দইয়ের চাহিদা থাকায় দুপুরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।তবে দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে।

দই কিনতে আসা পাবনা জেলার সুমন কুমার ঘোষ বলেন, প্রতি বছর সকালে এই মেলা থেকে দই কিনি।স্বরস্বতি পূজা উপলক্ষে বাড়িতে অনেক অতিথি এসেছে।তাদের আপ্যায়নের জন্য দই কিনছি।

আরেক ক্রেতা বলেন, বোন ও জামাইসহ অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে।এখানকার দই খুব সুস্বাদু।প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ কেজি দই কিনে থাকি।তবে এবার একটু দাম বেশি,তার পরেও ৫ কেজি দই কিনেছি।

তাড়াশ উপজেলা সনাতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সনাতন কুমার দাস বলেন, ঐতিহ্য মেনে এখনো তাড়াশে দইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।তবে মেলা হলেও আগের মতো সেই জৌলুস আর নেই।অল্প কিছু দোকান বসেছে।মেলা সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন করতে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, শীত মৌসুমে মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ দই মেলা বসে থাকে।সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলায় এ মেলা প্রায় আড়াইশো বছরের ঐতিহ্য।

তিনি আরও বলেন, আগে মেলায় মানুষের ভিড় বেশি থাকায় ঢোকায় যেত না।কিন্তু এবার তাড়াশ ও শহরে মাত্র ১৫-১৮টি দোকান বসেছে।মানুষের মধ্যেও নেই সেই আগ্রহ।এখন আর মেলা উপলক্ষে নেই সাজ সাজ ভাব, আগের মতো আর আসে না জামাই বা আত্মীয়-স্বজনরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আড়াইশো বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা

আপডেট সময় : ০৩:৫৫:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৩

স্বরস্বতী পুজা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আড়াইশো বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা।এই মেলাকে ঘিরে তাড়াশ ও সিরাজগঞ্জ শহরে নতুন সাড়া পড়েছে।তবে মেলায় নেই আগের মতো সেই জৌলুস। ক্রেতা কমে যাওয়ার সঙ্গে কমেছে দোকান ও বিক্রেতা। এটি মূলত শ্রী পঞ্চমী মেলা হলেও এলাকাবাসীর মুখে মুখে দইমেলা নামেই পরিচিত।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী দইয়ের মেলাটি আড়াইশো বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে তাড়াশ বাজার ও সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়কে এ দইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, মেলা উপলক্ষে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল থেকে সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার নামিদামি ঘোষদের দই আসার মধ্য দিয়ে সিরাজগঞ্জ শহর ও তাড়াশে ঐতিহ্যবাহী দইয়ের মেলা শুরু হয়েছে।

দিনব্যাপী মেলায় দইসহ রসনা বিলাসী খাবার ঝুরি মুড়ি, মুড়কি, চিড়া, মোয়া, বাতাসা, কদমা, খেজুরের গুড়সহ বাহারি সব খাবার বেচাকেনা হচ্ছে।

এ দই মেলা নিয়ে রয়েছে নানা গল্পকাহিনী।ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা এই মেলা আগামী দিনে আরও প্রসারিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা দই প্রেমীদের।

জানা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। এলাকায় জনশ্রুতি আছে জমিদার রাজা রায় বাহাদুর নিজেও দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। তাই জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করতেন। আর সে থেকেই জমিদার বাড়ির সম্মুখে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে স্বরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী দই মেলার প্রচলন শুরু করেন।সে থেকে প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে সরস্বতী পূজার দিন শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলার শুরু হয়।সেই ধারাবাহিকতায় তাড়াশ বাজারের পাশ্বাপাশি সিরাজগঞ্জ শহরেও বসে দইয়ের মেলা।

মেলায় দই নিয়ে আসা সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুরের রনি মিষ্টান্ন ভান্ডারের রঞ্জিত ঘোষ বলেন, আজ ১৫ মণ দই নিয়ে এসেছি।দইয়ের চাহিদা থাকায় দুপুরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।তবে দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে।

দই কিনতে আসা পাবনা জেলার সুমন কুমার ঘোষ বলেন, প্রতি বছর সকালে এই মেলা থেকে দই কিনি।স্বরস্বতি পূজা উপলক্ষে বাড়িতে অনেক অতিথি এসেছে।তাদের আপ্যায়নের জন্য দই কিনছি।

আরেক ক্রেতা বলেন, বোন ও জামাইসহ অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে।এখানকার দই খুব সুস্বাদু।প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ কেজি দই কিনে থাকি।তবে এবার একটু দাম বেশি,তার পরেও ৫ কেজি দই কিনেছি।

তাড়াশ উপজেলা সনাতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সনাতন কুমার দাস বলেন, ঐতিহ্য মেনে এখনো তাড়াশে দইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।তবে মেলা হলেও আগের মতো সেই জৌলুস আর নেই।অল্প কিছু দোকান বসেছে।মেলা সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন করতে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, শীত মৌসুমে মাঘ মাসে শ্রী পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে এ দই মেলা বসে থাকে।সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলায় এ মেলা প্রায় আড়াইশো বছরের ঐতিহ্য।

তিনি আরও বলেন, আগে মেলায় মানুষের ভিড় বেশি থাকায় ঢোকায় যেত না।কিন্তু এবার তাড়াশ ও শহরে মাত্র ১৫-১৮টি দোকান বসেছে।মানুষের মধ্যেও নেই সেই আগ্রহ।এখন আর মেলা উপলক্ষে নেই সাজ সাজ ভাব, আগের মতো আর আসে না জামাই বা আত্মীয়-স্বজনরা।