ঢাকা ০৯:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ::
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল 'যমুনা প্রতিদিন ডট কম' এ আপনাকে স্বাগতম...
সংবাদ শিরোনাম ::
চট্টগ্রামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাংবাদিকদের জামিন নওগাঁ জেলা অটো রাইস মিল মালিক সমিতির সাথে বিএসটিআই’র মতবিনিময় সভা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের হীরকজয়ন্তী উদযাপন লাখাইয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার পাইকগাছায় বিপ্লব সাধুর বিরুদ্ধে মানহানির চেষ্টার প্রতিকারে ব্যবসায়ী সমিতির সংবাদ সম্মেলন শিবগঞ্জে লাইভ ভেরিফিকেশন ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নওগাঁর আত্রাই নদীতে বাড়ছে পানি,বন্যা আতঙ্কে দুই পাড়ের মানুষ লাখাইয়ে রোপা আমন ধান চাষে বাম্পার ফলন,অর্জন ৪৯০০ হেক্টর জমি পবায় গ্রীণ অটো ব্রিকস লিমিটেডের বিষাক্ত ধোঁয়ায় ৩০০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত লাখাইয়ে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবসে বর্ণাঢ্য র‍্যালী ও আলোচনা সভা

বাগেরহাটে ১৮ বছর ধরে তালপাতার পাঠশালায় চলছে শিশুদের হাতেখড়ি

বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় : ০৭:১৮:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১১ বার পড়া হয়েছে
যমুনা প্রতিদিন অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

একটা সময় ছিলো যখন দোয়াতের কালি আর তালপাতায় শিক্ষা জীবন শুরু করতো শিশুরা।সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়েছে সেই ব্যবস্থার।

তবে নতুন করে সেই শিক্ষা ব্যবস্থার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বাগেরহাটের চিতলমারীর “শিশু শিক্ষা নিকেতন” নামের একটি পাঠশালা।দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে চলতে থাকা এ পাঠশালা থেকেই শিক্ষা জীবন শুরু করছে কোমলমতি শিশুরা।তবে পাঠশালাটিতে সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ ও জলাবদ্ধতাসহ রয়েছে নানা সমস্য।সমস্যাগুলো সমাধানে প্রশাসনের প্রতি দাবী জানিয়েছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।

সরোজমিনে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রতন্ত গ্রাম দক্ষিণ ডুমুরিয়া গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামে ১৮ বছর ধরে শিশু শিক্ষা নিকেতন নামের একটি পাঠশালা চালাচ্ছেন ৭৫ বছর বয়েসী পন্ডিত কালিপদ বাছাড় নামের এক বৃদ্ধ।স্থানীয় গ্রামবাসীর সহায়তায় চলা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা মিলে দোয়াত কালি আর তালপাতার।এখানকার শিশুরা দোয়াতের কালি আর বাঁশের কঞ্চির কলম দিয়ে তালপাতায় লিখে শুরু করছে তাদের শিক্ষা জীবন।যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প মনে হতে পারে। পাঠশালাটিতে গেলে অর্ধশত শিশু তালপাতায় অক্ষর জ্ঞান চর্চার দেখা মিলে।

পাঠশালার শিক্ষক পন্ডিত কালিপদ বাছাড় বলেন, তালপাতায় অক্ষর চর্চায় হাতের লেখা ভালো হয়।এই পাঠশালা থেকে শিশুরা প্রথম অক্ষরজ্ঞান লাভ করে।তারা স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জন বর্ণ, বানান, যুক্তাক্ষর, শতকিয়া, নামতা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে এখান থেকে। এই পাঠশালা থেকে শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়।

স্থানীয় অভিভাবক ল²ি রানী বলেন, আমাদের পাঠশালার শিক্ষক কালিপদ বাছাড় শিশুদের খুব ভালো পড়ান।তিনি হাতে ধরে শিশুদের তালপাতার লেখা শিখায়।এ কারনে আশপাশের প্রায় ৫টি গ্রামের ৫০ জন শিশু এই পাঠশালায় পড়াশুনা করে।ভালো পড়াশুনার কারনে আমারাও আগ্রহ নিয়ে শিশুদের এই পাঠশালা ভর্তি করি।প্রতি শিক্ষার্থীদের জন্য মাসে মাত্র ১৫০ টাকা নেন শিক্ষক কালিপদ বাছাড়।যা দিয়ে তালপাতা ও দোয়াত কালি পাঠশালাটির বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় করা হয়।

অপর অভিভাবক শীল্পা রানী মন্ডল বলেন, আমাদের এই পাঠশালাটি সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত চলে।বিদ্যুৎ না থাকার কারনে প্রচন্ড গরমে খুব কষ্ট হয় শিশুদের।এছাড়া কোন খাবার পানির ব্যবস্থা নেই।দুপুরে নদীতে জোয়ার এলে পাঠশালার মাঠটি পানিতে তলীয় যায়, তখন কাদাপানি পার হয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমাদের বাড়ীতে যেতে হয়।আমরা অভিভাবকরা জলাবদ্ধতাসহ পাঠশালাটির সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছি।

