ঢাকা ০১:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১৭ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ::
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল 'যমুনা প্রতিদিন ডট কম' এ আপনাকে স্বাগতম...
সংবাদ শিরোনাম ::
দুমকিতে ভুয়া ৩ ডিবি পুলিশ আটক! মালিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন বাজার কমিটির সভাপতি শেখ ফরিদ মিয়া লাখাইয়ে গাড়ী চাপায় বাইসাইকেল আরোহী নিহত রাজশাহীতে বিশ্ব বসতি দিবস-২০২৩ উদযাপন সিংড়ায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ও এলাকাবাসীর বিক্ষোভ সমাবেশ শালিখায় দেড় লক্ষাধিক টাকার চায়না জাল আগুনে ভস্ম বাঘ তাড়িয়ে জেলের ক্ষতবিক্ষত মাথা উদ্ধার করলো গ্রামবাসী টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে নবনির্মিত একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন করলেন এমপি টিটু কাজিপুরে আরচেস এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক প্রবীন দিবস পালন নবাবগঞ্জে অটো রিক্সা শ্রমিক লীগের ইউনিয়ন কমিটি গঠন

সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষকের আশা জাগাচ্ছে উচ্চ ফলনশীল উফশী জাতের শর্ষে

জাকিরুল ইসলাম,হালুয়াঘাটঃ
  • আপডেট সময় : ১০:৫০:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩ ১৫৩ বার পড়া হয়েছে
যমুনা প্রতিদিন অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কৃষক আমজাত আলী গত বছর ৫০ শতক জমিতে দেশি ও বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষা করেছিলেন। এতে তাঁর জমি প্রস্তুত ও শ্রমিকের ময়না বাবদ খরচ হয়েছিল ২ হাজার টাকা। তিনি ওই জমি থেকে প্রায় ৬ মণ সরিষা পেয়েছিলেন। প্রতি মণ সরিষা তিনি বিক্রি করেছিলেন ১২ শ থেকে ১৫ শত। তেল তৈরির জন্য ১ মণ শর্ষে রেখে তিন মণ বাজারে বিক্রি করেন। অবশিষ্ট এক মণ বীজ তিনি বিক্রি করেছিলেন। ওই বীজ কিনে এলাকার ১০ কৃষক এবার তাঁদের খেতে বারি-১৪ জাতের শর্ষে চাষ করছেন।

কৃষক আমজাদ হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের গোরকপুর গ্রামে।

এ ব্যাপারে কৃষক আমজাত বলেন, দেশি সরিষার চেয়ে ‘বারি-১৪ জাতের শর্ষের তেল খুব ভালো। ফলনও অন্যান্য জাতের শর্ষের চেয়ে অনেক বেশি।এবারও বারি-১৪ জাতের শর্ষে চাষ করেছি। এবার কোনো সমস্যা হয়নি। একরপ্রতি এবার ১৪ থেকে ১৫ মণ শর্ষে পাব।’

একই এলাকার কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন,’এই শর্ষের তেলে ঝাঁজ বেশি। ক্ষতিকর কিছু নেই। ফলন অন্যান্য শর্ষের চেয়ে অনেক বেশি হয়।’

শুক্রবার উপজেলার ধুরাইল, বিলডোরা, ধারা, হালুয়াঘাট সদর ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পুরো মাঠ হলুদ ফুলে ছেয়ে আছে। বেশির ভাগ খেতে শর্ষেগাছে ফুল বেরিয়েছে। অনেক খেতে ফুল ঝরে শর্ষে দানা বাঁধছে।

মোজাকান্দা গ্রামের কৃষক মোমতাজ মেম্বার বলেন, তিনি এক ২৫ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। এবার ঝড়বৃষ্টি না হওয়ায় সরিষার কোন ক্ষতি হয়নি। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ফলন ভালো হবে বলে তিনি আশা করছেন।

