মানবজীবনের সার্থক তখনই হয় যখন অন্য আরেকজন তাহার দ্বারা উপকৃত হয়।আমি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস শৈশব থেকে শিল্পচর্চার অনুরাগী ছিলাম।পরিবারের সবাইকে বরিশাল, ঝালকাঠির খাজুরা গ্রামে রেখে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলাম শিল্পী হওয়ার জন্য।১৯৯৯ সালের শেষের দিকে খুলনা আর্ট কলেজে পড়ার উদ্দেশ্যে চলে আসা।আর্ট কলেজে পড়াশোনা শেষ করি।এর মধ্যে অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শ পেলাম ক্ষুদ্র হৃদয়ে জায়গা হয়নি সবার।খুলনার প্রতি একটি গভীর প্রেম তৈরি হয়।নিজের জন্মভূমি রেখে এসে খুলনার মাটি গায়ে লাগিয়ে আপন করে নিলাম এই শহরের অলিগলি প্রাকৃতিক পরিবেশ।
২০০৩ সাল থেকে নিশাত আর্ট কোচিং নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা শুরু করি।দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা খুলনায় থাকার।তাই ২০০৮ সালে এসে খুলনায় আমার প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় খুলনা আর্ট একাডেমি নামকরণ করেছি।শিশু থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছবি আঁকা, আবৃত্তি এবং সংগীত বিষয়, ২০১০ সালে শুরু হয় চারুকলা ভর্তি কোচিং।
তখন খুলনার বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে মাধ্যমিক পাস করে।নবীন শিল্পীদের নিয়ে অনেক সময় পার করে তাদের স্বপ্নের স্থানে পৌঁছে দেওয়ার বদ্ধপরিকর গ্রহণ করে সফলতা অর্জন করেছি বারবার সম্মাননা পদক পেয়েছি।প্রতিষ্ঠান ভালোই চলছে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ-ভারত সকল শিল্প অনুরাগীদের কাছে।
আসলে আমার দৃষ্টিতে এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার একমাত্র মাধ্যম হলো সাংস্কৃতিক চর্চা।তাই আমাদের সবার উচিৎ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজেদের নিয়োজিত রাখা।
কথায় বলে বিপদ আসে না বলে।২০২০ সালে সারা বিশ্বে শুরু হয় করোনা মহামারী।একজন আরেকজনকে স্পর্শ করাও নিষেধ এমনকি কারো মুখের হাছি কাশির কথা আর কি বলবো।তখন আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি এই বুঝি করোনা।খুলনা আর্ট একাডেমি বন্ধ করে দিলো।তখনকার কিছু ভালো মানুষের সহযোগিতায় খুলনা আর্ট একাডেমি ধরে রাখতে সম্ভব হয়েছে।
সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।তাদের সকলের নাম প্রকাশ করা বারন তাই উল্লেখ নাই করি তবে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি।
তাদের মধ্যে একজন প্রবীন সঙ্গীতশিল্পী আবদুল হক তিনি আমার লেখা বেশ কয়েকটি গানে সুর দিয়েছেন।তাই আমি সারাজীবন তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।তিনি শুধু একজন সংগীতশিল্পী ছিলেন না।তিনি বাংলাদেশ সড়ক ও জনপদে চাকরি করতেন।তিনি রিটার্ড করেন ২০২১ সালে।প্রত্যেক দিন সন্ধ্যা হলে আমাদের অফিসে চলে আসতেন সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতেন।শিল্পী আবদুল হক কয়রা ১নং মহারাজপুর গ্রামে তার জন্মস্থানে চলে যান রিটার্ডের পরে।
আমাকে যারা ভালবাসে তাদেরকে দেওয়ার মতো আমার কাছে কিছু নেই।আজ আছি কাল থাকবো না এটাই তো স্বাভাবিক।তাই যারা আমাকে ভালোবেসেছেন আমার জীবন পাল্টে দিয়েছেন তাদের জন্য কিছুই করতে পারিনি।আমাকে উৎসাহ দিয়ে খুলনা আর্ট একাডেমির সাথে থেকে, কলি থেকে ফুল করলেন তাদেরকে দেবার মত আমার কাছে কিছুই নেই।ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সম্ভব হয়না।অর্থনৈতিক অভাব অনটনের জন্য।
এখনো মহামারীর ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারিনি।চারিদিকে নিস্তব্ধ কখন যে হারিয়ে যায় প্রদীপের আলো।আমার স্বপ্নে গড়া প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে অনেক সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এখনো ধরে রেখেছি।এখন দুটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করি।Khulna Art Academy, Artist Milon Biswas এই দুটি চ্যানেল পরিচালনা করে সময়কে অতিবাহিত করি।
অনেক চিন্তা করে খুলনা আর্ট একাডেমির ছাত্র শিব শংকর মন্ডলকে সাথে নিয়ে পেন্সিলের আঁকিবুঁকি দিয়ে স্মৃতি হিসেবে উপহার দিয়েছি ২শত জন প্রিয় ব্যক্তিকে।প্রত্যেকটি ছবির নিচে লেখা আছে উপহারে খুলনা আর্ট একাডেমির।স্মৃতির পাতায় ২০২১।এই কথা লেখার উদ্দেশ্য এটাই যদি খুলনা আর্ট একাডেমি পরিচালনা করতে না পারি তবে যেন একাডেমির প্রিয়জনদের ঘরে একাডেমির নামটি অমর হয়ে থাকে।আপনারা সবাই আমার জন্য শুভ কামনা করবেন আমি যেন আমার প্রিয় ছাত্র ছাত্রীদের সুশিক্ষা দিয়ে তাদের কে সুন্দর একটি জীবন দিয়ে শিল্পসাধনায় সফল হতে পারি এবং আমি যেন মা বাবার আদর্শে পথ চলতে পারি।
আমি গত ৩০শে অক্টোবর আমার বাবাকে হারিয়েছি।বর্তমানে আমার মা আছে। সবাই মায়ের জন্য শুভ কামনা করবেন।আপনারাও ভালো থাকবেন।সকলের সুস্বাস্থ্য মঙ্গল কামনায়।
চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস।
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
খুলনা আর্ট একাডেমি।
৩০৮,শের-এ-বাংলা রোড,খুলনা।
তারিখঃ০৩-০৬-২০২৩