সাক্ষাৎকার : আশিকুর রহমান (সবুজ)
দেশীয় সংগীতের জনপ্রিয় শিল্পীদের মধ্যে একজন সারোয়ার মাহীন।দীর্ঘ ২০ বছরের সংগীত ক্যারিয়ারে ৮টি একক অ্যালবামের পর যখন অ্যালবাম হয়না তখন থেকে অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।এছাড়াও প্রায় ৪শ এর বেশি গান সুর করেছেন তিনি।
সম্প্রতি দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল যমুনা প্রতিদিনের সঙ্গে কথা হয় তার-
করোনা মহামারিতেও নিয়মিত দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন গান নিয়ে ইউটিউবে আপনাকে?
ছোট বেলা থেকে সংগীতে যাত্রা শুরু করি।২০ বছর যাবৎ পুরোপুরি গানের সাথে মিশে আছে আমার আত্মা ২০১৩ সালের শুরুতে ‘মেঘলা আকাশ’ অ্যালবাম দিয়েই কাজ শুরু করি।মেঘলা আকাশ অ্যালবামটির সবকটি গানের কথা ও সুর আমার নিজের। কম্পোজার ছিলো টি আর রোমান্স।
ক্যারিয়ারের শুরুর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আমার শুরুটা ছিল খুবই তিক্ত সংগ্রামের। তবে সেই সংগ্রাম খুব উপভোগ করেছি এখন। কখনো কষ্ট হিসেবে নেইনি।মা ছিলো খুব সহজ সরল।পরিবারের সাপোর্ট ছিলোনা,কাজ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা অনেক কষ্টের হলেও বেশ ভালো লাগত। কাজের জন্য ঘোরাঘুরি করার সুযোগ পেতাম। সেই সময়ের সঙ্গে যদি বর্তমান সময় তুলনা করি তাহলে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকটা এখন আমার কাছে সোনালী অতীত বলে মনে হয়। তখন অনেক কষ্ট করলেও সেই সময়ের ভালো লাগা ছিল অনেক আনন্দময়।
অনেকে এখন ইউটিউবমুখি হচ্ছে এ নিয়ে কিছু বলুন?
ইউটিউবমুখি হওয়া খারাপ ভালো দুটিই আছে।ভালো হতে এতে সহজেই শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানো যায়। শ্রোতাদের ভালোবাসা পাওয়া যায়। কেউ ব্যক্তিগত চ্যানেলের মাধ্যমে ইউটিউবে গান প্রকাশ করছে আবার কেউ সংগীত কোম্পানির চ্যানেলের মাধ্যমে গান প্রকাশ করছে।শ্রোতাদের ও ভক্ত-অনুরাগীদের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে ইউটিউব ভালো একটি প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। আবার নতুনদের মধ্যে অনেকে এখান থেকে নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন।তবে শিল্পীরা সঠিক মূল্য পাচ্ছে না।
ভিউ দিয়ে আলোচনায় উঠে আসা,কিভাবে দেখছেন?
আমি সবসময় মনে করি শ্রোতা এবং ভিউয়ার্সের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। শ্রোতা গান শুনে গানের কথা ও শিল্পীকে বিচার করেন। একজন ভিউয়ার্স তো শিল্পীর গানের কথার অর্থ বা শিল্পীকে সঠিকভাবে বিচার করতে পারে না। তিনি কেবল ফেসবুক-ইউটিউবে গানের ভিডিও দেখছেন। রুচি অনুযায়ী ভিডিও পেল আর দেখা শুরু করল।তিনি কিন্তু গানের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছেন না, গানে কী বলা হচ্ছে বা বোঝানো হচ্ছে এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই তার। গানের ভিডিওর দৃশ্য ভালো লেগেছে তাই বারবার দেখছেন। ভিউ বেড়ে যাচ্ছে। অনেক গুণী শিল্পীদের গানের ভিডিওতে ভিউ খুব সামান্য দেখা যায়, অথচ তাদের গান শ্রোতাদের মুখে মুখে। আবার এমন কিছু গান রয়েছে যার ভিউ লাখ লাখ, সেসব গান বাইরে কারও মুখে খুব একটা শোনা যায়না।আবার হিরো আলমের গানে ভিউ হচ্ছে কোটি কোটি আমি হিরো আলমকে খাটো করে দেখছিনা।সবাই শুধু ভাইরালের দিকে ধুকছে,আমি গানের মান,এবং গায়কী টাকে প্রাধান্য দিচ্ছি।
তাহলে কি ভিউ দিয়ে শিল্পীর মান বিচার করা যায়; যায় না?
ভাইরাল শিল্পীদের ভবিষ্যৎ?
খুব সহজ করে বলা যেতে পারে ভিউ দিয়ে কথিত শিল্পী বনে যাওয়া ব্যক্তিদের অস্তিত্ব শুধু সোশ্যাল মিডিয়া আর ইউটিউবে। তাদের লাইভ প্রোগ্রামে দেখা যায় না। তারা সাময়িক সময়ের জন্য আলোচনায় থাকেন। এদিকে যারা আসলেই শিল্পী তাদের ভিউয়ার্সের প্রয়োজন হয় না। রেকর্ডিং বা লাইভ প্রোগ্রাম সবখানেই তারা ভালো করেন। তারা ভালো অবস্থানে জায়গা করে নেন।
যৌথ গান কার সঙ্গে বেশি?
মারিয়া,প্লাবিতা ইস্তি,বুল্টি,আরো অনেকেই আছে নাম না জানা অনেকর সাথে অসংখ্য ডুয়েট গান করেছি।
সুরকার হিসেবে কিছু বলেন?
আলহামদুলিল্লাহ সুরকার হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে আমার আমার গান ছাড়াও প্রায় ৪০০ গানে সূর করেছি এদের মধ্য অনেক জনপ্রিয় কবি,সাংবাদিক সহ দেশের প্রবীণ লেখকের গান ও আছে।
বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে কিছু বলেন…
গানের সাথে নিজের ব্যাবসা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে। কাজকে সবসময় ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন গানে ভয়েস দিচ্ছি, বাসা থেকে স্টুডিও, এসব নিয়েই ব্যস্ততা। এছাড়া পাশাপাশি সামনে কিছু নাটকের প্রযোজনা করব ভাবছি এবং প্রস্তুতিও নিচ্ছি।
নবীন প্রজন্মের জন্য কোনো পরামর্শ?
প্রথমেই বলব গানের সাধারণ বিষয়গুলো জেনে তারপর এ জগতে আসুন। এখনো আমরা শিখছি। শেখার শেষ নেই। গান করতে হলে গুরুর (শিক্ষক) কাছ থেকে গান শিখতে হবে। নিয়মিত চর্চা তো আছেই। যন্ত্র নিরভর হওয়া যাবে না।
টেলিভিশন চ্যানেল নিয়ে কিছু বলুন?
টেলিভিশন চ্যানেল নিয়ে অনেক কিছুই বলার আছে তবে আজ না অন্য একদিন।এটুকু বলে রাখি টেলিভিশন চ্যানেল নতুন মুখ খোজে না তারা শুধু চেনা মুখ নিয়ে বসে আছে।মেধা যাচাই একেবারেই করেনা ওরা শুধু আত্বীয় খোঁজে।