একই গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম বলেন, গত বছর বৃষ্টির কারণে সরিষা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। তাঁর আশা, আগামীতে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন পাবে।

বিলডোরা এলাকার কৃষক হিমেল চৌধুরী ভাষ্য- সয়াবিন তেলের যে দাম, তাতে কিনে খাওয়ার মতো অবস্থা নেই। তাই এবার সরিষার ফলন হলে সয়াবিন তেলের ওপর তাঁরা আর নির্ভর করবেন না। এবার নিজেদের জমির উৎপাদিত সরিষার তেল দিয়েই সারাবছর চালাবেন। শর্ষে উঠিয়ে পরে বোরো ধান লাগাব।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) সূত্রে জানা গেছে, বারি-১৪ জাতের শর্ষেগাছের জীবনকাল ৭৫ থেকে ৮০ দিন। গাছের উচ্চতা ৩০ থেকে ৩৫ ইঞ্চি। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় চার-ছয় টন। এ ছাড়া এই জাতের শর্ষেতে ইরোসিক অ্যাসিডের মাত্রা শূন্য দশমিক ৫ ভাগ। বারি-১৪ জাতের শর্ষের বীজে তেলের পরিমাণ ৪৩ থেকে ৪৪ ভাগ। দেশি পদ্ধতিতে এর তেল আহরণ করা যায়। ভোজ্যতেল হিসেবে এই তেল পুরোপুরি নিরাপদ।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলায় শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩৪ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭৪০ হেক্টরে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল উফসী জাতের বিনা ও বারী ১৭ জাতের শর্ষে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বারি-১৪ জাতের শর্ষের চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ আবাদ হয়েছে।

এছাড়া এর মধ্যে উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে ৫ হাজার ৬০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনার আওতায় বিনা মূল্যে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪,১৭ ও বিনা জাতের শর্ষের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।

হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এ বছর কৃষকদের পর্যাপ্ত সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে।ফলন ভালো পেতে তাঁরা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।সেই সঙ্গে সরিষা ক্ষেতের পাশে মধু চাষ করাচ্ছেন।এতে যেমনি সরিষার ফলন বাড়ছে, তেমনি মধু উৎপাদনও হচ্ছে।আমন ও বোরো ধান চাষাবাদের মাঝের সময়ে খেত পতিত থাকত। এই সময়ে বাড়তি ফসল হিসেবে শর্ষে চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হবেন।এতে ভোজ্যতেলের চাহিদা অনেকাংশে মেটানো সম্ভব হবে। আশা করছি উপজেলা থেকে ২৮৮ মেট্রিকটন সরিষা উৎপাদন হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষকের আশা জাগাচ্ছে উচ্চ ফলনশীল উফশী জাতের শর্ষে

আপডেট সময় : ১০:৫০:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩

কৃষক আমজাত আলী গত বছর ৫০ শতক জমিতে দেশি ও বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষা করেছিলেন। এতে তাঁর জমি প্রস্তুত ও শ্রমিকের ময়না বাবদ খরচ হয়েছিল ২ হাজার টাকা। তিনি ওই জমি থেকে প্রায় ৬ মণ সরিষা পেয়েছিলেন। প্রতি মণ সরিষা তিনি বিক্রি করেছিলেন ১২ শ থেকে ১৫ শত। তেল তৈরির জন্য ১ মণ শর্ষে রেখে তিন মণ বাজারে বিক্রি করেন। অবশিষ্ট এক মণ বীজ তিনি বিক্রি করেছিলেন। ওই বীজ কিনে এলাকার ১০ কৃষক এবার তাঁদের খেতে বারি-১৪ জাতের শর্ষে চাষ করছেন।

কৃষক আমজাদ হোসেনের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের গোরকপুর গ্রামে।

