বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছাউনি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি জসিম উদ্দিনের এই কবিতার মতোই লিয়াকত আলীর জীবন।এক যুগেরও বেশি সময় ধরে গাছের ডালে বাসা বানিয়ে বসবাস করে আসছেন মধ্যবয়স্ক মানসিক ভারসাম্যহীন লিয়াকত আলী।
লিয়াকত আলী শালিখা উপজেলার শতখালী ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের মিয়া পাটোয়ারীর ছেলে।
রোদ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে গাছের ডালে বসেই চলে তার খাওয়া, গাছের ডালেই তার রাত্রিযাপন।একটি নয় চার-পাঁচটি গাছ জড়িয়ে তৈরী করেছেন একাধিক বাসা।দিনভর বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে নারিকেল আর চিড়া মুড়ি সংগ্রহ করে সন্ধ্যা হলেই গাছ বেয়ে উঠে পড়েন তার তৈরি করা বাসায়।মুক্ত পাখির পাখির মতোই রাত্রিযাপন করেন গাছের মগডালে। ঘটনাটি মাগুরার শালিখা উপজেলার ছয়ঘরিয়া এলাকার
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যশোর-মাগুরা মহাসড়কের ছয়ঘরিয়া নামক স্থানে রাস্তার দুপাশ দিয়ে গাছের উপর পাখির বাসার মত ডালপালা কাঠখুটি, পলেথিন ও বাঁশ দিয়ে ছুপড়ি ঘর বানিয়ে গাছেই চলছে মানসিক প্রতিবন্ধী লিয়াকত আলীর থাকা খাওয়ার কাছ।লিয়াকত আলী গাছের ঢালপালা, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৌরী করেছেন তিন-চারটি বাসা।যেখানে বছরের পর বছর ধরে থাকছেন তিনি।গাছের ডালপালা বিক্রি করে ও মানুষের বাড়ী বাড়ী গিয়ে নারকেল, ডাব ও তুলা পেড়ে দিয়ে যে টাকা পায় তাই দিয়ে চলে তার খাওয়া পরা।
লিয়াকত আলীকে স্বাভাবিক জীবনে পুনর্বাসনের জন্য মানসিক ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ছয়ঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর মালেক বলেন, লিয়াকত আলী যখন সুস্থ ছিলেন, তখন ঢাকায় রডের কারখানায় কাজ করতেন এবং সেখানে এক গার্মেন্ট কর্মীকে বিবাহ করেন।সেখানে স্ত্রীর বনিবনা না হলে তিনি এলাকায় চলে আসেন
লিয়াকত আলীর চাচা শুকুর আলী জানান, লিয়াকত ঢাকা থেকে ফিরে এসে স্থানিয় বাস গাড়িতে হেলপারি করতো পরে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসলে তাকে পাশ্ববর্তী চতুরবাড়িয়া গ্রামের রোজিনা নামে একটি মেয়ের সাথে বিবাহ দেওয়া পরে লিয়াকত আলীর মাথায় সমস্যা দেখা দিলে রোজিনা তাকে ছেড়ে চলে যায়।তারপর থেকেই সে রোজিনা যে পথে গেছে সেপথেই কয়েকটি গাছের ডালে বাসা বানিয়ে রোজিনার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন লিয়াকত।গাছেই তার বাড়ী গাছেই চলে তার সংসার৷তবে প্রসব-পায়খানা চাপলে নিচে নেমে কাজ সেরেই আবার উঠে পড়েন গাছে।রোদ, বৃষ্টি ও ঝড় যাই হোক না কেন মানসিক প্রতিবন্ধী লিয়াকত আলী তার গাছে বানানো বাসায়ই থাকেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লিয়াকত আলীর বাড়িতে আছেন তার বৃদ্ধা মা এবং একমাত্র ভাই রয়েছেন প্রবাসে।তাকে স্বভাবিক জীবন দিতে প্রয়োজন টাকার, প্রয়োজন সেবার যা দেওয়ার মতো কেউ নাই তার।
তবে কি আমৃত্যু গাছের ডালেই কাটবে লিয়াকত আলীর জীবন এই প্রশ্ন এখন স্থানীয় সচেতন মহলের।
স্থনীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, লিয়াকত আলী পুরো পাগল নন, সমাজের আর দশজন মানুষের মতোই কথা বলেন এবং খাবার খান।ছোট বাচ্চাদের আদর করেন, হাত সর্বদা দা-কাঁচি থাকলেও কখনো কাউকে আঘাত করেন না।তাকে সেবা শুশ্রূষা করে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
সরেজমিন গিয়ে লিয়াকত আলীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।প্রশ্ন করা লিয়াকত আলীকে কয়টা বাড়ী আছে তার ? উত্তরে তিনি বলেন, আমার বাড়ী কয়টা তা ঠিক নেই।অনেক গুলো বাড়ী আছে আমার।এর মধ্যে আমি তিনটি বাড়ীতে থাকি।আমি মানুষের মধ্যে বসবাস করি না।
কেন মানুষের মধ্যে বসবাস করেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে গেলে রোগ হয়।কি খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি মুড়ি, চিড়া, নারিকেল ও হোটেলের খাবার খাই।
তিনি আরো বলেন, যেদিন রোজিনা ফিরে আসবো সেদিন-বলতে বলতে গাছে উঠে পড়েন মানুষিক ভারসাম্যহীন লিয়াকত আলী।