শিশুর বুদ্ধির বিকাশ-শিশুর মেধা ও বুদ্ধি বাড়ানোর উপায়: আমরা অনেকেই ভেবে থাকি, শিশুদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে অটোমেটিক তাদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে।এতে বেশি কিছু করার নেই। কিন্তু এই ধারণাটি একেবারেই ভুল।শিশুদের বুদ্ধি অর্থাৎ মেধা বাড়ানোর নানা কৌশল আছে।যা সময় মত প্রয়োগ করে শিশুর মেধা বাড়ানো যেতে পারে।
জন্মের সময় আপনার শিশুর মস্তিষ্কে ১০০ বিলিয়ন নিউরন থাকে (মিল্কিওয়েতে যতগুলি তারা রয়েছে!) আর প্রথম বছরেই সে কোটি কোটি ব্রেন-সেল সংযোগ স্থাপন করে, যাকে নিউরাল সিনাপেস বলে।বেশ আশ্চর্যকর, তাই না?
আপনি যখন শিশুর সাথে হাসিমাখা মুখে ভালোবাসার সহিত কথা বলেন তখন তার মস্তিষ্কের নিউরাল সিনাপেস এবং পথগুলিকে একসাথে মজবুত হওয়ার আরও বেশি সুযোগ করে দিচ্ছেন।যার ফলে, ঐ শিশুটি সহজে ভাষা শিক্ষা, যুক্তি এবং পরিকল্পনা দক্ষতা অর্জন করে।তাই শিশুর বুদ্ধির বিকাশে আপনাকে বাহ্যিক ও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে।
শিশুর বুদ্ধির বিকাশ কেন হয় না?
প্রথমত, জিনগত বা অনেক সময় বংশগত কারণেও শিশুর মেধার বিকাশ হয় না।পুষ্টিকর খাবারের অভাব থাকলে মায়েদের স্বাস্থ্যজ্ঞানের অভাব না থাকার কারণে।বুদ্ধির বিকাশ ঘটবে এমন সময়টাতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ও অত্যধিক ঔষধ ব্যবহারের কারণে।গর্ভবতী মায়েরা অপুষ্টিতে ভুগলে।মায়েদের অসচেতনতার কারণে।পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধতার অভাবে।কেননা, এই তিনটি জিনিস শিশুর বুদ্ধির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভালো কাজের প্রশংসা না করে শিশুকে অনুৎসাহিত, তিরস্কার বা নিন্দা করলে।এছাড়া অশোভন আচরণ ও পারিবারিক ঝগড়া শিশুর বুদ্ধির বিকাশে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
মেধাহীন শিশুর যে ধরনের সমস্যা হয়
সাধারণত মেধাহীন শিশুদের নানা ধরনের জটিলতা দেখা যায় –মেধাহীন শিশুরা সাধারণত রাগ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।নিজেকে সব সময় লুকানোর চেষ্টা করে।এ সমস্ত শিশুদের আচরণে অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়।
বুদ্ধিহীন শিশুরা বড় হয়ে পরিবার, সমাজ ও দেশের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকে সরাসরি ব্যাহত করে।জটিল সমস্যা সমাধানে ভয় পায়। কাজে অনীহা প্রকাশ করে।খাবার গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে।কোনো কিছু জিঙ্গাসা করলে চেষ্টা ছাড়াই ‘না’ সূচক জবাব পাওয়া যায়।ব্যক্তিগত দক্ষতা লক্ষণীয় হয় না।স্কুল কলেজের ফলাফল সন্তোষজনক হয় না।অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা লক্ষণীয় হয়।পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়।
শিশুর বুদ্ধি বা ব্রেন বাড়ানোর উপায়
একজন শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে আপনার করণীয় বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরলাম –
১। জন্মের আগেই শিশুকে একটা ভালো পরিবেশ দিন
