মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৪ অপরাহ্ন
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

অবহেলা নয়,প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে তুলুন

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের মূলে রয়েছে পরিবার, সমাজ এবং কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য। সমাজের সর্বস্তরে এরূপ একটি বিশ্বাস আছে যে, প্রতিবন্ধীত্ব একটি অভিশাপ এবং এটি পাপ কাজের শাস্তি যা প্রতিবন্ধীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ যত্ম, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা এবং অংশগ্রহণের সুযোগকে প্রভাবিত করে।

প্রতিবন্ধী শিশুর পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশুরা বাংলাদেশে সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার ৯৭ শতাংশ হলেও মাত্র ১১ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু যে কোনো ধরনের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।

২০০৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারবিষয়ক একটি সনদ গৃহীত হয়। এই সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলো প্রতিবন্ধী শিশুসহ সব শিশু যেন কোনো ধরনের বৈষম্য ছাড়াই তাদের অধিকার ভোগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করবে। এই সনদে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। জাতীয় শিশু নীতিমালায়ও প্রতিবন্ধী শিশুসহ সব শিশুর অধিকার সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা ভিন্ন। প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি সমাজ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। এমনকি প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম দানকারী মা-বাবাকেও অপয়া মনে করা হয় আমাদের সমাজব্যবস্থায়। যেখানে আমাদের উচিত হচ্ছে, প্রতিবন্ধীদের জন্য সমাজব্যবস্থাকে সহজ করে দেয়া কিন্তু সেখানে আমরা তাদের অবহেলার পাত্র করে রেখেছি। সামাজিক ধ্যান-ধারণার ওপর নির্ভর করে এসব শিশুদের ভবিষ্যৎ।

সমাজ যদি এদের অযোগ্য ও অবাঞ্ছিত মনে করে, এদের উঠে দাঁড়ানোর কোনো স্থান থাকবে না।দেশের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। যদিও এটা ঠিক যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যদি প্রয়োজনীয় সমর্থন পায় তবে তারা তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারে এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। প্রতিবন্ধীরা নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তাদের সম্পর্কে ভুল ধারণার কারণে। বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবন্ধীদের মতামত সাধারণত গ্রাহ্য করা হয় না এবং প্রায় ক্ষেত্রেই তাদের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়, যেটা শেষ পর্যন্ত তাদেরকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাস্থ্যসেবা অথবা বিদ্যালয়ে যাওয়ার সবচেয়ে কম সুযোগ পায়। বিশেষ করে তাদেরকে লুকিয়ে রাখলে কিংবা প্রতিষ্ঠানে দিলে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সকল গোষ্ঠির মধ্যে তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতন, অপব্যবহার, শোষণ এবং অবহেলার শিকার হয়।তাছাড়াও প্রতিবন্ধীদের জন্য সমাজের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে তাদের প্রতি সহানুভূতির অভাব। তারাও যে মানুষ, এই বোধ অনেকের মধ্যে দেখা যায় না। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের ব্যাপারে সচেতনতার অভাব প্রকট।

এছাড়াও ২০০৬ সালে জাতিংঘের Convention on the Rights of Persons with Disabilities, এই কনভেনশনের সঙ্গে ভারতের সংবিধানের সংঘর্ষ থাকায় ভারত তার সংবিধানকে সংশোধন করেছে। কিন্তু আমরা সংবিধান সংশোধন না করে ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন করেছি। যেখানে ভারত সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য একই আইন রেখেছে কিন্তু আমাদের দেশে তা পুরোপুরিভাবে ভিন্ন। ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইনে পরবর্তী বিধিগুলো আমরাও পাইনি, যেখানে অনেক জেলা-উপাজেলা পর্যায়ে কমিটি থাকার কথা। সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি।

তাই আমাদের উচিত তাদের অক্ষমতাকে সরিয়ে বিশেষ গুণাবলি বিকাশের পথ সুগম করে দেয়া। পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, চাকরি সকল ক্ষেত্র থেকে বৈষম্য সরিয়ে তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে আমাদের অবহেলা তাদের মধ্যকার ইচ্ছাশক্তিকে নষ্ট করে দেয় তার ফলে তারা নিজেদের সমাজের বোঝা মনে করে।

প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হয়, তা বলতে গেলে অনেক নগণ্য। ফলে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে গড়ে উঠে ভিক্ষাবৃত্তি। কাজেই যে ভাতা তাদের জন্য নির্ধারিত হয়েছে তার পরিমাণ আরও বেশি বাড়ানো দরকার এবং তাদের হাতে পৌঁছানোর জন্য ব্যবস্থা করা উচিত। প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার সনদ ও শিশু অধিকার সনদ অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।প্রতিবন্ধীত্ব বিষয়ে একটি বৈশ্বিক সামঞ্জস্যপূর্ণ গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। এর মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য ও তুলনামূলক উপাত্ত পাওয়া যাবে, যা পরিকল্পনা ও সম্পদ বণ্টন সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেবে এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী শিশুদের বিষয় আরও সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করবে। সর্বোপরি, পরিবার ও সমাজকে প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি সহনশীল ও সহযোগিতাপূর্ণ হতে হবে।

মনে রাখতে হবে প্রতিবন্ধীরা আমাদেরই সন্তান, আমাদের প্রতিবেশী, আমাদেরই আপনজন। সুতরাং তাদের প্রতি আমাদের উদাসীনতা প্রদর্শন না করে তাদের উন্নতির জন্য মনােনিবেশ করা কর্তব্য। অনেক প্রতিবন্ধীকে সরকারি, বেসরকারি ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মে নিযুক্ত দেখা গেলেও বিশাল প্রতিবন্ধী জনগােষ্ঠীর তুলনায় অত্যন্ত কম। এ ব্যাপারে পেশাভিত্তিক কর্ম কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়ােজন।

লেখকঃ শ্যামল শীল,ইতিহাস বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 5 =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x