বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আরডিএ’র মাস্টার প্ল্যানে নেই কোনো নতুনত্ব

রাজশাহীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আগামী ২৪ বছরের জন্য মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে। ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) এ মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। কিন্তু ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা আরডিএ’র মাস্টার প্ল্যানে নেই কোনো নতুনত্ব।

সাড়ে তিন বছরে তৈরি করা হয়েছে এ মাস্টার প্ল্যান। এটি তৈরিতে তিনটি ফার্ম কাজ করেছে। এবার মাস্টার প্ল্যানে ২৪ বছর আগে যে বিষয়গুলো ছিল সেটিই পুনরাবৃত্তি করে শুধু মাত্র দুর্যোগ ব্যববস্থাপনার বিষয়টি যোগ হয়েছে। তারপরও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি আরডিএ’র নগর পরিকল্পনা শাখা।

যদিও সুশিল ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ বলছেন, আগের প্ল্যানই বাস্তবায়ন হয়নি। পুনরায় আবারো বিশাল অংকের টাকা ব্যয়ে মাস্টার প্ন্যান তৈরি বিলাশিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। নতুন মাস্টার প্ল্যানে বাস্তবায়ন হবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

জানা যায়, গত ২০০৪ সালে ২৪ বছরের জন্য আরডিএ কর্তৃপক্ষ পুরো রাজশাহীর উপর প্লান তৈরি করেছিল। এই প্ল্যানের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর রাজশাহী সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত, সড়ক জনপদ বিভাগ, এলজিইডি সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ও পরামর্শক্রমে এ প্ল্যান তৈরির কাজ হাতে নেয়। বিগত প্ল্যানে ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে আগামীর রাজশাহীর রাস্তা-ঘাট কেমন হবে সেটি উল্লেখ করা হয়েছিল। আগের প্ল্যানে আরডিএ’র পরিধি কম ছিল। বর্তমান আরডিএ’র ১৭টি জোন হয়েছে। এই ১৭টি জোন নিয়ে এবার করা হয়েছে এই মাস্টার প্ল্যান।

প্রথম দফায় ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর, আগামী ২৫ বছরের উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাথে মাস্টার প্ল্যান প্রণনয়ন বিষয়ে ‘উন্নয়নের ভবনা শীর্ষক মতবিনিময় সভা করা হয়। এই সভায় আগামীর রাজশাহী কেমন হবে তা নিয়ে রুপ রেখা তৈরি করা হয়। পরে মাস্টার প্ল্যানের জন্য অনুমোদনও হয়। এ প্ল্যান তৈরি করতে কত ব্যয় হবে সেটিও নির্ধারণ করা হয়। এরপর বিভিন্ন দপ্তর, সুশিল সমাজ, সাংবাদিকদের নিয়ে প্ল্যানের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়।

গত প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে আরডিএ’র নগর পরিকল্পনা শাখা এ মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। এ মাস্টার প্ল্যান তৈরিতে কাজ করেছে এডিপিসি, ডেটেক্স, থ্যোই নামে তিনটি ফার্ম।

১৮ কোটি টাকা দিয়ে তৈরি করা এবারের মাস্টার প্ল্যানে বিশেষত্ব বলতে তেমন কিছু নেই। পুর্বের প্ল্যানে যা ছিল তার সাথে সামান্য কিছু যোগ করা হয়েছে। এবার মাস্টার প্ল্যানে যোগ হয়েছে দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনার বিষয়টি।

এর মধ্যে রয়েছে চার ধরনের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সংবেদনশীল, ভুমিকম্প, বন্যা, খরা, অগ্নিনির্বাপন, ওয়াটার রিজাভ, বড় ভবন তৈরি ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণের জন্য রাস্তা। নতুন মাস্টার প্ল্যানে এ কয়টি বিষয় বিশেষত্ব বলা হলেও দেখা গেছে, অগ্নিনির্বাপনের জন্য ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যেসব নিদের্শনা আগের প্ল্যানে ছিল, এবারো তাই রয়েছে।

দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার মধ্যে ভুমিকম্প এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করার ক্ষেত্রে আগে যে নির্দেশনা ছিল সেখানে, ভুমিকম্প প্রবণ এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে করণীয় বিষয় যোগ হয়েছে।

অগ্নিকান্ডের মত দূর্যোগের ক্ষেত্রে আগের প্ল্যানে বলা হয়েছে, নগরীতে কোনো বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হলে, অগ্নিকাÐের মত ঘটনায় ফায়ার সর্ভিসের গাড়ি অনায়াসে যেতে পারে সেই পরিমান রাস্তা রেখে ভবন নির্মাণ করতে হবে, যা মাস্টার প্ল্যানেও সংযুক্ত হয়েছে।

বন্যা বা খরার মত দূর্যোগে কি কি ব্যবস্থা নেয়া যায় সে বিষয়টি আগের প্ল্যানে ছিল, এবার যোগ হয়েছে। এছাড়াও বন্যা বা খরার মত দূর্যোগের পরবর্তি করণীয় সমূহ রয়েছে।

নতুন মাস্টার প্ল্যানে যোগ হয়েছে ওয়াটার রিজার্ভ। যদিও সম্প্রতি দেশের বেশকিছু স্থানে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর সরকার বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিদের্শনা জারি করেছে। সেই আলোকে রাজশাহীর মাস্টার প্ল্যানেও এ বিষয়টি উঠে এসেছে।