স্থানীয় বাসিন্দা ভজন মন্ডল ও নিলয় ঢালি বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডুমুরিয়া দক্ষিনপাড়া শিশু শিক্ষা নিকেতন নামের এই পাঠশালাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে।বর্তমানে পাঠশালাটিতে বিদ্যুৎ না থাকা ও জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, আমরা স্থানীয় ভাবে পাঠশালাটি দেখাশুনার পাশাপাশি সমস্যগুলো সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।আমরা ঐতিহ্যবাহি এই পাঠশালাটির সমস্য সমাধানে জেলা প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, চিতলমারী উপজেলার ডুমুরিয়া দক্ষিণপাড়া নামের একটি পাঠশালা রয়েছে।পাঠশালাটিতে এখনও সেই পুরাতন আমলের তালপাতার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে।যেটা আমাদের পুরাতন শিক্ষা ব্যবস্থা ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।আমি জানতে পেরেছি পাঠশালাটিতে বিদ্যুৎ ও জলাবদ্ধতা সহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।সেগুলো সমাধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুতই উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

বাগেরহাটে ১৮ বছর ধরে তালপাতার পাঠশালায় চলছে শিশুদের হাতেখড়ি

আপডেট সময় : ০৭:১৮:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

একটা সময় ছিলো যখন দোয়াতের কালি আর তালপাতায় শিক্ষা জীবন শুরু করতো শিশুরা।সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়েছে সেই ব্যবস্থার।

তবে নতুন করে সেই শিক্ষা ব্যবস্থার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বাগেরহাটের চিতলমারীর “শিশু শিক্ষা নিকেতন” নামের একটি পাঠশালা।দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে চলতে থাকা এ পাঠশালা থেকেই শিক্ষা জীবন শুরু করছে কোমলমতি শিশুরা।তবে পাঠশালাটিতে সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ ও জলাবদ্ধতাসহ রয়েছে নানা সমস্য।সমস্যাগুলো সমাধানে প্রশাসনের প্রতি দাবী জানিয়েছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।

সরোজমিনে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রতন্ত গ্রাম দক্ষিণ ডুমুরিয়া গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামে ১৮ বছর ধরে শিশু শিক্ষা নিকেতন নামের একটি পাঠশালা চালাচ্ছেন ৭৫ বছর বয়েসী পন্ডিত কালিপদ বাছাড় নামের এক বৃদ্ধ।স্থানীয় গ্রামবাসীর সহায়তায় চলা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখা মিলে দোয়াত কালি আর তালপাতার।এখানকার শিশুরা দোয়াতের কালি আর বাঁশের কঞ্চির কলম দিয়ে তালপাতায় লিখে শুরু করছে তাদের শিক্ষা জীবন।যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্প মনে হতে পারে। পাঠশালাটিতে গেলে অর্ধশত শিশু তালপাতায় অক্ষর জ্ঞান চর্চার দেখা মিলে।

পাঠশালার শিক্ষক পন্ডিত কালিপদ বাছাড় বলেন, তালপাতায় অক্ষর চর্চায় হাতের লেখা ভালো হয়।এই পাঠশালা থেকে শিশুরা প্রথম অক্ষরজ্ঞান লাভ করে।তারা স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জন বর্ণ, বানান, যুক্তাক্ষর, শতকিয়া, নামতা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে এখান থেকে। এই পাঠশালা থেকে শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়।

স্থানীয় অভিভাবক ল²ি রানী বলেন, আমাদের পাঠশালার শিক্ষক কালিপদ বাছাড় শিশুদের খুব ভালো পড়ান।তিনি হাতে ধরে শিশুদের তালপাতার লেখা শিখায়।এ কারনে আশপাশের প্রায় ৫টি গ্রামের ৫০ জন শিশু এই পাঠশালায় পড়াশুনা করে।ভালো পড়াশুনার কারনে আমারাও আগ্রহ নিয়ে শিশুদের এই পাঠশালা ভর্তি করি।প্রতি শিক্ষার্থীদের জন্য মাসে মাত্র ১৫০ টাকা নেন শিক্ষক কালিপদ বাছাড়।যা দিয়ে তালপাতা ও দোয়াত কালি পাঠশালাটির বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় করা হয়।

অপর অভিভাবক শীল্পা রানী মন্ডল বলেন, আমাদের এই পাঠশালাটি সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত চলে।বিদ্যুৎ না থাকার কারনে প্রচন্ড গরমে খুব কষ্ট হয় শিশুদের।এছাড়া কোন খাবার পানির ব্যবস্থা নেই।দুপুরে নদীতে জোয়ার এলে পাঠশালার মাঠটি পানিতে তলীয় যায়, তখন কাদাপানি পার হয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমাদের বাড়ীতে যেতে হয়।আমরা অভিভাবকরা জলাবদ্ধতাসহ পাঠশালাটির সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছি।

স্থানীয় বাসিন্দা ভজন মন্ডল ও নিলয় ঢালি বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডুমুরিয়া দক্ষিনপাড়া শিশু শিক্ষা নিকেতন নামের এই পাঠশালাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে।বর্তমানে পাঠশালাটিতে বিদ্যুৎ না থাকা ও জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, আমরা স্থানীয় ভাবে পাঠশালাটি দেখাশুনার পাশাপাশি সমস্যগুলো সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।আমরা ঐতিহ্যবাহি এই পাঠশালাটির সমস্য সমাধানে জেলা প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, চিতলমারী উপজেলার ডুমুরিয়া দক্ষিণপাড়া নামের একটি পাঠশালা রয়েছে।পাঠশালাটিতে এখনও সেই পুরাতন আমলের তালপাতার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে।যেটা আমাদের পুরাতন শিক্ষা ব্যবস্থা ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।আমি জানতে পেরেছি পাঠশালাটিতে বিদ্যুৎ ও জলাবদ্ধতা সহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।সেগুলো সমাধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুতই উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।