প্রেগন্যান্সির সময় আপনার স্বাস্থ্যবান থাকাটা খুবই জরুরি।তবে এটাও জেনে রাখুন, বেশ কিছু ঔষধ জরায়ুতে শিশুর মস্তিষ্কের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে। প্রেগন্যান্সির সময় আপনি যদি মাদক সেবন করেন তাহলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শিশুর শরীর ও ব্রেনের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। শিশুর মাঝে আক্রমণাত্মক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। গবেষণায় আরও জানা গেছে যে, গর্ভাবস্থায় ধূমপান নিম্ন চতুর্থ শ্রেণির পড়ার স্কোরের সাথে যুক্ত।
২। শিশুকে নানা ধরণের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করুন
শিশুদের বুদ্ধিমান বানাতে তাদের উদ্বুদ্ধ রাখতে হয়।পাশাপাশি তাদের আগ্রহী করে তুলতে অভিনব সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে হয়। কেননা, জীবনে ঘটে যাওয়া বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা শিশুদের সাহস বাড়িয়ে তোলে ও তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, দিনের পর দিন একই রকম গতানুগতিক জীবন আলস্য, স্থবিরতা ডেকে আনে।
৩। মায়ের দুধ
মায়ের দুধ শিশুর জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর খাদ্য। শিশুকে কমপক্ষে ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। কেননা, শিশুর বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে মায়ের বুকের দুধ অপরিমেয় ভূমিকা পালন করে।ব্রাজিলের এক দল গবেষক সাড়ে তিন হাজার শিশুর উপর দীর্ঘদিন নজর রাখার পর এ সিদ্ধান্তে আসেন।
৪। তাদের প্রতিভা এবং আগ্রহকে উৎসাহিত করা
খেলাধুলা, নাটকের ক্লাস, সংগীত কিংবা নাচ, যাই হোক না কেন এসব নিয়ে যদি আপনার শিশুর আগ্রহ থাকে তবে তাকে ছোট বয়স থেকেই সুযোগ দিতে হবে। তবেই শিশুর প্রতিভা বিকাশের সম্ভাবনা অনেক হারে বৃদ্ধি পাবে।
তবে বাচ্চার উপর নিজের অপূরণীয় ইচ্ছাগুলো কখনো চাপিয়ে দিবেন না। কারণ এতে হিতের বিপরীত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি চান শিশুকে ডাক্তার বানাতে, কিন্তু শিশু চায় গান গাইতে।আপনি জোর করে তাকে কোনো কিছু করাতে গেলেই সেটা অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই হবে না।তাই তাকে তার মতই বড় হতে দিন। বরং তার পাশে দাঁড়িয়ে তার উদ্দীপনা ও আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে তুলুন। শিশুর মানসিক বিকাশে আপনাকে এভাবে সহযোগিতা করতে হবে।
৫। শিশুর সাথে কথোপকথোন করুন
আনন্দ ও উৎফুল্লতার সহিত হাসিমাখা মুখে শিশুর সাথে কথোপকথন করুন। শিশুর ছোট ছোট উচ্চারণগুলির প্রতিক্রিয়া জানান এবং আপনিও ছোট ছোট শব্দ তাকে শোনান। যেমনঃ ‘আমার সোনা বাবুটা’, ‘মিষ্টি বাবু’, ‘বাবুর লাল জামা’ ইত্যাদি। এইরকম বলার উপায়কে পেরেন্টটিস বলা হয়।
এর ফলে শিশু আপনার অতিরঞ্জিত মুখের ভাবগুলি এবং উচ্চারিত শব্দগুলি মনে রাখে। বক্তৃতা বোঝার এবং ভাষা তৈরির জন্য দায়ী শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষেত্রগুলিকে আপনাকেই জাগ্রত করাতে হবে। তবেই শিশুর ব্রেন পাওয়ার ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাবে।
৬। মার্তৃগর্ভেই শিশুকে শেখান
শিক্ষা গ্রহণের নির্ধারিত কোনো সময় নেই। শিশু সাধারণত মার্তৃগর্ভ থেকেই শেখা শুরু করে। মায়ের গর্ভে শিশুর বয়স যখন সবে মাত্র ৬ মাস তখন থেকেই শিশু আমাদের কথাগুলোর প্রতিক্রিয়া জানায়। যদি আপনি শিশুকে পূর্ণাংগ ব্যক্তিত্ব দিতে চান তবে তখন থেকেই আপনাকে কাজ শুরু করতে হবে।শিশুকে কোন দিকে আপনি নিয়ে যেতে চান সে কাজগুলো বেশি বেশি করুন।