রাজশাহীর আগামী ২৪ বছরের যে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে সেখানে বড় বড় রাস্তা-ঘাট, আগামীর নগরী কেমন হবে, কতটা নিরাপদ হবে, নগরায়ন কেমন হবে, আরডিএ’র পরিধির মধ্যে যে জায়গা আছে সেসব জায়গার রাস্তা-ঘাট, বসতি কেমন হবে তা বলতে পারেনি আরডিএ’র নগর পরিকল্পনা শাখা।

বিষয়টি নিয়ে আরডিএ’র নগর পরিকল্পক আজমেরি আফসারী বলেন, নতুন মাস্টার প্ল্যান এ মাসের মধ্যেই সবার জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হবে। এটি সম্পন্ন হওয়ার পর প্রিন্টের কাজ চলছে।

তিনি বলেন, রাজশাহীর জন্য যে মাস্টার প্ল্যান হয়েছে তাতে রাজশাহীর চিত্র বদলে যাবে। তবে নতুন মাস্টার প্ল্যানে নতুনত্ব কি আছে জানতে চাইলে তিনি দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ছাড়া নতুনত্ব বলতে আর কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন।

এই প্ল্যান তৈরি করতে কত লোকবল লেগেছে জানতে চাইলে তিনি সেটি জানাতে পারেন নি।তিনটি ফার্মের কাকে কত টাকা দিতে হয়েছে সেটিও তিনি জানেন না বলে জানান।

তিনি নিজে মাস্টার প্ল্যানের প্রধান হওয়ার পরও সব কিছু জানেন না, বলে জানিয়ে বলেন, পুরো মাস্টার প্ল্যানের নকশা এলে তারপর সব কিছু জানানো সম্ভব হবে।

এব্যাপারে আরডিএ’র অথরাইজ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এক সময় রাজশাহীতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মানার কোনো প্রবণতা ছিল না। আমরা মানুষের সাথে ওয়ার্কসপ করে, প্রচার প্রচারণা চালিয়ে এখন কিছুটা হলেও নিয়মের মধ্যে এসেছে, সচেতন হয়েছে মানুষ।

তিনি বলেন, রাজশাহীর মাস্টার প্ল্যান সম্পর্কে যদিও আমি কিছু জানি না, তারপরও বলবো এই মাস্টার প্ল্যান আগামীর রাজশাহীর জন্য মাইল ফলক হবে।

এদিকে এতো বিশাল অংকের টাকা খরচ করে আগামী রাজশাহীর জন্য মাস্টার প্ল্যান কোনো সুফল বয়ে আনবে না বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকেই। কারণ, যে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে, সেই টাকা জনগণের। এখানে বড় ধরনের দুর্নীতি করা হয়েছে বলেও নগরীর সচেতন মানুষ মনে করছেন।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, সাধারণ নাগরিকের মতামত নিয়ে আগামীর রাজশাহী কেমন হবে তার মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে হতো। এই কাজে এতো বিশাল অংকের টাকা খরচ হওয়ার কথা নয়। এখানে বড় ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বিশাল অংকের টাকা খরচ হলেও আরডিএ রাজশাহীর জন্য নতুন কিছু দিতে পারেনি। যা দু:খ জনক। আমরা চাই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হোক। আরডিএ’র কর্মকর্তারা এমনিতেই দুর্নীতি গ্রস্ত। আর মাস্টার প্ল্যানে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক এর বিশ্লেষক সুব্রত পাল বলেন, নগর পকিল্পনার জন্য মাস্টার প্ল্যান গুরুত্বপুর্ন। পুর্বের যে প্ল্যান সেটা যথাযথ বাস্তবায়ন না করে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আবারও মাস্টার প্ল্যান করা হয় তাহলে দিন শেষে নাগরিকের উপ করের বোঝা বাড়বে। এটি অত্যান্ত দুঃখজনক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১৮ কোটি টাকা ব্যয় করে মাস্টার প্ল্যান বিলাশিতা করার কোনো মানে হয় না। পর্বের যে প্লান ছিল সেটিও যদি পুনরায় জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে হেয়ারিং করে একটি মাস্টার প্ল্যান করা যায়, তাহলে যে ফল আসবে, এই ১৮ কোটি টাকা ব্যয় করে সেই ফল আসবে না। এটি বর্তমান অর্থনৈতিক ক্রাইসিসের মধ্যে আরো ক্রাইসিস বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। এতো বিশাল টাকা খরচ করে মাস্টার প্ল্যান, তারপরও এ প্ল্যানের মধ্যে নতুন কিছু নাই। জনগণের এই বিশাল টাকা ব্যয় করার আগে কর্তৃপক্ষের ভাবার দরকার ছিল। বিশেষ করে পুর্বের প্ল্যানটা রিভাইজ করে গণশুনানির মাধ্যমে মাস্টার প্ল্যান করলে এই ১৮ কোটি টাকা ব্যয় কমিয়ে আনা যেতো। তিনি বলেন, মাস্টার প্ল্যান করতে ১৮ কোটি টাকা কোথায় ব্যয় হলো সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × one =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x