প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের দেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে উঠবে। এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত।যদি ফলপ্রসূ হয় বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর স্থানে চলে যাবে বাংলাদেশ।
স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে স্মার্ট নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতি ও সরকারকে বোঝানো হয়েছে। যে কোনো দেশকে স্মার্টরূপে গড়ে তোলার জন্য এর সব শাখা-প্রশাখাকে স্মার্ট করতে হয়। একজন নাগরিকের মধ্যে সব দক্ষতা থাকবে না কিন্তু দেশের সমগ্র নাগরিকের মধ্যে সব ধরনের দক্ষতা থাকতে হবে এবং দক্ষতা বিকাশের পথ তৈরি করে তা বাস্তব রূপ দিতে হবে। তাহলে নাগরিক হবে স্মার্ট। সমাজকে স্মার্ট করা খুব সহজ বিষয় না।
আমাদের নাগরিক, আশপাশের পরিবেশ, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে উঠে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা। যেখানে নাগরিকদের মধ্যে প্রবীণ থেকে তরুণ সবার বসবাস।
বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে হলে তরুণ প্রজন্মকে আগে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই এবং যেসব সেক্টরে তাদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে সেই সেক্টরে কোনো আপস করা যাবে না। জালিয়াতি, দুর্নীতি রোধ করতে হবে। স্মার্ট ইকোনমি তৈরি করতে হলে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের সংখ্যা বাড়াতে হবে, সেই পাশাপাশি দেশে চাষাবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে হবে, কর ফাঁকি বন্ধ করতে হবে, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে ওয়াসার এমডির বিপুল পরিমাণ টাকা পাচারের স্পষ্ট দৃশ্য। এ ছাড়াও আলোচনায় এসেছে ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ করার বিষয়টি। এভাবে চলতে থাকলে স্মার্ট ইকোনমি তৈরি করা সম্ভব হবে। স্মার্ট সরকার ব্যবস্থায় সরকারের সব সেবা স্মার্ট পদ্ধতিতে হতে হবে যেখানে কোনো ভোগান্তি হয়রানি থাকবে না। কিন্তু ডিজিটাল হওয়ার পরও আমরা কতটুকু সুষ্ঠুভাবে ডিজিটাল সেবাই বা পাচ্ছি?
বাংলাদেশকে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট করতে হলে যে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে- এ কথা বলার আর অবকাশ থাকে না।এছাড়াও বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট সেক্টরের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।প্রথমেই শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ স্মার্ট করে গড়ে তুলতে হবে।শিক্ষাব্যবস্থা এখন চরম বিপর্যয়ের মধ্যে। দেশে মেধার চর্চা নেই বললেই চলে, রয়েছে শুধু নম্বর চর্চা। এ ছাড়াও যেই বিষয়ে পড়াশোনা সেই বিষয়-সংক্রান্ত চাকরির সুযোগ হাতেগোনা কয়েক জায়গায়। এই যে এক বিষয়ে পড়াশোনা করে অন্য বিষয়ে চাকরি করছি, এতে আমার অর্জিত বিশেষায়িত জ্ঞানের কোনো মূল্যায়নই হবে না। বরং আমার পেছনে সরকারের ব্যয় করা অর্থ বিফলে যাবে। যেটা স্মার্ট অর্থনীতি গড়ার অন্তরায় হবে। অফলাইন ও অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার সমন্বয় থাকা লাগবে। অসুস্থ অবস্থায় যেন ঘরে বসেই অফলাইন ক্লাসের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশের সাইবার নিরাপত্তার জায়গা আগের থেকে কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবুও সাইবার নিরাপত্তা যখন হবে তখন আমরা সাধারণ নাগরিকরা অনলাইনে নিজেদের নিরাপদ মনে করব। আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য যেন অন্যত্র ব্যবহার না হয় এই দিকের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে।
ই-ব্যাংকিং সেবাকে জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত করতে হবে।প্রতিদিন দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় হাজারো মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। এ খাতে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। সরকার সব সময় নিরাপত্তা খাতে জোর দিলেও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার জন্য তথ্য পাচার হচ্ছে। যেমন- অনেক দামি সফটওয়্যার কেনার জন্য টাকা বরাদ্দ থাকলেও টেকনিশিয়ানরা পাইরেসি করে, ক্র্যাক করে নানা সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। ফলে সরকারি অনেক তথ্য দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
ই-মেডিসিন ধারণার সঙ্গে বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ পরিচিত নন। সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে ই-মেডিসিন সেবাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। অনেক ডাক্তারের সিডিউল নিতে কয়েক মাস আগেই যোগাযোগ করতে হয়, রিপোর্টের জন্য লম্বা লাইন দিতে হয়। কিন্তু মেডিসিনে ঘরে বসেই ই-মেইলে মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট পাওয়া সম্ভব।
উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখব কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতির বহুল ব্যবহার। এক্ষেত্রে চায়নারা এগিয়ে। আমাদের দেশে এখনো কৃষকরা আধুনিক যন্ত্রপাতির ছোঁয়াটুকু পায় না। যদি কৃষিকাজে আধুনিক যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা বাড়ানো যায় তাহলে অর্থনীতিতে বাংলাদেশ স্মার্ট পর্যায়ে আসার পথ সুগম করতে পারবে।
কোরিয়ানদের সবাইকে যেমন সামরিক প্রশিক্ষণ নিতেই হয় তেমনি আমাদের বাধ্যতামূলক আইসিটি শিক্ষার প্রচলন করতে হবে। কেননা যে জাতি প্রযুক্তিতে দক্ষ হবে না তারা কোনো কিছুতেই দক্ষ হবে না। স্কুল পর্যায়ে সরকার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করে দিলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সেখানে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক কোর্স করিয়ে থাকেন! যার ব্যয়বহুল ও বটে। এক্ষেত্রে আইটি কোর্স হওয়া উচিত বিনামূল্যে। সরকারি প্রকল্প ও নিয়োগের কথাও আলোচনায় আসতে পারে। বেশিরভাগ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে। যার অর্থ একদিকে কাজে গাফিলতি, অন্যদিকে টাকা আত্মসাৎ।
এ ছাড়াও চাকরির নিয়োগপ্রক্রিয়া হতে হবে অল্প সময়ে কোনো ভোগান্তি ছাড়াই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেমন স্মার্ট কর্মকর্তা খোঁজা হয়, সরকারি নিয়োগেও চাই মেধার সঙ্গে স্মার্টনেসের সমন্বয়।
এসব দিকের ব্যাপক উন্নয়ন হলে সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’ এই লক্ষ্যে সহজেই পৌঁছাতে পারবে বলে মনে করছি।স্মার্ট নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতি ও সরকার কোনোটিই বাদ দেয়া যাবে না।সবকিছুকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সমানতালে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নিহাল খান
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম মেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।