এ ব্যাপারে কৃষক আমজাত বলেন, দেশি সরিষার চেয়ে ‘বারি-১৪ জাতের শর্ষের তেল খুব ভালো। ফলনও অন্যান্য জাতের শর্ষের চেয়ে অনেক বেশি।এবারও বারি-১৪ জাতের শর্ষে চাষ করেছি। এবার কোনো সমস্যা হয়নি। একরপ্রতি এবার ১৪ থেকে ১৫ মণ শর্ষে পাব।’

একই এলাকার কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন,’এই শর্ষের তেলে ঝাঁজ বেশি। ক্ষতিকর কিছু নেই। ফলন অন্যান্য শর্ষের চেয়ে অনেক বেশি হয়।’

শুক্রবার উপজেলার ধুরাইল, বিলডোরা, ধারা, হালুয়াঘাট সদর ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পুরো মাঠ হলুদ ফুলে ছেয়ে আছে। বেশির ভাগ খেতে শর্ষেগাছে ফুল বেরিয়েছে। অনেক খেতে ফুল ঝরে শর্ষে দানা বাঁধছে।

মোজাকান্দা গ্রামের কৃষক মোমতাজ মেম্বার বলেন, তিনি এক ২৫ শতাংশ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। এবার ঝড়বৃষ্টি না হওয়ায় সরিষার কোন ক্ষতি হয়নি। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ফলন ভালো হবে বলে তিনি আশা করছেন।

একই গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম বলেন, গত বছর বৃষ্টির কারণে সরিষা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। তাঁর আশা, আগামীতে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন পাবে।

বিলডোরা এলাকার কৃষক হিমেল চৌধুরী ভাষ্য- সয়াবিন তেলের যে দাম, তাতে কিনে খাওয়ার মতো অবস্থা নেই। তাই এবার সরিষার ফলন হলে সয়াবিন তেলের ওপর তাঁরা আর নির্ভর করবেন না। এবার নিজেদের জমির উৎপাদিত সরিষার তেল দিয়েই সারাবছর চালাবেন। শর্ষে উঠিয়ে পরে বোরো ধান লাগাব।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) সূত্রে জানা গেছে, বারি-১৪ জাতের শর্ষেগাছের জীবনকাল ৭৫ থেকে ৮০ দিন। গাছের উচ্চতা ৩০ থেকে ৩৫ ইঞ্চি। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় চার-ছয় টন। এ ছাড়া এই জাতের শর্ষেতে ইরোসিক অ্যাসিডের মাত্রা শূন্য দশমিক ৫ ভাগ। বারি-১৪ জাতের শর্ষের বীজে তেলের পরিমাণ ৪৩ থেকে ৪৪ ভাগ। দেশি পদ্ধতিতে এর তেল আহরণ করা যায়। ভোজ্যতেল হিসেবে এই তেল পুরোপুরি নিরাপদ।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে উপজেলায় শর্ষে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩৪ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৭৪০ হেক্টরে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল উফসী জাতের বিনা ও বারী ১৭ জাতের শর্ষে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বারি-১৪ জাতের শর্ষের চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ আবাদ হয়েছে।

এছাড়া এর মধ্যে উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে ৫ হাজার ৬০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনার আওতায় বিনা মূল্যে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪,১৭ ও বিনা জাতের শর্ষের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।

হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এ বছর কৃষকদের পর্যাপ্ত সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে।ফলন ভালো পেতে তাঁরা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।সেই সঙ্গে সরিষা ক্ষেতের পাশে মধু চাষ করাচ্ছেন।এতে যেমনি সরিষার ফলন বাড়ছে, তেমনি মধু উৎপাদনও হচ্ছে।আমন ও বোরো ধান চাষাবাদের মাঝের সময়ে খেত পতিত থাকত। এই সময়ে বাড়তি ফসল হিসেবে শর্ষে চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হবেন।এতে ভোজ্যতেলের চাহিদা অনেকাংশে মেটানো সম্ভব হবে। আশা করছি উপজেলা থেকে ২৮৮ মেট্রিকটন সরিষা উৎপাদন হবে।